ভারতের
ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম বাংলায় নির্বাচনী প্রচারণায় আবারও তিস্তার
পানি বণ্টনের প্রস্তাবটি উঠেছে। মমতা ব্যানার্জি আবারও এ প্রশ্নটি তুলেছেন।
বলেছেন, তিস্তায় জল নেই। বাংলাদেশকে জল দিই কীভাবে? সঙ্গত কারণেই যে
প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে ১৬ মে'র পর নির্বাচনের একটা ফল
পাওয়া গেলেও তাতে করে তিস্তা চুক্তি প্রশ্নে কোনো সুসংবাদ থাকার সম্ভাবনা
নেই। নয়া সরকারের প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে মমতা ব্যানার্জির
সমর্থনের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে নয়া সরকার মমতা ব্যানার্জিকে অসন্তুষ্ট
করে কোনো তিস্তা চুক্তি করবে না। মমতা ভোটের রাজনীতি করেন। ভোটের রাজনীতিতে
আন্তর্জাতিক আইন তার কাছে মুখ্য নয়। মুখ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট
করা। এটা করতে গিয়ে তিনি আবারও বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকা নিয়েছেন। কিন্তু
বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা_ তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এ নদীর পানি বণ্টন
আন্তর্জাতিক নীতিমালার ভিত্তিতে হতে হবে। মমতার 'পাগলামো'র জন্য পানি বণ্টন
বন্ধ থাকতে পারে না। পানি দেয়া, না দেয়ার সঙ্গে তার বা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের
কোনো ভূমিকা নেই। বাংলাদেশ পানি পাবে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে। আর
পশ্চিমবঙ্গ যদি বাধা দেয়, তার দায়ভার গিয়ে বর্তাবে ভারত সরকারের ওপর। এতে
করে আন্তর্জাতিক আসরে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে থাকবে। ভারত বিশ্ব
সভায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের স্থায়ী পরিষদে স্থায়ী সদস্য হতে চায়। এক্ষেত্রে
প্রতিবেশীর প্রতি তার আচরণ যদি ন্যায়সঙ্গত না হয়, যা জাতিসংঘের আইনে বলা
আছে, তাহলে তার 'নেতৃত্ব' প্রশ্নের মুখে থাকবে। এমনিতেই ভারতের আচরণ নিয়ে
প্রতিবেশী দেশগুলো এক ধরনের অস্বস্তিতে থাকে। এক্ষেত্রে তিস্তায় পানি না
দিয়ে উজানে পানি প্রত্যাহার করা হলে তা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে ঠেলে দেবে
মরুময়তার দিকে। পানির অভাবে যে সঙ্কটের সৃষ্টি হবে, তা বাংলাদেশকে ঠেলে
দেবে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতার দিকে
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না
যে, তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি আমাদের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।
আমাদের নীতি-নির্ধারকরা যদি বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখেন, তাহলে এ দেশ, বিশেষ
করে উত্তরবঙ্গ একটি বড় ধরনের সঙ্কটে পড়বে। খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে
থাকবে। এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এতে করে বাড়বে। মনে রাখতে হবে, তিস্তায়
পানি প্রাপ্তি আমাদের ন্যায্য অধিকার। আন্তর্জাতিক আইন আমাদের পক্ষে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব আমাদের অধিকারকে নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে
মমতা ব্যানার্জির আপত্তি_ এটা আমাদের বিষয় নয়। আমরা এটা বিবেচনায় নিতে চাই
না। আমাদের অধিকার, যা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত তা নিশ্চিত করবে ভারতের
কেন্দ্রীয় সরকার। এখানে বলা ভালো, সিকিম হয়ে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি
হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ারের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটি থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার
পূর্বে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার উত্তর গাড়িবাড়ির কাছে ডিমলা উপজেলার
ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ছাতনাই থেকে এ নদী নীলফামারীর ডিমলা,
জলঢাকা, লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, রংপুরের
কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারীতে গিয়ে
ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ডিমলা থেকে চিলমারী এ নদীর বাংলাদেশ অংশের মোট
ক্যাচমেন্ট এরিয়া প্রায় ১ হাজার ৭১৯ বর্গকিলোমিটার। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ ও
ভারতের যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দু'দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে তিস্তার পানি
বণ্টনে শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত এবং ২৫ ভাগ নদীর জন্য সংরক্ষিত
রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। পরে
২০০৭ সালের ২৫, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ তিস্তার পানির
৮০ ভাগ দু'দেশের মধ্যে বণ্টন করে বাকি ২০ ভাগ নদীর জন্য রেখে দেয়ার
প্রস্তাব দিয়েছিল। ভারত সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এখন যুক্ত হয়েছে মমতার
আপত্তি। বাংলাদেশের কোনো প্রস্তাবের ব্যাপারেই মমতার সম্মতি পাওয়া যায়নি।
এখানে আরও একটা বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। তিস্তার পানি বণ্টনে সিকিমকে
জড়িত করার প্রয়োজনীয়তা পড়েছে। কেননা সিকিম নিজে উজানে পানি প্রত্যাহার করে
বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ফলে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে দিনে
দিনে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে কৃষকদের কাছে তিস্তার পানির চাহিদা বেশি।
সেচ কাজের জন্য তাদের প্রচুর পানি দরকার। এটা মমতার জন্য একটি 'রাজনৈতিক
ইস্যু'।
তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ
এককভাবে পানি প্রত্যাহার করতে পারে না। আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহার
সংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক আইন সমিতির হেলসিংকি নীতিমালার ৪ ও ৫
অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র, অভিন্ন নদীগুলো
ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনকে
বিবেচনায় নেবে। এখন পশ্চিমবঙ্গের পানি প্রত্যাহার বাংলাদেশের 'অর্থনৈতিক ও
সামাজিক প্রয়োজন'কে বিবেচনায় নেয়নি। হেলসিংকি নীতিমালার ১৫নং অনুচ্ছেদে বলা
হয়েছে, প্রত্যেকটি তীরবর্তী রাষ্ট্র তার সীমানায় আন্তর্জাতিক পানিসম্পদের
ব্যবহারের অধিকার ভোগ করবে যুক্তি ও ন্যায়ের ভিত্তিতে। কিন্তু এ 'যুক্তি ও
ন্যায়ের ভিত্তি'টি উপেক্ষিত থাকে যখন পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশকে তার ন্যায্য
অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ১৯৯২ সালের ডাবলিন নীতিমালার ২নং নীতিতে বলা
হয়েছে, পানি উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সবার অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।
তিস্তার পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটা হয়নি। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ
পরিষদ 'জলপ্রবাহ কনভেনশন' নামে একটি নীতিমালা গ্রহণ করে। এ নীতিমালার ৬নং
অনুচ্ছেদে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে 'যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতার' কথা বলা
হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ব্যবহার, অর্থাৎ এককভাবে তিস্তার পানির ব্যবহার
এ 'যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতা'র ধারণাকে সমর্থন করে না। আমরা আরও আন্তর্জাতিক
আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারব, যেখানে বাংলাদেশের অধিকারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
বিশেষ করে পরিবেশ সংক্রান্ত জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের ১৪নং অনুচ্ছেদ,
জলাভূমিবিষয়ক রামসার কনভেনশনের ৫নং অনুচ্ছেদ প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবেশের
প্রভাব এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলোর সংরক্ষণের যে কথা বলা হয়েছে, তা রক্ষিত
হচ্ছে না। এখানে সমস্যাটা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের।
ভারতের ফেডারেল কাঠামোয় রাজ্য কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু কোনো
রাজ্য (এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ) এমন কিছু করতে পারে না, যা আন্তর্জাতিক আইনের
বরখেলাপ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। সমস্যাটা ভারতের। পশ্চিমবঙ্গকে
আশ্বস্ত করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। আমরা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই
আমাদের পানির হিস্যা নিশ্চিত করতে চাই।
তিস্তায় পানির প্রবাহ
মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায়, বাংলাদেশ এখন বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে
থাকল। গত এক সপ্তাহে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে নানা সংবাদ ছাপা হয়েছে।
যেখানে পানি পাওয়ার কথা ৫ হাজার কিউসেক, তা এখন এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০০
কিউসেকে, অর্থাৎ মাত্র ১০ ভাগের ১ ভাগ পানি বাংলাদেশ পেয়েছে। এর ফলে
উত্তরবঙ্গের ১২ উপজেলার ৬০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানির অভাবে
শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। তিস্তায় যে বাংলাদেশ পানি পাবে না, তা স্পষ্ট করেছেন
ভারতের নেতারা। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ২১ মার্চ নয়াদিলি্ল
গিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। সেখানে ভারতের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র সচিব
সবার সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তারা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন, 'লোকসভার আগে
আর তিস্তা নিয়ে আলোচনা নয়'। এটা কূটনৈতিক ভাষা। আদৌ তিস্তা নিয়ে কোনো
চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ১. নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজেপির নেতৃত্বে
একটি কোয়ালিশন সরকার গঠিত হতে পারে, যারা বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল থাকবে
আঞ্চলিক দলগুলোর ওপর, ২. মমতার তৃণমূল কংগ্রেস একটি ফ্যাক্টর হবে। তাদের
পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারে যোগ দেয়া বিচিত্র নয়, ৩. বিকল্প সম্ভাবনা হচ্ছে
তৃতীয় জোটের (ফেডারেলিস্ট ফ্রন্ট) নেতৃত্বে একটি সংখ্যালঘু সরকার, যেমনটি
অতীতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে মমতা হবেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
২০১১
সালে মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও
শুধু মমতার আপত্তির কারণে কোনো চুক্তি হয়নি। আগামীতেও তাই হবে। মমতা কোনো
চুক্তি করতে দেবেন না। সুতরাং বাংলাদেশের জন্য পথ একটিই_ আন্তর্জাতিক আসরে
বিষয়টি তুলে ধরা। শুধু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ যদি
নিশ্চুপ থাকে এবং যদি উত্তরবঙ্গের কৃষকদের পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করে,
সেটা হবে আমাদের সরকারের এক চরম ব্যর্থতা। সরকার নিশ্চয়ই উত্তরবঙ্গের
কৃষকদের বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। আমরা অতীতেও দেখেছি, আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া
ভারত বাংলাদেশকে এতটুকু ছাড় দেয়নি। অনেকের স্মরণ থাকার কথা, বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ভারত একতরফাভাবে ফারাক্কার পানি প্রত্যাহার
করে নিয়েছিল। ফলে বাংলাদেশ বাধ্য হয়ে ফারাক্কা প্রশ্নটি আন্তর্জাতিক আসরে
তুলে ধরে। ১৯৭৬ সালে ইস্তাম্বুলে ইসলামী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে
বাংলাদেশ প্রশ্নটি উত্থাপন করায় সদস্য দেশগুলো তা সমর্থন করে। একইভাবে
আগস্ট ১৯৭৬ সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের
সম্মেলনে বাংলাদেশ ফারাক্কা প্রশ্ন আবারও উত্থাপন করে। পরে বাংলাদেশ
জাতিসংঘের ৩১তম অধিবেশনে প্রশ্নটি উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু
সেনেগাল, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার অনুরোধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের
রাজনৈতিক কমিটি বাংলাদেশ ও ভারতকে অনুরোধ করে বিষয়টি নিজেদের মাঝে মীমাংসা
করার। পরে সিরিয়া, মিসর, শ্রীলঙ্কা, আলজেরিয়া এবং গায়ানার প্রতিনিধিদের
উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারত ফারাক্কা প্রশ্নে জরুরি আলোচনার জন্য ঢাকায়
একটি বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছিল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এক বিবৃতিতে ওই
উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিল। ১৯৭৭ সালে ঢাকায় ফারাক্কায় পানি বণ্টন
সংক্রান্ত প্রথম চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। পরে ফারাক্কা প্রশ্নে আগে দুটো
চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু তাতে করে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়নি।
কেননা ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহের গড় ধরে পানির হিস্যা নিশ্চিত করা
হয়েছিল। কিন্তু ফারাক্কায় পানির প্রবাহ বাড়েনি। চুক্তি অনুযায়ী যতটুকু পানি
থাকার কথা তাও আমরা পাচ্ছি না। এরই মধ্যে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে যে,
পানি না থাকার কারণে শুকিয়ে গেছে পদ্মাসহ এর ৪টি শাখা নদী। এর নেতিবাচক
প্রভাব পড়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ওপর।
বেকার হয়ে পড়েছেন নদীর উপকূলবর্তী অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
এছাড়া পানিতে লবণাক্ততার আশঙ্কায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হচ্ছে গড়াই
নদী। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী পদ্মা নদীর শাখা নদী হিসেবে গড়াই, হিসনা,
কালীগঙ্গা ও মাথাভাঙ্গা নদী প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে গেছে। (যায়যায়দিন ১৪
এপ্রিল, ২০১৪)। সুতরাং তিস্তার ক্ষেত্রে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ নিয়ে আবার প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন
মোদি। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, আন্তঃনদী সংযোগের কারণে গুজরাট খাদ্যে
স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। সুতরাং বাংলাদেশের মানুষ শঙ্কায় থাকবে।
বাংলাদেশ
সরকারের উচিত দ্রুত একটি টাস্কফোর্স গঠন করা, যাতে করে তথ্য-উপাত্তসহ
তিস্তা, ফারাক্কা ও ব্রহ্মপুত্রের পানির হিস্যা নিয়ে আমরা ভারতের সঙ্গে
শক্ত অবস্থানে যেতে পারি। ভারতের 'চাপ' এর কাছে আমরা যদি নতিস্বীকার করি,
তাহলে আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে পারব না। তাই সিদ্ধান্ত
নেয়ার সময় এখনই। নির্বাচনী ফল দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
আমরা চাই, আমাদের ন্যায্য হিস্যা। মমতা ব্যানার্জির একগুঁয়েমির কারণে আমরা
কোটি কোটি মানুষকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারি না। পানি না পেলে
উত্তরবঙ্গের চাষাবাদই শুধু ব্যাহত হবে না, বরং মরুকরণ প্রক্রিয়ার বিস্তৃতি
ঘটবে। আগামী ৩০ বছর পানির অভাবে এ অঞ্চল পরিণত হবে মরুভূমিতে। নয়াদিলি্লতে
যে সরকারই আসুক না কেন, আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনায় নেব। এখনই
প্রস্তুতি নেয়া জরুরি।
Daily Alokito Bangladesh
20.04.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment