রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ভারতের নির্বাচন ও আমাদের শঙ্কা

ভারতে ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই একটা আশঙ্কা শক্তিশালী হচ্ছে যে, নয়া সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে পারে। ৭ এপ্রিল থেকে সেখানে শুরু হচ্ছে নির্বাচন। মোট ৯ ধাপে ভোট গ্রহণ শেষ হবে ১২ মে এবং ১৬ মে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে। সর্বশেষ নির্বাচনী জরিপে দেখা গেছে, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পাবে ২৩৩টি আসন, আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট পাবে ১১৯টি আসন। এনডিএ জোটের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদি নিজেও আস্থাশীল। চ-িগড়ে গেল সপ্তাহে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিনি হতে যাচ্ছেন ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় মোদির বিজয়কে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জন্য বিপদ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী গুজরাট দাঙ্গার খলনায়ক মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে আঞ্চলিক বিরোধ নিয়ে প্রতিবেশী দেশ চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে কঠোর আচরণ করবে_ এমনটাই জানিয়েছেন মোদির দুজন উপদেষ্টা। বিজেপির ওই দুই উপদেষ্টা বাংলাদেশের ব্যাপারে বিজেপির নীতি কী হবে, সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য না করলেও অনেকটা স্পষ্ট করেছেন দলটির সভাপতি রাজনাথ সিং। তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে যেসব অভিবাসী এসে আসাম বা অন্যান্য জায়গায় বসতি গড়েছে তাদের অবৈধ ঘোষণা ও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা অশনিসঙ্কেত। অতীতে পুশব্যাকের অনেক ঘটনা ঘটেছে। বাংলা ভাষাভাষী, যারা অনেকেই ভারতের নাগরিক, তাদের যদি বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে বাধ্য। ভারতে এ মুহূর্তে চারটি জোট দৃশ্যমান। লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ জোট গঠিত হয়েছে। এনডিএ বা ইউপিএ জোটের বাইরে ১১টি বামমনা দল নিয়ে গঠিত হয়েছিল তৃতীয় ফ্রন্ট। আর মমতা ব্যানার্জির বরাবরই বামদের ব্যাপারে আপত্তি। তাই মমতা ও জয়ললিতার নেতৃত্বে জন্ম হয়েছে 'ফেডারেল ফ্রন্ট'। মূলত আঞ্চলিক দলগুলো এ ফ্রন্টের সদস্য। এরা এক সময় বামদের নেতৃত্বাধীন তৃতীয় জোটে ছিল। এখন তৃতীয় জোট থেকে বেরিয়ে তারা চতুর্থ জোট গঠন করেছে। মূলত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উদ্যোগেই এ চতুর্থ জোট গঠন। এদের সঙ্গে আছে উড়িষ্যার বিজু জনতা দল, ঝাড়খ- মুক্তি মোর্চা, উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি, বিহারের নিতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দল, অন্ধ্র প্রদেশের জগমোহন রেড্ডির কংগ্রেস, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি ও আরও ১০টি দল। জনমত জরিপে এদের এখন তৃতীয় শক্তি বলা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলে এ ফ্রন্ট যদি দ্বিতীয় অবস্থানে থাকে, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে এটা ঠিক, নির্বাচনের পরপর তারা অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হবেন। এ মুহূর্তে তারা নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাচ্ছেন না, এটা সত্য। তবে রাজনীতির হিসাব-নিকাশ বদলে যেতে পারে নির্বাচনের পর। বিজেপিকে ঠেকাতে এরা যদি শেষ পর্যন্ত ইউপিএ জোটের সঙ্গে ঐক্য করে সরকার গঠন করে, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে সঙ্গত কারণেই এ জোটের আসনসংখ্যা যদি ইউপিএ জোটের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে রাহুল গান্ধীকে তারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেবেন না। তাহলে কে হবেন ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? মমতা ব্যানার্জি নাকি জয়ললিতা? ১২ মার্চ নয়াদিলি্লতে জনসভা করেছেন মমতা। রামলীলা ময়দানে সমাজসেবী আন্না হাজারের সঙ্গে তার যৌথসভা করার কথা থাকলেও আন্না হাজারে শেষ পর্যন্ত আসেননি। তবে বড় প্রশ্ন তো থাকলই_ মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইউপিএ জোট কতটুকুই বা তাদের জনমত বাড়াতে পারবে? তাহলে কী রাহুল গান্ধী ব্যর্থ হলেন? সাম্প্রতিক সময়গুলোতে তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন। বারানসিতে গিয়ে সেখানকার রিকশাওয়ালাদের সঙ্গে রাস্তায় এসে বৈঠক করেছেন (একদিন রিকশা চালানোর কথাও বলেছেন তিনি)। দিলি্ল রেলস্টেশনে গিয়ে কুলিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভূপালে নারীদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় হিজড়াদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ফুটপাথের হকারদেরও ডেকেছেন নিজের বাসায়। মহারাষ্ট্রের উরঙ্গবাদে উপজাতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যেমনি, তেমনি বৈঠক করেছেন শিল্পপতিদের সঙ্গেও। এতে করে বোঝা যায়, রাহুল নতুন এক ইমেজ নিয়ে আসছেন। তৃণমূল পর্যায় গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনমানের উন্নতি করতে চান তিনি। ভারতে এদের সংখ্যাই প্রায় ৭০ কোটি। এদের নিয়েই বিহারের লালু প্রসাদ, মায়াবতী আর মুলায়েম সিংরা রাজনীতি করেন। মায়াবতী এদের নিয়ে রাজনীতি করে বিশাল এক আর্থিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। এরা একটি শক্তি। বিশ্বব্যাংকের (২০১৩) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের তিন ভাগের দুই ভাগ গরিব মানুষ বাস করে ভারতে। সুতরাং রাহুল গান্ধী এদের টার্গেট করেছেন। কিন্তু তাতেও তিনি তার নিজের তথা দলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারেননি। তাই রাহুল গান্ধীর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। অনেকেই বলার চেষ্টা করেন, কংগ্রেস যদি রাহুলের পরিবর্তে ছোট বোন প্রিয়াঙ্কা ভদ্রকে 'প্রমোট' করত, তাহলে বোধ করি ভালো ফল পাওয়া যেত। প্রিয়াঙ্কা বরাবরই মা সোনিয়া গান্ধীর নির্বাচনী এলাকার (রায়বেরেলি) দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনে কখনও প্রার্থী হন না। তবে ভারতের রাজনীতিতে নেহেরু পরিবার বরাবরই একটি 'ভোটব্যাংক'। কংগ্রেস নেতারা বরাবরই নেহেরু পরিবারকে ব্যবহার করেছে। রাজনীতিতে এ পরিবারের একক কর্তৃত্ব গড়ে তুলেছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর দাদা মতিলাল নেহেরু। আর রাহুল গান্ধী হচ্ছেন ইন্দিরা গান্ধীর নাতি। মতিলাল নেহেরু ১৯২১ সালে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর পিতা জওহরলাল নেহেরুও ছিলেন কংগ্রেসের সভাপতি। জওহরলাল জীবদ্দশায় কন্যা ইন্দিরাকে কংগ্রেসের সভাপতি বানিয়েছিলেন ১৯৫৯ সালে। আর সে একই প্রক্রিয়ায় রাহুলের পিতা রাজীব গান্ধীও কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন ১৯৮৩ সালে। পরে তিনি কংগ্রেসের সভাপতিও হন। এখন কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। মায়ের নেতৃত্বেই রাহুল প্রথমে একজন সাধারণ সম্পাদক ও পরে অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী, এটা নির্ধারিতই ছিল। মনমোহন সিংও স্পষ্ট করেছিলেন তা। কিন্তু অঙ্কের হিসাবটা কেন যেন বদলে যাচ্ছে! এ ব্যর্থতা কী রাহুলের? মানুষ কী পরিবর্তন চাচ্ছে? শেষ অব্দি কী মোদিই প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন? নাকি জন্ম হতে যাচ্ছে একটি 'ঝুলন্ত পার্লামেন্টের'? ভারতের রাজনীতির যারা কিছুটা খোঁজ-খবর রাখেন, তারা জানেন একাদশ লোকসভা নির্বাচনের পর একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায় যে, সরকার তার স্থায়িত্ব পাচ্ছে না। একাদশ লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালের মে মাসে। আর দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একাদশ লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপির নেতৃত্বে একটি সরকার সেখানে গঠিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ি। তার প্রধানমন্ত্রীর বয়স ছিল মাত্র ১৩ দিন। বাজপেয়ি পদত্যাগ করলে জনতা দলের নেতৃত্বে একটি যুক্তফ্রন্ট সরকার সেখানে গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হন দেবগৌড়া। দেবগৌড়া সরকারকে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের আস্থা হারিয়ে আস্থা ভোটে হেরে যান দেবগৌড়া। পরে আইকে গুজরাল যুক্তফ্রন্টের নেতা নির্বাচিত হলে কংগ্রেস তাকে সমর্থন করে। কিন্তু জৈন কমিশনের রিপোর্ট (রাজীব গান্ধীর হত্যাকা-ের সঙ্গে ডিএমকের জড়িত থাকার প্রমাণ) প্রকাশিত হলে পতন ঘটে আইকে গুজরাল সরকারের (২৮ নভেম্বর ১৯৯৭)। দ্বাদশ লোকসভা নির্বাচনেও কংগ্রেসের ভরাডুবি ঘটে। তারা আসন পেয়েছিল ১৪২ (দশম লোকসভায় ২৩২ ও ২৫২, ১১তম ১৪২), যেখানে বিজেপি পেয়েছিল ১৮২ আসন। ত্রয়োদশ লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার সেখানে গঠিত হয়েছিল। তাদের শরিক ছিল আঞ্চলিক দলগুলো। আঞ্চলিক দলগুলোর সহযোগিতা নিয়েই বাজপেয়ির পক্ষে সম্ভব হয়েছিল সরকার গঠন করার। ২০০৪ সালে ১৪তম ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত ১৫তম লোকসভা নির্বাচনে পরপর দুই টার্ম ইউপিএ জোট বিজয়ী হয়েছিল এবং দু'দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিং। এখানে বিজেপির উত্থান নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। ভারতব্যাপী কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী এখন এ বিজেপি। অথচ ১৯৮৪ সালে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র দুটি আসন। ১৯৮৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮টিতে। আর ১৯৯১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৭টিতে। ১৯৯৬ সালে এ সংখ্যা ১৬২, ১৯৯৮ সালে ১৮২। পর্যায়ক্রমে বিজেপি যে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে এবং কংগ্রেসের বিকল্প একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের দাঁড় করাতে পেরেছে, পরিসংখ্যানই আমাদের এ কথা বলে। এক্ষেত্রে ১৬তম লোকসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিজেপি যদি আবার সরকার গঠন করে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জনমত জরিপ যদি সত্যি হয় এবং কংগ্রেস যদি হেরে যায়, তাহলে রাহুল গান্ধীর জন্য তা হবে একটা বড় ধরনের পরাজয়। একইসঙ্গে তার নেতৃত্বের জন্য সৃষ্টি হবে বড় ধরনের হুমকি। এখন নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য বিজয় বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতীয় নীতিতে আরও পরিবর্তন আসতে পারে। এটা তো ঠিক, শতবর্ষ ধরেই এ দুই অঞ্চলের মানুষ দুই দেশের মাঝে আসা-যাওয়া করেছেন। ১৯৪৭-পরবর্তী সময়ে অনেক বাঙালি পরিবার কলকাতায় বসতি গড়েছে। তাদের সন্তানরা এখন ভারতের মূল ধারায় শরিক হয়েছেন। এদের আর বাংলাদেশী বাঙালি বলা যাবে না। ঠিক তেমনি আসামের সঙ্গে সিলেটের একটা যোগসূত্র আছে। পারিবারিকভাবেও এ দুই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এখন বাঙালি বলে কাউকে যদি ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে তা দু'দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে বাধ্য। তিস্তার পানি চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারে বিজেপির অবস্থান আমরা মোটামুটি জানি। চূড়ান্ত বিচারে নরেন্দ্র মোদিকে যদি মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে সরকার গঠনের প্রশ্নে কোনো 'কম্প্রোমাইজ' করতে হয়, তাহলে মোদি মমতার সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবেন না। এতে করে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি চলে যাবে 'ডিপ ফ্রিজে'। সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারেও বিজেপির প্রচ- আপত্তি রয়েছে। বিজেপির বিরোধিতার কারণেই কংগ্রেস সরকারের সময় চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। চুক্তিটি ভারতীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছিল। একটি বিল লোকসভায় উপস্থাপিতও হয়েছিল; কিন্তু বিজেপির আপত্তির কারণে এটা নিয়ে আর আলোচনা হয়নি। তখন বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে, এটা আমার মনে হয় না। এর বাইরে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং ট্রানজিট প্রশ্নে দুই দেশের মধ্যে আস্থার যে ঘাটতি রয়েছে, সে ব্যাপারে নয়া সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে বলে মনে হয় না। আমাদের পররাষ্ট্র সচিব গত মাসের শেষের দিকে নয়াদিলি্ল গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নির্বাচনের আগে আমাদের পররাষ্ট্র সচিব যখন নয়াদিলি্ল যান, তখন বুঝতে হবে বাংলাদেশ সরকার পরিস্থিতি যাচাই করছে। স্পষ্টতই তিনি কোনো সুখবর নিয়ে আসতে পারেননি। এটা মোটামুটিভাবে আমরা সবাই জানি, কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ বেশ কিছু চুক্তি করেছে। ভারত গেল পাঁচ বছর বাংলাদেশের কাছ থেকে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশ সে অর্থে তেমন সুবিধা পায়নি। তখন নয়াদিলি্লতে সম্ভাব্য একটি মোদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের 'অবস্থান' কী হবে, এ ব্যাপারে এখনই একটি সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। সরকারের উচিত হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি 'ভারতীয় ডেস্ক' সৃষ্টি করা ও একটি টিম গঠন করা, যারা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেবে। এটা এখন মোটামুটিভাবে ধরে নেয়া যায়, যদি নয়াদিলি্লতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন একটি সরকার গঠিত হয়, তাহলে তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই বাংলাদেশকে প্রস্তুতিটা এখনই নিতে হবে। সম্ভবত ভারতের মানুষ একটি পরিবর্তন চাচ্ছে। কংগ্রেসের দীর্ঘ শাসনে ভারতে দুর্নীতি বেড়েছে। এটাকেই ইস্যু করেছে বিজেপি। এরই মধ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির বৈরিতা বেড়েছে। মোদি নিজে সোনিয়া গান্ধীর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একজন সংসদ সদস্য সোনিয়া ও রাহুলকে ইতালিতে ফেরত পাঠানোরও হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদিকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো দরকার_ এমন মন্তব্যও করেছেন কেউ কেউ। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদি অভিযুক্ত হয়েছিলেন, যে দাঙ্গায় কয়েক হাজার মুসলমান নাগরিক প্রাণ হারিয়েছিলেন। এখন সেই মোদিই চলে আসছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। যে মোদিকে এক সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার দেশে প্রদেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, সেই মোদি এখন হতে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী! এর চেয়ে লজ্জার আর কী থাকতে পারে? এ নির্বাচন ভারতের জন্য অনেক কিছু। যদি কংগ্রেস ক্ষমতা হারায়, তাহলে নেহেরু পরিবারের জন্য এটা হবে একটা কলঙ্ক। আর যদি সত্যি সত্যিই মোদির দল বিজেপি বিজয়ী হয়, তাহলে তার আগ্রাসী নীতি প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে অন্তরায় সৃষ্টি হবে। ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচন নিয়ে তাই অনেক প্রশ্ন থেকে গেল। Daily ALOKITO BANGLADESH 04.04.14

0 comments:

Post a Comment