রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ভারতের নির্বাচন ও বাংলাদেশ

আগামীকাল শুরু হচ্ছে ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচন। মোট ৯ দফায় এ নির্বাচন সম্পন্ন হবে। দ্বিতীয় দফা অনুষ্ঠিত হবে ৯ এপ্রিল, তৃতীয় দফা ১০ এপ্রিল, চতুর্থ দফা ১২ এপ্রিল, পঞ্চম দফা ১৭ এপ্রিল, ষষ্ঠ দফা ২৪ এপ্রিল এবং সপ্তম দফা ৩০ এপ্রিল। ৭ ও ১২ মে অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ৮ম ও ৯ম দফা নির্বাচন। আর ফলাফল ঘোষণা করা হবে ১৬ মে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞ। ভোটারের সংখ্যা ৮১ কোটি ৪৫ লাখ। চিন্তা করা যায়? ভারতের নির্বাচন কমিশনে আছেন মাত্র তিনজন কমিশনার (প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ)। এক কোটি ২০ লাখ সদস্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকলেও সারা দেশে রয়েছে মাত্র ৩০০ কর্মকর্তা আর ৫০০ সরকারি স্টাফ। এর বাইরে বাকিদের আনা হয় পেষণে। লোকসভার ৫৪৩ আসনের জন্য ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৯ লাখ ৩০ হাজার। এ বিশাল নির্বাচন প্রক্রিয়া আর কোনো দেশেই হয় না। তারপরও মাত্র তিনজন নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেন। এ নিয়ে কেউ কখনও প্রশ্ন তোলে না।এ নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা এখন। শেষ পর্যন্ত কি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ক্ষমতা হারাচ্ছে? কিংবা নরেন্দ্র মোদি কি হতে যাচ্ছেন ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? নাকি জন্ম হবে একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্টের। জনমত জরিপে অবশ্য বিজেপির পাল্লা ভারি। এবিপি আনন্দ-নিয়েলসেন গত জানুয়ারি থেকেই জনমত সমীক্ষা প্রকাশ করে আসছে। জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারিতে দুটি জনমত জরিপে যে ধারণা পাওয়া গিয়েছিল, তাতে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে ৭ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে পরিচালিত তৃতীয় জরিপে। তাতে দেখা যায়, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের আসন সংখ্যা ফেব্র“য়ারির হিসেবে সামান্য কমেছে। আরও দেখা যায়, বিজেপি এককভাবে পেতে পারে ২০৯টি আসন। অন্যদিকে ইউপিএ জোটের আসনপ্রাপ্তি মাত্র ১০৯। এতে করে স্পষ্টতই ইউপিএ জোট ক্ষমতা হারাবে। জানুয়ারিতে জনমত জরিপে দেখা গিয়েছিল, মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় ৫৩ শতাংশ ভোটার। ফেব্র“য়ারিতে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ শতাংশে। আর মার্চে এ সংখ্যা শতকরা ৫৪ ভাগ।
অন্যদিকে জানুয়ারিতে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছেন শতকরা ১৫ শতাংশ ভোটার। ফেব্র“য়ারিতে এ সংখ্যা বেড়েছে ১৮ শতাংশে। আর মার্চেও ওই ১৮ শতাংশ ভোটারই রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছে।সাধারণত জনমত জরিপ সত্য বলেই প্রমাণিত হয়। অন্তত একটা বিষয় এখন স্পষ্ট- বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের জনসমর্থন বেড়েছে। এর পেছনে হিন্দুত্ববাদ, ব্যক্তি মোদির অর্থনীতিবিষয়ক কর্মকাণ্ড নাকি ইউপিএ সরকারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতি কাজ করছে, তা এ মুহূর্তে স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে ভারতীয় পত্রপত্রিকায় নানা বিশ্লেষণধর্মী মতামত প্রতিদিনই ছাপা হচ্ছে। তবে কংগ্রেস যে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে, এটা নিয়ে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই।এখন নির্র্বাচনকে ঘিরে অনেক ‘কিন্তু’ ও ‘যদি’র জন্ম হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট যদি ম্যাজিক ফিগার ২৭২ আসন পায় (মোট আসন ৫৪৩), তাহলে জোট এককভাবেই সরকার গঠন করবে। সেক্ষত্রে নরেন্দ্র মোদি হবেন ভারতের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু যদি এনডিএ জোট এর চেয়ে কম আসন পায়, তখন? সেখানে অনেক সম্ভাবনা আছে। এক. নরেন্দ্র মোদি মমতা ব্যানার্জির সহযোগিতা চাইতে পারেন। লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের আসন সংখ্যা ৪২। জনমত জরিপ অনুযায়ী তৃণমূল কংগ্রেস ২৮টি আসন পেতে পারে। সরকার গঠনের জন্য মমতা ব্যানার্জি তখন একটি ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন। নির্বাচনী প্রচারণায় মমতা একদিকে কংগ্রেসের যেমন সমালোচনা করেছেন, তেমনি বিজেপিরও সমালোচনা করেছেন। কয়েকটি আঞ্চলিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে চতুর্থ জোট ‘ফেডারেলিস্ট ফ্রন্ট’। অতীতে মমতা বিজেপির সঙ্গেই ছিলেন। আবার বিজেপি সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে আলাদা অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে কংগ্রেসের নেতত্বাধীন ইউপিএ জোট থেকেও মন্ত্রী হয়েছিলেন। সেখান থেকেও পদত্যাগ করেছিলেন। এই হচ্ছেন মমতা। যেখানে স্বার্থ বেশি, সেখানে তিনি থাকেন। ফলে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিনিময়ে তিনি এনডিএ জোটে যোগ না দিয়েও মোদিকে সরকার গঠনে সাহায্য করতে পারেন। দুই. ভারতের রাজনীতিতে এ মুহূর্তে তিন মহিলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন- ‘আম্মা’ (জয় ললিতা), ‘বহেনজি’ (মায়াবতী) ও ‘দিদি’ (মমতা ব্যানার্জি)। জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, তৃণমূলের পাশাপাশি এডিএমকে পেতে পারে ২১ আসন, আর বিএসপি ১৮ আসন। এর বাইরে আছে উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের দল বিজেডি। তারা ১৭ আসন পেতে পারে। ফলে সরকার গঠনে এসব আঞ্চলিক দল একটি ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে মোদিকে ঠেকাতে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট এ তিন মহিলার একজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন করতে পারে। তবে বিষয়টা খুব সহজ নয়। মমতা, মায়াবতী কিংবা জয়ললিতার (তিনজই অবিবাহিত) মধ্য থেকে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটা একটা সমস্যা তৈরি করতে পারে। তিন. একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট সৃষ্টি হওয়াও বিচিত্র নয়। ১৯৯৬ সালে বাজপেয়ির (বিজেপি) ১৩ দিনের (১১তম সংসদ) প্রধানমন্ত্রিত্বের কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। কিংবা ১৯৯৭ সালে জনতা দলের দেব গৌড়া সরকার (১১তম সংসদ, ৩২৮ দিন) এবং ১৯৯৮ সালের আইকে গুজরালের ৩৩২ দিনের সরকারকে কংগ্রেস সমর্থন করেছিল। আমরা আরও একটু পেছনের দিকে যেতে পারি। মোরারজি দোশাই (১৯৭৭) তার টার্ম পূরণ করতে পারেননি। তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ২ বছর ১২৬ দিন (ষষ্ঠ সংসদ)। চরণ সিং ক্ষমতায় ছিলেন (১৯৭৯) মাত্র ১৭০ দিন (ষষ্ঠ সংসদ)। সেই ইতিহাসেরই কি পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে এবার? তবে জনমত জরিপ এটা স্পষ্ট করেছে, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সমকালীন ভারতীয় রাজনীতির জন্য এটা হবে একটা বড় চমক। আরও দুঃখজনক হচ্ছে, রাহুল গান্ধী যে প্রত্যাশা নিয়ে এসেছিলেন, সেই প্রত্যাশা তিনি পূরণ করতে পারেননি। যেখানে জনমতে দেখা গেছে, মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান ৫৪ শতাংশ মানুষ, সেখানে রাহুল গান্ধীকে চান মাত্র ১৮ ভাগ মানুষ। নেহেরু পরিবারের প্রতি এটা একটা অসম্মান। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ৯ বছর ৩১৫ দিনের ইউপিএ সরকারের বিদায় অনিবার্য হয়ে উঠছে। বিগত ১৪তম ও ১৫তম সংসদ কংগ্রেস বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। মনমোহন সিং এর আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি আর রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবেন না। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, রাহুল হবেন ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। এখন দেখা যাচ্ছে, মনমোহন সিংয়ের এ আশা অধরাই থেকে যাবে। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বিজয়ী হয়েছিল ২০১টি আর বিজেপি ১১২টিতে। এর বাইরে সমাজবাদী পার্টি (মুলায়েম সিং যাদব) ২২, বহুজন সমাজবাদী ২১, জনতা দল ১৯, তৃণমূল ১৮, ডিএমকে ১৬, সিপিএম ১৬, বিজু জনতা দল ১৪, শিবসেনা ১০, এআইএডিএমকে ৯, জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস ৮, তেলেগু দেশম ৬ আসন পেয়েছিল। ইউপিএ জোটে রয়েছে ডিএমকে, জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস, জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ন্যাশনাল কংগ্রেস, মুসলিম লীগ। এ জোটের জন্ম হয়েছিল ২০০৪ সালে। অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে রয়েছে (জন্ম ১৯৯৮) শিবসেনা, ডিএমডিকে, এমডিএমকে, লোক জনশক্তি, আকালি দল ইত্যাদি।মোদির সম্ভাব্য ‘বিজয়’ ইতিমধ্যে ভারতের ১৮ কোটি মুসলমানকে একটি শংকায় ফেলে দিয়েছে। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে (৬ ডিসেম্বর ১৯৯২) রামমন্দির নির্মাণ অভিযানের অন্যতম সংগঠক হিসেবে জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে জোরালো অভিষেক ঘটেছিল বিজেপি নেতা মোদির। এরপর ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। যদিও আদালতে তা প্রমাণিত হয়নি, কিন্তু মুসলমান বিদ্বেষী মনোভাব থেকে তিনি কখনও বের হয়ে আসতে পারেননি। তার নির্বাচনী অঙ্গীকারের তালিকায় এখনও রয়েছে রামমন্দির নির্মাণের বিষয়টি। সুতরাং ভারতের মুসলমানরা আগামীতে আরও খারাপ পরিস্থিতির আশংকা করছেন।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় মোদির বিজয়কে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর জন্য বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্যও রয়েছে খারাপ খবর। মোদির দু’জন উপদেষ্টা বলেছেন, মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে তারা আঞ্চলিক বিরোধ নিয়ে প্রতিবেশী দেশ চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে কঠোর আচরণ করবেন। অন্যদিকে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে করে নতুন করে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। রাজনাথ সিং সম্প্রতি বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে যেসব অভিবাসী এসে আসাম বা অন্যান্য জায়গায় বসতি গড়েছে, তাদের অবৈধ ঘোষণা ও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার এ বক্তব্য বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ সংবাদটিকে কতটুকু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বলতে পারব না। কিন্তু তাদের কোনো মন্তব্য আমার চোখে পড়েনি। এমনকি প্রধান বিরোধী দল ও তার শীর্ষনেতারাও এর প্রতিবাদ জানাননি বা কোনো মন্তব্য করেননি। যে কোনো বিবেচনায় এটা একটা উসকানিমূলক মন্তব্য, যা আমাদের নানা চিন্তার খোরাক জোগাবে।
নরেন্দ্র মোদির বিজয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতীয় নীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। এটা তো ঠিক, শতবর্ষ ধরেই এ দুই অঞ্চলের মানুষ দু’দেশে আসা-যাওয়া করছেন। ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে অনেক বাঙালি পরিবার কলকাতায় বসতি গড়েছেন। তাদের সন্তানরা এখন ভারতের মূলধারায় শরিক হয়েছেন। এদের আর বাংলাদেশী বাঙালি বলা যাবে না। ঠিক তেমনি আসামের সঙ্গে সিলেটের একটা যোগসূত্র আছে। পারিবারিকভাবেও এ দুই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এখন বাঙালি বলে কাউকে যদি ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে তা দু’দেশের মাঝে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে বাধ্য। তিস্তার পানি চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারে বিজেপির অবস্থান আমরা মোটামুটি জানি। চূড়ান্ত বিচারে নরেন্দ্র মোদিকে যদি মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে সরকার গঠনের প্রশ্নে কোনো ‘কমপ্রোমাইজ’ করতে হয়, তাহলে মোদি মমতার সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবেন না। এতে করে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি চলে যাবে ‘ডিপফ্রিজে’। সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারেও বিজেপির প্রচণ্ড আপত্তি রয়েছে। বিজেপির বিরোধিতার কারণেই কংগ্রেস সরকারের সময় চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়নি। চুক্তিটি ভারতীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছিল। একটি বিল লোকসভায় উপস্থাপিতও হয়েছিল। কিন্তু বিজেপির আপত্তির কারণে এটা নিয়ে আর আলোচনা হয়নি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কোনো সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে, এটা আমার মনে হয় না। এর বাইরে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং ট্রানজিট প্রশ্নে দু’দেশের মাঝে আস্থার যে ঘাটতি রয়েছে, সে ব্যাপারে নতুন সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে বলে মনে হয় না।আমাদের পররাষ্ট্র সচিব গেল মাসের শেষদিকে নয়াদিল্লি গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। নির্বাচনের আগে আমাদের পররাষ্ট্র সচিব যখন নয়াদিল্লি যান, তখন বুঝতে হবে বাংলাদেশ সরকার পরিস্থিতি যাচাই করছে। স্পষ্টতই তিনি কোনো সুখবর নিয়ে আসতে পারেননি। এটা মোটামুটিভাবে আমরা সবাই জানি, কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভালো সম্পর্ক রয়েছে, যে কারণে ইউপিএ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ বেশ কিছু চুক্তি করেছে। ভারত গেল পাঁচ বছর বাংলাদেশের কাছ থেকে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সে অর্থে তেমন সুবিধা পায়নি। এখন নয়াদিল্লিতে সম্ভাব্য একটি মোদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়, সেটা দেখার বিষয়। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট করেই বলা যায়, জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে ভারতের নীতির পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে খবর বের হয়েছে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে করিডোর পেতে যাচ্ছে ভারত। আসাম থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ যাবে বিহারে। একই সঙ্গে চলতি বছরেই বহুল বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে ভারত। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থ রয়েছে। সুতরাং সম্ভাব্য মোদি সরকার এসব প্রকল্প বাতিল করবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ এখন তার স্বার্থ আদায়ে কতটুকু উদ্যোগ নেবে, সেটাই দেখার বিষয়।ভারতের মানুষ একটা পরিবর্তন চাচ্ছে। রাহুল গান্ধীর একটা বড় ব্যর্থতা যে, তিনি তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে আবির্র্ভূত হলেও মানুষ আকর্ষিত হয়েছে মোদির অর্থনৈতিক কর্মসূচিতে। তবে যে পরিবর্তন আসছে, সেই পরিবর্তনের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। ভারত আবারও সেই একাদশ সংসদের সময়কার পরিস্থিতির দিকে ফিরে যাচ্ছে কি-না, সেটাই অনেকের কাছে বড় প্রশ্ন এখন। ১৯৯৬ সালের মে মাসে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ সংসদ তিনজন প্রধানমন্ত্রীর জন্ম দিয়েছিল (বাজপেয়ি, দেবগৌড়া, আইকে গুজরাল)। ভারতে কী পরিবর্তন ঘটে, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও এক মাস। ১৬ মে আমরা জানতে পারব ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম। Daily JUGANTOR 06.04.14

0 comments:

Post a Comment