প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন জেলার মন্ত্রী। এসব বিশ্ববিদ্যালয় আদৌ শিক্ষার মান ধরে রাখতে পারবে কি না এটা একটা বড় প্রশ্ন এখন। তবে ভয়টা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ তথা নির্মাণকাজে যে দুর্নীতি হয়, তা আমরা বন্ধ করব কীভাবে? বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এখন শতকোটি নয়, হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। সরকার এ ক্ষেত্রে উদার। সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক ও বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য হিসেবে আমি কিছু সুপারিশ রাখতে চাই, যা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে দুর্নীতি কমাতে সাহায্য করবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ও দলীয় কর্মকাণ্ডে যিনি সম্পৃক্ত তাদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে নিরপেক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি উপাচার্য প্যানেল তৈরি করবে। সেখান থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে। উপাচার্যরা হবেন শুধু এক টার্মের জন্য। নিজ বিশ^বিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগের অলিখিত বিধান বদলাতে হবে। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি করেই শিক্ষকরা উপাচার্য হন। ফলে শিক্ষক রাজনীতি করতে গিয়ে তারা একটা ‘বলয়’ তৈরি করেন। আর ওই বলয়ের কারণেই উপাচার্য ‘বিশেষ গোষ্ঠীর’ কাছে ‘জিম্মি’ হয়ে যান এবং ওই সুবিধাভোগীদের স্বার্থে কাজ করেন। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএসসির মতো একটি কমিশন গঠন করতে হবে। তিন পর্বের নিয়োগ প্রক্রিয়া সমর্থনযোগ্য। নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা বোর্ড গঠন করতে হবে। ওই বোর্ডে একাধিক বিশেষজ্ঞ থাকবেন। এই কমিশন ইউজিসির বাইরে কাজ করবে। অথবা ইউজিসির অংশ হিসেবে কাজ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ই-টেন্ডার পেতে হবে। ওই প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি থাকতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি থাকা মানেই হচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী গ্রুপের পক্ষ হয়ে কাজ করা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা কিছু শিখতে পারি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের
কিছু কিছু শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো গবেষক প্রতিষ্ঠানে এবং টিভিতে, ‘পূর্ণকালীন’ কাজ করেন। পৃথিবীর কোথাও এমনটি চিন্তা করা য্বিশ বিশ্ববিশববিদ্যালয় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে তারা এ কাজটি করেন। জাবির উপাচার্য সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপ-উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ও জ্বালানি ব্যবহার করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন এবং বেশি সময় দেন। এটা তিনি পারেন না। এটা নৈতিকতার প্রশ্ন। এটা তদন্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বিশ্ববিদ্যালয়েরগুলো এক ধরনের ‘সংকটের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম ও ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সরকার একটি কমিশন গঠন করতে পারে, যারা সরকারকে সুপারিশ করবে। ইউজিসির পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রপতি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। তিনি একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারেন। একজন সাবেক বিচারপতি এর নেতৃত্ব দেবেন। সাবেক উপাচার্য অথবা মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানরা এর সদস্য হতে পারেন। শিক্ষামন্ত্রীর একটি বক্তব্য ছাপা হয়েছে তাতে তিনি সততা ও নৈতিকতা নিয়ে কাজ করার জন্য উপাচার্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি যে অনুষ্ঠানে এই বক্ত ব্য দেন ওই অনুষ্ঠানে এমন একজন উপাচার্য বক্তৃতা দিয়েছিলেন, যার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা দিয়ে ধানমণ্ডিতে জমি কিনে উপাচার্য ভবন নির্মাণ করার দুর্নীতির অভিযোগে আছে। সরকারের অডিট আপত্তি উঠেছে বলে দৈনিক বণিক বার্তা আমাদের জানিয়েছিল। উপাচার্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের নানা অভিযোগ ড. ফরিদকে বিক্ষুব্ধ করে তুলবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি সবার মতো বক্তৃতা দিয়ে মাঠ গরম করেননি। আমার অবাক লাগল, যখন দেখলাম তার সহকর্মীরা কেউই তার পাশে এসে দাঁড়ালেন না! শিক্ষকরা নিজেদের মানমর্যাদা নিয়ে যখন সচেতন হন না, তখন এর চেয়ে আর দুঃখ কিছু থাকতে পারে না। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের একটি বক্তব্য ছাপা হয়েছে মিডিয়ায়। তার মতে, ‘আলোর পরিবর্তে অন্ধকার নামছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়’ (দেশ-বিদেশে, ২৯ সেপ্টেম্বর)। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি শিক্ষক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। প্রধানমন্ত্রী তাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেন। তার এই বক্তব্য ধরে প্রধানমন্ত্রী কী কোনো উদ্যোগ নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে? যেসব উপাচার্য আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেবেন? দলীয় কর্মীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়ে (ক্যাসিনোর ঘটনায়) তিনি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অতীতে কেউ এমনটি করেননি। এখন সব উপাচার্যের অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।
এভাবে অভিযুক্ত ভিসিরা যদি পার পেয়ে যান, তাহলে আগামী দিনের ভিসিরাও এ ধরনের অন্যায় কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবেন। একটি অন্যায় আরেকটি অন্যায়কে ডেকে আনবে। এদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ‘জাবি ভিসির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হচ্ছে না’ (ভোরের কাগজ, ৩ অক্টোবর)। যেখানে ভিসি নিজে চাচ্ছেন একটি তদন্ত কমিটি করে তাকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হোক, কিংবা যেখানে শিক্ষকরা তাকে লাল কার্ড দেখিয়ে তার অপসারণ দাবি করেছেন, সেখানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। উপাচার্যের ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এটি করা উচিত। তার বিরুদ্ধে আদৌ কোনো ষড়যন্ত্র হয়েছে কি না এটাও আমাদের জানা দরকার
Daily Desh Rupantor
10.10.2019
0 comments:
Post a Comment