শেষ
পর্যন্ত যা প্রত্যাশা করেছিলাম, তা-ই হয়েছে। বহুল আলোচিত টিকফা ফোরামের
প্রথম বৈঠকে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা দিলেন না মার্কিন
কর্মকর্তারা। টিকফার ব্যাপারে বছরে একবার দুপক্ষ আলোচনায় বসবে এবং সেটাই
হল। আলোচনা হল। আলোচনার কোনো এক পর্যায়ে জিএসপি নিয়ে কথা হল। কিন্তু তাতে
সাড়া দিলেন না মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতারা। বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল
অনেক বেশি। কিন্তু ফলাফলটা শূন্যই রয়ে গেল।
টিকফা নিয়ে একটি বিতর্ক
বাংলাদেশে আছে। প্রথমত, গেল বছরের ২৫ নভেম্বর টিকফা স্বাক্ষরিত হয়। অথচ
সেটা ছিল সরকারের শেষ সময়। সাধারণত সরকারের শেষ সময়ে এসে কোনো নীতিগত
সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। কিন্তু সরকার সেটা করেছিল। সুতরাং সরকারের উদ্দেশ্য
নিয়ে প্রশ্ন আছে। দ্বিতীয়ত, জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত যে কোনো
বিষয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া উচিত, যাতে জাতি সবকিছু জানতে পারে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা জানতে পারলাম না টিকফার বিস্তারিত তথ্য। যদিও
মার্কিন সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত তথ্য আছে,
কিন্তু তা বিস্তারিত নয়। তৃতীয়ত, টিকফা নিয়ে একটা বড় অভিযোগ হচ্ছে এ
চুক্তিটি সংবিধান লংঘন করেছে। সংবিধানের ১৪৫ ধারার ক-তে বলা হয়েছে, বিদেশের
সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে এবং রাষ্ট্রপতি
তাহা সংসদে পেশ করিবার ব্যবস্থা করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, জাতীয়
নিরাপত্তার সহিত সংশ্লিষ্ট অনুরূপ কোনো চুক্তি কেবলমাত্র সংসদের গোপন বৈঠকে
পেশ করা হইবে। সংসদে টিকফা পেশ করা হয়নি। যদি ধরে নেই জাতীয় নিরাপত্তার
সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু এ চুক্তিতে রয়েছে এবং সে কারণেই চুক্তিটি সংসদে পেশ
করা হয়নি (?), তাহলেও একটা শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। কেননা চুক্তিটি
ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় এবং তাতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো রক্ষাকবচ আছে বলে
আমার মনে হয়নি। তবে এটা সত্য, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে টিকফাকে চ্যালেঞ্জ করে
হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছিল। এটি এখন কোন পর্যায়ে আছে, তা আমি বলতে পারব
না। তবে এটা বলতেই হবে, সরকার খুব তড়িঘড়ি করে এ চুক্তিটি করেছে। এর পেছনে
সরকারের কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। একটি উদ্দেশ্য হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের
কাছ থেকে শুল্ক সুবিধা আদায় করা। অর্থাৎ জিএসপি সুবিধা (তৈরি পোশাকে)
নিশ্চিত করা। কিন্তু এ সুবিধা না পাওয়ায় এবং ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম
টিকফা ফোরামের প্রথম বৈঠকের পরও এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেল। তাহলে কি প্রশ্ন
উঠবে না যে, টিকফা স্বাক্ষর করে আমরা খুব লাভবান হইনি!
যুক্তরাষ্ট্রে
বাংলাদেশী পণ্যের বাজার ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের। এর মাঝে আমরা শুল্কমুক্ত
সুবিধা পাই ০.৫ ভাগ পণ্যে, অর্থের হিসাবে এর পরিমাণ ২৬ মিলিয়ন ডলার। আমরা
শুল্কমুক্ত সুবিধা পাই তামাক, সিরামিক, ফার্নিচার, প্লাস্টিক, খেলনা
প্রভৃতি পণ্যে। অথচ এসব সেক্টরে খুব কম পণ্যই আমরা যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি
করি। আমাদের পণ্যের বড় বাজার তৈরি পোশাকের। এ খাতে আমাদের রফতানি বেড়েছে ১২
ভাগ হারে। শতকরা ১৫ দশমিক ৬২ ভাগ হারে শুল্ক দিয়ে আমরা তৈরি পোশাকের বিশাল
এক বাজার গড়ে তুলেছি যুক্তরাষ্ট্রে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ৫ বছরে শুধু
তৈরি পোশাক শিল্পে শুল্ক দেয়া হয়েছে ৩ মিলিয়ন ডলার। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী
সংবাদ সম্মেলনে একটা তথ্য আমাদের দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তুলনামূলক
বিচারে অন্যান্য শিল্পোন্নত তথা মধ্যম সারির উন্নয়নশীল দেশের তুলনায়
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি শুল্ক দেয়। যেমনÑ মার্কিন বাজারে পণ্য
পাঠাতে ভিয়েতনাম শুল্ক দিচ্ছে ৮.৩৮, ইন্দোনেশিয়া ৫.৩০, তুরস্ক ৩.৫৭, চীন
৩.০৮, ফিলিপাইন ২.৯৭, ইতালি ২.৪৯, ভারত ২.২৯, থাইল্যান্ড ১.৭৯, স্পেন ১.৭৭
ভাগ ইত্যাদি।
এখানেও এক ধরনের বিভ্রান্তি রয়েছে। পোশাক শিল্পে
ইন্দোনেশিয়া, চীন কিংবা ভিয়েতনাম, ভারত আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। এসব দেশ যে
পরিমাণ শুল্ক দেয় বলা হচ্ছে, তা কি শুধু পোশাক শিল্পের জন্য? নাকি অন্যান্য
পণ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? সাংবাদিকরা এ প্রশ্ন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের
দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ডিলানিকে। তিনি বলেছেন,
টিকফার আওতায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ
চীন, হংকং কিংবা ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি শুল্ক দেয়Ñ এটা ঠিক নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ চীনের মতো মোস্ট ফেভারড নেশন হিসেবে সুবিধা
পায়। সমস্যাটা এখানেই। বাংলাদেশ কি তাহলে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে? ডিলানি
কি ভুল তথ্য দিয়েছেন? আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তির
খুঁটিনাটি বড় জটিল। এগুলো বোঝার ও ব্যাখ্যা দেয়ার বিশেষজ্ঞ লোকের অভাব
রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। যে সেলটি সেখানে কাজ করে, তারাও দক্ষ নয়। যতদূর
জানি, প্রতিটি পণ্যের আলাদা আলাদা শুল্ক, এমনকি তৈরি পোশাকেও হাজারটা
আইটেম আছে। সব আইটেম বাংলাদেশ তৈরি করে না, রফতানিও করে না। প্রতিটি
আইটেমের শুল্ক আলাদা। এক্ষেত্রে আমাদের আলোচকরা সবকিছু গুলিয়ে ফেলেছেন
কি-না, আমার সন্দেহ হয়। তাই মাইকেল ডিলানির বক্তব্য উল্লেখ করেই বাংলাদেশের
উচিত আরএমজি (তৈরি পোশাক) খাতে অতিরিক্ত শুল্কের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা।
জিএসপি
সুবিধা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৫ সালের হংকংয়ে অনুষ্ঠিত
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে ধনী দেশগুলো ৯৭ শতাংশ পণ্যে
শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার শর্ত কার্যকর করতে রাজি হয়েছিল। এতে করে একটা
ধারণার জš§ হয়েছিল যে, অনুন্নত বিশ্ব পশ্চিমা উন্নত দেশে তাদের পণ্যের আওতা
বাড়াতে পারবে। তবে একটা প্রশ্ন ছিল পণ্যের মান ও উৎস নির্ধারণ নিয়ে। এ
দুটি বিষয় নির্ধারণের ক্ষমতা ছিল আমদানিকারক দেশগুলোর হাতে। হংকং সম্মেলনের
দীর্ঘ ৮ বছর পর গত বছরের ৩-৭ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বিশ্ব বাণিজ্য
সংস্থার সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় (মন্ত্রী পর্যায়ে)। বালি সম্মেলনের
মধ্য দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে বটে, কিন্তু
বালি ঘোষণায় কোন পক্ষ কী পেল, কিংবা বাণিজ্য বৈষম্যের শিকার অনুন্নত
দেশগুলোর জন্য বিশেষ সুবিধাগুলো বাস্তবায়ন হবে কি-না, সে প্রশ্ন থেকে
গিয়েছিল। বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য
সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ প্রশ্নগুলোই আবারও উত্থাপিত হয়েছে। আমাদের জিএসপি
সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তৈরি পোশাকে কোনো জিএসপি সুবিধা
দিচ্ছে না। তারপরও অন্যান্য পণ্যে যতটুকু সুবিধা পেত বাংলাদেশ, তাও গত জুন
(২০১৩) থেকে স্থগিত রাখা হয়েছে। জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার সময়
যুক্তরাষ্ট্র মূলত তিনটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। এক. শ্রমমান, দুই. শ্রমিক
নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ তদন্ত ও বিচার, তিন. ট্রেড ইউনিয়ন
করার অধিকার। ঢাকায় টিকফার প্রথম বৈঠকেও যুক্তরাষ্ট্র আকার-ইঙ্গিতে এ
প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ রুলস অব
অরিজিনের কঠিন শর্তে আটকে আছে। ধনী দেশগুলো এটা তাদের স্বার্থে ব্যবহার
করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের মোট রফতানির ৬১.৩ ভাগ জিএসপি সুবিধার
আওতায়। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে মোট রফতানির প্রায় ৬০ ভাগ সুবিধা ব্যবহার
করতে পারছে বাংলাদেশ। বলা ভালো, বাংলাদেশের মোট রফতানির ৭৮ ভাগ তৈরি পোশাক।
এর ৬০ ভাগ যায় ইউরোপে আর ২৫ ভাগ যুক্তরাষ্ট্রে। তৈরি পোশাক আমাদের আয়ের
অন্যতম উৎস হলেও এ খাতের সঙ্গে জড়িত নানা প্রশ্নের ব্যাপারে সঠিক ব্যাখ্যা ও
বক্তব্য বাংলাদেশ উপস্থাপন করতে পারেনি। দরকষাকষিতে আমাদের অবস্থান
অত্যন্ত দুর্বল। আমাদের আমলানির্ভর মন্ত্রণালয়ের আমলারা বিদেশ সফর,
সম্মেলনে অংশগ্রহণ ইত্যাদিকেই প্রাধান্য দেন বেশি। এখানে দক্ষ জনশক্তির বড়
অভাব। বিজিএমইএ-ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারেনি। তাদের গবেষণা সেলও
শক্তিশালী নয়। শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধার সঙ্গে রুলস অব অরিজিন,
অ্যান্টি ডাম্পিং ও কাউন্টারভেইলিং ব্যবস্থা, প্রেফারেন্স ইরোসন, শ্রমমান
ইত্যাদি ক্ষেত্রে নানা টেকনিক্যাল প্রশ্ন জড়িত। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের
অবস্থান অত্যন্ত দুর্বল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায়ও আমরা এসব
প্রশ্নে শক্ত অবস্থানে যেতে পারিনি।
ঢাকায় টিকফার প্রথম বৈঠক শেষ হল।
এতে আমাদের প্রাপ্তির খাতটা শূন্য। জিএসপি সুবিধার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের
কোনো কমিটমেন্ট নেই। যদিও ডিলানি বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ
বাড়াতে সমস্যার সমাধান করাই টিকফার লক্ষ্য। এটা একটা কূটনৈতিক জবাব।
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা চুক্তির ১৬ অনুচ্ছেদের সবকটির পূর্ণ বাস্তবায়ন
চায়। কিন্তু যে প্রশ্নগুলো বিভিন্ন মহলে এরই মধ্যে উঠেছে তার কোনো সুস্পষ্ট
জবাব আমরা পাইনি। যেমনÑ ১. টিকফার আওতায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের
বিনিয়োগকারীদের ট্যাক্স সুবিধা দেবে। তাতে আমরা কতটুকু সুবিধা পাব? ২.
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে আর্থিক নিরাপত্তা দেবে বাংলাদেশ। তাতে
আমাদের স্বার্থ কতটুকু অর্জিত হবে? ৩. যুক্তরাষ্ট্র টেলিকমিউনিকেশন,
জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করবে। এতে করে এসব খাতে
সরকারি বিনিয়োগ কমে যাবে। তাতে কি সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না? সেবা
খাত কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না? ৪. শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জ্বালানি খাত ঝুঁকির
মুখে থাকবে। শিক্ষাখাতে সরকারি বিনিয়োগ কমবে। স্বাস্থ্যখাতে বেসরকারিকরণ
বাড়বে। ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষের। ৫. শস্যবীজ, চাল, গম ইত্যাদির নিয়ন্ত্রণ
চলে যাবে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হাতে। আমরা একরকম জিম্মি হয়ে যাব
মার্কিন কোম্পানিগুলোর কাছে। ৬. জিএমও ফুড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বড় বিতর্ক
থাকলেও বাংলাদেশে এটি সম্প্রসারিত হবে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকব আমরা। ৭.
মেধাস্বত্ব আইনের দোহাই তুলে কৃষি, ওষুধ, কম্পিউটার ইত্যাদি একতরফাভাবে
মার্কিন কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার চুক্তি
অনুযায়ী ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বিশেষ সুবিধা ভোগ করলেও এ
শিল্প এখন ঝুঁকির মুখে থাকবে। ৮৭ দেশে আমরা সস্তায় ওষুধ সরবরাহ করি।
পেটেন্ট ক্রয় করে বাংলাদেশ সস্তায় ওষুধ তৈরি করে। এটা এখন বন্ধ হয়ে যেতে
পারে। অভ্যন্তরীণ বাজারেও ওষুধের দাম বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে ক্লোন
কম্পিউটার তৈরি বন্ধ হয়ে গেলে কম্পিউটারের দাম অনেকগুণ বেড়ে যাবে। দুঃখজনক
হলেও সত্য, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শক্ত অবস্থানে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা
এখন চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের সব দাবি পূরণ করতে বাধ্য। দ্বিপক্ষীয়
বাণিজ্য আলোচনায় আমরা জিএসপি সুবিধার দাবি, আর জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির
কারণে বিশেষ সুবিধা দাবি করেছি। কিন্তু এটা এখন স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র
জিএসপি সুবিধাকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের শ্রমমান
আর পশ্চিম ইউরোপের শ্রমমান যে এক নয়, তা আমরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের
ব্যর্থতা, আশুলিয়ার শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকারীদের খুঁজে বের
করতে পারিনি। সীমিত পরিসরে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার থাকলেও তা যে
শ্রমিকদের স্বার্থে ব্যবহƒত হচ্ছে নাÑ এ বিষয়টিও আমরা স্পষ্ট করতে পারিনি।
তত্ত্বগতভাবে
টিকফার মূল স্পিরিট হচ্ছে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো। এতে পুরো লাভটা
যুক্তরাষ্ট্রের। কোনো উৎপাদন খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যবহƒত হবে না।
অর্থাৎ মার্কিন কোম্পানিগুলো কোনো কারখানা তৈরি করছে না। তারা উৎপাদনে
যাচ্ছে না। বিনিয়োগ করে লাভ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের
প্রাপ্তিটা খুব বেশি নয়। টিকফা থেকে তাই আমাদের বড় কিছু পাওয়ার কোনো
সম্ভাবনা নেই।
Daily Jugantor
06.05.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment