রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

নাগরিক সুবিধা নিয়ে কিছু প্রস্তাবনা




মাননীয় পূর্তমন্ত্রী, আমার সালাম নেবেন। ব্যক্তিগতভাবে আপনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আইনজীবী হিসেবে আপনার পরামর্শ আমি নিয়েছি। টকশোতে দীর্ঘদিন আমরা একসঙ্গে রাজনীতি-সমাজনীতি নিয়ে কথা বলেছি। উপরন্তু আপনি আমার সংসদীয় এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। সে কারণে আপনার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা আমার একটু বেশি। সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন। এটা আপনার জন্য একটি চ্যালেঞ্জও বটে। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই সেটা স্পষ্ট করেছেন। সর্বশেষ রূপপুরের ‘বালিশ কাহিনি’র হোতাদের খুঁজে বের করে আইনের আশ্রয়ে আনার কথা বলেছেন। আমরা এতে খুশি ও স্বস্তি পেয়েছি।
সরকার জনস্বার্থে অনেক ভালো ভালো কাজ করছে। একাধিক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে করে সরকার সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ওই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শৈথিল্য, অদক্ষতায় অনেক মহাপরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত সফল হবে না। রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প (উত্তরা-১৮ নং সেক্টর) এমন একটি মহাপরিকল্পনা, যা এখন শুধু বিতর্কেরই জন্ম দিচ্ছে। রাজউক তার দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেনি। পঞ্চবটির এই এলাকা, যা বালুর মাঠ নামে পরিচিত ছিল, তা ছিল কিছুদিন আগ পর্যন্ত ডাকাতদের অভয়ারণ্য। দিয়াবাড়ী-পঞ্চবটি এলাকায় একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। মানুষ হত্যা করে এখানে লাশ ফেলে রাখা হয়েছেÑ এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। শুধু তা-ই নয়, মিরপুর-বেড়িবাঁধ সড়কে একাধিকবার ডাকাতি হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। সুতরাং এমনই একটি এলাকায় যখন রাজউক বসতি গড়ার উদ্যোগ নেয়, হাজার হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করে, তখন প্রথমেই উচিত ছিল এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু রাজউক তা করেনি। রাজউক কর্মকর্তারা এ প্রজেক্ট নিয়ে গর্ব করেন। তারা এ প্রজেক্টকে বিদেশের সঙ্গে তুলনা করতে চান। কিন্তু দিনদুপুরে যখন সেখানে গাড়ি চুরির চেষ্টা করা হয়, রাতের বেলায় যখন কোনো স্ট্রিটলাইট থাকে না এবং পুরো এলাকাটি ডাকাতদের ‘স্বর্গরাজ্যে’ পরিণত হয়, তখন কী রাজউক কর্মকর্তারা কোনো প্রশংসা আশা করতে পারেন? তখন কি তারা এই প্রজেক্টকে বিদেশের সঙ্গে তুলনা করতে পারেন? ৭৯টি হাইরাইজ ভবন উত্তরা রাজউক প্রজেক্ট ‘এ’ ব্লকে তৈরি করা হয়েছে। এর পর ‘বি’ ব্লকে তৈরি করা হবে ৭২টি ভবনে ৬ হাজার ৪৮টি ফ্ল্যাট। তার পর ‘সি’ ব্লকে ৭২টি ভবনে তৈরি হবে আরও ৬ হাজার ৬০৮টি ফ্ল্যাট। এর অর্থÑ এ এলাকায় মোট ২২৩টি হাইরাইজ ভবনে মোট ১৮ হাজার ৭৩২টি ফ্ল্যাট তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে শুধু ‘এ’ ব্লকে ৭৯টি ভবনে ৬ হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট তৈরি করে তা বিক্রি করা হয়েছে এবং সেখানে মানুষ বসবাস করছে। ‘বি’ ও ‘সি’ ব্লক এখনো নির্মাণাধীন। অথচ ওই এলাকায় অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি দোলনচাপা ভবনে দিনদুপুরে আমার ফ্ল্যাটে বেশ কয়েকজন ডাকাত এসে বাসায় ডাকাতি করেছে এবং প্রকাশ্য দিবালোকে পার্কিং এলাকায় রাখা আমার গাড়ি চুরির চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তুরাগ থানায় একটি মামলাও দেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজন চোরদের ছবিও পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের (তুরাগ থানা) তৎপরতা রয়েছে।
পুলিশের কাছে (তুরাগ থানা) গাড়িচোরদের ছবি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তৎপর হয়েছে ইতোমধ্যে। পুলিশ তো অনেক কিছুই পারে। সর্বশেষ রেনু হত্যাকারীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তা হলে ডাকাতদের ধরতে পারবে না কেন? আপনি কথা দিয়েছেন, আপনার নজরে কোনো অনিয়মের খবর এলে আপনি দ্রুত তা নিরসনের উদ্যোগ নেবেন। আপনার মিডিয়াকে দেওয়া ওই ‘কমিটমেন্ট’-এর প্রতি সম্মান দেখিয়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আপনার নজরে আনছি। এক. প্রজেক্ট এলাকায় নিরাপত্তার বড় ধরনের সংকট রয়েছে। শুধু ডাকাতি নয়, বরং অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এর প্রতিকার না হলে মানুষ এখানে বসবাস করতে সাহস পাবে না। এই সুযোগে শত শত খালি ফ্ল্যাট জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে! সুতরাং অতিদ্রুত এ এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করাটা জরুরি। আনসার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলেও তা আজও কেন নিয়োগে করা হলো না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দুই. যোগাযোগব্যবস্থা শোচনীয়। এখানে কোনো ডাক সরবরাহ করা হয় না। রাজউক টিঅ্যান্ডটিকে অনুমতি দেয়নি এখানে ল্যান্ডফোন সার্ভিস চালু করার। আপনি কী এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন? তিন. এখানকার অ্যালটিরা সুদমুক্ত কিস্তি সুবিধা দাবি করছেন। আপনি কি বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন?
পুনশ্চ : সর্বশেষ খবর অনুযায়ী দোলনচাপা ভবনের ডাকাতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। মূল পরিকল্পনাকারীকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। পুলিশ ওই এলাকায় নিত্য টহলেরও ব্যবস্থা করেছে। এ জন্য উত্তরা উপপুলিশ কমিশনের সিনিয়র অফিসাররা তথা তুরাগ থানাকে ধন্যবাদ।

আমাদের সময় 

৫ আগস্ট ২০১৯

তারেক শামসুর রেহমান : প্রফেসর ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

0 comments:

Post a Comment