- প্রচ্ছদ
- আজকের পত্রিকা
- উপসম্পাদকীয়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এখন বাকি আছে মাত্র দশ সপ্তাহ।
আগামী ৩ নভেম্বর সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। গত ২০ আগস্ট উইসকনসিনে ডেমোক্রেটদলীয় জাতীয় সম্মেলন শেষ হয়েছে। ওই সম্মেলনেই ডেমোক্রেটদলীয় প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেন ও তার রানিংমেট হিসেবে কমলা হারিসকে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মাইক পোস জুটির বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে।
যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা ৫০টি আর নির্বাচকমণ্ডলীর সংখ্যা ৫৩৮। সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের মোট সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে এ নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হয়। যেমন বলা যেতে পারে, ক্যালিফোর্নিয়ার নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটের সংখ্যা ৫৪টি; আবার নর্থ ডাকোটার ভোটের সংখ্যা মাত্র ৩। বড় রাজ্যগুলোর নির্বাচকমণ্ডলীর সংখ্যাও বেশি (যেমন, ক্যালিফোর্নিয়ার পর নিউইয়র্কের ৩৩ আর টেক্সাসের নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটের সংখ্যা ৩২)।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোনো প্রার্থী কোনো রাজ্যে বিজয়ী হলে সেই রাজ্যে যে ক’টি নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট রয়েছে, তার পুরোটা তিনি পেয়েছেন বলে গণ্য করা হয়। এ ক্ষেত্রে যে প্রার্থী হেরে যান, তিনি নির্বাচকমণ্ডলীর কোনো ভোট পান না। অর্থাৎ জনসাধারণের ভোটে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সরাসরি নির্বাচিত হন না। নির্বাচিত হন নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে। তবে জনসাধারণ ভোট দেন। এটাই হচ্ছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে ৩৪টি সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। বেশ কয়েকটি গভর্নর পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বলা ভালো, প্রতি ৬ বছর অন্তর সিনেট সদস্যরা পর্যায়ক্রমে নির্বাচিত হন। আর প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচন হয় ৪ বছর অন্তর।
ভোটের প্যাটার্ন অনুযায়ী রাজ্যগুলো দলীয়ভাবে বিভক্ত; অর্থাৎ কোনো কোনো রাজ্যে ডেমোক্রেটদের প্রভাব বেশি (যেমন, নিউইয়র্ক) এবং সে কারণেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচকমণ্ডলীর সব ভোট ডেমোক্রেটদলীয় প্রার্থীই পান। কোনো কোনো রাজ্যে (যেমন, টেক্সাস), রিপাবলিকানদের প্রভাব বেশি; তাই সব নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট রিপাবলিকান প্রার্থী পান। তবে কয়েকটি রাজ্য আছে (ফ্লোরিডা, পেনসেলভেনিয়া, মিসিগান, নর্থ ক্যারোলিনা, আরিজোনা, উইসকনসিন), যেগুলো 'Battleground States' হিসেবে পরিচিত; অর্থাৎ এখানে ভোটাররা বিভক্ত। এ রাজ্যগুলোই চূড়ান্ত বিচারে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে বিজয়ী হতে সাহায্য করে। এখানে ভোটাররা বারবার মত পরিবর্তন করেন- কখনও ডেমোক্রেট শিবিরের প্রতি; আবার কখনও রিপাবলিকান শিবিরের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। কিছু তথ্য দেই। ফ্লোরিডায় (নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট ২৫), রিপাবলিকানরা বিজয়ী হয়েছিল ১৯৯২, ২০০০, ২০০৪ আর ২০১৬ সালে। আবার এ রাজ্যেই ডেমোক্রেট প্রার্থী (বিল ক্লিনটন) বিজয়ী হয়েছিলেন ১৯৯৬ সালে এবং পরবর্তীকালে বারাক ওবামা (২০০৮ ও ২০১২) সালে। ঠিক তেমনি পেনসেলভেনিয়ায় (ভোট ২৩) ডেমোক্রেট প্রার্থীরা ১৯৯২ থেকে ২০১২ পর্যন্ত পরপর ৬ বার বিজয়ী হলেও ২০১৬ সালে এখানে বিজয়ী হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবার নর্থ ক্যারোলিনায় (১৪) রিপাবলিকান প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন ১৯৯২, ১৯৯৬, ২০০০ ও ২০০৪ সালে। তবে ২০০৮ সালে বারাক ওবামা এখানে বিজয়ী হলেও ২০১২ সালে কিন্তু তিনি এখানে বিজয়ী হতে পারেননি।
আরও একটি বিষয় লক্ষ করার মতো- আর তা হচ্ছে, এ ৬টি রাজ্যে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছিলেন; একটি রাজ্যেও ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন বিজয়ী হতে পারেননি। সুতরাং, ২০২০ সালে জো বাইডেন এ ৬টি রাজ্যের নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটের ফলাফল তার অনুকূলে নিতে পারবেন কিনা, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। এ ৬টি রাজ্যে নির্বাচকমণ্ডলীর মোট ভোটার সংখ্যা ৯৯। মোট ৫৩৮ নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে যিনি ২৭০-এর উপরে নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট পাবেন, তিনিই বিজয়ী হবেন। এ ক্ষেত্রে উল্লিখিত ৯৯ ভোট নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিটি নির্বাচনেই ‘ইস্যু’ একটি ফ্যাক্টর। বিভিন্ন ‘ইস্যু’, যা জাতীয় রাজনীতিতে ওই সময় প্রভাব ফেলেছিল; নির্বাচনের সময় ভোটারদের তা প্রভাবিত করে। চলতি বছর এমন এক সময় নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন বেশ কয়েকটি ‘ইস্যু’ জাতীয় রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস, বেকারত্ব, চীন-মার্কিন সম্পর্ক, ‘ব্লাক লাইভ ম্যাটারস’ বা বর্ণবাদ, শ্বেতাঙ্গ সুপ্রিমেসি ইত্যাদির কথা আমরা বলতে পারি। এসব ইস্যুকে সামনে রেখে পিউ রিসার্চ সেন্টার একটি জনমত সমীক্ষা পরিচালনা করে। ভোটারদের কাছে তারা মতামত জানতে চায়। তাদের পরিচালিত জনমত সমীক্ষায় (১৩ আগস্ট, ২০২০) দেখা যায়, শতকরা ৭৯ ভাগ ভোটার অর্থনীতিকে ‘অগ্রাধিকার’ দিয়েছে প্রথমে। এরপর ৬৮ ভাগ দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবাকে, ৬৪ ভাগ সুপ্রিমকোর্টে বিচারপতি নিয়োগকে, ৬২ ভাগ করোনাভাইরাসকে, ৫৯ ভাগ ক্রাইমকে, ৫৭ ভাগ বৈদেশিক নীতিকে ইত্যাদি।
এ থেকেই বোঝা যায়, ভোটারদের আগ্রহ কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি। সুতরাং, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় কোন কোন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন বা দিচ্ছেন, ভোটাররা সেদিকেই লক্ষ রাখবেন। ইতোমধ্যে কিছু কিছু জনমত সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। ২৭ জুন নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের একটি যৌথ সমীক্ষা প্রকাশ করেছে ইয়াহু নিউজ। তাতে দেখা যায়, Battleground Stateগুলোর মাঝে প্রায় সব ক’টিতেই জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। ইতোমধ্যে ডেমোক্রেট পার্টির ন্যাশনাল কনভেনশনে জো বাইডেন-কমলা হারিস জুটি পার্টির মনোনয়ন গ্রহণ করেছেন।
কমলা হারিস এ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আলোচিত একটি নাম। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটদলীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী; তিনি জো বাইডেনের রানিংমেট। ৩ নভেম্বর সেখানে নির্বাচন। কমলা হারিস আলোচিত নানা কারণে। তার শরীরে ভারতীয় রক্ত যেমনি রয়েছে, তেমনি রয়েছে জ্যামাইকার রক্তও। মা শ্যামালা গোপালন ভারতীয় আর বাবা ডোনাল্ড হারিস এসেছিলেন জ্যামাইকা থেকে। দু’জন ইমিগ্রেন্টের সন্তান কমলা, জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। নিজেকে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে পরিচয় দিলেও শতকরা একশ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ- এটা বলা যাবে না। তার শরীর অনেকটাই বাদামি রং ধারণ করেছে। ট্রাম্প হারিসের জন্ম ও গায়ের রং নিয়েও কটাক্ষ করেছেন। যদিও ট্রাম্প নিজেও ইমিগ্রেন্টের সন্তান। তবে পার্থক্যটা হল, তিনি শ্বেতাঙ্গ; কমলা শ্বেতাঙ্গ নন, বাদামি। কমলা হারিসকে নিয়ে শ্বেতাঙ্গদের ভয়টা কি এ কারণে যে, কমলা হারিস ডেমোক্রেট দলের উঠতি স্টার! ৭৭ বছরের জো বাইডেনের রানিংমেট হয়ে কমলা কি সবাইকে জানিয়ে দিলেন- তিনি আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। ২০২৪ সালের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কি কমলা হারিস টার্গেট করছেন?
এটা ঠিক, আমেরিকার রাজনীতিতে ভাইস প্রেসিডেন্টের তেমন কোনো ভূমিকা থাকে না। নীতিনির্ধারণে প্রেসিডেন্টের ভূমিকাই আসল। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ওবামার অধীনে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন (২০০৯-২০১৭)। তবে এটা সত্য, তিনি কোনো ‘ক্যারিশম্যাটিক’ লিডার নন; যেমনটি ছিলেন বারাক ওবামা। এ ক্ষেত্রে কমলা হারিসের মনোনয়ন ডেমোক্রেটদের ইমেজ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে কিছুটা হলেও।
কমলা হারিসের ভারতীয় ও জ্যামাইকান ‘কানেকশন’ ভারতীয় ও ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূতদের মাঝে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্যারিবীয় কিংবা ভারতীয় আমেরিকানদের সংখ্যা যে বেশি, তা বলা যাবে না। পরিসংখ্যান বলছে, ক্যারিবীয়দের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা শতকরা ৪ ভাগ আর ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ০.৯ ভাগ। নতুন প্রজন্মের ক্যারিবীয় ও ভারতীয়দের সঙ্গে তাদের আদি বাসস্থানের কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। কমলা হারিসের মা এসেছিলেন চেন্নাই থেকে। যখন কমলার বয়স ৭ বছর, তখন তার বাবা-মা’র মাঝে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। চেন্নাইয়ে তার মাতৃকূলের আত্মীয়স্বজনরা আছেন। তবে তাদের সঙ্গে কমলা হারিসের যোগাযোগ খুব একটা আছে বলে মনে হয় না। মায়ের কারণে হিন্দুধর্মের প্রতি তার ভালোবাসা ও ভক্তি আছে। আবার বাবার কারণে তিনি চার্চেও যান। তবে তিনি কোনো একটি বিশেষ ধর্ম পালন করেন কিনা, তা জানা যায়নি। তার বাবা-মা উভয়েই উচ্চশিক্ষিত এবং পিএইচডি ডিগ্রির অধিকারী। তার বাবা ডোনাল্ড জে. হারিস স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। আর তার মা শ্যামালা গোপালান ব্রেস্ট ক্যান্সার গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে তার স্বামী ইহুদি। তিনি ইসরাইলের জোরালো সমর্থক।
কমলা হারিস একজন আইনজীবী, ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যার্টনি জেনারেল ও সিনেটর। জাতীয় রাজনীতিতে তিনি আসবেন- এমন কথা অনেক দিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল। তিনি নিজে জো বাইডেনের সঙ্গে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। তাতে সফল হননি। শেষ পর্যন্ত জো বাইডেনই তাকে তার রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন। বলা ভালো, কমলা হারিসই প্রথম মহিলা আফ্রিকান-আমেরিকান তথা প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান মহিলা, যিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর আগে মাত্র দু’জন মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
অবৈধ অভিবাসীদের কাজের অনুমতি দিতে তিনি Dream Ad (2001)-এর প্রস্তাব করে অভিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে জনপ্রিয় হলেও কমলার ইসরাইলপ্রীতি আরবদের কাছে তাকে জনপ্রিয় করেনি। এমনকি ভারতীয় আমেরিকানদের মাঝে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেশি। সুতরাং তার ভারতীয় ‘কানেকশন’ নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে, তা একটি প্রশ্ন বটে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়, সারা বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক। একদিকে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করার ব্যর্থতা, অন্যদিকে বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়া, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ইত্যাদি নানা কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র একজন নয়া প্রেসিডেন্ট পাবে, নাকি ট্রাম্প তার দ্বিতীয় টার্ম শুরু করবেন- সেটাই দেখার বিষয়।
Jugsntor
23.8.2020
যুক্তরাষ্টের সাথে ভারতে সম্পক কি যে ভোট এর ক্ষেএে ভারত কে আনা হল কথায়
ReplyDelete