রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

র‌্যাবের অভিযান স্বাস্থ্য সেক্টরকে কতটুকু দুর্নীতিমুক্ত রাখতে পারবে


সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া এবং বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়তে যখন শুরু করে, তখন থেকেই স্বাস্থ্য সেক্টর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই আলোচনায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে সাহেদ ও সাবরিনা-আরিফ কেলেঙ্কারি। র‌্যাবের অভিযানে সাহেদ গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ডা. সাবরিনা ও তার কথিত স্বামী আরিফ চৌধুরী। এর আগে আবজাল আর মিঠুদের কাহিনি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল। করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকেই প্যানডোরা বক্স থেকে স্বাস্থ্য সেক্টরের দুর্নীতির খবর একের পর এক সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে। সাধারণ একজন কেরানি আবজালের ঢাকা ও অস্ট্রেলিয়ায় একাধিক বাড়ি, একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মিঠুর স্বাস্থ্য সেক্টরের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করা, করোনা চিকিৎসক ও নার্সদের হোটেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা নিয়ে দুর্নীতির খবরও ম্লান হয়ে গেছে যখন সাহেদ আর সাবরিনা ‘কাহিনি’ একের পর এক প্রকাশ হতে থাকে। মিঠুদের টেন্ডারবাজির তুলনায় মাত্র কয়েক কোটি টাকা ‘আয়’ হয়তো খুব বেশি নয়। কিন্তু ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট ইস্যু করে তারা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে দুর্নাম করলেন, তা সহসাই কাটিয়ে ওঠা যাবে না। সরকার যখন প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে করোনাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে, তখন ভুয়া সার্টিফিকেট ইস্যু করে সরকারের সব উদ্যোগকে নষ্ট করে দিলেন সাহেদ আর সাবরিনারা। যখন নিউইয়র্ক টাইমস, ইতালির জনপ্রিয় দৈনিক ঈড়ৎৎরবৎব ফবষষধ ংবৎধ ও ওও গবংংধমমবৎড়-তে বাংলাদেশিদের ভুয়া করোনা সার্টিফিকেটের কথা ছাপা হয়, তখন বিদেশে আমাদের মানসম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? এরই মাঝে আবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানালেন, ইতালি থেকে যারা ফেরত এসেছেন, তারা কেউই রিজেন্ট কিংবা জেকেজির সার্টিফিকেট নিয়ে যাননি। হতে পারে। তা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত হবে কাদের সার্টিফিকেট নিয়ে তারা সেখানে গিয়েছিলেন তা বলা। স্বাস্থ্য সেক্টরের দুর্নীতির চিত্র শুধু যে আজকের, তেমনটি নয়। বরং এর আগেও স্বাস্থ্য সেক্টরের দুর্নীতি আলোচিত। ৩৭ হাজারে পর্দা কেনা, ৫ হাজার টাকায় একটি করে বালিশ কেনার কাহিনি তো অনেক পুরনো। কোটি কোটি টাকায় কেনা মেডিক্যাল সরঞ্জামাদি বছরের পর বছর বাক্সবন্দি থেকে নষ্ট হয়ে গেছে- এ ধরনের একাধিক ঘটনার সংবাদ আমরা সংবাদপত্র থেকেই পাঠ করেছি। কিন্তু ‘পর্দা ও বালিশ’ কাহিনির সঙ্গে যারা যারা জড়িত ছিলেন, তাদের কজনকে আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পেরেছি? দুদক চেয়ারম্যান মাঝে মাঝে বেশ স্পষ্ট কথা বলেন। স্বাস্থ্য সেক্টর নিয়েও তিনি মন্তব্য করেছেন। কিন্তু আমরা জানি না স্বাস্থ্য সেক্টরের সব দুর্নীতিবাজকে আমরা শাস্তি দিতে পারব কিনা? সাহেদ-সাবরিনা কাহিনি নিয়ে সারাদেশে যখন তোলপাড় চলছে, তখন তথাকথিত জাহেরের পারিবারিক সিন্ডিকেটের খবর ছাপা হয়েছে ১৮ জুলাই একটি সংবাদপত্রে। মিঠুর পাশাপাশি এই জাহেরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করেন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজে কোনো যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই এরা হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। এটা কীভাবে সম্ভব, ভাবতেই অবাক লাগে। 

advertisement

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ২০ কোটি টাকা খরচের ব্যাপারটিও বহুল আলোচিত। ইতোমধ্যে ডিএমসির পরিচালকের একটি ব্যাখ্যাও আমরা পেয়েছি। তিনি জানিয়েছেন, এই টাকা শুধু খাওয়ার বিলই নয়, এর সঙ্গে হোটেল ভাড়া ও যাতায়াতের খরচও জড়িত এবং এটা ছিল দুই মাসের বাজেট। মোট ২ হাজার ২৭৬ জন কর্মীর (ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান, নিরাপত্তাকর্মী) জন্য এই টাকা খরচ হয়েছে। একজন ডাক্তারের জন্য প্রতিদিনের খাবার খরচ মাত্র ৫০০ টাকা। কিন্তু ২৯ জুন প্রধানমন্ত্রী যখন এই টাকা খরচের ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সংসদে বক্তব্য দেন, তখন এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন, যে প্রশ্নটি তুলেছেন বিএমএর মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল চৌধুরী। কারা হোটেল ঠিক করল, কোন বিবেচনায় ওইসব হোটেল ঠিক করা হলো, ১২ কোটি টাকার ‘হোটেল বিল’ কতটুকু যৌক্তিক- এ প্রশ্নই যমুনা টিভিকে করেছেন বিএমএর মহাসচিব। আমাদের এটা ভুললে চলবে না, আমাদের দেশের ডাক্তার আর নার্সরা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখসমরে আছেন। তাদের মনোবলকে আমরা ভেঙে ফেলতে পারি না। পরিবার থেকে এক রকম বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। কিন্তু তাদের সামনে রেখে কিছু অসৎ লোক অবৈধ পন্থায় সরকারি অর্থের ‘ছয়নয়’ করবেন, তা হতে পারে না। মুগদা হাসপাতালের ডাক্তারদের হোটেল বিল নিয়েও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে ব্যবহার করে কিছু অসৎ লোক তাদের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। এদের সামাজিকভাবে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। কিন্তু সে কাজটি আমরা করতে পারিনি। করোনা ভাইরাস সামনে রেখে প্রচারণা ভিডিও তৈরি করার জন্য এডিবি ও সরকার একটি প্রকল্প তৈরি করেছিল। সেই ভিডিও তৈরিতে ব্যয় দেখানো হয়েছিল ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শুধু ভিডিও তৈরিতেই এত টাকা? এখানেও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কি অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া গেছে

Amader Somoy

23.7.2020

0 comments:

Post a Comment