রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বিরোধী দলের কর্মসূচি প্রসঙ্গে দুটি কথা

আমরা যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দাবি করছি, সেখানে এই হত্যাকা- ও এর বিচার না হওয়া বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। আমাদের তৈরি পোশাকের স্বার্থেই আমিনুলের হত্যাকা-ের বিচার হওয়া উচিত। এদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকা-ের ব্যাপারে হিলারি ক্লিনটনের একটি মন্তব্যের যে প্রতিক্রিয়া অর্থমন্ত্রী দেখিয়েছিলেন, তা শোভন ছিল না। ব্যক্তি ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনায় কী করেছেন, সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে; কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে, বিশ্বজুড়েই ড. ইউনূসের অনেক 'বন্ধু' রয়েছেন। ড. ইউনূসের অপসারণের ঘটনায় তারা আহত হয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনায় কোনো একটি ক্ষেত্রে তাকে রাখা গেলে ক্ষতি কি? তিনি নিশ্চয়ই এখন আর আগের মতো গ্রামীণ ব্যাংকে প্রভাব খাটতে পারছেন না। সরকার এই বিষয়টি ভেবে দেখলে ভালো করবে। এমসিএ বা মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্টস থেকে আমরা সহায়তা পাচ্ছি না। বড় বাধা আমাদের দুর্নীতি। এই দুর্নীতি আমরা রোধ করতে পারছি না। পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। ঢাকা সফরে এসে জাপানি উপ-প্রধানমন্ত্রীও বলে গেলেন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার। বিএনপিও বলছে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্য। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। আমাদের স্বার্থেই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলা উচিত। হিলারি ক্লিনটন মূলত এ কথাগুলোই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বলে গেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই বিষয়গুলো আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে। এক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ সরকার না হলে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের মনোভাব প্রতিফলিত হবে না। সাধারণ মানুষের মনোভাব বুঝতে হলে তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। হিলারি ক্লিনটনের মতো ব্যক্তিত্ব ঢাকায় এসে এ কথাটাই আমাদের বলে গেছেন। সরকার যদি এটা উপলব্ধি করতে না পারে, তাহলে সরকার ভুল করবে। আমাদের কাছে প্রচুর দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে জাতির বৃহত্তম স্বার্থের খাতিরে সরকার এমন সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা সংবিধানসম্মত ছিল না। যেমন ২০০৮ সালে কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের কথা আমরা বলতে পারি। এ দুটি দেশে প্রধানমন্ত্রীর কোনো পদ ছিল না সংবিধানে। কিন্তু রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট মুগাবে (জিম্বাবুয়ে) সাবাঙ্গিরাইকে প্রধানমন্ত্রী ও কেনিয়াতে প্রেসিডেন্ট কিনাকি বিরোধী দলনেতা অডিংগাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিতে বাধ্য হন। আজ গ্রিসের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পাকিস্তানের দৃষ্টান্তও দিতে পারি। সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানের সংসদেও একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন আয়োজন করার। আমরা চাই দেশে তত্ত্বাবধায়ক তথা নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার একটা ঘোষণা সরকার দিক। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা হ্রাস করা সম্ভব। গ্রিস আমাদের জন্য একটা উদাহরণ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা ওই উদাহরণটা অনুসরণ করতে পারি।
একজন সাবেক বিচারপতি গ্রিসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নির্বাচিত হেেছন। এই জুনে সেখানে নির্বাচন। গ্রিসের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশেও তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়েছেন। আসলে মূল বিষয়টি হচ্ছে সংবিধানই সবকিছু নয়। প্রয়োজনে জাতির স্বার্থে সংবিধানের বাইরে গিয়েও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। আমাদের রাজনীতিবিদরা গ্রিস বা কেনিয়ার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবেন কীনা, সেটাই দেখার বিষয় এখন। তবে একটি আশার কথা শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গেল বুধবার বলেছেন, সংলাপ হবে, তবে তা তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামো নিয়ে নয়। মহাজোটের অন্যতম শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুও ইঙ্গিত দিয়েছেন একটি নিরপেক্ষ সরকারের কাঠামো নিয়ে মহাজোটের মাঝে আলোচনা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে পরিষ্কার। সরকার একটু নমনীয় অবস্থান নিয়েছে। এটা নিশ্চয়ই অনেকেই স্বীকার করবেন, ২০০৮ সালের যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেই সরকারের অনেক অনিয়ম, বিশেষ করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজুদ্দিন আহমেদের বিতর্কিত ভূমিকা গোটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেই একটি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। সে ধরনের একটি সরকার কেউই চাইবে না। তবে একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সেই নিরপেক্ষ সরকারের কাঠামো কী হবে, সেটা নিয়েই সংলাপ হতে পারে। এখানে বিভিন্ন ফর্মুলা নিয়ে মতবিনিময় হতে পরে। তাই সৈয়দ আশরাফের মতো একজন সিনিয়র নেতা যখন বলেন আলোচনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই, তখন এটাকে আমি 'পজিটিভলি' নিতে চাই। তত্ত্বাবধায়ক না হোক বিকল্প একটি ব্যবস্থা আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়েই বের হয়ে আসতে পারে। আমার বিশ্বাস নির্বাচন পরিচালনায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের আদল আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে বের করতে পারব। এক সময় তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাও আমরা উদ্ভাবন করেছিলাম। ঠিক তেমনি আজো নতুন একটি পদ্ধতি আমরা বের করতে পারব। এ জন্য যা প্রয়োজন তা হচ্ছে আস্থা ও বিশ্বাস। সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে যদি এই আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়, তাহলেই সম্ভব একটা সমাধানে পেঁৗছানোর। এখন সরকার একটা তারিখ প্রস্তাব করুক। বিরোধী দলকে আমন্ত্রণ জানাক। আমার বিশ্বাস বিরোধী দল সেই আমন্ত্রণে সাড়া দেবে।
Daily DESTINY
13.6.12

0 comments:

Post a Comment