মন্ত্রিসভায়
অনুমোদিত ও গেজেট আকারে প্রকাশিত জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ইতিমধ্যে নানা
বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। স্পষ্টতই মিডিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তারাও এই নীতিমালা
নিয়ে বিভক্ত। রাজনৈতিক অঙ্গনেও এ নীতিমালা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। মিডিয়া
ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের কেউ কেউ এ নীতিমালাকে স্বাগত জানালেও
অনেকেই এর বিরোধিতা করেছেন। মোটা দাগে যেসব বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে, তা
অনেকটা এ রকম : ১. নীতিমালা নিয়ে উদ্বেগ আছে। দ্রুত একটি স্বাধীন কমিশন গঠন
করতে হবে। সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের ও মালিকদের সুরক্ষার বিষয়ে
কিছু বলা হয়নি; ২. নীতিমালার প্রয়োজন আছে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এই
স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা কারও স্বেচ্ছাচারিতায় নষ্ট হয়ে যাক, সেটা আমরা চাইব
না; ৩. গণমাধ্যম খাঁচায় বন্দি করার ফিকির; ৪. সম্প্রচার নীতিমালা
গণমাধ্যমকে সংকুচিত করবে না; ৫. এই নীতিমালার এতই ব্যাপ্তি যে সরকারি
প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অন্যায়-অবিচারের কোনো সমালোচনা
করলেই তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এমনকি এ নীতিমালায় টকশোকে পুরোপুরি
নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে; ৬. এই নীতিমালার কারণে যেন গণমাধ্যমের
স্বাধীনতা হরণ না হয়, সেটা দেখা দরকার; ৭. সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল করা
উচিত। বাকশাল যুগে ফিরে যাওয়ার কথাও বলছেন কেউ কেউ।এ ধরনের প্রতিক্রিয়া
থেকে ধারণা করা স্বাভাবিক যে, এই নীতিমালা নিয়ে একটা বিভ্রান্তি আছে এবং
নীতিমালাটি মিডিয়ার স্বাধীনতাকে খর্ব করতে পারে। এমনকি জনপ্রিয় টকশোগুলোতে
মন খুলে কথা বলা যাবে না, এমন আশংকাও আছে অনেকের। এটা ঠিক, একটা নীতিমালা
দরকার ছিল। কারণ বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও সম্প্রচারের কোনো নীতিমালা ছিল
না। তবে এটা করতে গিয়ে সরকার বাক স্বাধীনতাকে খর্ব করবে কিনা কিংবা
বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে এক একটি বিটিভিতে পরিণত করবে কিনা, এটাই বড় প্রশ্ন
এখন। বলা ভালো, এই নীতিমালার খসড়া প্রণয়নের জন্য ২০১২ সালের নভেম্বরে ১৬
সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি খসড়া রিপোর্ট জমা দেয়ার পর গত
বছর ৫ সেপ্টেম্বর এর ওপর মতামত নেয়ার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে
এটি প্রকাশ করা হয়। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, সব ধরনের মতামত
কমিশন গঠন করেছিল কিনা। যাদের নিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছিল, তারা সরকারের লোক
ও সরকারের নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ফলে
সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছা এই নীতিমালায় প্রতিফলিত হওয়াই স্বাভাবিক।সম্প্রচার
নীতিমালা অনুযায়ী ১৩টি বিষয়ে সম্প্রচার করা যাবে না অথবা সম্প্রচারের সময়
কঠোরভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। এসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সব বাহিনী বা
দেশের আইনশৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, অবমাননা বা
বিদ্রুপ করে কিছু প্রচার করা যাবে না বা তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা যাবে
না। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিস্মিত হতে পারে এমন সামরিক-বেসামরিক কোনো তথ্য
প্রচার করা যাবে না। আইনশৃংখলা ভঙ্গের প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারে, এমন
ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না। কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের অনুকূলে যায়,
অন্য কোনো বিদেশী রাষ্ট্র আঘাত পায় কিংবা বন্ধুভাবাপন্ন দেশের সঙ্গে
বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে রকম কিছু প্রচারে বিধিনিষেধ রয়েছে।
জাতির জন্য ক্ষতিকর কোনো দৃশ্য প্রচার করা যাবে না। টকশোতে কোনো
বিভ্রান্তিকর বা অসত্য তথ্য প্রচার পরিহার করতে হবে! ব্যক্তির গোপনীয়তা
ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু প্রচার করা যাবে না।যে কোনো বিবেচনায় এ ধরনের
নীতিমালা মিডিয়াকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করার শামিল। গেজেট প্রকাশিত হওয়ার
পর থেকে এ নীতিমালা কার্যকর হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর জন্য স্বাধীন
কমিশন গঠন করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল না। এর মধ্যে দিয়ে এখন মিডিয়ার ওপর
সরকারের কর্তৃত্ব বাড়ল। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে এই যুক্তি তুলে
যে কোনো ব্যক্তি বা মিডিয়া এখন সরকারের রোষানলে পড়তে পারে। আইনশৃংখলা
বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ, খুন, গুমের অভিযোগ অতীতে উঠেছে
এবং একাধিক মামলাও হয়েছে। আগামীতেও এ ধরনের অভিযোগ উঠতে পারে। প্রশ্ন
হচ্ছে, তখন মিডিয়া কি এসব দুর্নীতি বা গুমের কথা লিখতে পারবে? আর যদি
মিডিয়া তা করে, তাহলে কি নীতিমালা লংঘিত হবে? যে কোনো প্রকাশিত সংবাদকে
কিংবা টকশোতে বলা কোনো বক্তব্যের বিরুদ্ধে সরকার আইনশৃংখলা ভঙ্গের প্রতি
উৎসাহ সৃষ্টি করার অভিযোগ আনতে পারে। তাহলে কি টকশোতে কোনো সমালোচনা করা
যাবে না? দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে
ভারতীয় নীতির সমালোচনা করেন অনেকেই। এখন এই নীতিমালার আলোকে কোনো সমালোচনা
করা যাবে কি? এমনকি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আমাদের নাগরিকদের হত্যা
করলেও তা কি মিডিয়া প্রচার করতে পারবে? বন্ধুভাবাপন্ন দেশের সঙ্গে
বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়- সরকার কি এ ধরনের অভিযোগ আনতে পারবে
তখন? টকশোতে সরকার কিংবা কোনো কোনো মন্ত্রী বা নীতির মৃদু সমালোচনা করা হয়
(আমি নিজেও করেছি অনেক সময়)। এখন কি সরকার বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্যের
যুক্তি তুলে টকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে! টকশোতে কি তাহলে কোনো সরকারি
নীতির (যেমন পররাষ্ট্রনীতি, বাজেট, আর্থিক খাত, দুর্নীতি) সমালোচনা করা
যাবে না? কোনো সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতি প্রকাশিত হলে কি অভিযুক্ত ওই
ব্যক্তি গোপনীয়তা ক্ষুণ্নের জন্য ওই সংবাদপত্র বা প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে
অভিযোগ আনবেন? এসব প্রশ্ন এখন বারবার উচ্চারিত হতে থাকবে।আমি বেশ কিছু
লেখায় বলার চেষ্টা করেছি, টকশোগুলো হচ্ছে গণতন্ত্র চর্চার বিকল্প মাধ্যম।
যেহেতু সংসদ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিগত সংসদগুলোয় বিরোধী সংসদ সদস্যদের
অংশগ্রহণ একরকম ছিলই না। বর্তমান সংসদে (দশম) যারা বিরোধী দলে আছেন, তাদের
ভূমিকা নিয়ে স্বয়ং দলীয় প্রধানই যুক্তি তুলে ধরেছেন। সংসদে বর্তমানে কোনো
জাতীয় ইস্যু আমি আলোচিত হতে দেখিনি। কোনো জাতীয় ইস্যু নিয়ে যদি আলোচনা না
হয়, তাহলে জাতি দিকনির্দেশনা পাবে কীভাবে? তাই টকশোগুলো জনপ্রিয়। সেখানে
বিশেষজ্ঞরাই আলোচনায় অংশ নেন। বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন। সরকারের নীতির
সমালোচনা করার অর্থ সরকারের ভুল-ত্র“টিগুলো ধরিয়ে দেয়া, যাতে সরকার সংশোধিত
হতে পারে। এখন তো নীতিমালার নামে একটা খড়গ ঝুলিয়ে দেয়া হল! অনেক স্পন্সরই
এখন আর টকশোতে বিনিয়োগ করবে না। তারা কেন ঝুঁকি নেবে? সরকার এতে লাভবান হতে
পারে। কিন্তু জাতির ক্ষতি হবে অনেক। টকশোতে নিশ্চয়ই মানুষ কৃষি উৎপাদন
বাড়ানো, জন্মনিয়ন্ত্রণ, মৌ-চাষ ইত্যাদি বিষয়ে শুনতে চাইবে না। এজন্য বিটিভি
আছে। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, সম্প্রচার মাধ্যমকে একটি গতিশীল ব্যবস্থার মধ্যে
নিয়ে আসার জন্য এই নীতিমালা করা হয়েছে। এটা গণমাধ্যম জগতে নতুন দিন
উন্মোচনকারী পদক্ষেপ। বিকাশমান সম্প্রচার জগৎ গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত
হবে। বহুবাদ ও বৈচিত্র্য বজায় থাকবে। এক সময়ের বিপ্লবী জাসদ নেতা এবং এখনও
জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুর এ বক্তব্য শুনে তার অতীত দিনের কথা মনে পড়ে গেল।
সংবাদপত্রের সচেতন পাঠকমাত্রই জানেন মিডিয়ার স্বাধীনতার ব্যাপারে জাসদের
কী বক্তব্য ছিল কিংবা জনাব ইনু কী বক্তব্য দিয়েছিলেন অতীতে।মিডিয়াকে
নিয়ন্ত্রণ করা কখনও কোনো ভালো কাজ হতে পারে না। সংবিধান সংবাদপত্রের
স্বাধীনতার গ্যারান্টার। ইতিমধ্যে সংবিধানে ১৫টি সংশোধনী আনা হয়েছে এবং আরও
একটি সংশোধনী আনার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু সংবিধানের ৩৯নং অনুচ্ছেদটি
যেভাবে ছিল, সেভাবেই রয়ে গেছে। এ অনুচ্ছেদের ১নং ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ করা
হয়েছে, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। এই অনুচ্ছেদের
৩৯(২) ক ও খ ধারা দুটি আরও স্পষ্ট। ক-তে বলা হয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও
ভাব প্রকাশের অধিকারের কথা এবং খ-তে রয়েছে সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতার
নিশ্চয়তাদান করা হইল। অর্থাৎ সংবিধানের পুরো ৩৯নং ধারাটিতে একজন
সংবাদকর্মীকে যেমন অধিকার দেয়া হয়েছে তার মত প্রকাশ করার, ঠিক তেমনি
রাষ্ট্র সংবাদপত্রকে অনুমতি দিয়েছে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে প্রকাশিত
হওয়ার। সংবাদকর্মী তথা সংবাদপত্রের জন্য এ ধারাটি একটি রক্ষাকবচ। তবে
দুঃখজনক হলেও সত্য, মাঝেমধ্যে এ ৩৯নং ধারাটি লংঘিত হয়। আদালত অবমাননার
অভিযোগে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যখন বিচারের সম্মুখীন
হয়েছিলেন, সেদিন এ দেশের বিজ্ঞ আইনজীবীরা আদালতে ৩৯নং ধারার কথা বারবার
উল্লেখ করেছিলেন। তারা বলার চেষ্টা করেছিলেন, ৩৯নং ধারাবলেই একজন সম্পাদক
তার মত প্রকাশের অধিকার রাখেন। এখন সম্প্রচার নীতিমালার কোনো কোনো ধারা
সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই এবং উচ্চ আদালত এর
ফয়সালা করে দিতে পারেন। নতুবা বারবার এ প্রশ্ন উঠতেই থাকবে।যে জন্য
সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, তার আদৌ প্রয়োজন ছিল না। সাধারণত
সেনাবাহিনী কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনী নিয়ে নেতিবাচক কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়
না। বরং প্রশংসামূলক সংবাদই থাকে বেশি। সেনাবাহিনী বিদেশে বাংলাদেশের
ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে, এ কথা হরহামেশাই আমরা টকশোতে বলি। তবে হ্যাঁ,
প্রতিরক্ষা বা পুলিশ বাহিনীর দু-একজন সদস্যের অপকর্ম যখন সংবাদ হয়, যখন
স্থানীয় অসন্তোষ বেড়ে যায় (নারায়ণগঞ্জের ঘটনা), তখন তা আলোচনারই দাবি রাখে।
মিডিয়া তখন সে কাজটিই করে। অতীতেও করেছে। মিডিয়া সমাজের প্রতি, জাতির
প্রতি তার দায়বদ্ধতা এড়াতে পারে না। এক্ষেত্রে আইন করে মিডিয়ায় এসব সংবাদ
প্রকাশ ও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে তা সমাজে কোনো
মঙ্গল বয়ে আনবে না। তবে খুব সঙ্গত কারণেই মিডিয়ায়, বিশেষ করে টকশোতে মিথ্যা
ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া কাম্য নয়। কেউ কেউ এ কাজটি করে থাকেন বটে, তবে
এক্ষেত্রে তার ভুলটি শুধরে দেয়ার দায়িত্ব কিন্তু সঞ্চালকের। সঞ্চালক এ
কাজটি করেন না। কোনো কোনো সঞ্চালককে দেখেছি গালে হাত দিয়ে দুই পক্ষের ঝগড়া
উপভোগ করতে! এটা নিশ্চয়ই টকশোর উপস্থাপকের কাজ হতে পারে না। তবে সবাই এটা
করেন না। অনেক সঞ্চালককে আমি দেখেছি রীতিমতো কাগজপত্র, ডকুমেন্ট নিয়ে
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে। এটাই হওয়া উচিত। সঞ্চালকদের কারও কারও রাজনৈতিক
আনুগত্য নিয়েও প্রশ্ন আছে। তিনি বা তারা রাজনৈতিক সচেতন হতেই পারেন। কিন্তু
কোনো বিতর্ক চাপিয়ে দেয়া কিংবা বিতর্কিত কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করা কাম্য
হতে পারে না। আরও একটা কথা বলা প্রয়োজন- কোনো সংবাদপত্র, কোনো ব্যক্তি যদি
মিডিয়ায় মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, অসত্য তথ্য দেন, সরকার সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র
বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা কিংবা ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারে।
প্রেস কাউন্সিল আইনকে সরকার আরও শক্তিশালী করতে পারে। আইন পরিবর্তন করে
কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে। এজন্য নতুন করে আইন করার প্রয়োজন নেই।সংবিধানের
চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে (২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫) দেশে একদলীয় সরকার কায়েম
হয়েছিল। চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকি সংবাদপত্রগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা
হয়েছিল। আজও সংবাদপত্রের কর্মীরা ওই দিনটিকে কালো দিন হিসেবে পালন করেন।
এবার সম্প্রচার নীতিমালা করে বিরোধীদের হাতে আরেকটা অস্ত্র তুলে দিল সরকার।
কাকতালীয়ভাবে হলেও সত্য, ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগই বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন
করে চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকি সংবাদপত্র প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছিল। আজও
সেই আওয়ামী লীগের আমলেই জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রবর্তন করা হল।একটি
নীতিমালা হতেই পারে। কিন্তু তাতে যদি কথা বলার অধিকার খর্ব হয়, তা নিয়ে
বিতর্ক বাড়বেই। এর আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল না। সঞ্চালক ও সংশ্লিষ্ট
প্রয়োজকরাই পারেন টকশোতে যারা অসংলগ্ন, মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন
করেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে। এর জন্য আইন কেন? কোনো কোনো টকার যেমন নিজ
স্বার্থ উদ্ধারে টকশোকে ব্যবহার করেন, তেমনি কেউ কেউ যুক্তিপূর্ণ তথ্য দিয়ে
সরকারকে সুষ্ঠু নীতি প্রণয়নে সহায়তাও করেন। সুতরাং টকশো নিয়ন্ত্রণ করে
সরকার খুব লাভবান হবে, এটা মনে করার কারণ নেই। মানুষ এটা পছন্দ করবে না।এখন
একটি নীতিমালা হয়েছে। দেখা যাক এই নীতিমালা কতটুকু অনুসরণ করা হয় কিংবা
সরকারের নিয়ন্ত্রণ মিডিয়ার ওপর কতটুকু থাকে। একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করাও
জরুরি। তবে এতে যেন মুখচেনা সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী কিংবা সাংবাদিক নেতারা
না থাকেন। কিংবা এটা যেন পরিপূর্ণভাবে আমলানির্ভরও না হয়ে যায়। কাজটি
সরকার ভালো করল না মন্দ করল, তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।
Daily JUGANTOR
14.08.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment