রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ইসরাইল কি আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে!

গাজায় গণহত্যা শুরুর তিন সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়ার পর যে প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে, এই গণহত্যার শেষ কোথায়? পবিত্র ঈদের দিনেও ইসরাইল তার হামলা অব্যাহত রাখে। জাতিসংঘ কিংবা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরাইল গাজায় বেসামরিক স্থাপনার ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই হামলা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর কয়েক ঘণ্টা না যেতেই ইসরাইল যুদ্ধবিরতি লংঘন করায় নেতানিয়াহুর বক্তব্যেরই সত্যতা মিলল। আরও দুঃখজনক সংবাদ হচ্ছে, ইউক্রেনে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংস হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর যেখানে আরও অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা এতটুকুও আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি। ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের কথাও বলেনি বিশ্ব সম্প্রদায়।ইসরাইলি নেতৃবৃন্দ গাজায় গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত। এ হত্যাযজ্ঞকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান নাভি পিল্লাই যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও সেনানায়কদের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার হবে, এটা চিন্তা করাও যায় না। আদৌ কোনো দিন এই বিচার হবে না। একাধিক কারণে এই বিচার করা যাবে না। প্রথমত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় গণহত্যা বা এ ধরনের কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা, তা অনুসন্ধান করতে চাইলে তাতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ সম্মতি এখনও দেননি। চলতি সপ্তাহে ১৭টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা (অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ) একটি খোলা চিঠিতে এই অনুমতি দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, আইসিসির চার্টারে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা দেয়া হয়নি। সুতরাং আইসিসি চাইলেও নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে না। তৃতীয়ত, ১২২টি দেশ আইসিসির সদস্য। ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র, সুদান রোম চার্টারে (যার মধ্য দিয়ে আইসিসির জন্ম) ২০০০ সালে স্বাক্ষর করলেও পরে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে আইসিসির সদস্য নয় এমন রাষ্ট্রে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা তা দেখা কিংবা ওই রাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর কাজটি খুব সহজ হবে না। আইনগত জটিলতা তৈরি হতে পারে। চতুর্থত, আইসিসি তার সদস্য রাষ্ট্রের যে সংজ্ঞা দিয়েছে, তাতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ওই সংজ্ঞায় পড়ে না। যদিও ২০১২ সালে জাতিসংঘ পিএলওকে নন-মেম্বার অবজার্ভার স্ট্যাটাস দিয়েছে। এখন যদি ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ আইসিসিতে যোগ দেয়, কেবল তাহলেই সম্ভব গাজায় মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তদন্ত করা। পঞ্চমত, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এ ধরনের গণহত্যার বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য আইসিসিকে নির্দেশ দিতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইহুদি লবির কারণে তা চাইবে না, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং আজ নাভি পিল্লাই যুদ্ধাপরাধের যে কথা বলেছেন, তা কাগজে-কলমেই থেকে যাবে। এবং প্রমাণিত হবে আইসিসি পশ্চিমাদের স্বার্থেই কাজ করে।সার্বিয়ার যুদ্ধবাজ নেতা মিলোসেভিচের বিচার হয়েছিল দ্য হেগে। বিচার হয়েছিল লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও যুদ্ধবাজ চার্লস টেলরের। এমনকি রুয়ান্ডায় হুতু-তুতসি হত্যাকাণ্ডে যারা অভিযুক্ত হয়েছিল, তাদেরও বিচার হচ্ছে। কঙ্গোর গৃহযুদ্ধে যারা জড়িত, তাদেরও বিচার হচ্ছে। এমনকি ২০০৮ সালে কেনিয়ায় নির্বাচন পূর্বকালীন সময়ে সেখানে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, তারও বিচার হচ্ছে। আর তাতে অভিযুক্ত হয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট কেনিয়াত্তা ও দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট। ভাইস প্রেসিডেন্টের বিচার শুরু হয়েছে, আর প্রেসিডেন্টের বিচার শুরু হওয়ার কথা আগামী মার্চে। কিন্তু ইসরাইলি নেতৃবৃন্দের বিচার হবে, এটা শুধু অসম্ভবই নয়, অকল্পনীয়ও বটে।এ পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা ১৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। গাজা এখন এক বিধ্বস্ত নগরী। হাসপাতাল, স্কুল, এমনকি জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত আশ্রয়স্থলগুলোও ইসরাইলের হামলার বাইরে নয়। ইতিমধ্যে গাজার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করেছে ইসরাইল। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইসরাইলি হামলায় যারা মারা গেছেন, তাদের মাঝে সিভিলিয়ানের সংখ্যা শতকরা ৭৪ ভাগ। ১৮ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত গাজায় হামাস সদস্যের সংখ্যা মাত্র ১৫ হাজার। অথচ এই গাজা থেকে হামাস নেতৃবৃন্দকে উৎখাত করতে ইসরাইল অতীতে দু-দুবার সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিল- একবার শীতকালে ২০০৮-২০০৯ সালে, আর দ্বিতীয়বার ২০১২ সালের নভেম্বরে। এর কারণ হামাসকেই এখন ইসরাইলি নেতৃবৃন্দ বড় হুমকি মনে করে। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সংসদের নির্বাচনে হামাস বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু ইসরাইল কোনোদিনই হামাস প্রতিনিধিকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়নি। বরং আল ফাতাহ আর হামাসের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে হামাসকে উৎখাত করার উদ্যোগ নিয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। আর এটা করা হয় এমন এক সময়ে যখন (এপ্রিল) আল ফাতাহ ও হামাস একটি ঐকমত্যের সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল। এই সরকার যাতে গঠিত না হয়, সেজন্যই এ সামরিক আগ্রাসন।ইসরাইলের এই সামরিক আগ্রাসন, গাজায় নিরীহ মানুষ বিশেষ করে শিশুদের হত্যা আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ বরখেলাপ। কোনো যুক্তিতেই এই স্থল আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়। ইসরাইলের যুক্তি ছিল তারা যা করছে, তা তাদের নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার স্থার্থে এবং এই অধিকার তারা রাখে। এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ গাজা অনেক দিন থেকেই একটি ইসরাইল অধিকৃত অঞ্চল। ২০০৬ সালে নির্বাচনে হামাসের বিজয়ের পরপরই ইসরাইল গাজা অঞ্চল ঘেরাও করে রাখে। পানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ সরবরাহ- সবকিছু ইসরাইল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে। আর বিশ্বসংস্থা অনেক আগেই জানিয়েছিল, ইসরাইলের এই নিয়ন্ত্রণ যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে গাজা ২০২০ সালের মধ্যে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে। জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর ধারায় আত্মরক্ষায় সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাষ্ট্রকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটা শুধু কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেহেতু গাজা একটি ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত এলাকা এবং গাজার কোনো সার্বভৌমত্ব স্বীকৃত নয়, তাই জাতিসংঘের ৫১ ধারা এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। গাজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে অধিকৃত অঞ্চল সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন। এই আইনে বলা হয়েছে, অধিকৃত অঞ্চলে বসবাসকারী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে দখলকৃত রাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে ইসরাইলের দায়িত্ব গাজার নাগরিকদের নিরাপত্তা দেয়া। কিন্তু উল্টো ইসরাইলি সেনাবাহিনী সাধারণ নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। হেগ কনভেনশনের ৪৭ ও ৫৩ নম্বর ধারাও ইসরাইল লংঘন করেছে। অধিকৃত অঞ্চলের আকাশ, জলসীমা নিয়ন্ত্রণ এবং সেই সঙ্গে জনগণের চলাচল ও নিত্যপণ্যের মুভমেন্ট এখন নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরাইল। এটা অবৈধ। ৩ জন ইসরাইলি যুবকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ইসরাইলি এই অভিযানও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা স্বয়ং ইসরাইলি পুলিশপ্রধান বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে হামাস জড়িত নয়। এমনকি হামাসের রকেট হামলা নিয়েও প্রশ্ন আছে। দেখা গেছে, ইসরাইলি রকেট হামলা হয়েছে প্রথমে। প্রতিটি ইসরাইলি হামলা, বিশেষ করে চলতি গাজা অভিযানে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের চরম বরখেলাপ। ইসরাইলি সেনাবাহিনী মূলত দাহিয়া ডকট্রিন অনুসরণ করে জনবসতি ধ্বংস করছে, যা তারা লেবাননেও করেছিল। এই দাহিয়া ডকট্রিনের প্রবক্তা হচ্ছেন মেজর জেনারেল গাদি আইজেনকট। তিনি শীর্ষ ইসরাইলি সেনা স্ট্র্যাটেজিস্ট। এখন অবসরে। এই মতবাদের মূল বিষয় হচ্ছে, যেখান থেকে রকেট হামলা হবে, সেখানে পুরো এলাকাকে ধ্বংস করে দেয়া। ২০০৬ সালে ইসরাইল এই তত্ত্ব লেবাননে ব্যবহার করেছিল। হিজবুল্লাহ জঙ্গিরা জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে রকেট নিক্ষেপ করত। ইসরাইল ওই এলাকাকে সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে শত্র“ এলাকা ঘোষণা করে ওই এলাকা ধ্বংস করে দিত। এই মতবাদের কারণে লেবাননে প্রচুর বেসামরিক এলাকা ইসরাইলি সেনাবাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছিল। এর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় ২০০৯ সালে জাতিসংঘ লেবাননে বিচারপতি গোল্ডস্টোনের (দক্ষিণ আফ্রিকা) নেতৃত্বে একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি প্রেরণ করেছিল। ওই কমিটি, যা গোল্ডস্টোন কমিটি নামে পরিচিত, ইসরাইলকে বেসামরিক এলাকা ধ্বংসের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে ইসরাইলের কোনো বিচার হয়নি। হামাসের বিরুদ্ধে মানব ঢাল ব্যবহারের যে অভিযোগ রয়েছে, তারও কোনো সত্যতা নেই। বেসামরিক এলাকায় অস্ত্র রাখার হামাসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেই অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।দেখা যায়, প্রতিটি ক্ষেত্রে অপরাধ করেও ইসরাইল পার পেয়ে যাচ্ছে। লেবাননে গণহত্যা চালালেও কোনো ইসরাইলি সেনাকর্মকর্তার বিচার হয়নি। আজও যখন গাজায় দীর্ঘ তিন সপ্তাহ ধরে ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার হবে- এই আস্থাটা রাখতে পারছি না। ইতিহাস বলে, ফিলিস্তিনি এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পিএলও নেতৃবৃন্দ অনেক ছাড় দিয়েছেন। ১৯৮৮ সালে পিএলও আলজিয়ার্স সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ পরিত্যাগের কথা ঘোষণা করে। ১৯৯৩ সালে পরস্পরকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার সূত্রপাত হলেও শান্তি আদৌ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সেখানে আজও রক্ত ঝরছে। নিরীহ শিশুদের হত্যা করে ইসরাইলি নেতৃবৃন্দ কোনো দিনই সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মন পাবে না। হামলায় বেঁচে যাওয়া শিশুরাই বড় হয়ে এক-একজন বিদ্রোহী হয়ে উঠবে। হামাসের জন্ম ও গ্রহণযোগ্যতা এভাবেই বেড়েছে।ইসরাইল মূলত নতুন একটি মতবাদ নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মূল বিষয় হচ্ছে, ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে, বিশেষ করে গাজায় যারা বসবাস করেন, তাদের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ রেখে সেখানে তাদের বসবাস করতে বাধ্য করা। এটা কেউ কেউ মযবঃঃড়রংস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ ঘেটো বা বস্তিতে বসবাস। নাৎসি নেতা আইখম্যান ইউরোপে ইহুদিদের ক্ষেত্রে এই ঘেটো তত্ত্ব ব্যবহার করে ইহুদিদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বসবাস করতে বাধ্য করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ অবসানের পূর্ব যুগে কৃষ্ণাঙ্গদের মূল শহর থেকে সরিয়ে নিয়ে ১০টি হোমল্যান্ডে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়েছিল। আজ নেতানিয়াহু সরকার অনেকটা সেই ঘেটো বা বস্তি তত্ত্বই ব্যবহার করতে চায় গাজায়! কিন্তু ইতিহাস বলে, এসব উদ্যোগ কখনোই সফল হয় না। আইখম্যান সফল হননি। ১৯৬০ সালে আইখম্যানকে আর্জেন্টিনা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বিচারে তার ফাঁসি হয়। আর দক্ষিণ আফ্রিকায় ওই হোমল্যান্ড তত্ত্বও ভেঙে পড়েছিল। ইসরাইল আজ নিরীহ শিশুদের হত্যা করে মহা অন্যায় করেছে। এর বিচার হওয়া প্রয়োজন। ইতিহাস মিলোসেভিচকে মুসলমানদের বসনিয়া থেকে উচ্ছেদের জন্য ক্ষমা করেনি। নেতানিয়াহুও ক্ষমা পাবেন না।আজ জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত স্কুলগুলোয় আশ্রয় নিয়েও যখন গাজার শিশুরা ইসরাইলি হামলা থেকে রেহাই পায় না, তখন জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বৈকি। গাজায় এই মানবিক বিপর্যয় নিয়ে মুসলিম বিশ্বও আজ বিভক্ত ও নির্লিপ্ত। মিসরের সেনাবাহিনী ও সরকার স্পষ্টতই ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করেছে। জর্ডান ও সৌদি আরবের নীরবতাও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সৌদি আরবের বড় ভয় হামাসকে নিয়ে। তাই বলা হচ্ছে, হামাস উৎখাত অভিযানে সৌদি রাজবংশের সমর্থন রয়েছে। তুরস্ক ও কাতার একটি উদ্যোগ নিলেও তা কাজ করছে না। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইসরাইল বাস্তবায়ন করছে না। সুতরাং গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল।যুদ্ধ গাজাবাসীর ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এ থেকে ইসরাইলের বড় কিছু অর্জনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই অসম যুদ্ধে কোনো পক্ষই জয়ী হবে না। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর তালিকায় ইসরাইলের অবস্থান ১১তম। উপরন্তু ইসরাইল অলিখিত পারমাণবিক শক্তিও বটে। কিন্তু মাত্র ১৫ হাজার সদস্য ও সমর্থক নিয়ে গঠিত হামাস আজ অনেক শক্তিশালী। বিশ্বের শুভবুদ্ধির মানুষ তাদের পক্ষে। ইতিমধ্যেই তারা বিজয় অর্জন করেছেন। এই যুদ্ধের কোনো শেষ নেই। ইসরাইলি নেতৃবৃন্দ ও জনগণ যদি এটি উপলব্ধি করেন, তাহলেই মঙ্গল। নতুবা গাজার এই গণহত্যা সেখানে দীর্ঘস্থায়ী একটি গেরিলা যুদ্ধের জন্ম দেবে, যার ফলে সৃষ্টি হবে এক দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতার Daily JUGANTOR 04.08.14

0 comments:

Post a Comment