প্রথমে
ক্রিমিয়ার গণভোট ও পরবর্তী সময়ে ক্রিমিয়ার রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তি। এরপর
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সীমান্তে রাশিয়ার সেনা
মোতায়েন। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে এখন
ইউক্রেনে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ। আর সর্বশেষ ঘটনায় একটি মালয়েশিয়ান
বিমান (ফ্লাইট এমএইচ ১৭) ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত ও ২৯৫ জন আরোহীর
মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি
ঘটেছে এবং নতুন করে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হয়েছে। বলা ভালো,
স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল ২৩ বছর আগে, ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত
ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর। এরপর দীর্ঘ সময় চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকলেও (ইরাক, আফগানিস্তান,
ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প ইত্যাদি) কখনো পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায়ে
পৌঁছায়নি। কিন্তু ইউক্রেনের পরিস্থিতিতে দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা
বেড়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে। ক্রিমিয়ার ঘটনার পরই নতুন করে
স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। এটা বাহ্যত পরিণত হয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা
বিশ্বের দ্বন্দ্বে। এখন এই দ্বন্দ্ব ক্রিমিয়া ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্যত্র
ছড়িয়ে পড়ছে, যেমনটি আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী
সময়ে। অনেকে স্মরণ করতে পারেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রভাববলয়
বিস্তারের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের। সেটা ছিল মূলত
আর্দশিক দ্বন্দ্ব- একদিকে ছিল পুঁজিবাদ, অন্যদিকে সাম্যবাদ। একসময় ১৯৪৯
সালে এই সাম্যবাদের প্রভাব ঠেকাতেই পশ্চিম ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে
জন্ম হয়েছিল সামরিক জোট ন্যাটোর। অপরদিকে পূর্ব ইউরোপে সমাজতান্ত্রিক
দেশগুলোকে নিয়ে ১৯৫৫ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠন করেছিল সামরিক জোট
ওয়ারশ। একপর্যায়ে সেখানে 'যুদ্ধের' আশঙ্কারও জন্ম হয়েছিল। যদিও যুদ্ধ হয়নি।
তবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এই 'যুদ্ধে' জড়িয়ে গিয়েছিল। ১৯৯১ সালের
ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবসান ঘটে
স্নায়ুযুদ্ধের। আজ প্রায় ২৩ বছর পর নতুন আঙ্গিকে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হচ্ছে!
এখানে আদর্শিক দ্বন্দ্ব নেই বটে, কিন্তু প্রভাববলয় বিস্তারের এক ধরনের
নগ্ন প্রতিযোগিতা আছে। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব
করার যে প্রবণতা ও রাশিয়াকে ঘিরে ফেলার ন্যাটোর যে স্ট্র্যাটেজি, তা
রাশিয়ার সমরনায়কদের অজানা নয়। ভুলে গেলে চলবে না, ক্রিমিয়ার ব্যাপারে
রাশিয়ার স্বার্থ ছিল অনেক। ক্রিমিয়ার পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণসাগর বা ব্ল্যাক
সির পশ্চিম পাশে রুমানিয়ার মিহাইল কোগালনাইসেআনুতে রয়েছে ন্যাটোর বিমান
ঘাঁটি। এই বিমান ঘাঁটির গুরুত্ব অনেক। আফগানিস্তানে সেনা ও রসদ সরবরাহের
জন্য ট্রানজিট রুট হিসেবে এই বিমান ঘাঁটিটি ব্যবহৃত হয়। শুধু তাই নয়, কৃষ্ণ
সাগরের গুরুত্ব আরো একটি কারণে। এখানে অবস্থান রয়েছে ন্যাটোর জয়েন্ট টাস্ক
ফোর্স ইস্টের। কৃষ্ণসাগরভুক্ত তিনটি দেশ রুমানিয়া, বুলগেরিয়া আর তুরস্ককে
নিয়ে ন্যাটো গেল বছর তাদের তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছিল। এটা
রাশিয়ার ওপর এক ধরনের স্নায়বিক চাপ। ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন থেকেই
কৃষ্ণসাগরভুক্ত এলাকা সেই সঙ্গে কাসপিয়ান সাগরভুক্ত অঞ্চলকে 'হট এরিয়া',
অর্থাৎ উত্তেজনাপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে আসছেন। সুতরাং ক্রিমিয়ায়
সংখ্যাগরিষ্ঠ রাশিয়ানদের (জনসংখ্যার ৫৯ ভাগ, প্রায় ২০ লাখ) নিরাপত্তা
নিশ্চিত করার জন্য যে শুধু রাশিয়াই 'হস্তক্ষেপ' করেছিল, তা বিবেচনায় নিলে
ঠিক হবে না। রাশিয়ায় 'নয়া জার' নেতৃত্ব রাশিয়ার নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার
দিয়েছে। ক্রিমিয়ায় বসবাসকারী রাশিয়ানদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের নিজেদের
ভূখণ্ডগত নিরাপত্তার বিষয়টি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। পুরো কৃষ্ণসাগরভুক্ত
অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব করার জন্যই ন্যাটোর দরকার জর্জিয়া ও ইউক্রেনকে
ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া। তাহলে রাশিয়ার সীমান্তে উপস্থিত থাকবে ন্যাটোর
সেনাবাহিনী। এটা রাশিয়ার ওপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ। রাশিয়ার
সমরনায়করা এটা যে মেনে নেবেন না, এটাই স্বাভাবিক। উল্লেখ্য, গেল বছর
কৃষ্ণসাগরে ন্যাটো ও জর্জিয়ার নৌবাহিনী যৌথভাবে একটি সামরিক কার্যক্রমে
অংশ নিয়েছিল, যা রাশিয়া খুব সহজভাবে নেয়নি। ক্রিমিয়ার ঘটনার রেশ ধরে একই
ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে। কার্যত ইউক্রেনের
পূর্বাঞ্চলে এখন আর ইউক্রেন সরকারের কোনো কর্তৃত্ব নেই। এ অঞ্চলে কর্তৃত্ব
করে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা, যারা ক্রিমিয়ার মতোই রাশিয়ার অংশ হতে চায়। আর এই
অঞ্চলেই মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের বিমানটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলো।
তবে এই হামলা কারা চালিয়েছে, তা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। অভিযুক্তদের
তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তারা অবশ্যই হামলা
চালানোর কথা অস্বীকার করেছে। ইউক্রেন সরকারকেও অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
মার্কিনি ভূমিকাও সন্দেহের বাইরে নয়। কেননা ন্যাটোর পূর্বমুখী যে
সম্প্রসারণ, তার প্রধান উদ্যোক্তা যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন
ধরেই চাচ্ছে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দুটো দেশ- জর্জিয়া ও ইউক্রেন ন্যাটোর
পূর্ণ সদস্য হোক। তাহলে ন্যাটোর তথা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এই দুই দেশে
মোতায়েন করা যাবে।
ফলে 'চাপের' মুখে রাখা যাবে রাশিয়াকে। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার জ্বালানি
সম্পদ, বিশেষ করে গ্যাসের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হবে।
তাই পুতিন যে এই মার্কিনি স্ট্র্যাটেজি বোঝেন না, এটা ভাবা ছিল ভুল। ২০০৮
সালে রাশিয়া জর্জিয়ার সঙ্গে 'সীমিত যুদ্ধে' জড়িয়ে পড়েছিল; উদ্দেশ্য ছিল
একটাই- রাশিয়ার সীমান্তে ন্যাটোর উপস্থিতি রাশিয়া মেনে নেবে না। এর পরই
ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পরস্পর 'বাক্যুদ্ধে' অবতীর্ণ হয়। ইউক্রেনকে সামরিক
সাহায্য ও আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন রাশিয়ার গ্যাসের ওপর
নির্ভরশীল ইউক্রেনকে রাশিয়া তার ইউক্রেন পাইপলাইন বন্ধ করে দিয়েছে। আর এতে
করে বুলগেরিয়া, রুমানিয়া আর সার্বিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এই
তিন দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্যাসের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। পরিসংখ্যান বলছে,
রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ সংস্থা গ্যাসপ্রম (ধেংঢ়ৎড়স)-এর ইউক্রেনের কাছে পাওনা
রয়েছে দুই বিলিয়ন ডলার। এ টাকা এখন ইউক্রেন কিভাবে শোধ করবে? এই সংকট এখানে
যুদ্ধের আশঙ্কা জাগিয়ে তুলেছে। রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে বাইপাস করে
কৃষ্ণসাগরের নিচ দিয়ে একটি পাইপলাইন তৈরি করছে। সমগ্র ইইউয়ের গ্যাসের
চাহিদার ৩০ ভাগ একা জোগান দেয় রাশিয়া। আর জার্মানির ৪০ ভাগ। সুতরাং বোঝাই
যাচ্ছে, এই গ্যাস আগামী দিনে অন্যতম একটি ফ্যাক্টর হবে ইউরোপের রাজনীতিতে।
অনেকেই স্মারণ করতে পারেন, মধ্যপ্রাচ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল, বিশেষ করে ইরাক ও
লিবিয়ায়, তার পেছনের মূল কারণ ছিল তেল। ইরাক ও লিবিয়ার তেলের সহজলভ্যতার
কারণে মার্কিন তেল কম্পানিগুলোর মদদে সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। যুদ্ধে
ইরাককে ধ্বংস করে দিয়ে এখন মার্কিন কম্পানিগুলোই ওই তেল বিক্রির টাকায় ইরাক
পুনর্গঠনের কাজ করছে। আর লিবিয়ার তেল ও গ্যাস যায় ইতালিতে। গাদ্দাফিকে
প্রাণ দিতে হয়েছিল এই তেল-গ্যাসের কারণেই। সুতরাং রাশিয়ার গ্যাসের ওপর পুরো
ইউরোপের নির্ভরতা, সেখানে নতুন করে 'গ্যাসযুদ্ধ'-এর সূচনা করবে। তবে
পার্থক্য একটাই, রাশিয়া ইরাক কিংবা লিবিয়া নয়। পুতিনের পেছনে রয়েছে রাশিয়ার
সেনাবাহিনী। সুতরাং ওবামা এ অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি করে কোনো সুবিধা করতে
পারবেন না। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমগ্র পশ্চিম
ইউরোপ যখন সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর
নির্ভরশীল ছিল, তখন একপর্যায়ে পশ্চিমা জার্মানির চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ট
মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক রচনা করে 'পূর্ব-পশ্চিম' রাজনীতির এক নয়া দিগন্ত
উন্মোচন করেছিলেন। ব্রান্ট বুঝতে পেরেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে
ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই তিনি স্ব-উদ্যোগে প্রথমে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। সেই সম্পর্ককে
পরবর্তী সময়ে একটি 'মডেল' হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। এমনকি গরবাচেভও চেষ্টা
করেছিলেন 'কমন ইউরোপিয়ান হোম'-এর তত্ত্ব উপস্থাপন করে ইউরোপীয় সংস্কৃতির
আদলে এক ইউরোপ গড়ে তুলতে। তিনি ১৯৮৮ সালেই ওয়ারশ সামরিক জোট ভেঙে
দিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন ন্যাটোর কাঠামো ভেঙে দেওয়া হয়নি; বরং ন্যাটোকে এখন
একটি বিশ্ব সংস্থায় পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একদিকে পূর্ব ইউরোপে
ন্যাটোর যেমনি সম্প্রসারণ ঘটেছে এবং পূর্ব ইউরোপের প্রায় সব দেশ যখন
ন্যাটোর সদস্য, ঠিক তখনই পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে আলাদা আলাদা সংস্থা
গঠন করে ন্যাটোর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা বাড়ানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার,
দুটো বড় শক্তি রাশিয়া ও চীনকে নিয়ন্ত্রণে আনা ও দেশ দুটো থেকে স্বার্থ আদায়
করা। তাই ইউক্রেন সংকট, সেখানে তথাকথিত গণ-অভ্যুত্থানের নামে ইয়ানুকোভিচ
সরকারের পতন ঘটানো এবং সর্বশেষ ঘটনায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা একই সূত্রে
গাঁথা। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র যত বেশি জড়িত হবে, তত বেশি রাশিয়া আগ্রাসী
হবে। রাশিয়া সীমান্তে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। মনে থাকার কথা, ২০০৮
সালে রাশিয়া তার সীমান্তবর্তী জর্জিয়ার দুটো অংশ দখল করে নিয়েছিল। এখন
জর্জিয়ার আবখাজিয়া (২০০৮), কিংবা ইউক্রেনের ক্রিমিয়ার পর মলদোভার ট্রান্স
দায়িয়েস্টা ও অপর একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গাগাউজিয়াতে একই ঘটনার
পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। কাজাখস্তান ও আজারবাইজান নিয়েও রয়েছে একই প্রশ্ন।
ইউক্রেনের পর রুশ বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বাস করে কাজাখস্তানে।
এসব অঞ্চলে রাশিয়ার কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। যেকোনো ধরনের ন্যাটোর আগ্রাসন,
রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে উৎসাহিত করবে এসব অঞ্চলকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে।
তবে আমার ধারণা, ক্রিমিয়ার পর রাশিয়া একটা 'স্ট্যাটাস কো' অবলম্বন করছে।
অর্থাৎ যে যেখানে আছে, সে সেখানে অবস্থান করবে। রাশিয়া এই মুহূর্তে তার
সীমান্ত বাড়াবে না। মনে রাখতে হবে, পশ্চিমা বিশ্বের প্রয়োজন রয়েছে
রাশিয়াকে। বিশ্বের নবম অর্থনীতি হচ্ছে রাশিয়া। পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা
আরোপের ফলে রাশিয়াতে এখন বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে
রাশিয়ার সম্পদ 'ফ্রিজ' করায় তা রাশিয়ার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। এটা
কাটিয়ে উঠতে রাশিয়া এখন 'ব্রিকসভুক্ত' (ইজওঈঝ) দেশগুলোকে নিয়ে আলাদা একটি
অর্থনৈতিক ব্লক গড়ে তুলছে। বিশ্বব্যাংকের বিকল্প একটি ব্যাংক গঠনের
সিদ্ধান্ত নিয়েছে 'ব্রিকস'। চীন ও ভারত এই 'ব্রিকস'-এর সদস্য। ক্রিমিয়া
সংকটে চীন ও ভারত রাশিয়ার অবস্থানকে সমর্থন করেছিল। এই সংকট রাশিয়া-চীন
সম্পর্ককে আরো জোরদার করেছে।
অর্থনীতিবিদদের হিসাব অনুযায়ী, ২০৫০
সালে 'ব্রিকস'-এর অর্থনীতি গিয়ে দাঁড়াবে ১২৮ ট্রিলিয়ন ডলার (এক হাজার
বিলিয়নে এক ট্রিলিয়ন), তখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির পরিমাণ দাঁড়াবে মাত্র
৩৮.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে রাশিয়া চীনকে সঙ্গে নিয়ে 'সাংহাই কো অপারেশন
অর্গানাইজেশন'কে শক্তিশালী করছে। আর সাবেক সোভিয়েত-বলয়ভুক্ত পূর্ব ইউরোপের
দেশগুলোকে নিয়ে একটি শক্তিশালী সামরিক জোট কালেকটিভ ট্রিটি অর্গানাইজেশন
গঠন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এটা হতে পারে ওয়ারশ জোটের পরিবর্তিত সংস্করণ।
প্রেসিডেন্ট ওবামার ইউক্রেনকে সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করা ও সেখানে
ন্যাটোর সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া পুরো ইউরোপকে আবারও
অস্থিতিশীল করে তুলবে। এর প্রভাব গিয়ে পড়বে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে, সেখানে
ইসলামী জঙ্গিরা তাদের অবস্থান শক্তিশালী করে সনাতন ইসলামিক রাষ্ট্র গঠন
করার কথা ঘোষণা করেছে। সুতরাং 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' অনুযায়ী মালয়েশিয়ান বিমান
বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাকে হালকাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। একাধিক আন্তর্জাতিক
তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের রিপোর্ট ও জাতিসংঘের ভূমিকার দিকে এখন
তাকিয়ে থাকবে সারা বিশ্ব। তবে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা কারো জন্যই
কোনো মঙ্গল ডেকে আনবে না।
Daily Kalerkontho
05.08.14
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment