রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ইসলামিক স্টেট আল কায়েদা ও আরব বিশ্বের চলমান রাজনীতি

অনেকগুলো কারণে আরব বিশ্বের সাম্প্রতিক রাজনীতি আজ আলোচিত। প্রথমত, ইরাকে সুন্নি প্রভাবাধীন ইসলামিক স্টেট জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান ও এর নেতা কর্তৃক সমগ্র মুসলিম বিশ্ব নিয়ে একটি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা। দ্বিতীয়ত, গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা এবং এ অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি। তৃতীয়ত, ইরাকের কুর্দিস্তানের সিনজার পর্বতমালাসংলগ্ন সংখ্যালঘু ইয়াজিদি সাম্প্রদায়কে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের জঙ্গিদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অব্যাহত মার্কিন বিমান হামলা। প্রেসিডেন্ট ওবামা জানিয়েছেন, এই বিমান হামলা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ইতোমধ্যে আইএসের জঙ্গিরা প্রায় ৭০০ ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করেছে। চতুর্থত, ইরাকে ক্রমবর্ধমান জঙ্গি তৎপরতার মুখে মালিকি সরকারের পতন ঘটেছে। সেখানে হায়দার আল আবাদির নেতৃত্বে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু এই সরকার ইরাককে ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে কি না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন এখন। পঞ্চমত, আরব বসন্ত গোটা আরব বিশ্বে যে সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়ায় জঙ্গি তৎপরতা সেই সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটিয়েছে। তবে যে বিষয়টি আলোচনার দাবি রাখে, তা হচ্ছে মুসলমান বিশ্বে এখন জঙ্গি তৎপরতার নেতৃত্ব দেবে কে- আল কায়েদা নাকি ইসলামিক স্টেট? আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আল কায়েদার তৎপরতা থেমে থাকেনি। বরং আরব বিশ্বে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আল কায়েদার জঙ্গিরা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আল কায়েদা ইন অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা, আল কায়েদা ইন ইসলামিক মাগরের, আল কায়েদা ইন ইরাক কিংবা আল গামা আল ইসলামিয়া (মিসর), আল নুসরা ফ্রন্ট (সিরিয়া) প্রভৃতি সংগঠনের নাম ইতোমধ্যে পত্রপত্রিকায় এসেছে, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আল কায়েদার সঙ্গে জড়িত। এদের তৎপরতা যখন সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে, ঠিক তখনই হঠাৎ করে আবির্ভাব ঘটল ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের। অভিযোগ আছে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা এদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এখন এদের সঙ্গে আল কায়েদার জঙ্গিদের সম্পর্ক কী দাঁড়াবে, সেটাও একটা প্রশ্ন। সঙ্গত কারণেই তাই আরব বিশ্বের চলমান রাজনীতি এই মুহূর্তে আলোচনার অন্যতম বিষয়। এই মুহূর্তে আরব বিশ্বে আলোচিত বিষয় একটি- আর তা হচ্ছে জনৈক আবু বকর আল বাগদাদি কর্তৃক খিলাফতের আহ্বান ও নিজেকে মুসলিম বিশ্বের ‘খলিফা’ হিসেবে ঘোষণা। সাম্প্রতিক সময়ে ইরাকের গৃহযুদ্ধের সূত্র ধরে আবির্ভূত হয়েছে ‘দি ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট’ (আইএসআইএস) নামে একটি সংগঠন। তাদের বর্তমান নাম ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এরা সুন্নি সাম্প্রদায়ভুক্ত। সিয়া প্রভাবাধীন ইরাকে এরা শুধু ক্ষমতাসীন সরকারকেই উৎখাত করতে চায় না, বরং ইরাক ও সিরিয়া নিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চায় একটি ইসলামিক রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রটি পরিচালিত হবে সম্পূর্ণভাবে আদি ইসলামিক শাসনব্যবস্থার আদলে। ইতোমধ্যে ইরাকের একটা বিশাল অংশ আইএসের গ্যারিলারা দখল করে নিয়েছে। সর্বশেষ ঘটনায় সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল শোধনাগারটিও দখল করে নিয়েছে এই জঙ্গিরা। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইরাকে ক্ষমতাসীন সাবেক মালিকি সরকারকে সাহায্যে ওবামা প্রশাসন এগিয়ে আসেনি। শুধু তাই নয়, আইএসের আগ্রাসন ঠেকাতে ইরাকে পুনরায় সেনা পাঠাতেও অপারগতা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীপ্রধান। সেখানে কিছু মার্কিনি সেনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তা করা হয়েছে শুধু মার্কিন দূতাবাস ও দূতাবাস স্টাফদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। বিমান হামলা চালানো হয়েছে বটে। তবে তা একটি সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য। সারা মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব বিশ্বজুড়ে ইসলামিক জঙ্গিবাদের উৎখাত নতুন কোনো ঘটনা নয়। আল কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন আরব বিশ্বে, বিশেষ করে ইয়েমেন, লিবিয়া ও সিরিয়ায় তৎপর। ‘আল কায়েদা ইন দ্য ইসলামিক মাগরের’, ‘সালফিস্ট গ্রুপ ফর প্রিচিং অ্যান্ড কমম্যাট’ কিংবা লিবিয়ায় ‘ইসলামিক ফাইটিং গ্রুপ’, ‘আবদেল হাকিম বেলহাদন গ্রুপ’, সিরিয়ায় আল নুসরা ফ্রন্ট নিয়ে আমি ইতোপূর্বে এই প্রবন্ধের শুরুতে আলোকপাত করেছি। কিন্তু আইএসের উত্থান একেবারেই নতুন এবং সংগঠনটির খিলাফতের আহ্বানও নতুন একটি বিতর্কের মাত্রা দিয়েছে। ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি তথা আরব বিশ্বের রাজনীতি এখন এই খিলাফতের ধারণাকে ঘিরে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। এখানে বলা ভালো সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাপী ইসলামি জঙ্গিবাদের যে বিস্তার ঘটেছে, তাতে কখনো সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে নিয়ে একটি খিলাফতের কথা বলা হয়নি। আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন কিংবা মোল্লা ওমর জিহাদের ডাক দিয়েছেন বটে, কিন্তু কোনো ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথা বলেননি। তাদের মূল টার্গেট ছিল যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য। কিন্তু এখন আইএসের উত্থান ও আবু বকর আল বাগদাদির খিলাফতের ঘোষণা পুরো দৃশ্যপটকে বদলে দিল। অনেকগুলো প্রশ্ন এখন আছে। এক. এই খিলাফত প্রতিষ্ঠার আহ্বান কতটুকু ধর্মসম্মত? কিংবা এর বাস্তবতা কতটুকু? দুই. আইএসের আসল উদ্দেশ্য কী? তিন. মার্কিন তথা পশ্চিমা বিশ্ব এই আহ্বানকে এখন কোন চোখে দেখবে? তাদের ভূমিকা কী হবে? চার. সনাতন আরব বিশ্বে, বিশেষ করে সৌদি আরবে এর প্রতিক্রিয়া কী? যারা আরব বিশ্বের ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তারা জানেন খিলাফতের ধারণা বেশ পুরনো। এখন আর আরব বিশ্ব খিলাফত নিয়ে কেউ কথা বলেন না। তথাকথিত জিহাদের ডাক দিয়ে আল কায়েদার জন্ম হয়েছিল। এরা জড়িত ছিল সন্ত্রাসী কর্মকা-ে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মঘাতী বোমারু তৈরি করা, সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করা, প্রচলিত সমাজব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার নাম আর যাই হোক ইসলাম নয়। আমাদের দেশে যারা ইসলাম প্রচার করার জন্য এক সময় আরব দেশ থেকে এসেছিলেন, তারা এভাবে ইসলাম প্রচার করেননি। একে-৪৭ রাইফেল হাতে নিয়ে আর পুঁজিবাদের প্রতীক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস করে দিলেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয় না। এ কারণেই ওসামা বিন লাদেনের কর্মকা- বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। যেহেতু তিনি অন্যায় করেছেন এবং অভিযুক্ত, সেহেতু তার বিচার হওয়া উচিত ছিল। এ ধরনের বিচার তো হচ্ছে। যারা বসনিয়া, রুয়ান্ডা কিংবা কসোভোতে গণহত্যা চালিয়েছিল, হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার হচ্ছে। লাইবেরিয়া কিংবা রুয়ান্ডায় যারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল, তাদেরও বিচার হচ্ছে। চার্লস টেলর কিংবা রুয়ান্ডার সাবেক প্রেসিডেন্টের মতো ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা আজ বিচারের মুখোমুখি। পানামার নরিয়েগাকে যুক্তরাষ্ট্র পানামা থেকে ধরে নিয়ে এসেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের জেল থেকে এখন তাকে পানামার জেলে পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাজি বাহিনী ইউরোপে ‘অপরাধ’ করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধ সংঘটিত করা, শান্তি বিঘিœত করা। ১৯৪৫ সালে গঠিত International Military Tribunal (Nurenburs)-এ তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়েছিল। বিচার তাদেরও হয়েছিল, যারা দূরপ্রাচ্যে (Far East) অপরাধ সংঘটিত করেছিল। ১৯৪৬ সালে গঠিত হয়েছিল International Military Tribunal for Far East (Japan)। জাপানি যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার হয়েছিল। ওসামা বিন লাদেনও তো একই ধরনের অপরাধ করেছেন- মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধ ও হত্যাকা-। এর জন্য উপযুক্ত জায়গা ছিল হেগে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেখানে তাকে তার অপরাধের জন্য ‘বিচার’ করা যেত। তা না করে যুক্তরাষ্ট্র কমান্ডো পাঠিয়ে তাকে হত্যা করল। আন্তর্জাতিক আইনে এ ধরনের হত্যা অনুমোদন করে না। এমনকি কোনো দেশের সীমান্ত লংঘন করাও আন্তর্জাতিক আইনে ‘অপরাধ’। International law association 2010 সালের আগস্টে হেগে একটি আইন অনুমোদন করেছিল। তাতে বলা হয়েছে,Calls on all state to observe carefully the distinction between situations of armed conflict as defined in international law and situation of peace in developing and carrying out policies involving the use of lethal force, detention and trials, asylum obligation, and other relevant state action. European court of Human rights (ECHR) ১৯৯৫ সালে সংঘটিত একটি ঘটনার রায় দিয়েছিলেন, যে ঘটনার সঙ্গে ‘বিন লাদেনের’ ঘটনার অদ্ভুত এক মিল রয়েছে। মামলাটি ছিল ম্যাককেন (Mc cann) বনাম যুক্তরাজ্য- এই মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন IRA সদস্যরা। যাদের জিব্রালটারে হত্যা করেছিল ব্রিটিশ ঝঅঝ বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল SAS সদস্যরা বোমা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঊঈঐজ তখন রায় দিয়েছিলেন IRA উচিত চিল তাদের গ্রেপ্তার করা। যদি সন্দেহভাজনরা গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করতেন, তাহলে তারা অস্ত্র ব্যবহার করতে পারতেন। এখন লাদেনের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি কি সে রকম দাঁড়াল না? লাদেন নিরস্ত্র ছিলেন। জিব্রালটার ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত এলাকা ছিল। কিন্তু পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত এলাকা নয়। পাকিস্তান একটি স্বাধীন দেশ। সেই স্বাধীন দেশের সীমানায় অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ করে একজন ‘সন্ত্রাসী’কে হত্যা করা অপরাধ ও স্থানীয় তথা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের শামিল। Inter American courtও বলছেন, সন্ত্রাস দমনের নামে অস্ত্রের অতিরিক্ত ব্যবহারের বৈধতা দেওয়া যায় না (আইনের অধ্যাপক Mary O’connell (Notre dame)-এর প্রবন্ধ The bin laden aftermath : abbottabad of international law, AFPAK channel, 4 may)। যুক্তরাজ্যের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিশেষজ্ঞ নিক গ্রিফ লন্ডনের গার্ডিয়ানে ঠিক এ প্রশ্নটিই তুলেছিলেন যে, লাদেনের হত্যাকা- আইনসম্মত ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারকর্মী জিওফ্রে বরাটসনের মতো অভিযোগ সাবেক পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফেরও। এর খারাপ দিকটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র যাকে ‘শত্রু’ মনে করবে, তাকে হত্যা করতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করতে এতটুকুও দ্বিধাবোধ করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকা জাতিসংঘ সনদ ৪.১ ও ৪.৪-এর পরিপন্থী, যেখানে ‘সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখ-তা’র কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের এই ভূমিকা বিশ্বে পুনরায় স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দিতে বাধ্য। লাদেন নিঃসন্দেহে বিতর্কিত একজন ব্যক্তি। তিনি ইসলাম ধর্মকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবেন অনেকেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিন্তু ইসলাম ধর্মকে তিনি নতুন এক ‘ব্র্যান্ড’-এ উপস্থাপন করেছেন, যা সন্ত্রাসী ভাবধারায় প্রভাবান্বিত। এটা ইসলাম নয়। কোটি কোটি মানুষ, যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী তারা এই সন্ত্রাসী কর্মকা-কে বরং ঘৃণাই করবেন। তবে ভেবে দেখতে হবে, ওসামার উত্থান কেন হল। অনেক গবেষক মনে করেন, ওসামার উত্থানের পেছনে যে বিষয়টি কাজ করে, তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের বিকল্প। ওসামা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে ‘বিকল্প’ উপস্থাপন করেছিলেন (Niall Ferguson-এর প্রবন্ধ Foreign Affairs, april 2005) বিশ্বায়নের বিকল্প হচ্ছে ইসলাম কিংবা মিসরের প্রখ্যাত প-িত সাঈদ কুতুব (Sayyid Qutb)-এর ব্যাখ্যা Islam is the solution(ইসলামই একমাত্র সমাধানের পথ) মতবাদে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কিছুটা আস্থা খুঁজে পেলেও ওসামা যেভাবে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে ইসলামকে উপস্থাপন করেছেন, সে ব্যাপারে আপত্তি উঠেছিল খোদ মুসলিম বিশ্ব থেকেই। ওসামা মূলত ছিলেন ‘ওয়াহিবজম’-এর প্রবক্তা। এরা সালাফি বা আদিপন্থী হিসেবেও পরিচিত। সৌদি রাজপরিবার এই ওয়াহিবজম মতবাদে বিশ্বাসী (১৭০৩ সালে জন্ম নেওয়া মুহম্মদ ইবন আবদ আল ওয়াহাব ইসলামের নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন)। ‘ওয়াহিনী’ মতবাদে জিহাদকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। ওসামা বিন লাদেন মূলত ওয়াহিনী মতবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বব্যাপী জিহাদের ডাক দিয়েছিলেন। এর সঙ্গে যে ইসলামের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই এবং ইসলাম সন্ত্রাসবাদকে যে সমর্থন করে না- মুসলিম বিশ্ব এটা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। যার পরিণামে ৯/১১-এর ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ’ শুরু করেছিল, তা লাদেনের হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেছে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ (Bush Doctrine) ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নতুন এক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন (Preemtive attack- শত্রুর আঘাত করার আগেই শত্রুকে আঘাত করে শেষ করে দেওয়া। দৃষ্টান্ত ইরাক)। আর ওবামা এটাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছিলেন (Humanitarian Intervention, লিবিয়া)। মনে রাখতে হবে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এ টার্গেট করা হয়েছে মুসলমানদের। শুধু মুসলমানদেরই সন্ত্রাসী বানানো হয়েছে। ইহুদি সন্ত্রাসীদের টার্গেট করা হয়নি। কিংবা ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করলেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই প্রেসিডেন্ট ওবামার দেওয়া সর্বশেষ সিদ্ধান্তটিও বিতর্ক সৃষ্টি করবে। ইহুদি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিমান না পাঠিয়ে তিনি পাঠালেন ইরাকে! বিশ্ব এক জটিল সমীকরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতেই আইএসের জন্ম দেওয়া হয়েছে। বলে রাখা ভালো, আইএস কিন্তু হামাসের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়নি। বরং হামাসের বিরোধিতা করেছে। এখন সুন্নি জঙ্গিদের উত্থান কী পুনরায় মার্কিন সেনা ইরাকে মোতায়েনের পথ প্রশস্ত করবে- সেটাই দেখার বিষয়। Daily AMADER SOMOY 23.08.14

0 comments:

Post a Comment