রাজনীতি এখন নির্বাচনকেন্দ্রিক। নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা ছিল, তা কেটে গেছে। নির্বাচনী আকাশ এখন পরিষ্কার। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ড. কামাল নিজে নির্বাচনে লড়বেন, এমন একটি কথা নাকি মির্জা ফখরুলকে দিয়ে দিয়েছেন। ১০ জন সুধীর একটি তালিকাও দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন, যাঁদের তিনি পার্লামেন্টে দেখতে চান। তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথমে ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। এখন তা পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ অনেক আগেই মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে। সেখানে ‘স্টার’দের বড্ড ভিড়। একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনারও এখন ‘নৌকায়’ উঠতে চান। একজন জনপ্রিয় ক্রিকেটার এখন খেলার মাঠ ছেড়ে এবং অবসর না নিয়েই ‘নৌকার’ মনোনয়নপত্র কিনলেন। বিএনপি কিছুটা পিছিয়ে, যদিও সেখানেও ‘স্টার’দের ভিড় আছে। ১৪ দলীয় শরিক দলগুলো এবার দলীয় প্রতীকে নয়, বরং নৌকায় ভরসা খুঁজছে। ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলো ‘ধানের শীষ’ নেবে। ভোটারদের কাছে ‘নৌকা’ আর ধানের শীষের আবেদন অনেক বেশি। নির্বাচনে মার্কা একটা ফ্যাক্টর। রাজনীতি এখন শুধুই নির্বাচনকেন্দ্রিক। কিন্তু দেশে একটি ভালো রাজনীতির জন্য যে আস্থার সম্পর্ক থাকা দরকার, তা কি নিশ্চিত হয়েছে?
ডালাসে এসেছি মাত্র কয়েক দিন। ঢাকা ছেড়েছিলাম যখন, তখন সবেমাত্র ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রথম দফা সংলাপ শেষ হয়েছে। অনেকে এই ডালাসে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে সংলাপের ভবিষ্যৎ কী? প্রবাসে পড়ে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিডটার্ম ইলেকশন’ তাদের যতটা না বেশি টেনেছে, তার চেয়ে বেশি টেনেছে বাংলাদেশের রাজনীতি। কেমন হবে ওই নির্বাচন? আওয়ামী লীগ কি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে? খালেদা জিয়া কি মুক্তি পাবেন? এসব প্রশ্ন আমাকে এই ডালাসে বারবার শুনতে হয়েছে। দ্বিতীয় দফা সংলাপও হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। এরই মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট আরো শক্তিশালী হয়েছে কাদের সিদ্দিকীর যোগদানের কারণে। কাদের সিদ্দিকীর দল ছোট। কিন্তু ব্যক্তি কাদের সিদ্দিকী অনেক ‘বড়’। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা তাঁকে ‘অবিসংবাদিত পুরুষে’ পরিণত করেছিল। প্রায় সময়ই তিনি স্পষ্ট করে কথা বলেন। এখন ঐক্যফ্রন্টে তাঁর যোগদান ঐক্যফ্রন্টকে যে আরো শক্তিশালী করবে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।
ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সরকারের সংলাপ এবং সমঝোতা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বেশি। এর বাইরে এরশাদের নেতৃত্বে ফ্রন্ট বা জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ হলেও তেমন কোনো গুরুত্ব নেই আমার কাছে। কেননা মহাজোটে থাকা জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করেই একসঙ্গে এখন নির্বাচনে যাবে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘আসন’ ভাগাভাগি হবে। কেননা যে সম্ভাবনা ছিল এরশাদের নেতৃত্বে একটি বিকল্প বিরোধী দল তৈরি হওয়া, সে সম্ভাবনা এখন আর নেই। মানুষ এখনই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ‘প্রধান বিরোধী দল’ হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। এরশাদের সেই সুযোগটি এখন আর নেই। যদি মহাজোট আবার সরকার গঠন করে, তাহলে কিছু পদ-পদবি নিয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে এখন খুশি থাকতে হবে।
দুই দফা সংলাপে সফলতার হার ১০০ শতাংশ, তা বলা যাবে না। তবে ‘দূরত্ব’ তো কমে এসেছে। প্রথম দফা সংলাপে সরকার ঐক্যফ্রন্টের উত্থাপিত সাত দফার বেশ কয়েকটি দফা পরোক্ষভাবে মেনে নিয়েছে। যেমন—সভা-সমাবেশে কোনো বাধা দেওয়া হবে না, বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও থাকতে পারবেন, মামলাগুলোর তালিকা দিলে তা তারা দেখবে ইত্যাদি ইত্যাদি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাদ দিলেও সরকারের ক্ষতি নেই। তবে সংসদ বহাল থাকা, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে কিছু জটিলতা আছে। নির্বাচনের আগে পৃথিবীর কোনো দেশেই সংসদ বহাল থাকে না। বাংলাদেশে অতীতে যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে সংসদ বহাল ছিল না। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে নানা জটিলতা তৈরি হয়। এখন সরকার সংসদ ভেঙে নির্বাচন দিয়ে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেও নির্বাচন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী দলের (এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) প্রতিনিধিদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যাঁরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন। সেই মন্ত্রিসভায় সরকারের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। সংবিধানে এর ব্যাখ্যা আছে। সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে, মন্ত্রিসভা গঠিত হবে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী ‘টেকনোক্র্যাট’ কোটায় বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে ‘আস্থার সম্পর্ক’ স্থাপনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। সেনাবাহিনীকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করাও সম্ভব। আইনগতভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি দেওয়াও সম্ভব।
ভালো নির্বাচনের পূর্বশর্তই হচ্ছে ‘আস্থার সম্পর্ক’। এই আস্থার সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। নির্বাচনের আগে ন্যূনতম কিছু কোড অব কনডাক্ট (Code of Conduct) পালন করা সবার জন্যই মঙ্গল। নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি আচরণবিধি তৈরি করতে পারে, যেখানে জাতীয় নেতাদের, দলীয় প্রধানদের ব্যাপারে কোনো কটূক্তি করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারণায় শালীনতা বজায় রাখতে হবে। কোনো পর্যায়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করা যাবে না। ভোট কারচুপি কিংবা ‘সিল মারা সংস্কৃতি’ রোধে প্রতিটি কেন্দ্রে ইসি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দিয়ে একেকটি ‘সিটিজেনস কমিটি’ গঠন করতে পারে। চলমান সংলাপ আস্থার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় এক ধাপ অগ্রগতি। এই অগ্রগতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কয়েকটি বিরোধী দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে আমাদের অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রথমত, বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল কেন হলো? আমি মনে করি, বিএনপির এই সিদ্ধান্ত সঠিক ও যৌক্তিক। কেননা বিগত দিনগুলোতে দেখা গেছে, বিএনপি কোনো শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এটা বিএনপির ব্যর্থতা। যদিও সরকারের জুলুম, হামলা, মামলা, গুপ্তহত্যা ইত্যাদির কথা বলা হয়। এর পেছনে সত্যতা হয়তো আছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি তেমন গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী মঞ্চে যাওয়া ছাড়া বিএনপির কোনো বিকল্প ছিল না।
ড. কামাল হোসেন একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তাঁর দল শক্তিশালী নয়, সংগঠন দুর্বল; কিন্তু ব্যক্তি ইমেজ আছে। বিএনপি চেয়েছে এই ব্যক্তি ইমেজ ব্যবহার করে ‘বৈতরণী’ পার হতে। বিএনপির একটি ‘এক্সিট’-এর প্রয়োজন ছিল। খালেদা জিয়া জেলে। তারেক রহমান শাস্তিপ্রাপ্ত। নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ না করলে তিনি আপিল করতে পারবেন না। ফলে বিএনপি কৌশলগতভাবে এই দুই নেতাকে ‘মাইনাস’ করে ড. কামালের সঙ্গে রাজনৈতিক সখ্য গড়ে তুলল। বিএনপির কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না। শুধু তা-ই নয়, কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না কিংবা আ স ম আবদুর রব—এঁরা কেউই অতীতে বিএনপির মিত্র ছিলেন না। বিএনপিকে এটা জেনেই তাঁদের সঙ্গে ঐক্য করতে হয়েছে। অনেকেই ‘মাহাথির মোহাম্মদ’-এর দৃষ্টান্ত দেন। তিনি অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন মালয়েশিয়ায়। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে দায়িত্বভার অর্পণ করতে যাচ্ছেন। প্রকাশ্যে তিনি এটা স্বীকারও করেছেন। এই ফর্মুলা বাংলাদেশে কাজ করবে না। ওবায়দুল কাদের আকার-ইঙ্গিতে জানিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়ার প্যারলে মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমার ধারণা, খালেদা জিয়া আইনগতভাবেই মুক্তি পাবেন। অথবা চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্যারলে মুক্তি দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কিংবা তারেক রহমান কেউই অংশ নেবেন না। ঐক্যফ্রন্টের নেতা হিসেবে কামাল হোসেনই থেকে যাবেন। আর চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া বিদেশে যাবেন।
দ্বিতীয়ত, বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য দলের সম্পর্ক কী হবে? এটা একটা মৌলিক প্রশ্ন। কাদের সিদ্দিকী কিংবা আ স ম আবদুর রব অতীতে তারেক রহমান সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন একাধিকবার। এঁরা সর্বশেষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছেন বটে; কিন্তু তারেক রহমানের দণ্ডাদেশ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। এর অর্থ তাঁরা তারেক রহমানের বিষয়টিকে এড়িয়ে চলতে চাইছেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, তারেক রহমানই বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতা। তাঁকে বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতি কতদূর এগিয়ে যেতে পারবে, সেটা একটা প্রশ্ন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির নেতারা খুব সুবিধা করতে পারবেন না। মূল নেতা কামাল হোসেনের বাইরে কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব কিংবা মাহমুদুর রহমান মান্না প্রাধান্য পাবেন বেশি। এ ক্ষেত্রে মির্জা ফখরুল, ব্যারিস্টার মওদুদ, মির্জা আব্বাস কিংবা গয়েশ্বর রায়রা কম প্রাধান্য পাবেন। এতে এক ধরনের অসন্তোষের জন্ম হতে পারে। নজরুল ইসলাম খান কিংবা ড. মঈন খানের মতো মডারেট নেতারাও গুরুত্ব পাচ্ছেন কম। এটা চোখে লাগার মতো।
তৃতীয়ত, একটা বড় প্রশ্ন ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোকে নিয়ে। ঐক্যফ্রন্ট বলছে, তারা বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করেছে, ২০ দলের সঙ্গে কোনো ঐক্য করেনি। ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় ২০ দলের সিনিয়র নেতাদের, বিশেষ করে কর্নেল অলি কিংবা মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিমকে দেখা যায় না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় শুধু জেনারেল ইবরাহিম উপস্থিত ছিলেন। অথচ এঁরা দুজন ২০ দলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বিএনপি ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে তাঁদের অবমূল্যায়ন করেছে কিংবা তাঁদের অবদানকে ভুলে গেছে, এমন অভিযোগও আছে। ফলে তাঁদের ভূমিকা আগামী দিনে লক্ষ করার মতো। চতুর্থত, এটা অস্বীকার করা যাবে না যে ঐক্যফ্রন্ট একটি নির্বাচনী জোটে পরিণত হবে। এ ক্ষেত্রে আসন বণ্টনের ব্যাপারে বিএনপির সঙ্গে ফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর দ্বন্দ্ব অনিবার্য।
ফ্রন্টে থেকে বিএনপি কি ২০ দলীয় জোটের জন্য অধিক আসন দাবি করবে, নাকি ফ্রন্ট ফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর বাইরে অন্য কোনো দলের মধ্যে আসন বণ্টন করবে না? ২০ দলীয় জোটভুক্ত দলগুলো এখন পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করেনি। ফলে সংগত কারণেই ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ওই দলগুলো আসন দাবি করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে বিএনপির প্রতি ওই দলগুলোর এক ধরনের অসন্তোষ থেকে যাবে। জোটটি ভেঙেও যেতে পারে। নিঃসন্দেহ বিএনপি একটি বড় ডায়লামা ‘ফেস’ করছে—একদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, অন্যদিকে ২০ দলীয় জোট। বিএনপি অগ্রাধিকার দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে, গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে ২০ দলীয় জোট। উপরন্তু ঐক্যফ্রন্টে আসন বণ্টন নিয়েও বিএনপি ফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিএনপি বড় দল। তারা বেশি আসন চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছোট দলগুলো যদি বেশি আসন চায়, যা এরই মধ্যে মান্নার কথার মধ্যে ফুটে উঠেছে। এতে ঐক্যফ্রন্টে অসন্তোষ বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। বিএনপির অনেক নেতা তখন ফ্রন্টের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করতে পারেন। বিএনপি ভেঙে যাওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। কোনো ‘পক্ষ’ কি সেটাই চাইছে? জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একটি আবেদন সৃষ্টি করতে পেরেছে, সন্দেহ নেই তাতে। বিরোধী পক্ষের রাজনীতি এতে আরো শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক।
মূল প্রশ্ন একটাই—একটা আস্থার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের কয়েকটি দল যেভাবে এখনো ড. কামাল হোসেন, ঐক্যফ্রন্ট কিংবা বিএনপির বিরুদ্ধে যেভাবে নেতিবাচক মন্তব্য করছে, তা কোনো আশার কথা বলে না। দুটি বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস বা আস্থার সম্পর্ক থাকতে হবে। না হলে এ দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হবে না। বিগত বছরগুলোতে আমরা ভোটকেন্দ্র দখল, সিল মারা সংস্কৃতি, বিরোধী পক্ষকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দান, মনোনয়নপত্র জমা দিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির (সিটি করপোরেশন নির্বাচন) যে ‘চিত্র’ আমরা দেখেছি, তা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা কেউ দেখতে চাই না। পেশিশক্তির নাম আর যা-ই হোক গণতন্ত্র নয়। এ কথাটা আমরা যেন ভুলে না যাই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পরিস্থিতি এড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একটা সম্ভাবনাময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমরা। নির্বাচন ও জনগণের ভোটাধিকার এখানে মুখ্য। কিন্তু পেশিশক্তির কাছে জনগণের ভোটাধিকার যেন পরাস্ত না হয়—আমাদের প্রত্যাশা এটাই।