রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

এ কি কথা বললো বিকল্পধারা!

বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের একটি বক্তব্য, একটি অনলাইন (আরটিএনএন) সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে গত ১৯ নভেম্বর। ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বিকল্পধারার চেয়ারম্যান ডা. বি. চৌধুরীর বাসায় গিয়েছিলেন। বিকল্প ধারার নেতৃবৃদের সাথে ভারতীয় হাই কমিশনারের বৈঠকও হয়েছে। বৈঠক শেষে বিকল্প ধারার মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। নিবাচর্নের আগে তাদের সাহায্য প্রয়োজন। যদিও তিনি এটা স্পষ্ট করেননি যে, এই সাহায্যের ধরনটা কী হবে? এমনকি হাইকমিশনার শ্রিংলাও সাংবাদিকদের বলেননি, ভারত কীভাবে সাহায্য করবে বাংলাদেশকে। তবে তিনি বলেছেন, তারা বিকল্পধারাকে বুঝতে চেষ্টা করেছেন। নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা নিয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই, এ কথাটা বলতেও তিনি ভোলেননি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের সাহায্য প্রয়োজন। বিকল্প ধারার এই যে অবস্থান এটা বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট। নির্বাচনের জন্য আমাদের ভারতের কেন ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে একটি নির্বাচনকালীন সরকার কাজ করতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনের প্রস্তুতিও গ্রহন করেছে। এমতাবস্থায় বিকল্প ধারার মতো একটি রাজনৈতিক দল যদি বলে, নির্বাচনে ভারতের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে, তখন এটা নিয়ে বিতর্ক হতে বাধ্য। বিকল্প ধারার মহাসচিব এ ধরনের একটি কথা বললেন, এমন একটি সময় যখন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বর্পূর্ণ। নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকটি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের তৎপর হতে আমার দেখছি। ভারতীয় হাই কমিশনারের পাশাপাশি ব্রিটিশ হাই কমিশনারও তৎপর হয়েছেন। ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ হাই কমিশনার অ্যালিসন ব্লাকও সম্প্রতি দেখা করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি ড. কামাল হেসেনের সাথে।
সাক্ষাৎকারের পর ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ব্রিটিশ হাই কমিশনারকে জানানো হয়েছে, ঐক্যফ্রন্ট নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। সেক্ষেত্রে সাত দফা দাবিও সরকারের কাছে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য মিস ব্লাকের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্পষ্টতই নির্বাচনের বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে ভারত কিংবা বৃটিশ হাইকমিশনারের কোনো মন্তব্য থাকতে পারে না। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য এখানেই যে, আমরা বারবার আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে বিদেশিদের দারস্থ হয়েছি। এটা ভালো নয়।
একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আছে। সরকারের সব মন্ত্রীরাই এখন ক্ষমতায়। পুলিশ প্রটেকশন নিচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। সংসদও ভেঙে দেয়া হয়নি। ড. কামাল হোসেন একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি করছেন বটে। কিন্তু এর পেছনে যুক্তি যাই থাকুক না কেন ঐক্যফ্রন্টের উচিত ছিলো, সাংবিধানিক কাঠামোয় এর একটি সমাধান বের করা। তারা তা করেননি। ঐক্যফ্রন্টের থিংক ট্যাঙ্ক অতো শক্তিশালী নয়। তারা কোনো ফর্মুলা দিতে পারেননি। এমনকি সংলাপেও তারা একটি ফর্মুলা দিতে পারতেন। জাতি কোনো বিকল্প কিছু পায়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আছেন, মন্ত্রীরা সবাই আছেন। এটা ঐক্যফ্রন্টকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। একটি ছোট্ট মন্ত্রিসভা ও বড় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে একটি মন্ত্রিসভা গঠিত হলে মন্ত্রিসভার গ্রহণযোগ্যতা বাড়তো। কিন্তু তা হয়নি। সংলাপ হয়েছে বটে। কিন্ত ফলাফল শূন্য। এখন শূন্য ফালাফল নিয়েই ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনে যেতে হচ্ছে। তবে একটি ভালো খবর- ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে। এটাই সঠিক রাজনীতি। নির্বাচন বয়কট কোনো ‘রাজনীতি’ হতে পারে না। বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচক বয়কট করেছিলো। কিন্তু তা দলেটির জন্য সুখের হয়নি।
এখন নির্ধারিত সময়ই নিবার্চন হচ্ছে। তবে এই নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন আছে অনেক। রাজনৈতিক সংস্কৃতি, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে যেখানে আস্থার সম্পর্ক থাকা জরুরি, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেই আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠে। এর একটা স্থায়ী সমাধান দরকার। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করাও জরুরি। নয়া সরকার (২০১৯) বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিতে পারে। নির্বাচনের আগে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একটি জাতীয় দৈনিকে (প্রথম আলো ১৯ নভেম্বর) অভিযোগ তোলা হয়েছে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা ব্যক্তিদের সম্পর্কে পুলিশ খোঁজ-খবর নিচ্ছে। অথচ ইসি জানিয়েছে, তারা পুলিশকে এই দায়িত্বটি দেয়নি। এতে করে ইসির সমতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। বিগত সিটি কর্পোরেশনগুলোর নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছিলো। ওই নির্বাচনে (খুলনা, বরিশাল, গাজীপুর) ভোট কেন্দ্র দখল, সিলমারা রাজনীতির দৃশ্য মানুষ প্রত্যক্ষ করেছিলো মিডিয়ার বদৌলতে।
তখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এইসব দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটেেব না- ইসি এটা নিশ্চিত করতে পারেনি। সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে ইসি জাতিকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। তাই যেকোনো বিবেচনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেশি। এই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে স্পষ্টতই বেগম জিয়া ও তারেক রহমান অন্তত আগামী পাঁচ বছরের জন্য মাইনাস হয়ে গেলেন। এমনকি বিরোধী দলীয় রাজনীতিও চলে গেলো বিএনপির নেতৃত্বের বাইরে। ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি থাকলেও তাদের ভূমিকা এখন সীমিত হয়ে যাবে। নতুন এক রাজনীতির যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর যারাই সরকার গঠন করবে তারাই গুরুত্ব দেবে সংসদীয় রাজনীতিকে। এ ক্ষেত্রে বিদেশিদের প্রতি নির্ভরশীলতাও কমে যাবে। সংসদ বয়কটের রাজনীতি থেকেও বেড়িয়ে আসবে বাংলাদেশ।

0 comments:

Post a Comment