রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

জোট রাজনীতির অতীত ও ভবিষ্যৎ


¦



দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে, ততই 'জোটের রাজনীতি'র ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। বাংলাদেশের ৪১ বছরের রাজনীতিতে জোটের রাজনীতি প্রথমদিকে গুরুত্ব না পেলেও ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান ও ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই এই 'জোট রাজনীতি'র গুরুত্ব পেয়েছে বেশি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমনই যে কোনো একটি একক দলের পক্ষে সরকার পরিচালনা করা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো যখন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তখন প্রথমবারের মতো মুসলিম লীগ ও সদ্য গঠিত ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ একটি সংসদীয় ঐক্য গঠন করলেও পরবর্তী সময়ে সেই ঐক্য টিকে থাকেনি। বলা ভালো স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী প্রথমবারের মতো ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের ব্যানারে সংগঠিত হয়েছিল এবং সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোটের রাজনীতি শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে।
জোটের রাজনীতি যদি পর্যালোচনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের রাজনীতি স্পষ্টতই দুটি ধারায় বিভক্ত। যারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ তথা ইসলামিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী, তাদের একটি জোট। এই জোটের মূল শক্তি বিএনপি। এই জোট চারদলীয় জোট হিসেবে পরিচিতি পেলেও অতিসম্প্রতি তা ১৮ দলীয় জোটে সম্প্রসারিত হয়েছে। যদিও এই ১৮ দলীয় জোটে অনেক দল রয়েছে, যা ব্যক্তিনির্ভর, প্যাডসর্বস্ব এবং যাদের কোনো সংসদীয় ভিত্তি নেই। অন্যদিকে যারা বাঙালি সংস্কৃতি, ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে বিশ্বাসী এবং সমাজতন্ত্রী, তারা মহাজোটের ব্যানারে সংগঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ এই মহাজোটের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তি। তবে এখানে একটা মজার ব্যাপার লক্ষণীয়। রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী জাতীয় পার্টি মহাজোটের অন্যতম শরিক। জাতীয় পার্টি বাঙালি জাতীয়তাবাদ তথা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তাদের রাজনীতির সঙ্গে বিএনপির রাজনীতির কোনো বড় পার্থক্য নেই। এ ক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে তাদের ঐক্য করা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো যারা বিএনপির মতাদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে, তাদের সঙ্গেই ঐক্য করেছে জাতীয় পার্টি। এর ব্যাখ্যা কী? সাধারণ অর্থে দেখা যায়, এক ধরনের সুবিধাবাদিতা কাজ করেছে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের মধ্যে। এরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে সব ধরনের সুবিধা নিতে চায়। বিগত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় রাজনীতি করার প্রবণতা আমরা লক্ষ করি। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে (২০০৬) আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল। পরে জাতীয় পার্টির নেতা এইচ এম এরশাদ দলীয় মন্ত্রীকে (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু) পদত্যাগ করার আহ্বান জানালেও জাতীয় পার্টির মন্ত্রী পদত্যাগ করেননি। এ নিয়ে ওই সময় জাতীয় পার্টি ভেঙেও যায়। এ মুহূর্তে জাতীয় পার্টি তিন ধারায় বিভক্ত হয়ে আছে। একটি ধারা (প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জু) বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে আছে এবং সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্বও রয়েছে (বিজেপি)।
জোট রাজনীতিতে আলোচনা করলে সংগত কারণেই বাংলাদেশে সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাস আলোচনা করা প্রয়োজন। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার আওতায়। এরপর ১৯৭৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চারটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার পদ্ধতির অধীনে। তবে ১৯৯৬ থেকে সর্বশেষ ২০০৮ সালের পর পর তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থায়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। ওই সময় কোনো জোটের রাজনীতি ছিল না এবং ইসলামপন্থী কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব ও অংশগ্রহণও ছিল না। মোট ৩০০ আসনে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছিল ২৯২ আসনে, ভোট পেয়েছিল ৭৩ দশমিক ২০ শতাংশ। মজার ব্যাপার ওই সময় বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল জাসদ, ন্যাপ (মো:), যারা এখন সরকারি জোটের অন্যতম শরিক। ন্যাপ (মো:) ২২৪ আসনে প্রার্থী দিয়ে পেয়েছিল মাত্র একটি আসন (শতকরা ভোট ৮.৩৩)। আর জাসদ ২৩৭ আসনে প্রার্থী দিয়েও পেয়েছিল একটি আসন (৬.৫২ শতাংশ)। ভাসানী ন্যাপও ১৬৯ আসনে প্রার্থী দিয়ে একটি আসন (৫.৩২ শতাংশ ভোট) পেয়েছিল। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছিল চারটি আসন। স্বাধীনতা আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভূমিকা, শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ইত্যাদি নানা কারণে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী হতে সাহায্য করলেও ওই সময় কোনো কোনো আসনে কারচুপির অভিযোগও উঠেছিল। ওই সময় কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জোট গঠনের কথা না বললেও, নির্বাচনের পরপরই (ন্যাপ-মো:) ও কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা, যাঁরা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনীতির সমর্থক ছিলেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার আহ্বান জানান। ১৯৭৩ সালের মে মাসে তিনটি সংগঠনের (আওয়ামী লীগ, সিপিবি ও ন্যাপ-মো:) ছাত্র সংগঠনগুলো একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠন করে। ধীরে ধীরে তা রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর দিকে গড়ায়। ৫ আগস্ট কুমিল্লায় (১৯৭৩) ও ২৬ আগস্ট বগুড়ায় (১৯৭৩) ত্রিদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকার ঘোষণা করে যে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিকে সামনে রেখে প্রগতিশীল সংগঠনগুলোকে নিয়ে একটি ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হবে। অক্টোবর মাসে বহুল আলোচিত 'গণ ঐক্যজোট' গঠিত হয়। ১৯ সদস্যবিশিষ্ট যে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তাতে ১১ জন ছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে, পাঁচজন ন্যাপ (মো.) থেকে ও তিনজন সিপিবি থেকে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এই সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। এই 'গণ ঐক্যজোট'-এর সম্প্রসারিত রূপ ছিল বাকশাল। যদিও বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই জোট সংসদীয় নির্বাচনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কেননা নির্বাচন হয়েছিল এর আগে মার্চে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি 'নয়া রাজনীতির' আলোকে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৯৭৯) আমরা এই গণ ঐক্যজোটের কোনো প্রতিফলন লক্ষ্য করিনি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পৃথকভাবে আবদুল মালেক উকিল ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে অংশ নেয়। এমনকি ন্যাপ (মো:), একতা পার্টি, জাসদ, যারা একসময় মিত্র ছিল আওয়ামী লীগের, তারাও আলাদাভাবে নির্বাচন করে। আওয়ামী লীগের মালেক গ্রুপ ২৯৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয় ৩৯টিতে (ভোটের হার ২৪.৫৬ শতাংশ); আর মিজান গ্রুপ ১৮৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয় মাত্র দুটিতে (০.৬৬ শতাংশ)। ন্যাপ (মো:) এক আসন (২.২৪ শতাংশ ভোট), জাসদ ৮ (৪.৮৩ শতাংশ ভোট) আসন পায়। এখানে লক্ষণীয়, মুসলিম লীগ ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (পরবর্তীকালে জামায়াতে ইসলামী) ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ২৬৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২০টিতে বিজয়ী হয় (১০.০৭ শতাংশ ভোট)। তারা ওই সময় নবগঠিত বিএনপির সঙ্গে কোনো ঐক্য করেনি। সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। কোনো ফ্রন্টও গঠিত হয়নি। মজার ব্যাপার, ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (৭৬ আসন, ২৬.১৬ শতাংশ ভোট), জামায়াতে ইসলামী (১০ আসন, ৪.৬১ শতাংশ ভোট), যুক্ত ন্যাপ (৫, ১.২৯ শতাংশ ভোট), সিপিবি (৫, ০.৯১ শতাংশ ভোট) ও ন্যাপ (মো:) (২, ০.৭১ শতাংশ ভোট) অংশ নিয়েছিল। কিন্তু কোনো জোট করেনি।
পরিবর্তিত রাজনীতির আলোকে পঞ্চম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯১ সালে, যা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। এই নির্বাচনের আগে ও পরে জোটের রাজনীতি নয়া রূপ পায়। বিএনপি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়, বিজয়ী হয় ১৪১টিতে (ভোট ৩০.৮১ শতাংশ)। আর আওযামী লীগ প্রার্থী দেয় মাত্র ২৬৪ আসনে (৮৮ সিট, ৩০.০৮ শতাংশ ভোট), বাকি আসন সিপিবি, ন্যাপ ও বাকশাল প্রার্থীদের ছেড়ে দেয়। জামায়াতে ইসলামী ২২২ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয় ১৮টিতে (১২.১৩ শতাংশ)। জাতীয় পার্টি তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২৭২ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয় ৩৫টিতে (১১.৯২ শতাংশ ভোট)। আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে বাকশাল পাঁচ আসনে (১.৮১ শতাংশ ভোট), সিপিবি পাঁচ আসন (০.১৯ শতাংশ ভোট) বিজয়ী হয়েছিল। নির্বাচনের পর সরকার গঠন প্রশ্নে বিএনপি জামায়াতের সমর্থন নিয়েছিল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ যাদের সমর্থন দিয়েছিল, তাদের নিয়েও কোনো ঐক্যজোট করেনি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই প্রথমবারের মতো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবার আর আওয়ামী লীগ কোনো আসন ছাড়েনি। আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৪৬ আসনে বিজয়ী হয় (৩৭.৪৪ শতাংশ ভোট)। অন্যদিকে তাদের মিত্র বলে পরিচিত জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ২৯৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পায় ৩২ আসন (১৬.৩৯ শতাংশ ভোট)। অন্য 'মিত্ররা' কোনো আসন পায়নি। বিএনপি ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পায় ১১৬ আসন (৩৩.৬১ শতাংশ ভোট)। তাদের 'মিত্র' জামায়াতে ইসলামীও ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পায় মাত্র ৩ আসন (৮.৬১ শতাংশ ভোট)। দৃশ্যপট আবারও পাল্টে যায় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০১ সালে। এবারে বিএনপি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে (শরিক জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি (নাজিউর)। বিএনপি প্রার্থী দেয় ২৫২ (বিজয়ী ১৯৩, ৪০.৯৭ শতাংশ ভোট), জামায়াত প্রার্থী দেয় ৩১ (বিজয়ী ১৭, ৪.১৮ শতাংশ), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ছিল ৭ (বিজয়ী ২, ০.৬৮), আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল ১১ (বিজয়ী ৪, ১.১৮ শতাংশ ভোট)। চারদলীয় জোট মোট ৪৭ শতাংশ ভোট পায়। আওয়ামী লীগ সব আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয় ৬২টিতে (৪০.১৩ শতাংশ প্রাপ্ত ভোট)। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) নেতৃত্বাধীন ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ২৮১ আসনে প্রার্থী দিয়ে বিজয়ী হয় ১৪টিতে (৭.২৫ শতাংশ)। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃশ্যপট আবার ভিন্ন (২০০৮)। চারদলীয় জোট জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে ৩৩ আসনে বিজয়ী হয় (জামায়াত ২ ও বিজেপি ১ আসনসহ)। বিএনপির একক আসন ছিল ৩০, প্রাপ্ত ভোট ৩২.৪৫ শতাংশ । জামায়াতের ৪.৬০ ও বিজেপির ০.২৬। এই জোটে এখন এলডিপি (১ আসন), শরিক (০.২৭ শতাংশ)। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আসন ২৩১ (৪৮.০৬ শতাংশ ভোট)। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) আসন ২৬ (৭.০৫ শতাংশ), জাসদের ৩ (০.৭৪ শতাংশ), আর ওয়ার্কার্স পার্টির ২ (০.৩৮)।
জোট রাজনীতির এই যে চিত্র তাতে দেখা যায় : (১) এ দেশের রাজনীতিতে দুটি ধারা স্পষ্ট। একটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, অন্যটি বিএনপির নেতৃত্বে; (২) মূলত চারটি দল বার বার সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। এককভাবে এদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। দুটি বড় দলের বাইরে রয়েছে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ও জামায়াতে ইসলামী। তবে এদের একার পক্ষে কোনো জোটের নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয়; (৩) এদের বাইরে সংসদে জাসদ, ওয়ার্কার্স, এলডিপির অস্তিত্ব রয়েছে সত্য। কিন্তু জোটের প্রার্থী না হলে নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করলে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সংসদের বাইরে যে রাজনীতি, সেখানেও এই রাজনীতি প্রতিফলিত হয়। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এখনো একটি আঞ্চলিক দল, আর জামায়াতের ভোট ব্যাংক মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ। আগামী রাজনীতি তথা সংসদ নির্বাচনে এই জোটের রাজনীতি প্রতিফলিত হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির নেতা এইচ এম এরশাদ এককভাবে নির্বাচনের কথা বললেও চূড়ান্ত বিচারে তিনি মহাজোটেই থাকবেন। আর বেগম জিয়া জামায়াতের প্রশ্নে বড় ধরনের 'ডায়লামা' 'ফেস' করছেন। বিজয় দিবসে জামায়াতকে দাওয়াত না করা এক ধরনের স্ট্রাটেজি। শেষ অব্দি তিনি সংসদকেন্দ্রিক চারদলীয় ঐক্য ধরে রাখবেন। নির্বাচন প্রশ্নে কাদের সিদ্দিকী ও আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে তাদের একটি ঐক্য হতে পারে। তৃতীয় একটি জোটের কথা বলা হলেও এ জোট গঠিত হবে বলে মনে হয় না। এককভাবে কোনো একটি দলের পক্ষে সংসদ কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব হবে না। দুটি বড় দলকেই এখন ও আগামীতে জোট রাজনীতির ওপর নির্ভর করতে হবে।
Daily Kalerkontho( Rajniti)25.12.12

0 comments:

Post a Comment