রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে কিছু প্রশ্


খবরটা একটা সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে এভাবে 'আগে শাস্তি পরে অর্থ'। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংবাদটিতে বলা হয়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরই বিশ্বব্যাংক অর্থ সহায়তা করবে। অন্যথায় বাংলাদেশ যে ১২০ কোটি ডলার ঋণের অর্থ পাবে না_ তা স্পষ্ট করেই বলেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি। বিশ্বব্যাংকের একটি তদন্ত প্রতিনিধি দল দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে আসেন গত ১ ডিসেম্বর। বিশ্বব্যাংকের আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রধান আইনজীবী লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে এই কমিটিটি গঠন করেছিল। দুদক পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ব্যাপারে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কতটুকু কী করেছে, তা দেখার জন্যই এই টিম বাংলাদেশে এসেছিলেন। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়টি বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশস্থ প্রতিনিধি অ্যালান গোল্ডস্টেইন তো স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন যে দুদককে অবশ্যই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে এটা প্রমাণিত হয়ে গেল যে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার না হলে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে না। এখন দুদক অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আদৌ শাস্তি দিতে পারবে কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়। অতি সাম্প্রতিককালে দুদকের চেয়ারম্যান বলেছেন, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কিছু প্রমাণ মিলেছে। এই বক্তব্য আমাদের আশান্বিত করে। বাংলাদেশে দুর্নীতির বিষয়টি এখন বহির্বিশ্বে বহুল আলোচিত একটি বিষয়। নিকট অতীতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক প্রকাশিত এক জরিপ রিপোর্টেও দুর্নীতির একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। টিআইবির জরিপে দেখানো হয়েছে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ নেতিবাচক কাজের সঙ্গে জড়িত। প্রকারান্তরে টিআইবি বলতে চাইছে সংসদ সদস্যরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এবং তারা দুর্নীতিকে 'প্রমোট' করছেন। এই জরিপ নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমাদের জন্য যারা দুঃখজনক, তা হচ্ছে এ ধরনের রিপোর্ট বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। একদিকে পদ্মা সেতু, অন্যদিকে সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যখন বহির্বিশ্বে নষ্ট হয়েছে ঠিক তখনই আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরিন গার্মেন্টে ভয়াবহ অগি্নকা-ের ঘটনা ঘটল। এই ঘটনাও বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তির জন্য একটি খারাপ খবর। নিশ্চিন্তপুরের তাজরিন গার্মেন্টের ১১১ জন শ্রমিকের মৃত্যু ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় ক্রেতা ওয়ালমার্টের সিদ্ধান্তের পর বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এখন বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে। ওয়ালমার্ট এখন আর বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক কিনবে না। ওয়ালমার্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে মালিকপক্ষ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি। ফলে তারা আর মার্কিন আইনপ্রণেতা, মার্কিন শ্রমিক সংস্থা তথা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর 'প্রশ্নের' সম্মুখীন হতে চান না। যে কারখানায় অগি্নদগ্ধ হয়ে এত শ্রমিক মারা গেলেন ওই কারখানাতেই ওয়ালমার্টের জন্য পোশাক তৈরি করা হতো। এখন শুধু ওয়ালমার্টই নয়, বরং আরো বেশকিছু কোম্পানি এবং ইউরোপের বায়াররাও বাংলাদেশের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প একদিকে যেমন ঝুঁকির মুখে থাকল, অন্যদিকে তেমনি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও বহির্বিশ্বে নষ্ট হলো। এর মধ্যদিয়ে আমার কাছে যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে কোনো একটি পক্ষ কী বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ধ্বংস করে ফায়দা ওঠাতে চায়? তৈরি পোশাকে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই শিল্প খুব বেশিদিন হয়নি গড়ে উঠেছে। তবে দক্ষতা, নেতৃত্ব, কোয়ালিটি ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশে এই শিল্প বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেখা গেছে, বিশ্বে অর্থনীতিতে একটা মন্দাভাব দেখা দিলেও পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে এর প্রভাব খুব একটা পড়েনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় 'হাউস' বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রেতা। বাংলাদেশ যেমনি সস্তায় তৈরি পোশাক উৎপাদন করতে পারে ঠিক তেমনি আমাদের পণ্য মানসম্মত। তাই বিশ্বের বড় বড় নামকরা প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশে ভিড় করছে। বিশ্বে তৈরি পোশাক উৎপাদনের দিক দিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে চীন। তারপরই বাংলাদেশের স্থান। ভারতের অবস্থান আরো পেছনে। এটা সত্য, চীন এক সময় সস্তায় তৈরি পোশাক রপ্তানি করত। এখন চীনে সস্তা শ্রমিক পাওয়া যায় না। শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। ফলে চীন এখন আর আগের মতো সস্তায় তৈরি পোশাক উৎপাদন করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। সে জন্যই বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে বাংলাদেশের আগ্রহ বাড়ছে। তখন এই শিল্পে যদি অস্থিরতা, কিংবা বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশি পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস করা যায়, তাহলে অন্য একটি পক্ষ এ থেকে সুবিধা নিতে পারবে। আন্তর্জাতিক আসরে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে ভারত, ভিয়েতনাম আমাদের প্রতিপক্ষ। তারা তখন এ বাজারটা 'দখল' করে নিতে পারবে। বৈদেশিক আয়ের একটা অন্যতম উৎস হচ্ছে এই তৈরি পোশাক। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ১ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এখন নিশ্চিন্তপুরের ঘটনায় রপ্তানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা আসতে পারে। বাংলাদেশ শতকরা ১৫ ভাগ শুল্ক পরিশোধ করেই প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে একটি বাজার পেয়েছে। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জিএসপি (জেনারাইলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস) সুবিধা চাইছে। জিএসপি হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া শুল্ক সুবিধা। বাংলাদেশসহ ১২৮টি দেশ এই সুবিধার আওতায়। যদিও তৈরি পোশাক এই সুবিধা পায় না। সিরামিক, সার ইত্যাদি ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা পায় বাংলাদেশ। আমেরিকার শ্রমিক সংগঠনগুলোর ফেডারেশন এএফএল আসছে। তাদের অভিযোগ বাংলাদেশের ইপিজেড তৈরি পোশাক এবং চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত খাতে শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারও নেই। তৈরি পোশাকের কারখানাগুলোতে 'কমপ্লাইয়েন্স' ইস্যুতে আমেরিকান 'বায়ার'রা সোচ্চার। 'কমপ্লাইয়েন্স'-এর অর্থ হচ্ছে ফ্যাক্টরিগুলোতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সেই সাথে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। বিশুদ্ধ খাবার পানি থেকে শুরু করে কারখানাগুলোতে অগি্ননিরাপত্তা এর অন্তর্ভুক্ত। 'বায়ার'দের প্রতিনিধিরা সরাসরি কারখানাগুলো পরিদর্শন করেন এবং 'কমপ্লায়েন্স'-এর ব্যাপারে তারা সন্তুষ্ট হলেই তারা অর্ডার দেন। ফলে যারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্যবসা করতে চায়, তারা সঙ্গত কারণেই 'কমপ্লাইয়েন্স'-এর ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। শ্রমিকদের স্বার্থ তারা দেখার চেষ্টা করেন। এখন নিশ্চিন্তপুরের ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গেল, কারখানাগুলোতে 'কমপ্লাইয়েন্স'-এর ঘাটতি রয়েছে। সুতরাং এটা নিশ্চিত করেই বলতে পারি আমেরিকার লেবার সংস্থা অগি্নকা-ের বিষয়টিকে ইস্যু করবে এবং বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিতেও তারা বাধা দেবে। জেএসপি সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনাও এখন ক্ষীণ। আমি জানি না এই ভাবমূর্তি আরো কিভাবে ফিরিয়ে আনবো। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিন্তপুরের ঘটনাকে 'পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যদিও কোনো এক প্রক্রিয়ায় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তার বক্তব্যও ছাপা হয়েছে। যেখানে তিনি বলছেন বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী যখন 'পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রের' কথা বলেন, তখন আমার ভয় হয় অগি্নকা-ের ঘটনায় যে ৫টি কমিটি গঠিত হয়েছে, তাদের পক্ষে প্রকৃত 'সত্য' উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে কি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিশ্চয়ই 'পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রের' যথেষ্ট তথ্য আছে। আমরা খুশি হব তিনি যদি তা জাতির সম্মুখে উপস্থাপন করেন। আমাদের এই সেক্টরটি নিয়ে 'ষড়যন্ত্র' হবে, তা আমরা চাই না। কঠোরহস্তে এই 'ষড়যন্ত্র' দমন করা প্রয়োজন। আমি তাজরিন গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষের দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে অবশ্যই দায়ী করব। প্রতিটি ফ্লোরের গেটে তালা দেয়া, আগুন দেখেও সেটাকে মহড়া হিসেবে আখ্যায়িত করা, কর্মকর্তাদের পালিয়ে যাওয়া। কর্মচারীর ৫০ কোটি টাকার ঋণ, বীমার টাকা ইত্যাদি নানা প্রশ্ন উঠেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য গার্মেন্টে অগি্নকা-ের ঘটনা নতুন নয়। যখনই মানুষ মারা যায় তখনই সরকার 'ষড়যন্ত্রের' কথা বলে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে তৎপর হতে দেখা যায়। তারপর যে তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে যায়। আমাদের শ্রমমন্ত্রী হঠাৎ করেই উৎসাহী হয়ে গেলেন। বললেন প্রতিটি কারখানায় তিনটি করে বহির্গমন পথ থাকতে হবে। না হলে ওই কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে। প্রায় ৪ হাজার তৈরি পোশাকের কারখানা বাংলাদেশে। অবিলম্বে সার্ভে, টিম করে কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের চূড়ান্ত সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হোক। প্রয়োজন হলে বন্ধ করে দেয়া হোক। আমাদের গার্মেন্ট কর্মীরা 'ফার্মের মুরগির' মতো ব্যবহৃত হতে পারে না। তাদের কারখানায় ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা মেরে দেয়া ফৌজদারি অপরাধ। বিজিএমইএও এই কাজটি করতে পারে নিয়মিত। যেখানে তালা মারা থাকবে, ওই কারখানাকে বিজেএমইএ কয়েক লাখ টাকা ফাইন করবে। এত বড় একটি অগি্নকা-ের ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিল। আমাদের ভাবমূর্তি আবারো ঝুঁকির মধ্যে পড়ল। যেসব ক্ষেত্রে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, সেসব ক্ষেত্রগুলোর ব্যাপারে আমরা যদি কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করি, আমার ধারণা এতে করে আমরা আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সক্ষম হব। পদ্মা সেতু সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের তদন্ত টিম অত্যন্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন। এ ক্ষেত্রে কোনো কিছু ধামাচাপা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। দুদক যদি এ কাজটি না করে, তাহলে এ জাতির জন্য আরো অনেক দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে। টিআইবির রিপোর্টের ব্যাপারে নেতিবাচক প্রক্রিয়া না দেখিয়ে আমাদের নীতি নির্ধারকরা যদি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেন, তা জাতির জন্যই মঙ্গল। আর স্বচ্ছ চরিত্রের অধিকারীদেরকেই জাতীয় সংসদে পাঠানো উচিত। তাজরিন গার্মেন্টে যা ঘটল, তার কারণ খুঁজে বের করার দায়িত্বও সরকারের। যেখানে পুরো জাতির স্বার্থ জড়িত, সেখানে ধামাচাপা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনেকগুলো ঘটনায় আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আমরা চাইব ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হোক। প্রায় ১৬ কোটি মানুষের দেশ এ দেশটি বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় অত্যন্ত নগ্নভাবে উপস্থাপিত হবে, আমরা কেউ তা চাই না। সরকারের দায়িত্বটি তাই অনেক বেশি।Daily JAI JAI DIN11.12.12

0 comments:

Post a Comment