রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই


অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। যাদের এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি নেই, তারাই এখন এমফিল ডিগ্রি দিচ্ছে, পিএইচডি ডিগ্রি দিচ্ছে। এটি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাহিনী। উচ্চশিক্ষা আজ কোন পর্যায়ে গিয়ে উন্নীত হয়েছে, তা বোঝার জন্য এই একটি সংবাদই যথেষ্ট। আমরা এতদিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে হাজারো প্রশ্ন রেখেছি। আমি নিজে একাধিকবার একাধিক প্রবন্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সবক’টি নয়) সার্টিফিকেট বাণিজ্য নিয়ে লিখেছি। এখানে যে যুক্তি নেই, তা বলা যাবে না, যুক্তি আছে। সংবাদপত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে যেসব সংবাদ নিত্য প্রকাশিত হয়, তাতে করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। আমি মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য থাকার সুবাদে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আউটার ক্যাম্পাস’ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। মিডিয়ার সমর্থন আমি পেয়েছিলাম। কীভাবে সার্টিফিকেট ব্যবসা হয়, তার হাজারটা নজির আমার কাছে ছিল। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে আমার কখনো আগ্রহ তৈরি হয়নি। কিন্তু এখন কী দেখছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একজন তরুণ শিক্ষক তার পিএইচডি গবেষণায় ১৩ লাখ লোকের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন! যিনি এই থিসিস তত্ত্বাবধান করলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক। যিনি এই থিসিস পরীক্ষা করলেন, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যার নিজেরই পিএচডি ডিগ্রি নেই। সিন্ডিকেটে কেউ প্রশ্ন করল না এভাবে ১৩ লাখ লোকের ইন্টারভিউ নিয়ে কোনো গবেষণাকর্ম সম্পাদন করা যায় না? সংবাদপত্রে এই সংবাদটি প্রকাশিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন-এ রকমটি আমাদের জানা নেই। এখন এলো এই সংবাদটি-জাবিতে যাদের পিএইচডি ডিগ্রি নেই, তারাই এখন পিএইচডি ডিগ্রি দেবে। প্রাসঙ্গিকভাবে একটা কথা বলা প্রয়োজন আর তা হচ্ছে যে বিভাগে এই তুঘলকি কাণ্ড ঘটেছে, সেখানে এর আগের বছর এমফিল/পিএইচডি কোর্সে ছাত্র ভর্তি করানো হয়েছে। যখন ওই বিভাগে ওইসব কোর্সের জন্য কোনো সিলেবাসই ছিল না। বিষয়টি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচিত হলেও শেষ পর্যন্ত ভিসি মহোদয় অবৈধভাবে তার অনুমোদন দিয়েছিলেন। এটাও কী সম্ভব? সিলেবাস নেই অথচ ছাত্র ভর্তি করানো হয়েছে! রাজনৈতিক বিবেচনায় এতদিন আমরা শিক্ষক নিয়োগের কথা শুনেছি। এখন শুনলাম এবং দেখলাম রাজনৈতিক বিবেচনায় পিএইচডি ও এমফিল কোর্সেও ছাত্র ভর্তি করানো হচ্ছে। যিনি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি, তাকেও রাজনৈতিক বিবেচনায় উচ্চতর কোর্সে ভর্তি করানো হয়েছে। এটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাহিনী। ধারণা করছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের হাজারটা ‘কাহিনী’ আছে, যার অনেকই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমফিল ও পিএচডি ডিগ্রি নিয়েও আরো কাহিনী আছে। প্রতিবছরই আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগরে প্রচুর ছাত্র এমফিল ও পিএইচডিতে ভর্তি হচ্ছে। এসব ছাত্রের একটা অংশ আসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো রকমে একটা ‘ডিগ্রি’ নিয়ে তারা ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগরে এবং তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বেছে নেন এমন কিছু শিক্ষককে, যারা নিয়মিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন। পুলিশের শীর্ষস্থানীয় অফিসার, সেনাবাহিনীর জেনারেল, হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, সচিব বা অতিরিক্ত সচিব মর্যদার কর্মকর্তা তারাও পিএইচডি করছেন এবং ডিগ্রিও পেয়ে যাচ্ছেন। এটা কীভাবে সম্ভব আমি বুঝে উঠতে পারি না। কেননা পিএইচডি হচ্ছে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাকর্ম। ছাত্রকে নিয়মিত লাইব্রেরিতে কাজ করতে হয়। ফিল্ডওয়ার্ক করতে হয়। কাজটি খুব সহজ নয়। একজন পুলিশের এডিশনাল আইজি পদমর্যাদার লোক কিংবা একজন সচিবের কি সেই সময় থাকে লাইব্রেরিতে যাওয়ার? লাইব্রেরিতে না গেলে, ফিল্ডওয়ার্ক না করলে তিনি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন কীভাবে? এখানেই এসে যায় শুভঙ্করের ফাঁকি। কোনো মতে তত্ত্বাবধায়কের উদ্যোগে একটা গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করা হয়। বহিস্থ পরীক্ষক ‘নির্ধারণ’ করাই থাকে। ডিগ্রিটা হয়ে যায়। বিভাগগুলোর নাম উল্লেখ করলাম না। এতে করে আমার সহকর্মীরা বিব্রত হতে পারেন। কিন্তু আমি চাই পিএইচডি কোর্সের ব্যাপারে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হোক নতুবা আগামী দিনগুলোতে জাহাঙ্গীরনগরের পিএইচডির মান নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দেবে।
প্রসঙ্গক্রমে একটা থিসিসের কথা বলি। অনেকটা ‘রাজনৈতিক চাপ’-এ তত্ত্বাবধায়ক চূড়ান্ত রিপোর্টটি দিতে বাধ্য হন। যেখানে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি অধ্যায়ের বিশ্লেষণ করে সব শেষে পিএইচডির জন্য সুপারিশ করার কথা, সেখানে তত্ত্বাবধায়ক দুই লাইনে শুধু লিখলেন জবপড়সসবহফবফ, অর্থাৎ সুপারিশ করা হলো। কলা ও মানবিকী অনুষদের ওই থিসিস নিয়েও নানা কথা আছে। অত্যন্ত সতর্কভাবেই তত্ত্বাবধায়ক এই কাজটি করলেন। কেননা তিনি জানতেন তিনি নিজে ‘বিতর্কিত’ হবেন। তাই কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তিনি কাজটি করলেন। এটা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বরখেলাপ। এটা নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ক্ষমতাবান ওই শিক্ষকের থিসিসের তদন্ত করবে কে? আরো মজার কাহিনী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো থিসিস বিদেশে কোনো পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয় না। অথচ ঢাকা কেন কুষ্টিয়ার খোদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিস বিদেশে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। পিএইচডি ডিগ্রি হচ্ছে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা। এই থিসিস একাধিক পরীক্ষককে দিয়ে পরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ‘স্বপ্নের জাহাঙ্গীরনগর’ করতে চান। কথাটা শুনতে ভালোই শোনায়। কিন্তু তার বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে অনিয়ম হচ্ছে, তা যদি তিনি রোধ করতে না পারেন, যদি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন, তাহলে তিনি নিজেই বিতর্কিত হয়ে যাবেন, যা আমরা চাই না। তার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় নানা কাহিনীর জন্ম দিচ্ছে। একজন বিতর্কিত ও যৌন অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষককে তিনি পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষকদের বাধার মুখে তিনি পারেননি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীরা (ভিসি নিজেও এই মতবাদের সমর্থক) এর প্রতিবাদ করেছেন। আর বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা সমর্থন করলেন যৌন অপরাধী ওই শিক্ষককে, ভিসি নিজে আবার আওয়ামী ঘরনার শিক্ষক। কী বৈসাদৃশ্য! বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা সমর্থন করছেন আওয়ামীপন্থি বিতর্কিত এক শিক্ষককে! এটা কোন রাজনীতি? এই রাজনীতি যে জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার মানের অবনতি ঘটাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে বিতর্কিত করার একটি কৌশল। জাতির সামনে তাকে হেয় করার একটি অপচেষ্টা।
২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষিকা ভিসি বরাবর অভিযোগ করেন তাকে এক বিভাগের শিক্ষক যৌন নিপীড়ন করেছেন (যুগান্তর-১৭ নভেম্বর-২০১২)। এটা নিয়ে সারা ক্যাম্পাসে আন্দোলনের ঝড় বয়ে যায়। পরবর্তীকালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয় এবং অধ্যাপক খুরশিদা বেগমের নেতৃত্বাধীন কমিটি এর সত্যতা খুঁজে পায়। ওই বিতর্কিত ব্যক্তির শাস্তি হয়। কিন্তু মাত্র দু’বছরের মধ্যে বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা তার পদোন্নতির দাবি করে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে বিতর্কিত করতে চাচ্ছেন। এটা সুদূরপ্রসারি ষড়যন্ত্রের একটা অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার অস্থিতিশীল করতে চায় একটি ‘শক্তি’। অনেকদিন থেকেই লক্ষ্য করছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে। প্রভাষকদের দিয়ে মাস্টার্স পর্যায়ে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। যেখানে প্রয়োজন অধ্যাপক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ, সেখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রভাষক নিয়োগ করে নতুন নতুন বিভাগ চালানো হচ্ছে। এতে করে শিক্ষার মান কোন পর্যায়ে গিয়ে উন্নীত হয়েছে, এটা নিশ্চয় অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন উপলব্ধি করতে পারবেন। যেখানে অধ্যাপক নেই অথবা মাত্র একজন অধ্যাপক আছেন এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক নেই, সেইসব বিভাগে এমফিল ও পিএইচডি কোর্স চালু না করাই মঙ্গল। উপাচার্য মহোদয় বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারেন। ‘স্বপ্নের জাহাঙ্গীরনগর’ বাস্তবায়ন করতে হবে একাডেমিক মান বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন বিভাগে একাডেমিক অনিয়ম যদি তিনি বন্ধ না করেন, তাহলে অচিরেই জাবির উচ্চশিক্ষা মুখ থুবড়ে পড়বে। আমরা চাই না অধ্যাকে হোসেন বিতর্কিত হন।
উচ্চশিক্ষা নিয়ে যখন লিখছি, তখন এলো আরো দুটি সংবাদ। প্রথম সংবাদটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে। সেখানে ‘পলিটিক্যাল সায়েন্স স্টাডিজ’ বিভাগে প্রভাষক নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ড ছিল। ওই নির্বাচনী বোর্ডে বিশেষজ্ঞ ছিলেন দু’জন বিতর্কিত অধ্যাপক। তারা বিতর্কিত এক প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে চাইলে উপাচার্য মহোদয় তাতে সম্মতি দেননি। নিঃসন্দেহে এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে শিক্ষার মানের যথেষ্ট অবনতি হয় এবং উচ্চশিক্ষা মুখ থুবড়ে পড়ে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন। এর আগের নির্বাচনী বোর্ডে তিনি যদি যোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ দিতেন, তাহলে তার সম্মান বাড়তো বৈ কমত না। শিক্ষার মানোন্নয়নের সঙ্গে নতুন অনুমোদনপ্রাপ্ত ৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গটিও এসে গেল। এই নিয়ে মোট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭১টিতে। এই সরকারের আমলে অনুমোদন পেয়েছে ১৬টি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক বিবেচনা’ প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। দেশে ইতিমধ্যে ৩৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এখন কারা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন? খোদ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব রয়েছে, সেখানে নতুন ওই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষক পাবে কোথায়? কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তো এক একটা কলেজ! রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পাস করে এখন পড়াচ্ছেন ইংরেজি। আইন অনুষদের শিক্ষক না হয়েও পড়াচ্ছেন আইন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আইন পড়াচ্ছেন, তাদের আইনের ডিগ্রি বেসরকারি আইন কলেজ থেকে, তাও আবার নাইটে পড়ে। অনলাইনে তথাকথিত পিএইচডি ডিগ্রি করে হুট করে ঢুকে যাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অথচ অনলাইনের ডিগ্রির যে কোনো মূল্য নেই, তা তারা হয় জানেন না অথবা বোঝেন না। পুণ্ড্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা টিএমএসএস নামের একটি এনজিও। টিএমএসএসের নির্বাহী পরিচালক নিজেকে পরিচয় দেন অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম। এই ভুয়া পিএচইডিধারী ও অধ্যাপক পদের অপব্যবহারকারীকে আমি সতর্ক করেছিলাম পুণ্ড্র বিশ্ববিদ্যালয়ে (বগুড়া প্রস্তাবিত) পরিদর্শনে গিয়ে। তারপর অনেক দিন পার হয়ে গেছে। তিনি দিব্যি পিএইচডি ডিগ্রি ব্যবহার করছেন। তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজটি কী? আমাদের শিক্ষা সচিব পিএইচডি ডিগ্রির অব্যাবহার সম্পর্কে কী জ্ঞাত নন? এমন অসংখ্য ভুয়া পিএচইডিতে ভরে গেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এসব কে দেখবে? বলা হয়েছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান নির্ণয়ের জন্য একটি ‘অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল’ গঠিত হবে। আজ অবধি তা হলো না। আদৌ হবে কি-না কিংবা কাদেরকে নিয়ে এই কাউন্সিল গঠিত হবে, সে ব্যাপারেও প্রশ্ন থেকে যায়। এখানেও যদি রাজনীতি ঢুকে যায়, উচ্চশিক্ষার ধস আমরা ঠেকাতে পারব না। আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘ডাটাবেজ’ তৈরি করার। সে পরিকল্পনাও এখন ‘ডিপফ্রিজে’। তাহলে উচ্চশিক্ষার ধস ঠেকাবে কে? শিক্ষামন্ত্রী বারবার শিক্ষার মান উন্নয়নের কথা বলেন। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ আছে। আপনি ‘ভূত’ তাড়বেন কীভাবে? ইউজিসির চেয়ারম্যান নিজেকে ‘প্রতিমন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দিতে ‘গর্ববোধ’ করেন অথচ তার অনেক কিছু করার কথা। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য যে নেতৃত্বের দরকার, তা তার নেই। আমাদের দুর্ভাগ্য, ইউজিসিতে যারাই আসেন, তারা সবাই  মধ্য ষাটের ঘরে। এদের দিয়ে পরিবর্তন সম্ভব নয়। জাবির একটি ছোট ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমরা উচ্চশিক্ষাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? সতর্ক হওয়ার ও সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনই। সব কিছুতেই যদি ‘রাজনীতি’ খুঁজি, তাহলে আমরা আগামী দশকে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ব। আজ দেশের স্বার্থে, সমাজের স্বার্থে সব ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে এক হওয়া প্রয়োজন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ন্যায়সঙ্গত। অন্তত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে আমি এটাই প্রত্যাশা করি।
Daily Manobkontho
23.12.12

0 comments:

Post a Comment