বদলে যাচ্ছে রাজনীতির দৃশ্যপট। প্রথমে অবরোধ, তারপর দুদিন হরতাল। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে মারা গেলেন সাধারণ একজন মানুষ, বিশ্বজিৎ দাস। বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করার ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রগুলো। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফটোসাংবাদিকরা যেসব ছবি তুলেছেন, তা দেখে অাঁতকে উঠতে হয়। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এভাবে মানুষকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় কি না, আমি জানি না। এই ঘটনা আমাকে ১৯৯৪ সালের আফ্রিকার একটি দেশ বরুন্ডির হুতু-তুতসির হত্যাকা-ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বিশ্বজিৎ দাসের হত্যাকা- নিয়েও প্রশ্ন আছে। ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তাদের কাউকে কাউকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, এ কথাটাই আমাকে শোনালো ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ। যেদিন বিশ্বজিতের হত্যাকা-ের ভয়াবহ ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল, সেদিনই রাতে একটি টিভি চ্যানেলে সোহাগের সঙ্গে আমি 'টকশো'তে অংশ নিয়েছিলাম। সোহাগ আমাকে দেখিয়েছিল কবে অভিযুক্তদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ওরা ছিল অনুপ্রবেশকারী। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ছাত্রলীগের মিছিলে ওই অভিযুক্তরা অংশ নিয়েছিল। তখন তাদের কেন বাধা দেয়া হলো না? হরতালের আগে বা পরে এ ধরনের বিশ্বজিৎদের 'হত্যার' মতো ঘটনা ঘটে। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কখনই এ ধরনের হত্যাকা- বন্ধ হয়নি। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে, সেটাওবা বলি কী করে? এবারেও হবে, সেই বিশ্বাসটাও রাখতে পারছি না। আশার কথা বিশ্বজিৎ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বিশ্বজিতের হত্যার পাশাপাশি 'স্কাইপি স্ক্যান্ডাল' এখন রাজনীতিতে ঢেউ তুলেছে। যখন ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হচ্ছে এবং এই ডিসেম্বরেই একটি রায় যখন প্রত্যাশিত, ঠিক তখনই ঘটল এই 'স্কাইপি স্ক্যান্ডালে'র মতো ঘটনা। বিচারপতি নিজামুল হক ওই ঘটনায় পদত্যাগ করেছেন। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়েছে। বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন। নতুন একজন বিচারপতিও দায়িত্ব পেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২-এ। এর মধ্য দিয়ে বিচারকাজ অব্যাহত থাকবে। আইন অনুযায়ী বিচারকাজ থেমে থাকার বা নতুন করে শুরু করার কোনো সুযোগ নেই। এই বিচারকাজ নিয়ে প্রত্যাশা অনেক বেশি। বিচারপতি কবীর এখন ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান। এই ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিচারের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। বিচারপতি কবীর এখন কী করবেন, এটা তার বিচারিক অধিকার। তবে তার জন্য নিঃসন্দেহে কাজটি সহজ নয়। ইতোমধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে সংবাদপত্রের ভূমিকা নিয়ে। একটি সংবাদপত্র বিচারপতি হকের স্কাইপি সংলাপ ফাঁস করে দিয়েছে। এটা সংবাদপত্র পারে কি না? এতে করে তো বিচারপতিদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হলো। যতদূর মনে পড়ে ব্রিটেনের একটি সংবাদপত্র নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড একটি গোপন সরকারি তথ্য ফাঁস করে দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল। পরে কর্তৃপক্ষ পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলি। এই স্বাধীনতা যদি 'কোনো একজনের' বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেই স্বাধীনতাকে আমরা কতটুকু সম্মান করব! অবশ্যই গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হচ্ছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। কিন্তু আমরা সেই স্বাধীনতা কতটুকু প্রয়োগ করব, এটা ভেবে দেখার বিষয়। নিশ্চই যারা বিষয়টি নিয়ে ভাবেন, তারা বিষয়টি পুনরায় বিবেচনায় নেবেন। বিচারপতি কবীর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম, মামলার ইতিহাস ইত্যাদি সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন। এখন বিচারপতির পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে থাকবে অনেকে। আরো একটা কথা। এটা বিজয়ের মাস। অনেকেরই প্রত্যাশা এই বিজয়ের মাসে অন্তত একজন অপরাধীর বিচার সম্পন্ন হোক। যারা অপরাধ করেছে, ইতিহাস যেমনি তাদের ক্ষমা করেনি ঠিক তেমনি বিচারেরও তারা ক্ষমা পাননি। রুয়ান্ডায় কিংবা সাবেক যুগোসস্নাভিয়ায় যারা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচার হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। একসময় লাইবেরিয়ার অত্যন্ত ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ও যুদ্ধবাজ চার্লস টেইলারের বিচার সম্পন্ন হয়ে আদেশও হয়েছে। আমরা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করেছি দীর্ঘ ৪০ বছর পর। নতুন আইনে আদালত হয়েছে। বিচারকাজ পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য সময়ের প্রয়োজন আছে। আমরা চাই একটা দৃষ্টান্তমূলক রায় হোক, যা যুগ যুগ ধরে জাতি স্মরণ করবে। এই বিজয়ের মাসে যেখানে আমরা উৎসব করব, সেখানে আমরা দেখছি এক হতাশার চিত্র। রাজনীতিতে যে পরস্পর বিশ্বাসের কথা বলে তা বাংলাদেশে নেই। হরতালের পর হরতাল হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব একটা 'সংলাপ' প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে রেখে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না বিরোধী দলের কাছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এই 'আলোচনা' আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দিতে পারে। বাংলাদেশের বিকাশমান গণতন্ত্রের স্বার্থে এই স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এখন যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে আদৌ কি 'সংলাপ' অনুষ্ঠিত হবে? সরকারি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বিএনপিকে সংসদে ফিরে গিয়ে একটা প্রস্তাব দেয়ার কথা বলেছেন। এর পেছনে আন্তরিকতা কতটুকু আছে বলতে পারব না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি এই 'প্রস্তাবকে বিবেচনায় নিয়ে সংসদে যেতে পারে এবং একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে প্রস্তাব দিয়েছে তা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে করা যায় তা তারা বলতে পারে। এটা এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে সংসদে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি। বিএনপির সাংসদরা যাতে সংসদে থাকেন এ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সরকারি দলের সাংসদদের। সংসদে তাদের আচরণ, বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করা হয় তা কাম্য নয়। সংসদে সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেশি। তারা সবাই মিলে যদি 'আক্রমণ' করেন সঙ্গতকারণেই বিএনপির সাংসদদের তা পেরে ওঠার কথা নয়। তবে এ মুহূর্তে সরকারি দলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিএনপির সাংসদদের সংসদে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। প্রয়োজনে স্পিকার সাংসদদের জন্য একটি 'কোড অব কন্ডাক্ট' করতে পারেন। ২০১৩ সাল আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে পারে সরকার। কিন্তু কোনো ফর্মুলাই কাজ করবে না, যদি না বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করা যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে পদ ছাড়তে হবে। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশ্নে কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ১. প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে দুদলের ৫ জন করে সদস্য নিয়ে একটি সরকার, যারা আদৌ নির্বাচনে অংশ নেবেন না। ২. স্পিকারের নেতৃত্বে ৫ জন করে সদস্য নিয়ে একটি সরকার। স্পিকারসহ কেউই নির্বাচনে অংশ নেবেন না। ৩. সাংবিধানিক পদের অধিকারী এরকম তিনজনকে নিয়ে একটি সরকার, যারা নির্বাচনের পরপরই আর দায়িত্বে থাকবেন না নিরপেক্ষতার স্বার্থে। ৪. সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন বুদ্ধিজীবী নিয়ে একটি সরকার। এর বাইরেও আরো বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে মোটকথা হচ্ছে এই সরকারের বয়স হবে মাত্র ৩ মাস এবং তারা কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এখানে যে বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় নেয়া উচিত তা হচ্ছে মূলধারার দল বিএনপি বাদ দিয়ে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে এ দেশে নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু ওই নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দিতে পারেনি। তাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক, আমরা এটাই প্রত্যাশা করব।Daily JAI JAI DIN20.12.12
বদলে যাচ্ছে রাজনীতির দৃশ্যপট
16:21
No comments
বদলে যাচ্ছে রাজনীতির দৃশ্যপট। প্রথমে অবরোধ, তারপর দুদিন হরতাল। ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে মারা গেলেন সাধারণ একজন মানুষ, বিশ্বজিৎ দাস। বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করার ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রগুলো। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফটোসাংবাদিকরা যেসব ছবি তুলেছেন, তা দেখে অাঁতকে উঠতে হয়। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এভাবে মানুষকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় কি না, আমি জানি না। এই ঘটনা আমাকে ১৯৯৪ সালের আফ্রিকার একটি দেশ বরুন্ডির হুতু-তুতসির হত্যাকা-ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বিশ্বজিৎ দাসের হত্যাকা- নিয়েও প্রশ্ন আছে। ওই হত্যাকা-ের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তাদের কাউকে কাউকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, এ কথাটাই আমাকে শোনালো ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ। যেদিন বিশ্বজিতের হত্যাকা-ের ভয়াবহ ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল, সেদিনই রাতে একটি টিভি চ্যানেলে সোহাগের সঙ্গে আমি 'টকশো'তে অংশ নিয়েছিলাম। সোহাগ আমাকে দেখিয়েছিল কবে অভিযুক্তদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ওরা ছিল অনুপ্রবেশকারী। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ছাত্রলীগের মিছিলে ওই অভিযুক্তরা অংশ নিয়েছিল। তখন তাদের কেন বাধা দেয়া হলো না? হরতালের আগে বা পরে এ ধরনের বিশ্বজিৎদের 'হত্যার' মতো ঘটনা ঘটে। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কখনই এ ধরনের হত্যাকা- বন্ধ হয়নি। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে, সেটাওবা বলি কী করে? এবারেও হবে, সেই বিশ্বাসটাও রাখতে পারছি না। আশার কথা বিশ্বজিৎ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বিশ্বজিতের হত্যার পাশাপাশি 'স্কাইপি স্ক্যান্ডাল' এখন রাজনীতিতে ঢেউ তুলেছে। যখন ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হচ্ছে এবং এই ডিসেম্বরেই একটি রায় যখন প্রত্যাশিত, ঠিক তখনই ঘটল এই 'স্কাইপি স্ক্যান্ডালে'র মতো ঘটনা। বিচারপতি নিজামুল হক ওই ঘটনায় পদত্যাগ করেছেন। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হয়েছে। বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন। নতুন একজন বিচারপতিও দায়িত্ব পেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২-এ। এর মধ্য দিয়ে বিচারকাজ অব্যাহত থাকবে। আইন অনুযায়ী বিচারকাজ থেমে থাকার বা নতুন করে শুরু করার কোনো সুযোগ নেই। এই বিচারকাজ নিয়ে প্রত্যাশা অনেক বেশি। বিচারপতি কবীর এখন ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান। এই ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিচারের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। বিচারপতি কবীর এখন কী করবেন, এটা তার বিচারিক অধিকার। তবে তার জন্য নিঃসন্দেহে কাজটি সহজ নয়। ইতোমধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে সংবাদপত্রের ভূমিকা নিয়ে। একটি সংবাদপত্র বিচারপতি হকের স্কাইপি সংলাপ ফাঁস করে দিয়েছে। এটা সংবাদপত্র পারে কি না? এতে করে তো বিচারপতিদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হলো। যতদূর মনে পড়ে ব্রিটেনের একটি সংবাদপত্র নিউজ অব দি ওয়ার্ল্ড একটি গোপন সরকারি তথ্য ফাঁস করে দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল। পরে কর্তৃপক্ষ পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলি। এই স্বাধীনতা যদি 'কোনো একজনের' বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেই স্বাধীনতাকে আমরা কতটুকু সম্মান করব! অবশ্যই গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত হচ্ছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। কিন্তু আমরা সেই স্বাধীনতা কতটুকু প্রয়োগ করব, এটা ভেবে দেখার বিষয়। নিশ্চই যারা বিষয়টি নিয়ে ভাবেন, তারা বিষয়টি পুনরায় বিবেচনায় নেবেন। বিচারপতি কবীর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম, মামলার ইতিহাস ইত্যাদি সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন। এখন বিচারপতির পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে থাকবে অনেকে। আরো একটা কথা। এটা বিজয়ের মাস। অনেকেরই প্রত্যাশা এই বিজয়ের মাসে অন্তত একজন অপরাধীর বিচার সম্পন্ন হোক। যারা অপরাধ করেছে, ইতিহাস যেমনি তাদের ক্ষমা করেনি ঠিক তেমনি বিচারেরও তারা ক্ষমা পাননি। রুয়ান্ডায় কিংবা সাবেক যুগোসস্নাভিয়ায় যারা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচার হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। একসময় লাইবেরিয়ার অত্যন্ত ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ও যুদ্ধবাজ চার্লস টেইলারের বিচার সম্পন্ন হয়ে আদেশও হয়েছে। আমরা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করেছি দীর্ঘ ৪০ বছর পর। নতুন আইনে আদালত হয়েছে। বিচারকাজ পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য সময়ের প্রয়োজন আছে। আমরা চাই একটা দৃষ্টান্তমূলক রায় হোক, যা যুগ যুগ ধরে জাতি স্মরণ করবে। এই বিজয়ের মাসে যেখানে আমরা উৎসব করব, সেখানে আমরা দেখছি এক হতাশার চিত্র। রাজনীতিতে যে পরস্পর বিশ্বাসের কথা বলে তা বাংলাদেশে নেই। হরতালের পর হরতাল হচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব একটা 'সংলাপ' প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে রেখে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না বিরোধী দলের কাছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এই 'আলোচনা' আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দিতে পারে। বাংলাদেশের বিকাশমান গণতন্ত্রের স্বার্থে এই স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এখন যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে আদৌ কি 'সংলাপ' অনুষ্ঠিত হবে? সরকারি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বিএনপিকে সংসদে ফিরে গিয়ে একটা প্রস্তাব দেয়ার কথা বলেছেন। এর পেছনে আন্তরিকতা কতটুকু আছে বলতে পারব না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি এই 'প্রস্তাবকে বিবেচনায় নিয়ে সংসদে যেতে পারে এবং একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে প্রস্তাব দিয়েছে তা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে করা যায় তা তারা বলতে পারে। এটা এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে সংসদে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি। বিএনপির সাংসদরা যাতে সংসদে থাকেন এ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সরকারি দলের সাংসদদের। সংসদে তাদের আচরণ, বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করা হয় তা কাম্য নয়। সংসদে সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেশি। তারা সবাই মিলে যদি 'আক্রমণ' করেন সঙ্গতকারণেই বিএনপির সাংসদদের তা পেরে ওঠার কথা নয়। তবে এ মুহূর্তে সরকারি দলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিএনপির সাংসদদের সংসদে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। প্রয়োজনে স্পিকার সাংসদদের জন্য একটি 'কোড অব কন্ডাক্ট' করতে পারেন। ২০১৩ সাল আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে পারে সরকার। কিন্তু কোনো ফর্মুলাই কাজ করবে না, যদি না বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করা যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে পদ ছাড়তে হবে। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশ্নে কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ১. প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে দুদলের ৫ জন করে সদস্য নিয়ে একটি সরকার, যারা আদৌ নির্বাচনে অংশ নেবেন না। ২. স্পিকারের নেতৃত্বে ৫ জন করে সদস্য নিয়ে একটি সরকার। স্পিকারসহ কেউই নির্বাচনে অংশ নেবেন না। ৩. সাংবিধানিক পদের অধিকারী এরকম তিনজনকে নিয়ে একটি সরকার, যারা নির্বাচনের পরপরই আর দায়িত্বে থাকবেন না নিরপেক্ষতার স্বার্থে। ৪. সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন বুদ্ধিজীবী নিয়ে একটি সরকার। এর বাইরেও আরো বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে মোটকথা হচ্ছে এই সরকারের বয়স হবে মাত্র ৩ মাস এবং তারা কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এখানে যে বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় নেয়া উচিত তা হচ্ছে মূলধারার দল বিএনপি বাদ দিয়ে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে এ দেশে নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু ওই নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দিতে পারেনি। তাই শুভবুদ্ধির উদয় হোক, আমরা এটাই প্রত্যাশা করব।Daily JAI JAI DIN20.12.12
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment