রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

দুর্নীতির কারণে দেশের ভাবমূর্তির অবনতি হয়েছে


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক পরিচালিত বিশ্বব্যাপী বার্ষিক জরিপে দুর্নীতি বিস্তারের ক্ষেত্রে গত এক বছরে বাংলাদেশের ২৪ ধাপ অবনতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৬ ডিসেম্বর এটি প্রকাশিত হয়। টিআই পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচকে’ গত বছর বিশ্বের ১৮৩টি দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যে সূচক করা হয়েছিল, তাতে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২০ নম্বরে। আর এবার ১৭৬টি দেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪তম। দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের মধ্যে ৫টির অবস্থানের উন্নতি হয়েছে। অর্থাৎ এই দেশগুলো ধীরে ধীরে দুর্নীতির ব্যাপকতা থেকে নিজেদের কিছুটা হলেও বের করে আনতে পেরেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, পারেনি বাংলাদেশ, সেই সঙ্গে পাকিস্তান। বাংলাদেশে দুর্নীতিজনিত পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের অবনতি হয়েছে ৫ ধাপ, কিন্তু বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে ২৪ ধাপ। স্কোরের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ পিছিয়েছে। ২০১১ সালের ২৭ স্কোর কমে এবার হয়েছে ২৬। রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩ নম্বরে।
বলা ভালো, এ রিপোর্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কোন ভূমিকা নেই। কিছুদিন আগে টিআইবির একটি রিপোর্ট নিয়ে (সংসদ সংদস্যদের নিয়ে) দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সংসদ সদস্যদের অনেকে টিআইবির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার কথাও বলেন। এখন টিআইবির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কী প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, সেটা সহজেই অনুমেয়। সরকারি দল সংসদ সদস্যদের নিয়ে টিআইবির রিপোর্টটি যেমন প্রত্যাখ্যান করেছিল, ঠিক তেমনি টিআইর রিপোর্টটিও তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ এই রিপোর্ট প্রকাশের পেছনে কোন ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে মনে করেন। আর দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ রিপোর্টটির ব্যাপারে সন্দিহান। তিনি মনে করেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম শক্তভাবে পরিচালনা করছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ১৩তম অবস্থান বহাল থাকার কথা নয়। অন্যদিকে বিএনপি যে টিআইর রিপোর্টে খুশি, তা ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বক্তব্যেই প্রমাণিত হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, টিআইর প্রতিবেদন যথার্থ। আমরা অতীতেও দেখেছি এ ধরনের একটি রিপোর্ট যখন প্রকাশিত হয়, তখন কারণ অনুসন্ধানের পরিবর্তে দল দুটি পরস্পরবিরোধী একটি অবস্থান গ্রহণ করে। রিপোর্টটি গ্রহণ না করে সরকারি দল এর পেছনের কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে দুর্নীতির বিষয়টি একরকম ‘ওপেন সিক্রেট’। বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতির সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। পদ্মা সেতু, হলমার্ক কেলেংকারি, ডেসটিনি গ্র“পের দুর্নীতি নিয়ে বলতে গেলে প্রতিদিনই আলোচনা হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিসরে স্থান পেয়েছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, যেদিন টিআইর প্রতিবেদনটি ঢাকায় প্রকাশিত হয়, সেদিনও সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে, বিশ্বব্যাংকের যে বিশেষজ্ঞ প্যানেল টিম বাংলাদেশে এসেছিল, তারা অসন্তোষ নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেছে। দুদক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে (তাদের ভাষায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্র) যাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে, সেখানে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম নেই। অসন্তোষের এটাই মূল কারণ। বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ টিমের মতে, কানাডার এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তারা যেহেতু একাধিকবার সাবেক মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং ১০ পার্সেন্ট ঘুষ দাবির সঙ্গে তার নামটি আছে, সেহেতু তাকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেয়া যায় না।
শুধু পদ্মা সেতুতে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ কথা কেন বলি, হলমার্ক কেলেংকারির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা। হলমার্কের এমডিকে গ্রেফতার করা হলেও অনেক রাঘববোয়ালই রয়ে গেছেন পর্দার আড়ালে। হলমার্ক ঋণ কেলেংকারিতে সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা জড়িত থাকলেও সরকারি ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের বড় দুর্নীতির আরও খবর রয়েছে বলে অনেকেই আশংকা করছেন। ডেসটিনির অর্থ কেলেংকারির দায়ভারও সরকার এড়াতে পারে না। যদিও ওই কোম্পানির এমডি ও চেয়ারম্যান এখন জেলে। আর পর্দার অন্তরালে চলে গেছেন ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা। অনেক দিন থেকেই রেন্টাল (ভাড়াভিত্তিক) ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্নীতি নিয়ে পত্রপত্রিকায় ব্যাপক লেখালেখি হচ্ছে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। আর এ চাহিদা মেটাতে সরকার আশ্রয় নিয়েছে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। মোট ৩২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে এ খাতে। অধিকাংশই ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল দিয়ে চালানো হয়। এ খাতে প্রচুর ভর্তুকি দিতে হয় সরকারকে। এখানেই রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ খাতে রাষ্ট্রের প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ থেকে মুনাফা লুটেছেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারের সঙ্গে জড়িত।
সুতরাং আজ যখন টিআইবির প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, তখন আমি অবাক হই না। কারণ বড় বড় দুর্নীতির সঙ্গে ‘রাঘববোয়ালরা’ জড়িত। তারা এতই ক্ষমতাবান যে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে সহজেই পার পেয়ে যান। তাদের কেউ ছুঁতে পারে না। শেয়ারবাজার থেকে অবৈধভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা ‘লুট’ হয়েছিল। এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, ওই কমিটি দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু তাদের একজনের বিরুদ্ধেও কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। পাচার করা টাকাও ফেরত আসেনি।
পৃথিবীর সব দেশেই দুর্নীতি হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও হয়, এমনকি চীনেও শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতির খবর আমরা পত্রপত্রিকা থেকে জেনেছি। আমাদের সঙ্গে ওই দেশগুলোর পার্থক্য এখানেই যে, ওই সব দেশে দুর্নীতি যদি প্রমাণিত হয়, তার শাস্তি ভয়াবহ। চীনের একটি শহরের মেয়র দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন আইনপ্রণেতা দুর্নীতির অভিযোগে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে জেলে কাটিয়েছেন সারাজীবন। জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমনকি ভারতের মতো দেশেও প্রচুর দুর্নীতি হয়। কিন্তু সেখানকার তদন্ত সংস্থা ও বিচার বিভাগ অত্যন্ত শক্তিশালী। প্রভাব খাটানোর কোন সুযোগ নেই। মন্ত্রী হয়েও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে জেলে গেছেন, এ ধরনের সাবেক ও ক্ষমতাসীন মন্ত্রীর সংখ্যা অনেক। অস্বীকার করা যাবে না যে ভারত কিছুটা হলেও দুর্নীতিকে দমন করতে পেরেছে, যা আমরা পারিনি। আমাদের আইনে দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক ধারা রয়েছে। যেমন, দুর্নীতির ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২০(খ), দুর্নীতির উদ্যোগ গ্রহণের জন্য দণ্ডবিধির ৫১১ ধারা, ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং পরস্পর যোগসাজশে অপরাধ সংঘটনের জন্য দণ্ডবিধির ১০৯ নম্বর ধারা। এসব ধারায় দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, বড় বড় দুর্নীতির ক্ষেত্রে সরকার তদন্ত কাজে প্রভাব খাটায়। তদন্ত কর্মকর্তারাই সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেন না। তাদের চাকরির ভয় থাকে। বদলির ভয় থাকে। অনেক সময় ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের’ উদ্দেশ্যে তদন্ত কাজ প্রভাবিত হয়। যে কারণে দেখা যায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা শাস্তি পান না। অথবা এমনভাবে তদন্ত রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়, যা দিয়ে উচ্চ আদালতে দুর্নীতি প্রমাণ করা যায় না। বাংলাদেশ বোধকরি পৃথিবীর কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি, যেখানে বড় দুর্নীতি করেও অভিযুক্তরা পার পেয়ে যায়।
টিআইর রিপোর্টে আমরা আবারও দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে প্রমাণিত হলাম। সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের প্যানেল টিম হতাশ হয়েই বাংলাদেশ ছাড়ল। এর অর্থ পরিষ্কারÑ বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে সম্ভবত অর্থায়ন করছে না। একজন ব্যক্তি এখানে প্রাধান্য পেলেন। প্রাধান্য পেল না অর্থায়নের বিষয়টি। সরকারের নীতিনির্ধারকরা এখন কী করবেন আমি জানি না। কিন্তু টিআইর রিপোর্ট আর বিশ্বব্যাংকের প্যানেলের হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়ার ঘটনায় আমাদের জন্য অনেক ‘খারাপ’ খবর অপেক্ষা করছে। প্রসঙ্গত, দাতাগোষ্ঠী বাংলাদেশকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখন ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশ হিসেবে মনে করতে পারে। এতে বিনিয়োগ হ্রাস পাবে। সাহায্যের ক্ষেত্রেও স্থবিরতা আসবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সুশাসনের ব্যাপারটি আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণার জš§ দেবে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে অর্জন, তা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। বিশ্ব শান্তি রক্ষায় কিংবা দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা আন্তর্জাতিক দৃষ্টি কেড়েছিল। ওবামার মতো ব্যক্তিও মাঝে-মধ্যে বাংলাদেশকে ‘রেফার’ করতেন। এখন বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত আর দেয়া যাবে না। তৃতীয়ত, বাংলাদেশ মার্কিন বাজারে তৈরি পোশাকের জন্য যে জিএসপি সুবিধা (শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার) চেয়ে আসছে, এই সুবিধা পাওয়া আরও কঠিন হবে। মার্কিন প্রশাসন এটাকে সুশাসনের সঙ্গে যুক্ত করবে। চতুর্থত, যুক্তরাষ্ট্র তার মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্ট (এমসিএ) থেকে বাংলাদেশকে প্রতিবছর যে ১০ কোটি ডলার সাহায্যের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, এখন সেখান থেকে সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করার জন্য ২০০৪ সালে এমসিএ গঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ এখান থেকে কোন সাহায্য পায় না। দুর্নীতির এই বৃত্ত যদি বাংলাদেশ ভাঙতে না পারে, তাহলে এমসিএ থেকে সাহায্য বাংলাদেশ কোন দিনই পাবে না। সর্বশেষ পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ঘটনায় এমসিএ থেকে সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক দুর্বল হল।
উন্নয়নশীল বিশ্বে দুর্নীতি থাকবেই। এ দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ বা সীমিত করে রাখার মাধ্যমেই সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। বাংলাদেশ বিশ্বকে অনেক কিছু দিতে পারে। হিলারি ক্লিনটন তার ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশকে একটি ‘সফ্ট পাওয়ার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। কিন্তু এর জন্য বাংলাদেশকে যা করতে হবে তা হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা। একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজই সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে। টিআইএর একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। গেল বছরও এমন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। দুর্নীতি রোধে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি। বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তির জন্য এটা খারাপ সংবাদ। আমরা গণতন্ত্রকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে, সেই সমাজ আমরা গড়তে চাই। কিন্তু দুর্নীতিকে যদি ‘না’ না বলি, তাহলে আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত সমাজ গড়তে পারব না। আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরও দরিদ্র হবে। এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা আমরা অর্জন করতে পারব না।
টিআইর রিপোর্টটি আমাদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এ রিপোর্টকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখে, ‘ষড়যন্ত্র’ আবিষ্কার না করে নীতিনির্ধারকরা যদি সত্যিকার অর্থেই দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে উদ্যোগী হন, তাহলে তারা ভালো করবেন। পদ্মা সেতু কিংবা হলমার্ক কেলেংকারির সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকলেও তাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় ১৬ কোটি মানুষের এদেশ গুটিকয় লোকের জন্য বারবার দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেতে পারে না।
Daily JUGANTOR
08.12.12

0 comments:

Post a Comment