রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

Prof Dr Tareque Shamsur Rehman

In his Office at UGC Bangladesh

Prof Dr Tareque Shamsur Rahman

During his stay in Germany

Prof Dr Tareque Shamsur Rahman

At Fatih University, Turkey during his recent visit.

Prof Dr Tareque Shamsur Rehman

In front of an Ethnic Mud House in Mexico

ভেলিকা ক্লাদুসায় অনিশ্চিত বাংলাদেশিদের জীবন

বসনিয়া হারজেগোভিনার একটি ছোট্ট গ্রামের নাম ভেলিকা ক্লাদুসা। এ ভেলিকা ক্লাদুসাই এখন সংবাদের শিরোনাম। কারণ সেখানে জঙ্গলে, কর্দমাক্ত পাহাড়ের ঢালে প্রায় ৭০০ বাংলাদেশি অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মাঝে বসবাস করছে। তাদের এই দুঃখ কষ্টের কাহিনীই তুলে এনেছে জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের দুই সাংবাদিক। তারা দু’জনই ডয়েচে ভেলের বাংলা বিভাগে কাজ করেন। চিন্তা করা যায় ৭০০ বাংলাদেশি! জঙ্গলে থাকছেন ঠাণ্ডা মেঝেতে পলিথিন বিছিয়ে, পলিথিনের তাঁবুতে। তাদের সবার গন্তব্য পশ্চিম ইউরোপ- ইউরোপের স্বপ্নের দেশ ইতালি! গুগল ম্যাপে সার্চ করে দেখলাম বাংলাদেশ থেকে ভেলিকা ক্লাদুসার দূরত্ব ৬ হাজার ৯৭৫ কিলোমিটার, আর আকাশপথে ৪ হাজার ২২৭ মাইল। বাংলাদেশের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে বসনিয়া হারজেগোভিনার কোনো মিল নেই। বাংলাদেশিদের সেখানে যাওয়ার কথা নয়। শুধু এক জায়গায় মিল আছে। আর তা হচ্ছে ধর্মীয় বন্ধন- তারাও মুসলমান। কিন্তু ধর্মীয় নৈকট্যের কারণে বাংলাদেশিরা সেখানে ছুটে যাননি। গেছেন ‘স্বপ্নের দেশ’ ইতালি, জার্মানি কিংবা স্পেনে থাকার জন্য। তারা অনেকেই জানেন না ইউরোপে এ সুযোগ এখন নেই। সেখানে ইচ্ছা করলেই থাকা যায় না। তারা অর্থনৈতিক অভিবাসী। ইউরোপের চাকচিক্যময় জীবনের আশায় তারা ইউরোপে যেতে চায়। কিন্তু সেটা যে কত কঠিন বা হয়তো আদৌ সম্ভব নয়- এ কথাটা জানায়নি দালালরা, যারা তাদের নিয়ে গেছে সিলেট থেকে তুরস্কে, তুরস্ক থেকে গ্রিসে, গ্রিস থেকে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে ভেলিকা ক্লাদুসায়। পাশেই ক্রোয়েশিয়া। আর ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া আর অস্ট্রিয়ার। দালালরাই তাদের পৌঁছে দেয় ইউরোপের শিল্পোন্নত যে কোনো একটি দেশে। দালালদের দিতে হয় অনেক টাকা। কোনো কোনো বাংলাদেশি ভেলিকা ক্লাদুসার জঙ্গলে আছেন দু’বছর ধরে- সে কথা তারা জানিয়েছেন ডয়েচে ভেলের সাংবাদিককে। পাঠক, স্মরণ করতে পারেন লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের করুণ কাহিনীর কথা। লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশির মৃত্যুর করুণ কাহিনী গত ৩০ মে বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোতে ছাপা হয়েছিল। লিবিয়ার মিজদা শহরে ওই ঘটনাটি ঘটে। হতভাগ্য মানুষগুলো লিবিয়া থেকে ইতালি যেতে চেয়েছিল। মানব পাচারকারীরা তাদের বিভিন্ন রুট দিয়ে ইউরোপে পৌঁছে দেবে বলে লিবিয়ায় নিয়ে যায়। বেশ কিছুদিন ধরেই মানব পাচারকারীদের কাছে লিবিয়া হচ্ছে একটি ট্রানজিট পয়েন্ট, যেখান থেকে ইউরোপ, বিশেষ করে ইতালিতে পাচার করানো সহজ। ভূমধ্যসাগরের এক পাড়ে লিবিয়া, অপর পাড়ে ইতালি। পাচারকারীরা এ সুযোগটিই গ্রহণ করে। তারা মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় রুট ব্যবহার করে সাধারণ নৌকায় বিভিন্ন দেশ থেকে আনা লোকদের তুলে দেয়। সাগর পাড়ি দিয়ে নৌকা এক সময় ওপারে যায়। সমুদ্রপথে দূরত্ব মাত্র ৫৮১ নটিক্যাল মাইল। অনেক সময় ইতালির কোস্টগার্ডদের হাতে কেউ কেউ ধরা পড়ে। একবার ইতালির সীমানায় পৌঁছলেই হল- তারা তখন রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী হয়ে যায়। এর পরের খরচ সব ইতালি সরকারের। পাচারকারীরা স্বপ্ন দেখায়- ইতালি মানেই ইউরোপ আর স্বপ্নের বসবাস! পাচারকারীরা কখনই এ দুর্গম পথে সাগর পার হওয়ার কাহিনী শোনায় না। সাগর অনেক সময় বিক্ষুব্ধ থাকে। সমুদ্র ঝড়ের মাঝেও পড়তে হয়। নৌকা মাঝ সাগরে নষ্ট হয়ে যায়। তারপর ভাসতে থাকে সাগরে দিনের পর দিন। এ ধরনের শত শত ঘটনার কোনো কোনোটি সংবাদপত্রে ছাপা হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছাপা হয় না। গত বছর এ সমুদ্র রুট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ ইউরোপ গেছে। এ পথে ইতালি, গ্রিস ও স্পেনেও যাওয়া যায়। ইতালি সবচেয়ে কাছের। তাই পাচারকারীরা ইতালিকেই প্রথম পছন্দ করে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মতে, ইউরোপে পাচার হওয়া মানব সন্তানদের শতকরা ৮২ ভাগ এই লিবিয়া রুট ব্যবহার করেছিল। পাচাকারীরা বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান ও আফ্রিকা থেকে শত শত মানব সন্তানকে প্রধানত তুরস্ক নিয়ে যায়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ায়। তারপর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তুলে দেয়া হয় ভূমধ্যসাগরে। ২০১৭ সালে আইওএমের তথ্যমতে ৩ হাজার ১০৮ জনের সাগরে মৃত্যু ঘটেছিল। পাঠক, নিশ্চয়ই স্মরণ করতে পারেন ২০১৫-২০১৬ সালে লাখ লাখ সিরীয় নাগরিকের ইউরোপে আশ্রয় নেয়ার কাহিনী। ইউরোপের পথে, ঘাটে, জঙ্গলে শত শত সিরীয় নাগরিকের উপস্থিতি ওই সময় আন্তর্জাতিক সংবাদে পরিণত হয়েছিল। তাদের প্রায় সবাই এ সমুদ্র রুট ব্যবহার করেছিল। পরবর্তী ক্ষেত্রে এ রুটে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও মানব পাচার থামেনি। তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০০৮ সালে লিবিয়ার ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরপরই লিবিয়া মানব পাচারকারীদের জন্য আকর্ষণীয় স্পটে পরিণত হয়। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে লিবিয়ার পরিস্থিতি ভালো নয়, সেখানে গৃহযুদ্ধ চলছে; কিন্তু আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের কাছে তা গুরুত্ব পায়নি। কারণ তারা ইতোমধ্যেই লিবিয়ার স্থানীয় ‘ওয়ার লর্ড’দের সঙ্গে একটা সখ্য গড়ে তুলেছে। অতিসম্প্রতি লিবিয়ার পাশাপাশি সুদানও পাচারকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশিরা এ সুদান রুটটি ব্যবহার করছে। একটা অবৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়ে বাংলাদেশিদের সুদানে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাদের সুদান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ার বেনগাজি। সুদান থেকে তাদের ট্রাকে করে সীমান্ত পার করে লিবিয়ায় ঢোকানো হয়। বাংলাদেশিরা এ পথেই লিবিয়ায় ঢুকছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এ তথ্যগুলো জানি না। লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশির মৃত্যুর পর আমরা এখন জেনেছি। অনেক ক্ষেত্রেই পাচারকারীরা লিবিয়ায় নিয়ে আসা যাত্রীদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে। নিহত হতভাগ্য যাত্রীদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছিল। নিহত বাংলাদেশিরা প্রায় তিন মাস আগে লিবিয়ায় পৌঁছেছিলেন। তারা জেলেও ছিলেন। জেল থেকে ওই পাচারকারীরা তাদের ছাড়িয়ে আনে। টাকার জন্য তাদের জিম্মি করে। একপর্যায়ে ওই আফ্রিকান পাচারকারীকে জিম্মিরা হত্যা করে। আর এর প্রতিশোধ হিসেবেই বাংলাদেশি এবং কয়েকজন আফ্রিকান নাগরিককে হত্যা করা হয়। এই মৃত্যুর ঘটনা কয়েকটি প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। এক. এ পাচার প্রক্রিয়া আজকে নতুন নয়। বহুদিন ধরে এভাবে পাচার চক্র বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে মানুষ পাচার করছে। যাদের পাচার করা হয় তাদের ইউরোপের স্বপ্ন দেখানো হয়। বলা হয়, স্পেন ও ইতালিতে কৃষিকাজে লোক লাগবে। ওখানে পৌঁছতে পারলেই একসময় অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেয়া হবে। এ ফাঁদে পড়েই হতভাগারা লিবিয়া গিয়েছিলেন। এখন আমাদের জানা দরকার কারা তাদের বাংলাদেশ থেকে রিক্রুট করেছিল। কোন কোন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তারা সেখানে গিয়েছিলেন। তাদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া না হয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটবে। সুতরাং এ মুহূর্তে যা দরকার তা হচ্ছে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাচারকারীদের সবার এজেন্টদের খুঁজে বের করা এবং তাদের আইনের আওতায় আনা। দু-একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। দুই. এসব হতভাগা বাংলাদেশি ভুয়া ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেখিয়ে সুদান গিয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, এটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি এড়ালো কীভাবে? তারা তো জানতেন সুদানে কাজের কোনো সুবিধা নেই। সেখানেও গৃহযুদ্ধ চলছে। এতজন লোক ভুয়া ডকুমেন্ট দেখিয়ে বিমানবন্দর পার হল, কেউ সেটা বুঝতে পারল না- এটা হতে পারে না। এর অর্থ হচ্ছে, ওই পাচারকারীদের সঙ্গে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অফিসারদের ‘সখ্য’ আছে। তারাই বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে হতভাগা যাত্রীদের বিমানবন্দর পার করে দেন। সুতরাং ওই দিন যেসব কর্মকর্তা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। তিন. বাংলাদেশে কিছু অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে এ তথ্য থাকার কথা। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, ওইসব অসাধু এজেন্সির বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিলাম না কেন? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা দরকার। দু-একজনকে গ্রেফতার করেই কি সব শেষ হল? বাকিরা কোথায়? তাদের গ্রেফতার করা হলে এ ধরনের পাচার কমবে। চার. পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তারা এ হত্যাকাণ্ডের জন্য লিবিয়া সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচার চাইবেন। বিষয়টি অনেকটাই হাস্যকর। কেননা এ মুহূর্তে লিবিয়ায় কার্যত কোনো সরকার নেই। ত্রিপোলিতে যে সরকার আছে এবং যা জাতিসংঘ স্বীকৃত, সেই সরকারের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। জেনারেল হাফতারের বাহিনী যে কোনো সময় ত্রিপোলি দখল করতে পারে। সুতরাং বাংলাদেশ কার কাছে ক্ষতিপূরণ চাইবে? কে ক্ষতিপূরণ দেবে? বরং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশের জনগণকে সতর্ক করা- তারা যেন লিবিয়ায় না যায়। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ কাজটি করা যেত। কিন্তু তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করেনি। ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশি নাগরিকদের রক্ষায় তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এসব অদক্ষ লোকদের দিয়ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা যাবে না। পাঁচ. হতভাগা বাংলাদেশি নাগরিকদের একটি তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি এসব পরিবারকে কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়, তাহলে নিঃসন্দেহে ওইসব পরিবার কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাবে। ছয়. আহত ১১ বাংলাদেশি এখন লিবিয়ায় চিকিৎসাধীন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা। আমরা জানি না এ কাজটি করা হয়েছে কিনা। লিবিয়া আর ভেলিকা ক্লাদুসার ঘটনাবলির মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক সেখানে যেতে পারলেন, আমাদের দূতাবাসের কোনো কর্মচারীরা সেখানে গেলেন না! এটা ঠিক, বাংলাদেশিরা সেখানে অবৈধভাবে গেছেন। কেউ কেউ দেশে ফিরে আসতে চান। তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। শত শত বাংলাদেশির মাসের পর মাস জঙ্গলে অবস্থান আর যাই হোক দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগটি তাই জরুরি। Jugantor 25.10.2020

মার্কিন নির্বাচন যে শঙ্কা জাগায়

আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে এখন নানা বিতর্ক। একের পর এক বিতর্ক ও নাটকীয়তার সৃষ্টি হচ্ছে এবং শেষ অব্দি বিশ্ব একটি ভালো নির্বাচন দেখতে পাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ফিরে এসে তার দৈনন্দিন কাজকর্ম করছেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, তার ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকার কথা। কিন্তু তিনি তা থাকেননি। এ অসুস্থতাজনিত কারণে তার 'কর্মদক্ষতা' ও জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ১৯১৯ সালে এ রকম একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সময় মহামারিতে (ইনফ্লুয়েঞ্জা) সারাবিশ্ব আক্রান্ত হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হন। তিনি প্যারালাইজড ও অন্ধ হয়ে যান। বিষয়টি গোপন রাখা হয়। কিন্তু এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের একটি ব্যাখ্যা আছে। সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে প্রেসিডেন্ট অসুস্থ, অকর্মণ্য হলে তাকে অপসারণ করার বিধান আছে। অনেক ক্ষেত্রে এটা 'জোর' করে অথবা তিনি যদি উত্তরাধিকারীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না চান, সে ক্ষেত্রেও তাকে অপসারণ করা যায়। কিন্তু ট্রাম্প বলে কথা। তাকে অপসারণ করা যাবে না! এরই মাঝে তিনি নানা কথাবার্তা বলে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কেও তিনি জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন। মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অশোভন বক্তব্য দিয়ে বিতর্কের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের আগেই কতগুলো 'ইস্যু' সামনে চলে এসেছিল, যা বিতর্কের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী পরিমাণ ট্যাক্স দেন। যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ধনীদের একজন ট্রাম্প। প্রথম কাতারে না থাকলেও, ২০১৯ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতে দেখা যায় ট্রাম্পের সম্পদের পরিমাণ ৩.১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের ৫ মার্চ পর্যন্ত এই হিসাব। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত তার সম্পদ আরও বেড়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের কাতারে তার অবস্থান ২৫৯তম, আর বিশ্বে ৭১৫তম। তবে ২০১৫ সালে ট্রাম্প এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বীকার করেছিলেন, তার সম্পদের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার (এনবিসি, ১৬ জুলাই ২০১৫)। যে পরিমাণ অর্থই তার থাকুক না কেন, তা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর (২০১৬) তিনি স্বীকার করেননি কখনও। তার ট্যাক্স ফাইলে তা উল্লেখও করেননি। তবে তার ট্যাক্স ফাইলের গোপন তথ্যটি ফাঁস করে দেয় নিউইয়র্ক টাইমস গত ২৭ সেপ্টেম্বর; প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের দুই দিন আগে। তাতে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা সবাইকে অবাক করেছে। তিনি একজন বিলিয়নেয়ার, কিন্তু ট্যাক্স দিয়েছেন মাত্র ৭৫০ ডলার (২০১৭ সালের হিসাব)! অন্যদিকে আরেকটি তথ্যও আমরা পেয়েছি। তাতে দেখা যায়, অন্যতম প্রার্থী জো বাইডেন ট্যাক্স দিয়েছেন ৩৭,৪২,৯৭৪ ডলার, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও জো বাইডেনের রানিং মেট কমলা হ্যারিস দিয়েছেন ৫,১৬,৪৬৯ ডলার, সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ৩,৪৩,৮৮২ ডলার, সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন দিয়েছেন ২,৬৮,৪৮৪ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে সবাইকে ট্যাক্স দিতে হয়। যারা চাকরি করেন, আয় থেকেই তারা ট্যাক্স দেন। তাহলে ট্রাম্পের ব্যাপারে এত ফাঁকিজুকি কেন? সাধারণত ধনী ব্যবসায়ীরা এ কাজটি করেন। তারা ট্যাক্স ফাঁকি দেন। ট্রাম্পও দিয়েছেন। তবে অত্যন্ত কৌশলে এ কাজটি তিনি করেছেন। অতীতে একাধিকবার এই প্রশ্নটি উত্থাপিত হলেও, ট্রাম্প কখনোই তা খোলাসা করেননি। এবারও যখন নিউইয়র্ক টাইমস তথ্যটি ফাঁস করে দিল, হোয়াইট হাউস কিংবা ট্রাম্পের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে তা খণ্ডন করা হয়নি। পাঠকদের জানার জন্য আরও কিছু তথ্য দিই। গড়পড়তা একজন শিক্ষক (স্কুল) সেখানে ট্যাক্স দেন ৭,২৩৯ ডলার (বছরে), একজন দমকলকর্মী দেন ৫,২৮৩ ডলার, একজন নার্স দেন ১০,২১৬ ডলার, একজন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার দেন ১৬,৪৪৭ ডলার (প্রোগ্রেস রিপোর্ট, ৩০ সেপ্টেম্বর)। আর ট্রাম্প দেন মাত্র ৭৫০ ডলার! তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে বার্ষিক যে বেতন পান (৪ লাখ ডলার), তা তিনি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দান করে দেন। একজন প্রেসিডেন্ট যখন অবসরে যান, আজীবন তিনি পেনশন পান, তার পরিমাণ ২,১৯,২০০ ডলারের মতো বছরে। একজন ধনী ব্যক্তি হয়েও ট্রাম্প ট্যাক্স দেন না- এটা বহুল আলোচিত ও প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কেও তাকে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন তিনি জবাবে বলেছিলেন, তিনি 'মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স' দেন! তাহলে তিনি মিথ্যা বললেন? তার স্টাফরা অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করতে পারেননি। তার অর্থ হচ্ছে, তিনি যা বলেছেন তা মিথ্যা। তার বক্তব্যের সঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত তথ্যের কোনো মিল নেই। প্রশ্ন হচ্ছে এখানেই। একজন প্রেসিডেন্ট কি তাহলে মিথ্যা বলেন? সংবাদ সম্মেলনে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন? এর জবাবে তিনি বলেছিলেন, মহামারির কারণে ডাকযোগে বর্ধিত ভোট না হলে তিনি বিশ্বাস করেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো দরকারই হতো না। তিনি মনে করেন, ডাকযোগের ভোটে জালিয়াতি হলেই কেবল তিনি হারতে পারেন! নির্বাচনে হেলে গেলে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছিল- ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পর ফলাফল নিষ্পত্তি হবে সুপ্রিম কোর্টে। এটি বিবেচনায় নিয়েই কি তিনি প্রয়াত বিচারপতি রুথ বাদের গিন্সবার্গের জায়গায় বিচারপতি অ্যামি কোবি ক্যারেটের নাম প্রস্তাব করেছিলেন? তার কনফার্মেশনের শুনানি এখন চলছে। সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিচারপতি ক্যারেটের মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য তা হবে একটি প্লাস পয়েন্ট। তিনি যা চাইবেন, সুপ্রিম কোর্ট তাতে অনুমোদন দিতে পারেন। এ জন্যই ডেমোক্র্যাটরা চেয়েছিল, নয়া প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি মনোনয়ন দেবেন। কিন্তু ট্রাম্প তা মানেননি। ট্রাম্প তার বক্তব্য ও আচরণের জন্য বারবার বিতর্কিত হলেও তিনি হাল ছাড়ছেন না। গত ১১ অক্টোবর সর্বশেষ নির্বাচনী জনমতের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবিসি নিউজ ও ওয়াশিংটন পোস্ট এই জনমত সমীক্ষা পরিচালনা করে। তাতে দেখা যায়, ট্রাম্প পিছিয়ে আছেন ১২ পয়েন্টে। জো বাইডেনের পক্ষে ৫৫ ভাগ জনমত, আর ট্রাম্পের পক্ষে ৪৩ ভাগ। পরপর তিনটি জনমত সমীক্ষায় ১০ পয়েন্টের ওপরে জো বাইডেন এগিয়ে আছেন, এবং এই হার ৫০ ভাগের ওপরে। বাকি দুটো জনমত সমীক্ষা পরিচালনা করে সিএনএন/ এসএসআরএস এবং ফক্স নিউজ। ফক্স নিউজকে ট্রাম্পের সমর্থক বলে ধরে নেওয়া হয়। ১৯৩৬ সালের পর যে ২১টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ করে বিরোধী প্রার্থী এত পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন না। কেউই শতকরা ৪৮ ভাগের ওপরে নির্বাচনে ভোট পাননি। জো বাইডেনের পক্ষে জনমত গড়ে ৫০ ভাগের ওপরে। বলা ভালো, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেন বটে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে। নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। জিততে হলে পেতে হবে ২৭০টি ভোট। সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের মোট সদস্য সংখ্যার ভিত্তিতে এই নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হয়। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই 'বিতর্ক' বাড়ছে। আর তাতে একটা বড় শঙ্কার জায়গা তৈরি হয়েছে। Somokal 23.10.2020

কেমন হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ১৭৮৯ সালে সেখানে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন দুজন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প, আর ডেমোক্রেট পার্টি প্রার্থী জো বাইডেন। কিন্তু এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে যত বিতর্ক, যত নাটকীয়তা- অতীতে কোনো নির্বাচন নিয়ে এতটা হয়নি। ৭৪ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, আবার ফিরে এসে নির্বাচনী প্রচারণাসহ তার দৈনন্দিন কাজকর্ম করছেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের’ মতে, তার ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকার কথা। কিন্তু তিনি তা থাকেননি। অসুস্থতাজনিত কারণে তার ‘কর্মদক্ষতা’ ও জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ১৯১৯ সালে এ রকম একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সময় মহামারীতে (ইনফ্লুয়েঞ্জ) সারাবিশ্ব আক্রান্ত হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হন। তিনি প্যারালাইজড ও অন্ধ হয়ে যান। কিন্তু বিষয়টি গোপন রাখা হয়। কিন্তু এ ধরনের একটি পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের একটি ব্যাখ্যা আছে। সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে প্রেসিডেন্ট অসুস্থ, অকর্মণ্য হলে তাকে অপসারণ করার বিধান আছে। অনেক ক্ষেত্রে এটা ‘জোর’ করে অথবা তিনি যদি উত্তরাধিকারীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না চান, সে ক্ষেত্রেও তাকে অপসারণ করা যায়। কিন্তু ট্রাম্প বলে কথা। তাকে অপসারণ করা যাবে না! এরই মাঝে তিনি নানা কথাবার্তা বলে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কেও তিনি জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন। মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অশোভন বক্তব্য দিয়ে বিতর্কের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে তিনি যত বেশি বিতর্কিত হয়েছেন, অতীতে অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট এভাবে বিতর্কিত হননি। ক’বছর আগেও তার নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা সারাবিশ্ব জেনেছিল। জনৈকা বারবণিতার সঙ্গে তার ‘দৈহিক সম্পর্ক’ ও তা সংবাদমাধ্যমে যাতে প্রকাশ না পায়, তার জন্য মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা, একের পর এক শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা, নির্বাচনে বাইরের শক্তির দ্বারা প্রভাব খাটানোর উদ্যোগ, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়ে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করা ইত্যাদি ঘটনায় তিনি বারবার আলোচিত হয়েছেন। তার শাসনামলে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হয়েছে, যার কারণে জন্ম হয়েছে ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারর্স’ আন্দোলনের। একপর্যায়ে এই আন্দোলন সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং যা পরিণত হয় কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে। সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত তিনি দুটো কারণে। এক. একজন ধনী ব্যক্তি হয়েও (তার সম্পদের পরিমাণ ২.৫ বিলিয়ন ডলার) তিনি কর পরিশোধ করেছেন মাত্র ৭৫০ ডলার (২০১৭)। দুই. নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়বেন কিনা? একটা আশঙ্কা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে যে, তিনি ফন্দিফিকিরের আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে পারেন। সংবাদ সম্মেলনে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষটি নিশ্চিত করতে পারেন? এর জবাবে তিনি বলেছিলেন, মহামারীর কারণে ডাকযোগে বর্ধিত ভোট না হলে তিনি বিশ্বাস করেন ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো দরকারই হতো না। তিনি মনে করেন, ডাকযোগের ভোটে জালিয়াতি হলেই কেবল তিনি হারতে পারেন। নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছিল- ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পর ফলাফল নিষ্পত্তি হবে সুপ্রিমকোর্টে। এটা বিবেচনায় নিয়েই কি তিনি প্রয়াত বিচারপতি রুথ বাদের গির্নসবাদের জায়গায় বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেটের নাম প্রস্তাব করেছিলেন? সিনেটে তার ‘কনফার্মেশনের’ শুনানি শেষ হয়েছে। সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিচারপতি ব্যারেটের মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য তা হবে একটা প্লাসপয়েন্ট। তিনি যা চাইবেন, সুপ্রিমকোর্ট তাতে অনুমোদন দিতে পারেন। এজন্যই ডেমোক্রেটরা চেয়েছিল নয়া প্রেসিডেন্ট সুপ্রিমকোর্টে বিচারপতি মনোনয়ন দেবেন। কিন্তু ট্রাম্প তা মানেননি। ব্যারেট মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারবেন বলে অনেকের ধারণা। ট্রাম্প তার বক্তব্য ও আচরণের জন্য বারবার বিতর্কিত হলেও তিনি হাল ছাড়ছেন না। গত ১১ অক্টোবর সর্বশেষ নির্বাচনী জনমতের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবিসি নিউজ ও ওয়াশিংটন পোস্ট এই জনমত সমীক্ষা পরিচালনা করে। তাতে দেখা যায়, ট্রাম্প পিছিয়ে আছেন ১২ পয়েন্টে। জো বাইডেনের পক্ষে ৫৫ ভাগ জনমত, আর ট্রাম্পের পক্ষে ৪৩ ভাগ। পরপর তিনটি জনমত সমীক্ষায় ১০ পয়েন্টের ওপরে জো বাইডেন এগিয়ে আছেন এবং এই হার ৫০ ভাগের ওপরে। বাকি দুটো জনমত সমীক্ষা পরিচালনা করে সিএনএন/এসএসআরএস এবং ফক্স নিউজ। ফক্স নিউজকে ট্রাম্পের সমর্থক বলে ধরে নেওয়া হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রার্থীদের ‘কমিটমেন্ট’। প্রার্থীরা নির্বাচনে বিজয়ী হলে জাতিকে কী উপহার দেবেন, এটা সবাই জানতে চায়। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় এসব বিষয়ে বক্তব্য রাখেন, প্রতিশ্রুতি দেন, ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। এমনকি তিন তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক হয়। সাধারণত টিভি চ্যানেলগুলো এসব বিতর্কের আয়োজন করে এবং লাখ লাখ মানুষ তা টিভিতে প্রত্যক্ষ করে। ভোটারদের প্রভাবিত করার এটা একটা মোক্ষম অস্ত্র। কিন্তু করোনা ভাইরাস এবার বিপত্তিটা বাধিয়েছে। ট্রাম্প করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক বাতিল হয়ে যায়। আর তৃতীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে না বলেই মনে হয়। ফলে ভোটারদের কাছে আর কোনো সুযোগ থাকল না প্রার্থীদের ‘কমিটমেন্ট’ প্রত্যক্ষ করার। তবে এটা ঠিক বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। যেমন করোনা ভাইরাস। সারাবিশ্বে এই ভাইরাসে ১১ লাখের ওপর মানুষ মারা গেলেও (যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা ২২৪২৮২ জন) ট্রাম্প এই মহামারীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। ‘চীনা ভাইরাস’ বলেও চিহ্নিত করেছেন। তিনি মাস্ক ব্যবহার করেন না। আর বাইডেন বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে তার প্রথম কাজ হবে মহামারী মোকাবিলা করা। কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীতির কোনো ফল পাওয়া যায়নি। কর্মসংস্থান বাড়েনি। বেকার মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জো বাইডেনের বক্তব্য হচ্ছে, করোনা ভাইরাসের তাৎক্ষণিক ধাক্কা সামাল দিতে যত অর্থের প্রয়োজন হয়, তত অর্থ তিনি দেবেন। এর মাঝে রয়েছে ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া ও পরিবারগুলোকে নগদ অর্থ সাহায্য প্রদান। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রতি মাসে ২০০ ডলার ও শিক্ষার্থীদের ১০ হাজার ডলার ঋণ মওকুফেরও প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন। পরিবেশবান্ধব জ্বালানির জন্য দুই ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ও আমেরিকান পণ্য ক্রয়ের জন্য ৪০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়েছেন। চীনের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের পণ্য টিকিয়ে রাখা হচ্ছে ট্রাম্পের নীতি। এ কারণেই তিনি চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে ইতোমধ্যে চীনের সঙ্গে এক ধরনের ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে বাইডেনের নীতি খুব স্পষ্ট নয়। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের অবস্থান ‘আমেরিকা ফাস্ট’। তার নীতি দক্ষিণ চীন সাগরে তথা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনবিরোধী একটা অ্যালায়েন্স তৈরি করছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগানের সম্প্রতি নয়াদিল্লি ও ঢাকা সফর এর বড় প্রমাণ। অন্যদিকে জো বাইডেন বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান। ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক জোট করতে চান তিনি। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কমিয়ে আনতে চান। আর জো বাইডেনের নীতি অনেকটা প্রো-অভিবাসন। জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত এসব ইস্যুতে ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও ভোটাররা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আচরণ, ব্যক্তিগতভাবে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা, ক্ষমতার অপব্যবহার করা, ট্যাক্স না দেওয়া ইত্যাদিতে বেশি প্রভাবিত হয়েছেন। যে কারণে জনমত এখনই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলে গেছে। তবে শেষ কথা বলা যাবে না এখনই। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে Amader Somoy 22.10.2020

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও বিবিধ প্রসঙ্গ

শেষ পর্যন্ত যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তাই হয়েছে। করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ ইউরোপে আঘাত হানতে শুরু করেছে। এর ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। বিবিসি আমাদের খবর দিচ্ছে যে, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, হল্যান্ড ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে করোনার প্রকোপ বাড়ছে। মাদ্রিদে ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ফ্রান্সের চারটি শহরে বার-রেস্তোরাঁ বন্ধের প্রস্তুতি চলছে। পোল্যান্ডে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় সেখানে কড়াকড়ি ব্যবস্থা আরোপ করা হয়েছে। জার্মানিতে নতুন করে ৪ হাজার ৫১৬ জনের ভাইরাস শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যে বার-রেস্তোরাঁ বন্ধের পাশাপাশি তিন স্তরের লকডাউন বিধি আরোপের পরিকল্পনা করছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের আগমনীতে ভাইরাস জেগে উঠেছে। হাসপাতালে বেড়ে যাচ্ছে রোগীর সংখ্যা। বৃদ্ধ নিবাসগুলোতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার খবর আসছে। এমনকি কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ থাকা এলাকাগুলোতেও অবিরাম দ্রুতগতিতে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে চলছে। ব্লুমবার্গ ওপিনিয়ন-এর মতে ইউরোপে কভিড-১৯-এর যে কার্ভ, তা যুক্তরাষ্ট্রের মতোই অথবা যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতির চেয়েও খারাপ হচ্ছে! ১৬ অক্টোবর নিউ ইয়র্ক টাইমস আমাদের জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি স্টেটে নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। মিনেসোটা, মনটানা কিংবা উইসকনসিনের মতো স্টেটে নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক তাদের ১৬ অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কোনো কোনো স্টেটে নতুন করে করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ আঘাত হেনেছে। এর অর্থ হচ্ছে কভিড-১৯ পরিপূর্ণভাবে নির্মূল হয়নি। এর ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ আঘাত হানতে শুরু করেছে। একমাত্র টিকা ছাড়া কভিড-১৯ নির্মূল করা সম্ভব নয়। আর এই টিকা নিয়েও আছে নানা ‘সমস্যা’ ও ‘রাজনীতি’। যাদের ওপর টিকা প্রয়োগ করা হয়েছিল, তারা অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ওই টিকার গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে। ফাইজারের করোনাভাইরাস টিকার ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে। এই করোনাভাইরাস গত দশ মাসে একদিকে যেমনি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে তেমনি বড় ধরনের বৈষম্যও সৃষ্টি করেছে। ধনীরা আরও ধনী হয়েছে, গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে। ধনী ও গরিব মানুষের মধ্যে বৈষম্য বেড়েছে আয়ের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ কভিড-১৯-এর কারণে ব্যবসার প্রসারও বেড়েছে, যাতে ধনীরা আরও ধনী হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীতে সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা যখন এগারো লাখ অতিক্রম করেছে, তখন আশ্চর্যজনকভাবে বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ আরও বেড়েছে। ভারতের মতো দেশে শত কোটিপতির সংখ্যা শুধু বাড়েইনি, তাদের সম্পদও বেড়েছে। কতগুলো পরিসংখ্যান দিলে আমাদের বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বিলিয়নিয়ারদের শীর্ষে রয়েছে জেফ বেজোস, যিনি আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী। ৫৬ বছর বয়সী জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ এখন ১৭৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা অনেক দেশের জাতীয় বাজেটের চেয়ে বেশি। আমাজন এই প্যানডেমিকের সময় সম্পদ বৃদ্ধি করেছে দ্বিগুণ। ২০১৯ সালে এ সময় তাদের আয় ছিল ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে তাদের আয় বেড়েছে দ্বিগুণ, ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার (দ্য ভার্জ, জুলাই ৩০, ২০২০)। শুধু আমাজনের কথা কেন বলি? বিল গেটস (মাইক্রোসফট) তার সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে ৯৮ বিলিয়ন ডলারে। ধনীদের তালিকায় তার অবস্থান দ্বিতীয়। তৃতীয় অবস্থানে আছেন ওয়ারেন বাফেট (বার্কশায়ার হাথাওয়ে), তার সম্পদের পরিমাণ ৬৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ওরাকলের লেরি এলিসন, ফেইসবুকের মার্ক জাকারবার্গ, সবার সম্পদ বেড়েছে। আরেকটি পরিসংখ্যানে আমরা দেখতে পাই, করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বেশি মানুষ মারা গেলেও, সেখানে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা চীনের পরে (চীনে ৭৯৯ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ৬২৬ জন। ভারতে ১৩৭ জন। সূত্র : স্ট্যাটিস্টা। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ধনীরা আরও ধনী হয়েছে, তেমনটি নয়। ফোর্বস যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে প্রথম ১৫ জন বিলিয়নিয়ারের মধ্যে ফ্রান্সের আছে দুজন, স্পেনের একজন, মেক্সিকোর একজন। করোনাকালে ভারতেও ধনী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সেখানেও ধনীরা আরও ধনী হয়েছেন। ভারতে গত ছয় মাসে নতুন ১৫ জন বিলিয়নিয়ারের জন্ম হয়েছে। ভারতে মোট বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা এখন ১৩৭। এই ১৩৭ জনের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি ডলার। তালিকার শীর্ষে রয়েছে মুকেশ আম্বানি (৮৮২০ কোটি ডলার)। পরের অবস্থানগুলো যথাক্রমে শিব নাদার (৮৮২০ কোটি ডলার), গৌতম আদানি (১৮৬০ কোটি ডলার), রাঁধাকৃষ্ণ দামানি (১৫২০ কোটি ডলার)। নতুন শত কোটিপতির তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হচ্ছেন বিমল কুমার জ্ঞানচন্দানি, বিনি বনসল, রাধেশ্যাম গোয়েনকা প্রমুখ (আনন্দবাজার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০)। করোনাকালে ভারতে শত কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকে অর্থনীতিবিদরা সেখানে ধনী ও গরিবদের মধ্যে বৈষম্য আরও বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ হিসেবেই দেখছেন। ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার’ আমাদের যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে কভিড-১৯-এ মৃত্যুর সংখ্যা ২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর ভারত মৃত্যুর হারের দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়, সেখানে মারা গেছেন ৯৬ হাজার ৩৭৮ জন। এই তথ্য ২৯ সেপ্টেম্বরের। এর ব্যাখ্যা আমরা কীভাবে দেব? একদিকে করোনাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা যাচ্ছে না, মৃত্যুর সংখ্যা এখনো বাড়ছে। অন্যদিকে ধনীদের সংখ্যাও বাড়ছে, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন। অথচ ভারতের অর্থনীতি এখন ভালো নয়। ভারতে জিডিপি গত ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। কাজ হারিয়েছেন ৪১ লাখ মানুষ (আইএলওর তথ্য মতে)। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের জিডিপি সংকুচিত হয়েছে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আর্থিক সংকটের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মুকেশ আম্বানির ‘রিল্যায়েন্স’ গ্রুপে গুগল, ফেইসবুকের মতো অনলাইন সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে ও তার মূলধন বেড়েছে। করোনাভাইরাস ভারতে ধনীদের আরও ধনী করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা কী? বাংলাদেশেও করোনাকালে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। গত মার্চ থেকে জুন (২০২০) এই চার মাসে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৩৭ জন। মার্চে এ সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন। করোনার সময় ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে (বিডিটুডে, ১৬ সেপ্টেম্বর)। আবার যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতির দিকে ফিরে যাই। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এই নভেম্বরের আগেই দ্বিতীয় আরেকটি ‘ওয়েভ’ বা ঢেউ যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানছে। স্বাস্থ্যসেবায় অব্যবস্থাপনা সেখানে চরমে। মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার জন্য নোয়াম চমস্কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দায়ী করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার কলেজের প্রফেসর থমাস ম্যাগাস্টড্ট ২৮ সেপ্টেম্বর নিউজ পোর্টাল ‘ন্যাশন অফ চেঞ্জ’-এ যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন, করোনাকালেও যুক্তরাষ্ট্রে ধনীরা আরও ধনী হয়েছেন, গরিব আরও গরিব হয়েছেন, ‘ফ্যামিলিস অফ ইউএসএ’-এর এর তথ্য মতে, মহামারীর সময় ৫৪ লাখ মানুষ তাদের যে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ছিল, তা হারিয়েছে। চাকরি না থাকায় অনেকেই এখন আর ইনসিওরেন্সের প্রিমিয়াম দিতে পারছেন না। কভিড-১৯-এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নিম্ন আয়ের মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হার্ভার্ডের অর্থনীতির অধ্যাপক রাজ চেট্টি কভিড-১৯ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাতে তিনি দেখিয়েছেন যে, নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের বছরে আয় ২৭ হাজার ডলারের নিচে, তাদের মধ্যে ১১ মিলিয়ন, অর্থাৎ ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। কিন্তু যাদের আয় বছরে ৬০ হাজার ডলারের ওপরে, তাদের মধ্যে চাকরি হারানোর সংখ্যা তিন ভাগের এক ভাগ। অধ্যাপক থমাস ম্যাগাস্টড্ট তার প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যে, যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষদের চাকরি চলে গেছে অথবা বেতন কমেছে, সেখানে প্রধান নির্বাহীদের বেতন বেড়েছে ৯৪০ ভাগ। চিন্তা করা যায়? এই করোনাভাইরাসকেও ব্যবসায়ীরা পুঁজি করছে। তাদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করছে। তারা আরও ধনী হয়েছেন। যেখানে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ ২৮ ট্রিলিয়ন ডলার, সেখানে বিশ্বে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়েছে। তাদের সম্পদও বেড়েছে। আইএমএফের আশঙ্কা, বিশ্ব অর্থনীতি এবার সংকুচিত হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ ইতিমধ্যেই ইউরোপে আঘাত হেনেছে। স্পেন, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড কিংবা জার্মানিতে পুনরায় সীমিত ‘লকডাউন’ চালু হয়েছে। বার-রেস্তোরাঁ খোলার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির সংকোচনের হার ৫ দশমিক ২ শতাংশকেও ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশও এতে করে আক্রান্ত হবে। করোনায় বাংলাদেশের জিডিপি কমবে ০ দশমিক ০১ শতাংশ। এডিবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যে ক্ষতি হবে, তার পরিমাণ ৮৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার। কিন্তু প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইতিমধ্যে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করোনায় মানুষের মাসিক আয় কমেছে ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। করোনার সময় প্রায় ৫২ দশমিক ৫৮ শতাংশ পরিবার বা খানা কোনো না কোনোভাবে খাদ্যদ্রব্য ভোগের পরিমাণ ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় কমিয়েছে। বিবিএসের জরিপে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এই যে পরিসংখ্যান, এই পরিসংখ্যানই আমাদের বলে দেয় বিশ্ব এখনো করোনামুক্ত হয়নি এবং করোনাভাইরাসের উপস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ায় বিশ^ অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে থাকলই। একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল নভেম্বরেই করোনার টিকা পাওয়া যাবে। কিন্তু টিকা নিয়ে একটা মিশ্রপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, যাদের চারবার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছিল, তারা অসুস্থ হয়ে পড়ায়, টিকার ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে। উপরন্তু বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে এই টিকা কত দিনে পৌঁছানো সম্ভব হবে, সেটাও একটি প্রশ্ন। এখানেও ধনী দেশ ও গরিব দেশের মধ্যে একটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে। ফলে করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ আমাদের একটি বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিল। Desh Ripantor 20.10.2020

ভারত মহাসাগরকে শান্তির অঞ্চলে পরিণত করার প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন

শ্রীলংকার নয়া সরকার আবারও ভারত মহাসাগরকে শান্তির এলাকায় পরিণত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গত ১২ আগস্ট শ্রীলংকার নয়া সরকার শপথ গ্রহণ করেছে এবং মহিন্দা রাজাপাকসা আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। ১৯৭১ সালে শ্রীলংকার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে ভারত মহাসাগরকে শান্তির এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর পাঁচ দশক পর প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসার নেতৃত্বাধীন সরকার আবার এ আহ্বান জানাল। তিনি এ আহ্বানটি জানালেন এমন এক সময় যখন চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা এখনও রয়েছে। লাদাখে যখন উত্তেজনা হ্রাস পায়নি, তখন ভারত দক্ষিণ চীন সাগরে তার নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠিয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে চীনের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর দ্বন্দ্ব চলছে। এ অঞ্চলের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ রয়েছে। সেখানে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ নিয়মিত টহল দেয়। চীন সম্প্রতি ওই এলাকায় একটি নৌবাহিনীর মহড়া সম্পন্ন করেছে। ভারত মহাসাগর নিয়ে চীন-ভারত উত্তেজনা রয়েছে। চীনা স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করছে ভারত। দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘চীনা স্বার্থকে’ চ্যালেঞ্জ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্ট্র্যাটেজিতে পরিবর্তন আনছে। এখানে ভারত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পার্টনার। একইসঙ্গে গত ৬ অক্টোবর জাপানের টোকিওতে QUAD বা Quadrilateral Security Dialogue-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া QUAD-এর সদস্য। QUAD-এর উদ্যোগে এর আগে একটি নৌ-মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। ভারত-চীন সীমান্ত সমস্যার, বিশেষ করে লাদাখ অঞ্চলের সমস্যার যখন কোনো সমাধান হয়নি, ঠিক তখনই শ্রীলংকার পক্ষ থেকে ভারত মহাসাগরকে শান্তির অঞ্চল হিসেবে ঘোষণার দাবি জানানো হল। সাম্প্রতিক সময়ে লাদাখে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা বারবার আন্তর্জাতিক সংবাদের জন্ম দিচ্ছে। গত ১৫ জুনের পর থেকেই লাদাখ অঞ্চলে উত্তেজনা বজায় রয়েছে। লাদাখ ছিল এক সময় ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের অংশ। কিন্তু গেল বছর লাদাখকে কাশ্মীর থেকে আলাদা করে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। লাদাখে চীনের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ভারতের। গত ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীন ও ভারতের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং তাতে ২০ ভারতীয় সেনা মারা যান। সাম্প্রতিক সময়ে এটা ছিল একটা বড় ধরনের ঘটনা, যেখানে প্রচলিত যুদ্ধ না হয়েও এতজন ভারতীয় সেনাকে প্রাণ দিতে হয়। এরপর থেকেই গালওয়ান উপত্যকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতীয় সেনাপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ওই অঞ্চল সফর করেছেন। দু’পক্ষই সেখানে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে। ভারত ফ্রান্স থেকে অত্যাধুনিক ৬টি রাফায়েল যুদ্ধ বিমান উড়িয়ে এনে তা ওই এলাকার কাছাকাছি হারিয়ানার আমবালা বিমান ঘাঁটিতে মোতায়েন করেছে। এই বিমানগুলোর অর্ডার অনেক আগেই দিয়েছিল ভারত। এ উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ সেপ্টেম্বর মস্কোতে ভারত ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা’ বজায় রাখার স্বার্থে একটি ঐকমত্যে উপনীত হয়েছিলেন। সেই ঐকমত্য ভেঙে গেছে। এক ধরনের শক্তি প্রদর্শনে লিপ্ত হয়েছে দেশ দুটি। গালওয়ান উপত্যকায় যখন উত্তেজনা বাড়ছে, তখনই দক্ষিণ চীন সাগরে ভারত যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল। দক্ষিণ চীন সাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক ধরনের ‘স্নায়বিক যুদ্ধ’ চলছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে সেখানে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর বিষয়টি চীন খুব সহজভাবে নেবে বলে মনে হয় না। শুধু তাই নয়, গালওয়ান উপত্যকায় উত্তেজনার পর ভারত আন্দামান-নিকোবরের কাছে মালাক্কা প্রণালিতেও নৌবহর পাঠিয়েছে। ভারতের উদ্দেশ্য একটাই- দক্ষিণ চীন ও মালাক্কা প্রণালিতে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে চীনকে এক ধরনের ‘চাপে’ রাখা, যাতে চীন গালওয়ান উপত্যকা থেকে সরে যায় এবং সেখানে উত্তেজনা হ্রাস পায়। এখানে আমরা গালওয়ানের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করতে পারি। গালওয়ান নদী আকসাই চীন ও লাদাখকে আলাদা করেছে। লাদাখের পূর্বে রয়েছে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বত, দক্ষিণে রয়েছে ভারতের হিমাচল রাজ্য, পশ্চিমে রয়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গিলগিট-বাল্টিস্তান, আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ। সিয়াচিন হিমবাহ ও চীনের আকসাই চীন এ অঞ্চলের মাঝেই অবস্থিত। এ লাদাখেই অবস্থিত কারগিল, আর কারগিলে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের (১৯৯৯) কথা অনেকেই স্মরণ করতে পারেন। লাদাখের গুরুত্ব এ কারণে যে, তিব্বত চীনের অধিভুক্ত হওয়ার (১৯৫০-৫১) পর সাম্প্রতিককালে সেখানে চীনবিরোধী অসন্তোষ বাড়ছে। ১৯৫৯ সালে তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামা ভারতে আশ্রয় নেন এবং এখনও সেখানে আছেন। ভারতের হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় একটি তিব্বতি নির্বাসিত সরকারের অস্তিত্বের খবরও আমরা জানি, যার প্রধান দালাই লামা স্বয়ং। ২০১৫ সালে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছিল, যেখানে তিব্বতি নেতাদের সঙ্গে চীনের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। আর অতিসম্প্রতি, গত মে মাসে কংগ্রেসম্যান স্কট পেরি মার্কিন কংগ্রেসে একটি বিল (৬৯৪৮) উপস্থাপন করেছেন, যেখানে তিব্বতকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তাই সঙ্গত কারণেই লাদাখের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব বাড়ছে। তিব্বতের পাশাপাশি জিনজিয়াংয়ের অধিবাসী উইঘুর মুসলমানদের নিয়ে চীনের একটি ‘সমস্যা’ রয়েছে। উইঘুরে চীন মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, এ ধরনের অভিযোগ তুলে মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইনও পাস হয়েছে (Uyghur Human Rights Policy Act of 2020, Uyghur Human Rights Policy Act of 2019, S. 3744)। উইঘুরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এবং এর পেছনে বাইরের শক্তির মদদের ব্যাপারে চীন অবগত। ফলে এ অঞ্চলে কোনো শক্তি চীনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে যাতে জড়িত হতে না পারে, চীন সে ব্যাপারে সতর্ক। সিয়াচিন হিমবাহ (১০০০ বর্গমাইল) নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষের খবর (১৯৮৪) আমরা জানি। চীনের কাছেও এ হিমবারের গুরুত্ব আছে। আকসাই চীনের একটি অংশ Shaksgam Valley একসময়ে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা পাকিস্তান চীনকে হস্তান্তর করে। আর ভারতের হিমাচল রাজ্যটি চীনের, এ দাবি থেকে চীন এখনও সরে আসেনি। গালওয়ান উপত্যকায় (১৪৭০০ বর্গমাইল) ভারতীয় কর্মকাণ্ডকে চীন তার নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছে। গালওয়ান উপত্যকার সীমানা চিহ্নিতকরণ সংক্রান্ত ‘লাইন অফ কন্ট্রোলের’ পাশাপাশি ভারত ২৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণ শেষ করেছে। এ সড়কটি লাদাখের রাজধানী লেহকে চীনা সীমান্তের কাছাকাছি দৌলতবেগ আলভি সামরিক বিমান ঘাঁটির সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এটি একটি দুর্গম এলাকা। আগে লেহ থেকে দৌলতবেগ আলভি সামরিক বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছতে দু’দিন লাগত। এখন লাগে মাত্র ৬ ঘণ্টা। ভারতীয় সমরনায়কদের কাছে দৌলতবেগ আলভি বিমান ঘাঁটির গুরুত্ব অনেক বেশি। এখান থেকে চীন নিয়ন্ত্রিত আকসাই চীন, যা ভারত নিজের বলে দাবি করে, তার সীমান্ত মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর সিচিয়ান হিমবাহের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। এ বিমান ঘাঁটিতে ভারত অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। চীন কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে যে কোনো যুদ্ধে এ বিমান ঘাঁটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই পুরো এলাকাটা মোটামুটি তিন ভাগে বিভক্ত। বর্তমানে যেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তা পশ্চিম অংশ হিসেবে বিবেচিত। লাদাখ ও আকসাই চীন এর অন্তর্ভুক্ত। মধ্যম অংশে অন্তর্ভুক্ত হিমাচল, উত্তরখণ্ড রাজ্য এবং তিব্বতের দক্ষিণ অংশের একটা অংশ আর পূর্ব অংশের অন্তর্ভুক্ত দক্ষিণ তিব্বত ও পূর্ব ভারত। পুরো এ তিনটি অংশেই অতীতে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। ১৯৬২ সালে বহুল আলোচিত চীন-ভারত যুদ্ধ হয়েছিল লাদাখ ও আকসাই চীনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। ১৯৬৭ সালে সংঘর্ষ হয়েছিল সিকিমের নাথু লা ও চো লা গিরিপথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। ১৯৭৫ সালেও এখানে দু’পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়েছে। আর ২০১৭ সালে ডোকলামে একটি যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। ডোকলামে যুদ্ধ হয়নি বটে; কিন্তু দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে আস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তা আজও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। ফলে চীন-ভারত সীমান্ত সমস্যার যদি সমাধান না হয়, তাহলে ভারত মহাসাগরে শান্তির এলাকা ঘোষণা করার শ্রীলংকার প্রস্তাব আদৌ কোনো ফল দেবে না। এদিকে ১২ অক্টোবর চীন ও ভারতের সেনা কমান্ডাররা সপ্তমবারের মতো বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। তবে তাতে আদৌ কোনো ফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। কারণ লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) চীনের ভূখণ্ডের দাবিকে ভারত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। সম্প্রতি চীনের সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, লাদাখ কোনোদিনই ভারতের অংশ ছিল না। লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করে ভারত চুক্তির শর্ত ভেঙেছে বলেও দাবি করা হয়। চীনের দাবি, তারা ১৯৫৯ সালের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অনুসরণ করছে। ফলে সপ্তমবারের মতো সেনা কমান্ডারদের বৈঠক আদৌ কোনো ফল দেবে বলে মনে হয় না। এদিকে চীনের সঙ্গে শ্রীলংকার যে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে চীন-শ্রীলংকা বাণিজ্য চুক্তিতে চীন বেশি সুযোগ পেয়েছে। শ্রীলংকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এলাইনা বি টেপলিজ শ্রীলংকার ডেইলি মিররের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এ অভিমত পোষণ করেন। সম্প্রতি ভারতের সেনাপ্রধান ও পররাষ্ট্র সচিব মিয়ানমার সফর করেছেন। এর মধ্য দিয়ে চীনকে রুখতে মিয়ানমারকে কাছে টানছে ভারত- এমন একটি মূল্যায়নপত্র পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে আরও অনেক সংবাদ- ভারত চীনের সঙ্গে সীমান্তকে সামরিকায়ন করছে; ছটঅউ-এ যোগ দিতে শ্রীলংকার ওপর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপ; রাশিয়া থেকে ফাইটার জেট আনছে ভারত; ভারতের বিমানবাহিনী প্রধান ঘোষণা করেছেন, শিগগিরই ভারতের এয়ার ডিফেন্স কমান্ড ঘোষণা দেয়া হবে। গত ৩ অক্টোবর নরেন্দ্র মোদি হিমাচল প্রদেশের রোহতাংয়ে ১০০০০ ফুট উচ্চতায় অতল টানেল বা সুড়ঙ্গপথের উদ্বোধন করেছেন। এ টানেল নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সামরিক। এই টানেল উদ্বোধনের ফলে সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সেনা দ্রুত মোতায়েন করা যাবে। চীনকে টার্গেট করেই এ টানেল নির্মাণ। এর ফলে ভারতের অন্য অংশ থেকে লাদাখের লেহতে যাতায়াতের সময় কমে আসবে। সুতরাং এ এলাকার পরিস্থিতি যখন শান্তিপূর্ণ নয়, তখন ভারত মহাসাগরকে শান্তির অঞ্চলে পরিণত করার শ্রীলংকার আহ্বান কতটুকু কার্যকর হবে, তা একটা মৌলিক প্রশ্ন। jugantor 11.10.2020

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বিতর্ক ও নাটকীয়তা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক ও নাটকীয়তা এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের মানুষ প্রত্যক্ষ করছে। ৩ নভেম্বর সেখানে নির্বাচন। ৫০টি রাজ্যের নির্বাচকমন্ডলীর ভোটে একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। নির্বাচনের বাকি আছে যখন মাত্র কয়েক সপ্তাহ, তখন একের পর এক ‘নাটক’-এর অভিনয় হচ্ছে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে। প্রথমে ট্রাম্প কর্তৃক বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেটকে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি পদে মনোনয়ন। কনজারভেটিভ ও রিপাবলিকান মতাদর্শে বিশ্বাসী ব্যারেটকে ট্রাম্প কর্তৃক মনোনয়ন দেওয়ার উদ্দেশ্য পরিষ্কার নির্বাচন নিয়ে ‘প্রশ্ন’ দেখা দিলে, তা সুপ্রিম কোর্টে যাবে এবং সুপ্রিম কোর্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে ‘রায়’ তার পক্ষে যাবে। দ্বিতীয়ত, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেননি। তিনি দাবি করেছেন তিনিই জিতবেন। তৃতীয়ত, ডাকযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। তিনি অর্থাৎ ট্রাম্প তার শংকার কথা জানিয়েছেন যে ডাকযোগে ভোটে জালিয়াতি হতে পারে। অথচ নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ডাকযোগে দেওয়া ভেটে জালিয়াতির সম্ভাবনা কম। চতুর্থত, তিনি জানিয়েছিলেন রাশিয়ান হ্যাকাররা সক্রিয়। তারা নির্বাচনে ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে। অথচ কোনো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে এ ধরনের আশংকার কথা বলা হয়নি। পঞ্চমত, তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন চীন তার বিরোধিতা করছে, যাতে তিনি পুনর্নির্বাচিত হতে না পারেন। ষষ্ঠত, তার ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি এখন নিউ ইয়র্ক টাইমস ফাঁস করে দিয়েছে। অথচ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, তিনি মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স দেন। এখন এটা প্রমাণিত যে, তিনি জাতিকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। সপ্তমত, নাটকীয়ভাবে গেল শুক্রবার তিনি টুইট করে সারা বিশ^কে জানালেন তিনি ও তর স্ত্রী মেলানিয়া কভিড-১৯-এ আক্রান্ত। তিনি ও তার স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি হলেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলো তাকে এক ঘণ্টা অক্সিজেন দেওয়া হয়েছিল। দুদিন হাসপাতালে থেকে তিনি আবার হোয়াইট হাউজে ফিরে গেলেন। বললেন, ‘তিনি ভালো আছেন। ’ একের পর এক এমন নাটকীয় ঘটনা ঘটছে এমন এক সময় যখন তার জনপ্রিয়তায় ধস নামছে। ট্রাম্পের জন্য আরেকটা খারাপ খবর হচ্ছে তার আমলে উগ্র শে^তাঙ্গ জনগোষ্ঠীর উত্থান ও জাতিগত বিদ্বেষ বেড়ে যাওয়া। তার আমলে কৃষ্ণাঙ্গরা যেভাবে অত্যাচারিত হচ্ছে, তার রেশ ধরে জন্ম হয়েছে ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারস’ আন্দোলনের। ট্রাম্পের উসকানিতেই জন্ম হয়েছে শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী Proud Boys। প্রথম টিভি বিতর্কে ট্রাম্প এদের কর্মকান্ডে সমর্থন করায় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মাঝে একটা অনাস্থার জায়গা তৈরি করলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে। ফলে সাগর-মহাসাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে পুনঃপুনঃ ঘূর্ণিঝড়। অথচ ট্রাম্প এটা বিশ্বাস করেন না। তাই তার পুনর্নির্বাচন শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বরং বিশ্ববাসীর জন্যও হবে একটা খারাপ খবর। কভিড-১৯ নিয়েও তিনি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। তিনি মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করেন না। নিজের মতো করে চলেন। কভিড-১৯-এর ব্যাপারেও তিনি একা সিদ্ধান্ত নেন। টিভি বিতর্কে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, তিনি রোগ নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছেন এবং তিনি না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ লাখ মানুষ মারা যেত! অথচ পরিসংখ্যান বলছে কভিড-১৯-এর কারণে বিশ্বের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে। ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২১৪৬২৬ জন (Worldometer)। পাঠকদের জানিয়ে রাখি ট্রাম্পের শাসনামলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এমনকি সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯-এর টিকা সরবরাহের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ট্রাম্প এই প্রক্রিয়ায় থাকবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। এর আগে বিশ্বের উষ্ণতা রোধকল্পে প্যারিস চুক্তি, ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি, ইউনেসকো, ইরান পারমাণবিক চুক্তি, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকেও যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। এর অর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র একা চলতে চাইছে। ট্রাম্পের জমানায় এই ধারণা আরও শক্তিশালী হবে; যদি তিনি দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে বিজয়ী হন। বলা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। জিততে হলে পেতে হবে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট। ৫০টি স্টেটের মাঝে কোনো কোনো স্টেটে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা বেশি। কোনোটাতে আবার কম। জরিপে জো বাইডেন এগিয়ে থাকলেও সব জরিপের ফলাফলই যে শেষ পর্যন্ত ‘সত্য’ হয়, তা বলা যাবে না। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জনমত জরিপ শেষ পর্যন্ত সত্য হয়নি। ওই সময় জনমত জরিপে হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটস’-এর (মোট ৬টি) ভোটেই ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে বলা ভালো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাস ২৩১ বছরের, ১৭৮৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত (স্বাধীনতা ঘোষণা ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই)। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৮৯-১৭৯৭)। তিনি ছিলেন ফেডারেলিস্ট পার্টির মনোনীত প্রার্থী। জর্জ অ্যাডামসও ছিলেন ফেডারেলিস্ট পার্টির প্রার্থী (১৭৯৭-১৮০১)। কিন্তু তৃতীয় প্রেসিডেন্টের (থমাস জেফারসনের, ১৮০১-১৮০৯) শাসনামল থেকে ১৮২৯ সাল পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান পার্টি একসঙ্গে একক প্রার্থী হিসেবে চার টার্মে ক্ষমতায় ছিল। সপ্তম প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের (১৮২৯-১৮৩৭) সময় থেকেই ডেমোক্র্যাট পার্টি আলাদাভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে। রিপাবলিকান পার্টির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন (১৬তম প্রেসিডেন্ট, ১৮৬১-১৮৬৫)। সেই থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দুটি বড় দল ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির মাঝে সীমাবদ্ধ। প্রথম দিকে অবশ্য তৃতীয় একটি পার্টি উইগ পার্টির অস্তিত্ব ছিল। উইগ পার্টির প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন (৯ম, ১৮৪১)। যদিও নির্বাচিত হওয়ার পরও তিনি ক্ষমতা পরিচালনা করতে পারেননি। ট্রাম্প হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। তিনি রিপাবলিকান দলের সদস্য। প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই কিছু কিছু ‘ইস্যু’ প্রাধান্য পায়, যা ভোটারদের প্রভাবিত করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভোটাররা ভোট দেন। কিন্তু যিনি বিজয়ী হন তিনি ওই স্টেটের প্রতিটি ইলেকটোরাল কলেজের সবকটি পেয়েছেন বলে গণ্য করা হয়। এবারেও ‘ইস্যু’ আছে। বিশেষ করে বর্ণবাদ, শে^তাঙ্গ ‘সুপ্রিমেসি’, ১১.১ ভাগ বেকার সমস্যা, কভিড-১৯ রোধে ব্যর্থতা, উৎপাদন খাতে ধস ও ব্যাপক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি, তথা দক্ষিণ চীন সাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষ ও স্নায়ুযুদ্ধ-২-এর সূচনা সব মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাষ্ট্রপরিচালনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ ক্ষেত্রে ভোটাররা তাকে দ্বিতীয় টার্মের জন্য বেছে নেবেন কি-না, সেটা একটা বড় প্রশ্ন এখন। তবে অনেকগুলো আশংকার কথা ইতিমধ্যেই উঠেছে। ট্রাম্প হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে হোয়াইট হাউজে ফিরে এলেও ওয়াশিংটন পোস্ট গত ৪ অক্টোবর তাদের এক প্রতিবেদনে হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্পের স্বাস্থ্য সম্পর্কে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। আর নিউ ইয়র্ক পোস্ট ৫ অক্টোবর লিখেছে ‘The American People need the truth’ আমেরিকার জনগণ সত্যটি জানতে চায়। এর অর্থ কী? ট্রাম্প সত্যিকার অর্থেই অসুস্থ বা অসুস্থ নন কিন্তু সত্য কথাটি বলা হচ্ছে না! দুটো বড় মিডিয়া হাউজ যখন এ ধরনের কথা লেখে, তখন একটি প্রশ্ন থাকেই। নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তিনি ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকবেন। এটা বাধ্যতামূলক। ট্রাম্প মাত্র দুদিন হাসপাতালে থাকলেন। ১৪ দিন থাকলেন না। তাহলে কি জনমতকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি একটি ‘নাটক’ করলেন? যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি তাকে দিয়ে নাটক সাজাল? এর জবাব আমরা কোনো দিনই পাব না। মানুষ জানতেও পারবে না আসল ঘটনা। তিনি যদি কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তার উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার কথা। কোনো ডাক্তার কোনো কথা বললেন না, তিনি অসুস্থতাও প্রকাশ করলেন না, ওইদিন সকালেও তিনি ব্যস্ত সময় কাটালেন, তারপর হঠাৎ করেই টুইট করে জানালেন তিনি ও তার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত! ফলে সন্দেহ ঘনীভূত হওয়া স্বাভাবিক। আর এই সন্দেহই প্রকাশ করেছেন মাইকেল মুর, যিনি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। লন্ডনের Independent আমাদের জানাচ্ছে ‘Michael Moore bloats conspiracy theory that Trump may be faking Covid diagnosis’। মুর তার ফেইসবুক পেজে উল্লেখ করেন ট্রাম্প করোনাভাইরাস নিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন! তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন, ওটা মুরের অভিমত। Independent পত্রিকায় Graig Graziosi তার প্রতিবেদনে মুরের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেখানে মুর বলছেন ‘ট্রাম্প মিথ্যাবাদী। তিনি সব সময় মিথ্যা কথা বলেন। তিনি পরীক্ষিত একজন মিথ্যাবাদী। গত ৪ বছরে ২৫ হাজার বার মিথ্যা কথা বলেছেন। ’ মুর সত্য বলেছেন, কী মিথ্যা বলেছেন, এটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করে ট্রাম্পের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া, আবার দুই দিনের মাথায় ভালো হয়ে যাওয়া, সংবাদপত্রে তার অসুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সব মিলিয়ে একটা সন্দেহ তো থাকবেই। তাই আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি ‘নাটক’ আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি। এ ধরনের পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ আগে কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হেরে গেছেন নির্বাচনে এ ধরনের দৃষ্টান্ত আছে অনেক। কিন্তু ট্রাম্প বলে কথা! তিনি যে ক্ষমতা ছাড়তে চান না, আকার-ইঙ্গিতে ও বক্তব্যে তিনি একাধিকবার তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। যে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ^কে ‘গণতন্ত্র’ শেখাতে চায়, তার নিজের দেশেই গণতন্ত্র আজ বিপন্ন! ফলে নির্বাচন ও নির্বাচনের আগে যদি আরও কিছু নাটকীয় ঘটনা ঘটে, আমি তাতে অবাক হব না। Desh Rupsntor 8.10.2020

ট্রাম্পের অসুস্থতা, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও কিছু কথা

তিনি বিজ্ঞানকে অস্বীকার করেছিলেন। বলেছিলেন, করোনা ভাইরাস বলে কিছু নেই। এটা চীনা ভাইরাস। সর্বশেষ জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ পরিষদের ভার্চুয়াল বৈঠকেও তিনি চীনের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখলেন। তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ যখন সারাবিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, যখন খোদ যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ২ লাখ অতিক্রম করেছে, তখন অত্যন্ত অবজ্ঞাভরে তিনি এই ভাইরাসকে ‘চীনা ভাইরাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এটা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোনো সিরিয়াস পদক্ষেপই গ্রহণ করেননি। তাকে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল সব সময় মুখে মাস্ক পরিধান করে থাকার জন্য। তিনি মুখে মাস্ক পরতেন না। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজেজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর প্রটোকল অনুযায়ী মুখে মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক। তাকে জনসমাবেশ এড়িয়ে চলতে বলা হলেও তা তিনি মানতেন না। তার একজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা প্রথমে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন, যার সঙ্গে গত এক সপ্তাহ তিনি প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি গুরুত্ব দেননি যে, তার ওই উপদেষ্টার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসটি ছড়াতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত তাই হলো। তিনি ও তার চেয়ে বয়সে ২৪ বছরের ছোট তৃতীয় স্ত্রী ম্যালেনিয়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। advertisement ট্রাম্প একজন বয়স্ক মানুষ। বয়স তার ৭৪। শরীরের ওজন বেশি, ২৪৪ পাউন্ড, ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা এবং মোটা। সাধারণত এ বয়সের মানুষরাই করোনা ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হন। তার কোলেস্টেরল (এলডিএল ১৬৭) বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া যখন তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ। ৩ নভেম্বর সেখানে নির্বাচন। শুক্রবার ডাক্তারদের পরামর্শে ভর্তি হয়েছেন মেরিল্যান্ডের ওয়ালটার রিড মেডিক্যাল সেন্টারে। তিনদিন তার হাসপাতালে থাকার কথা কিন্তু মাত্র দুই দিন থেকে তিনি ফিরে গেছেন হোয়াট হাউজে। নিয়ম অনুযায়ী ১৪ দিন কোয়ারেনটিনে থাকার কথা এখন তিনি থাকবেন কিনা সেটাই একটা বড় প্রশ্ন। প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে। ওই বিতর্ক দেশজুড়ে বড় বিতর্কের জন্ম দেয়। ট্রাম্প সমালোচিত হন তার আচরণ ও অশোভন বক্তব্যের জন্য। দ্রুতই তার গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পায়। তার প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন এখন অনেক পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ১৫ অক্টোবর মিয়ামিতে, আর তৃতীয় বিতর্ক ২২ অক্টোবর নাসভিলে। ট্রাম্পের অসুস্থতার কারণে তিনি দ্বিতীয় বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন বলে মনে হয় না। বিজ্ঞানকে অস্বীকার করা, আর ‘সব বিষয়কে হালকাভাবে দেখার’ যে মানসিকতা ট্রাম্প পোষণ করেন, তার পরিণতি আজ তিনি নিজে ভোগ করছেন। যদিও হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে, তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন। তবে তিনি কতটুকু সুস্থ হবেন কিংবা তিনি কতটুকু কর্মক্ষম থাকবেন, এ প্রশ্নটা উঠেছে। তার অসুস্থতা কয়েকটি বিষয়কে জোরালো করল। এক. কোভিড-১৯ যে একটি সিরিয়াস স্বাস্থ্য ইস্যু, তা অস্বীকার করা যাবে না। দুই. ট্রাম্পের অসুস্থতা তার জন্য ‘প্লাস’ পয়েন্ট হতে পারে আবার ‘মাইনাস’ পয়েন্টও হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের প্রেসিডেন্টের জন্য যে সুস্থতা দরকার, তা তার না থাকায় ভোটাররা তাকে ভোট নাও দিতে পারে। তিন. ট্রাম্প এখন আর কোনো প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। এতে করে বাইডেনও বাধ্য হবেন নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ করতে। চার. ট্রাম্প ‘ফান্ড রাইজিং’-এর জন্য এখন আর কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবেন না। পাঁচ. ট্রাম্পের অসুস্থতা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। ছয়. তিনি যদি অকর্মণ্য হয়ে পড়েন তা হলে একটা বড় সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের আগেই কতগুলো ‘ইস্যু’ সামনে চলে এসেছিল, যা বিতর্কের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী পরিমাণ ট্যাক্স দেন। যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ধনীদের একজন ট্রাম্প। প্রথম কাতারে না থাকলেও ২০১৯ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছিল তাতে দেখা যায়, ট্রাম্পের সম্পদের পরিমাণ ৩.১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের ৫ মার্চ পর্যন্ত এই হিসাব। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত তার সম্পদ আরও বেড়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের কাতারে তার অবস্থান ২৫৯তম, আর বিশ্বে ৭১৫তম। তবে ২০১৫ সালে ট্রাম্প এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বীকার করেছিলেন, তার সম্পদের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার (এনবিসি, ১৬ জুলাই ২০১৫)। যে পরিমাণ অর্থই তার থাকুক না কেন, তা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর (২০১৬) তিনি স্বীকার করেননি কখনো। তার ট্যাক্স ফাইলে তা উল্লেখও করেননি। তবে তার ট্যাক্স ফাইলের গোপন তথ্যটি ফাঁস করে দেয় নিউইয়র্ক টাইমস গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের দুই দিন আগে। তাতে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা সবাইকে অবাক করেছে। তিনি একজন বিলিওনিয়ার, কিন্তু ট্যাস্ক দিয়েছেন মাত্র ৭৫০ ডলার (২০১৭ সালের হিসাব)! অন্যদিকে আরেকটি তথ্যও আমরা পেয়েছি। তাতে দেখা যায়, অন্যতম প্রার্থী জো বাইডেন ট্যাস্ক দিয়েছেন ৩৭৪২৯৭৪ ডলার, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও জো বাইডেনের রানিংমেট কমলা হারিস দিয়েছেন ৫১৬৪৬৯ ডলার, সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ৩৪৩৮৮২ ডলার, সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন দিয়েছেন ২৬৮৪৮৪ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে সবাইকে ট্যাক্স দিতে হয়, যারা চাকরি করেন। আয় থেকেই তারা ট্যাক্স দেন। তা হলে ট্রাম্পের ব্যাপারে এত ফাঁকিঝুঁকি কেন? সাধারণত ধনী ব্যবসায়ীরা এ কাজটি করেন- তারা ট্যাক্স ফাঁকি দেন। ট্রাম্পও দিয়েছেন। তবে অত্যন্ত কৌশলে এই কাজটি তিনি করেছেন। অতীতে একাধিকবার এই প্রশ্নটি উত্থাপিত হলেও ট্রাম্প কখনই তা খোলাসা করেননি। এবারও যখন নিউইয়র্ক টাইমস তথ্যটি ফাঁস করে দিল, হোয়াইট হাউস কিংবা ট্রাম্পের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে তা খ-ন করা হয়নি। পাঠকদের জানার জন্য আরও কিছু তথ্য দিই। গড়পড়তা একজন শিক্ষক (স্কুল) সেখানে ট্যাক্স দেন ৭২৩৯ ডলার (বছরে), একজন দমকলকর্মী দেন ৫২৮৩ ডলার, একজন নার্স দেন ১০২১৬ ডলার, একজন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার দেন ১৬৪৪৭ ডলার (প্রোগেস রিপোর্ট, ৩০ সেপ্টেম্বর)। আর ট্রাম্প দেন মাত্র ৭৫০ ডলার! তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে বছরে যে বেতন পান (৪ লাখ ডলার), তা তিনি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দান করে দেন। একজন প্রেসিডেন্ট যখন অবসরে যান, আজীবন তিনি পেনশন পান, যার পরিমাণ ২১৯২০০ ডলারের মতো বছরে। advertisement একজন ধনী ব্যক্তি হয়েও ট্রাম্প ট্যাক্স দেন না, এটা বহুল আলোচিত এবং প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কেও তাকে এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল। তখন জবাবে বলেছিলেন, তিনি ‘মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স’ দেন! তা হলে কি তিনি মিথ্যা বললেন? তার স্টাফরা অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করতে পারেননি। তার অর্থ হচ্ছে, তিনি যা বলেছেন, তা মিথ্যা। তার বক্তব্যের সঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত তথ্যের কোনো মিল নেই। প্রশ্ন হচ্ছে এখানেই। একজন প্রেসিডেন্ট কি তা হলে মিথ্যা বললেন? তার সুস্থতা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তার ‘কর্মদক্ষতা’ এখন প্রশ্নের মুখে। যদিও হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন। পরিস্থিতি কি ১৯১৯ সালের মতো হতে যাচ্ছে? ১৯১৮-১৯১৯ সালের মহামারীতে (ইনফ্লুয়েঞ্জা) তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন আক্রান্ত হন। তিনি প্যারালাইজড ও অন্ধ হয়ে যান। কিন্তু বিষয়টি গোপন রাখা হয় (নিউইয়র্ক টাইমস ২, অক্টোবর ২০২০)। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে প্রেসিডেন্ট অসুস্থ, অকর্মণ্য হলে তাকে অপসারণ করার বিধান আছে। অনেক ক্ষেত্রে এটা ‘জোর’ করে, অথবা তিনি যদি উত্তরাধিকারীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না চান, সে ক্ষেত্রেও তাকে অপসারণ করা যায়। ট্রাম্পের পরিস্থিতি কি সেদিকেই যাচ্ছে? এজন্য আগামী কয়েকটি দিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Amader Somoy 6.10.2020

কভিড-১৯ ধনীদের আরও ধনী করেছে

কভিড-১৯ মহামারিতে সারাবিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা যখন ১০ লাখ অতিক্রম করেছে, তখন আশ্চর্যজনকভাবে বিলিওনেয়ারদের সম্পদ আরও বেড়েছে। ভারতের মতো দেশে শতকোটিপতির সংখ্যা শুধু বাড়েইনি, তাদের সম্পদও বেড়েছে। কতকগুলো পরিসংখ্যান দিলে আমাদের বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বিলিওনেয়ারদের শীর্ষে রয়েছেন জেফ বেজোস, যিনি আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী। ৫৬ বছর বয়সী জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ এখন ১৭৫.৩ বিলিয়ন ডলার, যা অনেক দেশের জাতীয় বাজেটের চেয়ে বেশি। আমাজন এই মহামারির সময় সম্পদ বৃদ্ধি করেছে দ্বিগুণ। ২০১৯ সালে এই সময় তাদের আয় ছিল ২.৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে তাদের আয় বেড়েছে দ্বিগুণ ৫.২ বিলিয়ন ডলার (দ্য ভার্জ, ৩০ জুলাই ২০২০)। শুধু আমাজনের কথা কেন বলি? বিল গেটসের (মাইক্রোসফট) সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ বিলিয়ন ডলারে। তার অবস্থান দ্বিতীয়। তৃতীয় অবস্থানে আছেন ওয়ারেন বাফেট (বার্কশায়ার হাথাওয়ে), তার সম্পদের পরিমাণ ৬৭.৫ বিলিয়ন ডলার। এভাবে ওরাকলের লেরি এলিসন, ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ- সবার সম্পদ বেড়েছে। আরেকটি পরিসংখ্যানে আমরা দেখতে পাই, করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বেশি মানুষ মারা গেলেও, সেখানে বিলিওনেয়ারের সংখ্যা চীনের পরে (চীনে ৭৯৯ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ৬২৬ জন, ভারতে ১৩৭ জন। সূত্র :স্ট্যাটিস্টা)। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ধনীরা আরও ধনী হয়েছে, তেমনটি নয়। ফোর্বস যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে প্রথম ১৫ জন বিলিওনেয়ারের মাঝে ফ্রান্সের আছে দু'জন, স্পেনের একজন, মেক্সিকোর একজন। করোনাকালে ভারতেও ধনী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সেখানেও ধনীরা আরও ধনী হয়েছেন। ভারতে গত ছয় মাসে নতুন ১৫ জন বিলিওনেয়ারের জন্ম হয়েছে। ভারতে মোট বিলিওনেয়ারের সংখ্যা এখন ১৩৭। এই ১৩৭ জনের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি ডলার। তালিকার শীর্ষে রয়েছেন মুকেশ আম্বানি (৮৮২০ কোটি ডলার)। পরের অবস্থান যথাক্রমে শিব নাদার (৮৮২০ কোটি ডলার), গৌতম আদানি (১৮৬০ কোটি ডলার), রাধাকৃষ্ণ দামানি (১৫২০ কোটি ডলার)। নতুন শতকোটিপতিদের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তারা হচ্ছেন বিমল কুমার জগদচাদানি, বিনি বনসল, রাধোশ্যাম গোয়েনকা প্রমুখ (আনন্দবাজার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০)। করোনাকালে ভারতে শতকোটিপতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকে অর্থনীতিবিদরা সেখানে ধনী ও গরিবদের মধ্যে পার্থক্য আরও বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ হিসেবেই দেখছেন। এর ব্যাখ্যা আমরা কীভাবে দেব? একদিকে করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না, মৃত্যুর সংখ্যা এখনও বাড়ছে। অন্যদিকে ধনীর সংখ্যা বাড়ছে, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন। অথচ ভারতের অর্থনীতি ভালো নয়। ভারতে জিডিপি গত ৪০ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। কাজ হারিয়েছেন ৪১ লাখ মানুষ (আইএলও তথ্যমতে)। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের জিডিপি সংকুচিত হয়েছে ২৩.৯ শতাংশ। আর্থিক সংকটের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মুকেশ আম্বানির 'রিলায়েন্স' গ্রুপ গুগল ও ফেসবুকের মতো অনলাইন সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে ও তার মূলধন বেড়েছে। করোনাভাইরাস ভারতে ধনীদের আরও ধনী করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা কী? বাংলাদেশেও করোনাকালে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। গত মার্চ থেকে জুন (২০২০) এই চার মাসে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৩৭ জন। মার্চে এ সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন। করোনার সময় ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে (বিডিটুডে, ১৬ সেপ্টেম্বর)। আবার যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতির দিকে ফিরে যাই। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এই নভেম্বরের আগেই দ্বিতীয় আরেকটি 'ওয়েভ' বা ঢেউ যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে পারে। স্বাস্থ্যসেবায় অব্যবস্থাপনা সেখানে চরমে। মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার জন্য নোয়াম চমস্কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দায়ী করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার কলেজের প্রফেসর থমাস মাগাস্টাডট ২৮ সেপ্টেম্বর নিউজ পোর্টাল 'নেশন অব চেঞ্জ'-এ যুক্তরাষ্ট্রকে একটি 'ফেইলড স্টেট' বা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি দেখিয়েছেন, করোনাকালেও যুক্তরাষ্ট্রে ধনীরা আরও ধনী হয়েছেন, গরিব আরও গরিব হয়েছেন। 'ফ্যামিলিজ অব ইউএসএ'-এর তথ্যমতে, মহামারির সময় ৫৪ লাখ মানুষ তাদের যে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ছিল, তা হারিয়েছে। চাকরি না থাকায় অনেকেই এখন আর ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম দিতে পারছেন না। কভিড-১৯ এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নিম্ন আয়ের মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হার্ভার্ডের অর্থনীতির অধ্যাপক রাজ চেট্টি কভিড-১৯-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাতে তিনি দেখিয়েছেন, নিম্ন আয়ের মানুষ যাদের বছরে আয় ২৭ হাজার ডলারের নিচে, তাদের মাঝে ১১ মিলিয়ন, অর্থাৎ এক কোটি ১০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। কিন্তু যাদের আয় বছরে ৬০ হাজার ডলারের ওপরে, তাদের মাঝে চাকরি হারানোর সংখ্যা ৩ ভাগের ১ ভাগ। অধ্যাপক থমাস মাগাস্টাডট তার প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষদের চাকরি চলে গেছে, অথবা বেতন কমেছে, সেখানে প্রধান নির্বাহীদের বেতন বেড়েছে ৯৪০ ভাগ। চিন্তা করা যায়? এই করোনাভাইরাসকেও ব্যবসায়ীরা পুঁজি করেছে, তাদের ব্যবসা সম্প্রসারিত করেছে, তারা আরও ধনী হয়েছে। লকডাউনের কারণে অনলাইন ব্যবসা বেড়েছে। তেমনি বেড়েছে স্বাস্থ্যরক্ষা সংক্রান্ত ব্যবসা। বিশেষ করে মাস্ক কিংবা স্বাস্থ্য সুরক্ষা পোশাকের (পিপিই) চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ। এটা নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা বেড়েছে। মহামারিটি যখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং যখন সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য সামগ্রীর চাহিদা বেড়ে যায়, তখন প্রশ্ন উঠেছিল কে অগ্রাধিকার পাবে? মানুষ না অর্থ? বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেল মানুষ প্রাধান্য পায়নি। প্রাধান্য পেয়েছে অর্থ, অর্থাৎ ব্যবসা। ধনী মানুষের সংখ্যা তাই বেড়েছে। এই করোনাভাইরাস এক অর্থে আবার মানুষের মাঝে বৈষম্যও সৃষ্টি করেছে। কভিড-১৯ এর টিকার কথা আমরা সবাই জানি। এটা এখন প্রমাণিত যে, টিকা ছাড়া কভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধ করা যাবে না। এই টিকা আবার একধরনের 'ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের' জন্ম দিয়েছে। জন্ম দিয়েছে 'মাই নেশন ফার্স্ট' ধারণার। এর অর্থ কী? আগামী বছরের প্রথম দিকে যখন টিকা বাজারে আসবে, তখন প্রথম পাবে ধনী দেশগুলো। শত শত কোটি ডোজ টিকা দরকার। ধনী দেশগুলো আগেই টিকার অর্ডার দিয়ে বসে আছে। সুতরাং নিম্ন বা মধ্যম আয়ের দেশগুলো কবে নাগাদ টিকা পাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আফ্রিকার গরিব দেশগুলো রয়েছে বড় ঝুঁকিতে। কভিড-১৯ মানুষের সঙ্গে মানুষের বৈষম্য বাড়িয়েছে। ধনীরা আরও ধনী হয়েছে। গরিবরা হয়েছে আরও গরিব। কভিড-১৯-পরবর্তী 'নিউ নরমাল' যুগে এই বৈষম্য আরও স্পষ্ট হবে। Samokal 5.10.2020

করোনায় আক্রান্ত ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর যখন বাকি আছে মাত্র ২৯ দিন এবং দ্বিতীয় প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক যখন আগামী ১৫ অক্টোবর ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তখন ট্রাম্পের করোনায় আক্রান্তের খবর নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নানা জল্পনাকল্পনা শুরু হয়ে গেছে। একদিকে তার জনপ্রিয়তায় ধস, অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে বড় প্রভাব ফেলবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ৫৯তম প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচন। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই নানা বিতর্ক এ নির্বাচনকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ক্লিভল্যান্ডে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এক ধরনের বিশৃঙ্খলা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাম্ভিকতা, জো বাইডেন ও উপস্থাপক ক্রিস ওয়ালেসকে বারবার বাধা দান (মোট ১২৯ বার), মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন- সব মিলিয়ে ট্রাম্প যে ‘পরিস্থিতি’ সৃষ্টি করেছিলেন, তা শুধু দৃষ্টিকটুই ছিল না, একজন প্রেসিডেন্টের জন্য তা বেমানানও বটে। প্রথম বিতর্কের পর জনমত জরিপে তিনি পিছিয়ে আছেন। ফলে যে প্রশ্নটি অনেক আগেই উঠেছিল, সে প্রশ্নটি আবারও উঠল- নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন কিনা? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে এখন এটা একটা বড় প্রশ্ন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন? এর জবাবে তিনি বলেছিলেন, মহামারীর কারণে ডাকযোগে বর্ধিত ভোট না হলে তিনি বিশ্বাস করেন ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো দরকারই হতো না। তিনি মনে করেন, ডাকযোগের ভোটে জালিয়াতি হলেই কেবল তিনি হারতে পারেন! নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে হারলে দেখতে হবে কী হয়েছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পর ফলাফল নিষ্পত্তি হবে সুপ্রিমকোর্টে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি রুথ বাদের গিনসবার্গ ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। ট্রাম্প তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেটের নাম প্রস্তাব করেছেন। তখন থেকেই ট্রাম্পের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ডেমোক্রেটরা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান বিচারপতি ব্যারেটের নিয়োগের ব্যাপারে সিনেট ৩ নভেম্বরের আগেই অনুমোদন দিক। ডেমোক্রেটরা এর বিরোধিতা করছেন। কারণ বিচারপতি ব্যারেট কনজারভেটিভ ও রিপাবলিকান মতাদর্শী। ট্রাম্পের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে সিনেটে (১০০ সদস্য) রিপাবলিকানদের সংখ্যা ৫৩, আর ডেমোক্রেটদের ৪৫। ২ জন নিরপেক্ষ। সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় ট্রাম্পের যে কোনো মনোনয়ন খুব সহজেই অনুমোদিত হবে। এর অর্থ হচ্ছে, বিচারপতি ব্যারেট সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিশ্চিত হলে সেখানে রিপাবলিকান মতাদর্শীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। মোট ৯ জন বিচারপতি রয়েছেন সুপ্রিমকোর্টে। এর মাঝে একজন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি গিনসবার্গ মারা যাওয়ায় একটি পদ খালি। ধারণা করছি, নির্বাচন নিয়ে যদি কোনো ‘জটিলতা’ তৈরি হয়, তাহলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুপ্রিমকোর্টে বিষয়টি নিয়ে যাবেন। ডাকযোগে ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আর ট্রাম্প এটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা ও গণমাধ্যম বলছে, নির্বাচনে কারচুপির কোনো সম্ভাবনা নেই। ডাকযোগে ভোট দেয়া একটা নরমাল প্র্যাকটিস। কিন্তু এখন ট্রাম্প প্রশ্ন তুলছেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, ডাকযোগে প্রাপ্ত ভোটের ফলাফল নিয়ে তিনি বিষয়টি সুপ্রিমকোর্টে নিয়ে যেতে পারেন। বিচারপতি ব্যারেটের মনোনয়ন এ কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসায় এটা খোদ যুক্তরাষ্ট্রে একটা বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। একজন ধনী ব্যক্তি হয়েও ট্রাম্প বছরে কর দেন মাত্র ৭৫০ ডলার। ধনী ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রে কর ফাঁকি দেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি কর ফাঁকি দেবেন, এটা অচিন্তনীয়। এ কাজটি তিনি করেছেন। অতীতে একাধিকবার এ প্রশ্নটি উত্থাপিত হলেও ট্রাম্প কখনই তা খোলাসা করেননি। এবারও যখন নিউইয়র্ক টাইমস তথ্যটি ফাঁস করে দিল, হোয়াইট হাউস কিংবা ট্রাম্পের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে তা খণ্ডন করা হয়নি। পাঠকদের জানার জন্য আরও কিছু তথ্য দেই। গড়পড়তা একজন শিক্ষক (স্কুল) সেখানে ট্যাক্স দেন ৭২৩৯ ডলার (বছরে), একজন দমকল কর্মী দেন ৫২৮৩ ডলার, একজন নার্স দেন ১০২১৬ ডলার, একজন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার দেন ১৬৪৪৭ ডলার (প্রোগেস রিপোর্ট, ৩০ সেপ্টেম্বর)। আর ট্রাম্প দেন মাত্র ৭৫০ ডলার! তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে বছরে যে বেতন পান (৪ লাখ ডলার), তা তিনি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দান করে দেন। একজন প্রেসিডেন্ট যখন অবসরে যান, আজীবন তিনি পেনশন পান, যার পরিমাণ বছরে ২১৯২০০ ডলারের মতো। k একজন ধনী ব্যক্তি হয়েও ট্রাম্প ট্যাক্স দেন না, এটা বহুল আলোচিত এবং প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কেও তাকে এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল। তখন তিনি জবাবে বলেছিলেন, তিনি ‘মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স’ দেন! তাহলে কি তিনি মিথ্যা বললেন? তার স্টাফরা অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করতে পারেননি। এর অর্থ হচ্ছে, তিনি যা বলেছেন তা মিথ্যা। তার বক্তব্যের সঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত তথ্যের কোনো মিল নেই। প্রশ্ন হচ্ছে এখানেই। একজন প্রেসিডেন্ট কি তাহলে মিথ্যা বললেন? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভিন্ন ইস্যুতে ইতোমধ্যে বিতর্কিত হয়েছেন। তার রেটিং ভালো যাচ্ছে না। বিবিসি ৩০ সেপ্টেম্বর আমাদের জানাচ্ছে, জনমত ৫১ ভাগ জো বাইডেনের পক্ষে, ৪৩ ভাগ ট্রাম্পের পক্ষে। অর্থাৎ ট্রাম্প অনেক পয়েন্টে পিছিয়ে আছেন। Real Clear Politics-এর মতে ১৪টি রাজ্য এ মুহূর্তে ‘ব্যাটেল গ্রাউন্ড স্টেটস’। এ রাজ্যগুলোর নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট নির্বাচনে একটা প্রভাব ফেলতে পারে। এ ব্যাটেল গ্রাউন্ড স্টেটসের মাঝে শুধু জর্জিয়ায় (৪৭ ভাগ ও ৪৫ ভাগ) ও টেক্সাসে (৪৮.৪, ৪৫.২) ট্রাম্প এগিয়ে আছেন। এর বাইরে আরিজোনা, ফ্লোরিডা, মিসিগান, মিনিসোটা, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলিনা, অহিও, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া ও উইসকনসিনে এগিয়ে আছেন জো বাইডেন। অথচ এসব স্টেটের মধ্যে ২০১৬ সালে আরিজোনা, ফ্লোরিডা, আইওয়া, মিসিগান, নর্থ ক্যারোলিনা, অহিও, পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিনে ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছিলেন। এ পরিসংখ্যানই বলে দেয় ট্রাম্প তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। ট্রাম্পের জন্য আরেকটা খারাপ খবর হচ্ছে, তার আমলে উগ্র শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর উত্থান এবং জাতিগত বিদ্বেষ বেড়ে যাওয়া। তার আমলে কৃষ্ণাঙ্গরা যেভাবে অত্যাচারিত হচ্ছে, তার রেশ ধরে জন্ম হয়েছে ‘ব্লাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের। ট্রাম্পের উসকানিতেই জন্ম হয়েছে শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী Proud Boys। টিভি বিতর্কে ট্রাম্প এদের কর্মকাণ্ড সমর্থন করে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মাঝে একটা অনাস্থার জায়গা তৈরি করলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মরু অঞ্চলের বরফ গলছে। ফলে সাগর-মহাসাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে পুনঃ পুনঃ ঘূর্ণিঝড়। অথচ ট্রাম্প এটা বিশ্বাস করেন না। তাই তার পুনঃনির্বাচন শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বরং বিশ্ববাসীর জন্যও হবে একটা খারাপ খবর। কোভিড-১৯ নিয়েও তিনি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। তিনি মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করেন না। নিজের মতো করে চলেন। কোভিড-১৯-এর ব্যাপারেও তিনি একা সিদ্ধান্ত নেন। টিভি বিতর্কে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, তিনি রোগ নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছেন এবং তিনি না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ লাখ মানুষ মারা যেত। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, কোভিড-১৯-এর কারণে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ২,১৩,৫২৪ জন (Worldometer)। পাঠকদের জানিয়ে রাখি, ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এমনকি সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯-এর টিকা সরবরাহের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সে প্রক্রিয়ায় থাকবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে। এর আগে বিশ্বের উষ্ণতা রোধকল্পে প্যারিস চুক্তি, ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তি, ইউনেস্কো, ইরান পারমাণবিক চুক্তি, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকেও যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। এর অর্থ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র একা চলতে চাইছে। ট্রাম্পের জমানায় এ ধারণা আরও শক্তিশালী হবে, যদি তিনি দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনে বিজয়ী হন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে অনেক বিতর্কই তিনি সৃষ্টি করেছেন। মিডিয়াগুলো তার সমালোচনা করছে। টিভি বিতর্কে প্রতিপক্ষের নীতির যুক্তিযুক্ত সমালোচনা করাই নিয়ম। কিন্তু ৭৩ মিলিয়ন মানুষ (সিএনএন) দেখল একজন প্রেসিডেন্ট কীভাবে ঝগড়া করেন, কীভাবে মিথ্যা কথা বলেন। ওয়াল স্টিট জার্নালের মন্তব্য ছিল এ রকম : ‘This Was the Debate From Hell’. ইকোনমিস্টের মন্তব্য : ‘The president turns a globally respected American institution into a national embarrassment.’- প্রেসিডেন্ট একটি গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছেন। The Slate লিখেছে, ‘Donald Trump is America's Abusive Father’- ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার অবমাননাকর পিতা। নিউইয়র্ক টাইমসের হেডিং ছিল : ‘A Debate Mess’। নিউজপোর্টাল truthout-এ David Renton লিখেছেন ‘Trump Isn't Keeping His Fascist Plan Secret. He's Trying to Derail the Election.’ নিউইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট David Leonhardt-এর একটি মন্তব্য এ রকম : ‘Trump now seems to be running against democracy itself’- ট্রাম্প এখন গণতন্ত্রের বিপক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। আর ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট George Will-এর মন্তব্য : ‘For the sake of the country, cancel the remaining debates’- বাকি দুটো বিতর্ক বাতিল করুন, এটা রাষ্ট্রের জন্য ভালো। এ ধরনের শত শত মন্তব্যে ভরে গেছে মিডিয়া। তাই প্রশ্নটা এলোই- যে দেশ সারা বিশ্বে গণতন্ত্র ‘প্রমোট’ করতে চায়, সেই দেশ কি তার নিজ দেশের গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে পারবে? আমেরিকার দীর্ঘ ইতিহাসে এ ধরনের প্রেসিডেন্ট আগে কখনই আসেননি। যেখানে গণতন্ত্র পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে শেখায়, পরমত সহিষ্ণুতা শেখায়, আইনের শাসনের কথা বলে, সেখানে কোন্ গণতন্ত্র প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ? প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে তাই নানা প্রশ্ন। নানা জিজ্ঞাসা। নানা আতঙ্ক। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর কী হবে, এটা নিয়েও সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি বাড়ছে jugantor 4.10.2020

কেমন হলো প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক?

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ক্লিভল্যান্ডে প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ফক্স টেলিভিশনের লাইভ সম্প্রচারে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যা দেখল, তাতে করে তারা হতবাক হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে মানুষের যে আস্থা, সে আস্থা আর থাকল না। সারা বিশ্বের মানুষ দেখল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিভাবে নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের বক্তব্যের সময় বাধা দিচ্ছেন। মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। সারা বিশ্বের মানুষ আবারও দেখল, কিভাবে একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে অসংযত আচরণ করেন। অহেতুক বিতর্ক করেন। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। একজন প্রেসিডেন্টের জানার কথা, প্রকাশ্যে ডিবেটে কিভাবে কথা বলতে হয়, কিভাবে বিতর্ক করতে হয়, কিভাবে প্রতিপক্ষের প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। সাধারণত তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিবিদরা এ ধরনের বিতর্ক করেন। প্রতিপক্ষকে সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি সভ্য সমাজে এটা কি চিন্তা করা যায়? গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এই প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক শেষ হয়েছে। আমি অন্তত তিনটি প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক নিজে যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষ করেছি। দুটি বিতর্কের খবর যুক্তরাষ্ট্র থেকে কালের কণ্ঠের পাঠকদের পাঠিয়েছি। মূল্যায়ন করেছি। কিন্তু এবারের মতো অতীতে আমি কখনো দেখিনি। ফলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের। আগামী ১৫ অক্টোবর মিয়ামিতে ও ২২ অক্টোবর নাসভিলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৩ নভেম্বর সেখানে প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কের আগেই কতগুলো ‘ইস্যু’ সামনে চলে আসছে, যা বিতর্কের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী পরিমাণ ট্যাক্স দেন। যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ধনীদের একজন ট্রাম্প। প্রথম কাতারে না থাকলেও, ২০১৯ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতে দেখা যায় ট্রাম্পের সম্পদের পরিমাণ ৩.১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের ৫ মার্চ পর্যন্ত এই হিসাব। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত তাঁর সম্পদ আরো বেড়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের কাতারে তাঁর অবস্থান ২৫৯তম, আর বিশ্বে ৭১৫তম। তবে ২০১৫ সালে ট্রাম্প এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বীকার করেছিলেন, তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার (এনবিসি, ১৬ জুলাই ২০১৫)। যে পরিমাণ অর্থই তাঁর থাকুক না কেন, তা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর (২০১৬) তিনি স্বীকার করেননি কখনো। তাঁর ট্যাক্স ফাইলে তা উল্লেখও করেননি। তবে তাঁর ট্যাক্স ফাইলের গোপন তথ্যটি ফাঁস করে দেয় নিউ ইয়র্ক টাইমস গত ২৭ সেপ্টেম্বর, প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কের দুই দিন আগে। তাতে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা সবাইকে অবাক করেছে। একজন বিলিয়নেয়ার ট্যাক্স দিয়েছেন মাত্র ৭৫০ ডলার (২০১৭ সালের হিসাব)! অন্যদিকে আরেকটি তথ্যও আমরা পেয়েছি। তাতে দেখা যায়, অন্যতম প্রার্থী জো বাইডেন ট্যাক্স দিয়েছেন ৩৭ লাখ ৪২ হাজার ৯৭৪ ডলার, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও জো বাইডেনের রানিং মেট কমালা হ্যারিস দিয়েছেন পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৪৬৯ ডলার, সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স তিন লাখ ৪৩ হাজার ৮৮২ ডলার, সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন দিয়েছেন দুই লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৪ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রে সবাইকে ট্যাক্স দিতে হয়, যাঁরা চাকরি করেন। আয় থেকেই তাঁরা ট্যাক্স দেন। তাহলে ট্রাম্পের ব্যাপারে এত ফাঁকিজুকি কেন? সাধারণত ধনী ব্যবসায়ীরা এ কাজটি করেন—তাঁরা ট্যাক্স ফাঁকি দেন। ট্রাম্পও দিয়েছেন। তবে অত্যন্ত কৌশলে এ কাজটি তিনি করেছেন। অতীতে একাধিকবার এই প্রশ্নটি উপস্থাপিত হলেও ট্রাম্প কখনোই তা খোলাসা করেননি। এবারও যখন নিউ ইয়র্ক টাইমস তথ্যটি ফাঁস করে দিল, হোয়াইট হাউস কিংবা ট্রাম্পের ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে তা খণ্ডন করা হয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে বছরে যে বেতন পান (চার লাখ ডলার), তা তিনি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দান করে দেন। একজন প্রেসিডেন্ট যখন অবসরে যান, আজীবন তিনি পেনশন পান, যার পরিমাণ দুই লাখ ১৯ হাজার ২০০ ডলারের মতো বছরে। একজন ধনী ব্যক্তি হয়েও ট্রাম্প ট্যাক্স দেন না, এটা বহুল আলোচিত এবং প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কেও তাঁকে এ প্রশ্নটি করা হয়েছিল। তখন তিনি জবাবে বলেছিলেন, তিনি ‘মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স’ দেন। তাহলে কি তিনি মিথ্যা বললেন? তাঁর স্টাফরা অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করতে পারেননি। তার অর্থ হচ্ছে, তিনি যা বলেছেন তা মিথ্যা। তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত তথ্যের কোনো মিল নেই। প্রশ্ন হচ্ছে এখানেই। একজন প্রেসিডেন্ট কি তাহলে মিথ্যা বললেন? শুধু তা-ই নয়, বিতর্ক চলাকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে বারবার জো বাইডেনের বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিচ্ছিলেন, তা ছিল অসৌজন্যমূলক। একটি নিউজ পোর্টাল (প্রগেস রিপোর্ট) আমাদের জানাচ্ছে, ট্রাম্প উপস্থাপক ক্রিস ওয়ালেস ও জো বাইডেনকে মোট ১২৮ বার বাধা দিয়েছেন, তাঁদের কথা বলতে দেননি। ফলে যাঁরা প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কের আয়োজন করেন, তাঁরা এখন বিতর্কের কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন আনবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সময়ের রাজনীতিতে একটি বহুল আলোচিত বিষয় হলো জাতিগত বিদ্বেষ, বর্ণবাদ ও শ্বেতাঙ্গ সুপ্রিমেসি। ট্রাম্পের জমানায় জাতিগত বিদ্বেষ বেড়েছে, তাঁকে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছে ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারস’ আন্দোলনের। ট্রাম্পের নীতি শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে উসকে দিয়েছিল। তিনি শ্বেতাঙ্গ ‘সুপ্রিমেসির’ ধারণার জন্ম দিয়ে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছিলেন। বিতর্কে ক্রিস ওয়ালেস যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ ধারণা যাঁরা প্রমোট করেন, যেমন Proud Boys-দের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যকলাপের নিন্দা করেন কি না, জবাবে তিনি তাদের সমর্থন করলেন এবং তাদের পক্ষে দাঁড়ালেন। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও বহুল আলোচিত। এ ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করা হলেও তিনি আগের ‘অবস্থান’ থেকে সরে আসেননি। অথচ জো বাইডেন বললেন, তিনি নির্বাচিত হলে ‘প্যারিস চুক্তি’তে ফিরে যাবেন, যেখানে বিশ্বের নেতারা বিশ্বের উষ্ণতা কমাতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের নির্গমন মাত্রা কমাতে রাজি হয়েছিলেন। ট্রাম্পকে কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে তাঁর নীতির ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, তিনি কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছেন এবং তিনি না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ লাখ মানুষ মারা যেত! অথচ পরিসংখ্যান বলছে, কভিড-১৯-এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে। প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কের পর যে জনমত জরিপ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা যায় জো বাইডেনের পক্ষে জনমত শতকরা ৪৮ ভাগ, আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ৪১ ভাগ। ১০ ভাগ এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন (statista)। ফলে একটা প্রশ্ন এরই মধ্যে উঠেছে যে নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলে তিনি এই ‘হার’ স্বীকার করবেন কি না। তাঁকে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি এর সুস্পষ্ট জবাব দেননি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। এখন আমাদের অপেক্ষার পালা ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এই সময়সীমায় ট্রাম্প জনমত তাঁর পক্ষে নেওয়ার জন্য কী কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই দেখার বিষয়। kaler kontjo 2.10.2020

মালেক কাহিনী

ড্রাইভার মালেকের ছবি ও ‘কাহিনী’ এখন সোশ্যাল মিডিয়াসহ সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। সফেদ দাড়িতে মালেককে দেখলে যেকোনো লোক তাকে সম্মানের চোখে দেখবেন। তার বেশ-বাস, তার অবয়ব দেখে ধারণা করা স্বাভাবিক যে, তিনি একজন নামাজি মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত হয়তো নামাজ পড়েন! মসজিদে যান।মহান আল্লাহতায়ালার কাছে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাও হয়তো চান, যা খুবই স্বাভাবিক। আমি জানি না তিনি হয়তো ইতিমধ্যে হজও করে এসেছেন। এই মালেকই এখন মিডিয়ার অন্যতম ‘চমক’। ‘চমক’ বলছি এ কারণে যে, ব্যক্তিগতভাবে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভার। কিন্তু একজন ড্রাইভার হয়েও তার সম্পদের যে বিবরণ আমরা জানতে পেরেছি, তাতে রীতিমতো অবাক হতে হয়। ঢাকায় তার দুটি সাততলা ভবন। দশতলা অপর একটি ভবন নির্মাণাধীন। ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকা। তার বাসার দরজা আর ওয়াশ রুমের যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, শুধু রাজা-বাদশাহদের বাড়িতেই এমন কারুকাজ আমরা দেখতাম।অথচ তিনি ড্রাইভার। কত ক্ষমতাবান তিনি যে, ডিজির নামে বরাদ্দকৃত প্রাডো গাড়িটি নিজে ব্যবহার করেন। সংবাদপত্রের ভাষায় তার স্ত্রী, মেয়ে, মেয়ের জামাই, ভাইসহ অন্তত ৩০ জন চাকরি করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।>এই মালেক ড্রাইভারই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। এই সিন্ডিকেট সদস্যদের অনেকেই বছরের পর বছর অফিস করেন না। বদলি হন না। নিম্নপদস্থ কর্মচারী হয়েও ব্যবহার করেন সরকারি গাড়ি। বাসা বরাদ্দ নিয়েও তা ভাড়া দেন অন্যদের কাছে। একজন মালেক ড্রাইভারের ‘কাহিনী’ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতি আজ কোন পর্যায়ে গিয়ে উন্নীত হয়েছে। একজন ড্রাইভার যদি ঢাকায় ২৫ থেকে ৩০টি ফ্ল্যাটের মালিক হন, তাহলে আমাদের বুঝতে হবে সমাজটা ঠিকমতো চলছে না! এ দেশে অনেক ত্যাগী ও গুণী মানুষ আছেন, যারা আজীবন সৎ থেকে গেছেন এবং শেষ বয়সে এসে সরকারি ‘বৃদ্ধনিবাসে’ বাস করছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের এক সাবেক অধ্যাপকের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে সবার। সারাটা জীবন তিনি ছাত্র পড়ালেন। আর এখন তাকে থাকতে হচ্ছে ‘বৃদ্ধনিবাস’-এ। সুখের কথা তিনি ‘মালেক ড্রাইভার’দের মতো অসৎ লোকদের শিক্ষাজীবনে ‘জন্ম’ দেননি। সমাজটা কীভাবে পচে গেছে তার একটি বড় উদাহরণ একজন চিকিৎসক একটি টিভি চ্যানেলে প্রকাশ্যেই বলছেন ‘তিনি একজন মালেক ড্রাইভার’ হতে চান। একজন চিকিৎসক যিনি সর্বোচ্চ মেধার অধিকারী হয়েই এমবিবিএস পাস করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরি করছেন, তিনি কি না হতে চান মালেক ড্রাইভার। এই ‘মালেক ড্রাইভাররা’ সমাজকে কোথায় নিয়ে গেছেন, এটা একটা বড় উদাহরণ একজন চিকিৎসক কি না হতে চান ‘মালেক ড্রাইভার’! আমরা বুঝি এটা তার প্রতিবাদ। তিনি সত্যিকার অর্থেই ড্রাইভার হতে চান না। এক ধরনের ক্ষোভ রয়েছে বক্তব্যের মধ্যে।প্রশ্ন হচ্ছে এই ‘মালেক ড্রাইভাররা’ এতদূর এলো কীভাবে? কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এরা এত বিপুল সম্পত্তির মালিক হন? এটা নিশ্চয়ই এক বছর কিংবা পাঁচ বছরে হয়নি। একটা চক্র সেখানে গড়ে উঠছে, যারা ‘মালেক ড্রাইভার’কে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ হাসিল করেছে। এদের সবাইকে আজ আইনের আশ্রয়ে নেওয়া প্রয়োজন। একজন মালেক যদি ২৫ থেকে ৩০টি ফ্ল্যাটের মালিক হন, তাহলে অতীতে যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মহাপরিচালক, পরিচালক পদে ছিলেন, এদের সবার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হোক সবার আয়কর ফাইল চাওয়া হোক। দুদকের দিকে মানুষ তাকিয়ে আছে। দুদককে শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। একজন সাবেক মহাপরিচালকের (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। তিনি গুলশানে তিন হাজার স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। সম্ভবত সেটি তার নিজের ফ্ল্যাট। কোন স্কেলে তিনি চাকরি করতেন? সেই স্কেলের টাকায় কি এত বড় ফ্ল্যাটে থাকা সম্ভব? কেনা সম্ভব? স্ত্রীকে ব্যবসায়ী বানিয়ে আইটির শত শত কোটি টাকার ‘ব্যবসা’ তিনি বাগিয়ে নিয়েছিলেন। দুদক তাকে ডেকেছিল বটে। কিন্তু এর পরের খবর আর আমরা জানি না। সংবাদকর্মীরাও আর আমাদের ‘ফলোআপ’ সংবাদ জানাচ্ছেন না।দেশ রূপান্তর ‘বালিশ কাহিনী’ প্রকাশ করে সারা জাতির আস্থা অর্জন করেছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে রয়েছে এ ধরনের ‘শত শত বালিশ কাহিনী’। প্রকাশিত হোক ‘এসব বালিশ কাহিনী’। করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশ যখন এখনো একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন গত চার-পাঁচ মাস প্রায়শই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতির খবর সংবাদপত্রে ছাপা হচ্ছে। সাহেদ, সাবরিনা, আরিফরা শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করে এখন ‘থালাবাটি কম্বল’ নিয়ে জেলহাজতে। দুর্নীতির খবর বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার ‘অ্যাকশনে’ গেছে এটা সত্য। শতকোটি টাকার মালিক আবজালও এখন জেলে। ১৪টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে? এর জবাব সম্ভবত ‘না’। অর্থাৎ ‘কালো বেড়াল’রা ঘাপটি মেরে বসে আছে। একজন ‘মালেক ড্রাইভার’ ধরা খেয়েছেন তার রিমান্ড এখন চলছে ১৪ দিনের। মাত্র ২৬ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করেন। রাজধানীতে দুটি বহুতল ভবন, প্রায় ২০ কাঠা জমির মালিক, গরুর খামার ও শতকোটি টাকার মালিক ‘মালেক ড্রাইভার’ তার আয়ের উৎস দেখাতে পারেননি। সুতরাং তার সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে অধিগ্রহণ করা হোক।ঢাকার প্রয়াত সাবেক এক মেয়রের গুলশানের বাড়ি অবৈধ অর্থে নির্মিত হয়েছিল রাষ্ট্র তাকে অনুগ্রহ করেনি। তার বাড়ি আইনগত প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র অধিগ্রহণ করেছিল। আজ ‘মালেক ড্রাইভার’-এর ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য হবে না কেন? এটা করা হলে একটা ‘মেসেজ’ পৌঁছে যাবে সবার কাছেই অবৈধ পন্থায় যারা সম্পদ আহরণ করছেন, তারা ‘ভয়ে’ থাকবেন। অন্তত একটা মেসেজ যাবে যে, সরকার কাউকে ছাড় দেয় না। মালেক ড্রাইভার শেষ চার বছর গাড়ি চালিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বর্তমান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের। মালেকের ‘মহাদুর্নীতির’ সঙ্গে তার সম্পৃক্ততাও খুঁজে বের করা দরকার। যদিও তিনি সংবাদপত্রে স্বীকার করেছেন ‘আমি ক্লিন ইমেজের মানুষ, মালেকের দায় আমার না’। তার এই বক্তব্যে মানুষ কতটুকু আস্থা রাখবে, এটা প্রশ্ন বটে। চার বছর মালেক তার গাড়ি চালালেন, তার আশপাশে থাকলেন, মালেকের ‘আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ পাওয়ার’ কাহিনী তিনি জানতেন না এ ধরনের বক্তব্যে আমি অন্তত আস্থা রাখতে পারছি না। নিশ্চয়ই দুদকের তদন্ত টিম এটি দেখবে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘কাহিনী’ ড্রাইভার মালেকের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়েই যে শেষ হয়েছে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এ ধরনের মালেকরা আরও আছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ে তো কত ‘কাহিনী’! পর্দা থেকে শুরু, মাঝখানে সাহেদ-সাবরিনা আর এখন চলছে ‘মালেক কাহিনী’ এই কাহিনীর কোথায় শেষ আমরা তা জানি না। হয়তো কাল আমরা আরেক ‘কাহিনী’ জানতে পারব। করোনা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে যখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘মহাদুর্নীতি’র খবর পত্রিকায় আসতে শুরু করল, তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা বলতে শুরু করলেন তারা কিছুই জানেন না! ফাইলে স্বাক্ষর করলেন, অনুমোদন দিলেন, তারপরও যদি কেউ বলেন ‘তারা কিছু জানেন না’, তাহলে সবাইকে বোকা ভাবতে হবে! মালেক যার আন্ডারে কাজ করেন, ‘বিকল্প প্রশাসন’ গড়ে তুলেছেন(?), তিনি বললেন, ‘এ দায় তার না’! তাহলে দায়টা কার? আমজনতার? যাদের ট্যাক্সের টাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রথী-মহারথীদের বেতন হয়, তারা দায়ী? আমাদের দুঃখ এখানেই এই আমজনতাকে সবাই ‘বোকা’ ভাবে। সাধারণ মানুষ যে সবকিছু বোঝেন, এটা তারা বোঝেন না?1.10.2020<