রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

প্যারিস সম্মেলনে বিশ্ব কী পাবে

জলবায়ুসংক্রান্ত প্যারিস সম্মেলনে, যা কপ-২১ নামে পরিচিত বিশ্ব কি কিছু পাবে? একটি চুক্তি কি স্বাক্ষর হবে শেষ পর্যন্ত? এর আগের সম্মেলনে (লিমা ২০১৪) বলা হয়েছিল, এটাই সর্বশেষ সুযোগ। বিশ্বনেতৃবৃন্দ যদি বায়ুম-লে কার্বন নিঃসরণের ব্যাপারে কোনো চুক্তিতে উপনীত হতে না পারেন তাহলে একটি বড় ধরনের সংকটের মুখোমুখি হবে বিশ্ব। কপের লিমা সম্মেলনের পর যে প্রশ্নটি আমার কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল তা হচ্ছে, প্রতি বছর এ ধরনের সম্মেলন করে শেষ পর্যন্ত কি বিশ্বের উষ্ণতা রোধ করা সম্ভব হবে? বাংলাদেশের পরিবেশমন্ত্রী ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ঢাকায় ফিরে এসে তিনি কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। তাই কপ সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবেই। ইতোমধ্যেই জাপান, কানাডা ও রাশিয়া কিয়োটা-পরবর্তী আলোচনা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছিল। সুতরাং বোঝাই যায় এক ধরনের হতাশা এসে গেছে। আসলে বিশ্বের দেশগুলো এখন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেছে। বিশ্বের উষ্ণতা রোধকল্পে এক এক গ্রুপের এক এক এজেন্ডা। উন্নত বিশ্ব কিংবা উন্নয়নশীল বিশ্বের যে দাবি তার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আবার উন্নয়নশীল বিশ্বও একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। ধনী দেশগুলো এনেস্ক্র-১-এ অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের জিডিপির শতকরা ৭৫ ভাগ এ দেশগুলোর। অথচ লোকসংখ্যা মাত্র বিশ্বের ১৯ ভাগ। কিন্তু কার্বন নিঃসরণ করে সবচেয়ে বেশি, শতকরা ৫১ ভাগ। অন্যদিকে গ্রুপ-৭৭-এর দেশগুলো (মোট ১৩০টি দেশ) বিশ্বের জনসংখ্যার ৭৬ ভাগ, জিডিপির মাত্র ১৯ ভাগ। কিন্তু কার্বন উদ্গিরণ করে ৪২ ভাগ। আবার সাগরপাড়ের দেশগুলো, যারা বিশ্বের জনসংখ্যা, জিডিপি ও কার্বন নিঃসরণ করে মাত্র ১ ভাগ, তাদের দাবি ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বর্তমান অবস্থার চেয়ে শতকরা ৮৫ ভাগ কমিয়ে আনার। বনাঞ্চলভুক্ত দেশগুলো যারা রেইন ফরেস্ট কোয়ালিশন হিসেবে পরিচিত তারা বিশ্ব জনগোষ্ঠীর ১৯ ভাগের প্রতিনিধিত্ব করে। জিডিপির মাত্র ৩ ভাগ তাদের। আর মাত্র ৪ ভাগ কার্বন নিঃসরণ করে। যুক্তরাষ্ট্র একা কার্বন নিঃসরণ করে ২০ ভাগ, জিডিপির ৩০ ভাগ তাদের। অথচ জনসংখ্যা মাত্র বিশ্বের ৫ ভাগ। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বিশ্ব জিডিপির ২৫ ভাগ ও জনসংখ্যার ৮ ভাগের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু কার্বন নিঃসরণ করে ১৫ ভাগ। চীনকে নিয়ে সমস্যা এখন অনেক। চীন একা কার্বন নিঃসরণ করে ২১ ভাগ। বিশ্ব জনসংখ্যার ২০ ভাগই চীনা নাগরিক। জিডিপির ৬ ভাগ তাদের। প্রতিটি গ্রুপের অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন। সবাই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে কার্বন নিঃসরণের হার কমাতে চায়। জাতিসংঘ একে বলছে কার্বনঘনত্ব। অর্থাৎ দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা মোট আয়ের (জিডিপি) অনুপাতে কার্বন ডাইঅক্সাইড উদ্গিরণের হারকে কার্বনঘনত্ব বা গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব বলা হয়। উন্নয়নশীল বিশ্ব মনে করে এ হার মাথাপিছু জনসংখ্যা ধরে করা উচিত। কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের হার কমানো উচিত, এটা মোটামুটিভাবে সবাই মেনে নিয়েছে। কিন্তু কে কতটুকু কমাবে, সে প্রশ্নের কোনো সমাধান হয়নি। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন (এবং সেই সঙ্গে ভারতও) বিশ্বে সবচেয়ে বেশি দূষণ ছড়ায়, সে কারণে এ দুটো দেশের কাছ থেকে 'কমিটমেন্ট' আশা করেছিল বিশ্ব। কিন্তু তা হয়নি। চীন প্রস্তাব করেছিল ২০০৫ সালের কার্বনঘনত্বের চেয়ে দেশটি ২০২০ সালে শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কমাবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের দাবি ছিল তারা ১৭ ভাগ কমাবে। কিন্তু চীন ও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এখানে বলা ভালো, চীনের কার্বনঘনত্ব ২.৮৫ টন, আর ভারতের ১.৮ টন। চীন ও ভারত দুটো দেশই বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে এ শতাব্দীতেই। বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা হরিন্দর কোহলির মতে, আগামী ৩০ বছরে ভারত বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। মাথাপিছু আয় তখন ৯৪০ ডলার থেকে বেড়ে ২২ হাজার ডলারে উন্নীত হবে।
২০০৭ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত অবদান রাখত মাত্র ২ ভাগ, ৩০ বছর পর অবদান রাখবে ১৭ ভাগ। তবে এটা ধরে রাখতে হলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হতে হবে ৮ থেকে ৯ ভাগ। এ কারণেই ভারতকে নিয়ে ভয়_ তাদের কার্বনঘনত্ব বাড়বে। কেননা প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রাখতে হবে। আর তাতে করে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়বে। পাঠকদের এখানে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ১৯৯৭ সালে কিয়োটো সম্মেলনে ১৬০টি দেশ অংশ নিয়েছিল এবং সেখানে যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৯৯০ সালের কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের মাত্রার চেয়ে ৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র ৭ শতাংশ ও জাপানের ৬ শতাংশ হ্রাস করার কথা। তা ছাড়া সার্বিকভাবে ৫.২ শতাংশ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের আইনগত বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল সব কটি দেশকে ২০০৮-১২ সালের মধ্যে গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। তৎকালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট গোর কিয়োটো চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও পরে বুশ প্রশাসন ওই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে কিয়োটো চুক্তি কাগজ-কলমে থেকে গিয়েছিল। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে যে কটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের উপকূলে প্রতি বছর ১৪ মিলিমিটার করে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গত ২০ বছরে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় উপকূলের মানুষ অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি সাতজনে একজন আগামীতে উদ্বাস্তু হবে। ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। বাংলাদেশ কোপেনহেগেন সম্মেলনে পরিবেশগত উদ্বাস্তুদের টহরাবৎংধষ ঘধঃঁৎধষ চবৎংড়হ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি।
সর্বশেষ দোহা সম্মেলনেও বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফাস্ট স্টার্ট ফান্ডে পাওয়া গেছে মাত্র ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ সেখান থেকে পেয়েছে ১৩০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাংলাদেশে আইলার কারণে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর হয়নি। সার্ক সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঐক্যবদ্ধভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যাগুলো আমরা তুলে ধরব। কিন্তু লিমায় তা হয়নি। বাংলাদেশ ও ভারত একই ফোরামে ছিল না। একটি আইনি বাধ্যবাধকতার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। প্রযুক্তি হস্তান্তর সম্পর্কেও কোনো সমঝোতা হয়নি। কপ সম্মেলন এলেই বড় বড় কথা বলা হয়। কয়েক টন কার্বন নিঃসরণ করে সম্মেলন 'অনেক আশার কথা' শুনিয়ে শেষ হয় বটে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয় খুব কমই। আগে সমস্যা ছিল উন্নত বিশ্বকে নিয়ে। এখন চীন ও ভারত একটি সমস্যা। তাদের যুক্তি, নিঃসরণের পরিমাপ হ্রাস করলে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। তাতে বাড়বে দারিদ্র্য। এ যুক্তি ফেলে দেয়ার নয়। ফলে কপ সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেলই। গেল বছরের ডিসেম্বরে (১-১২ ডিসেম্বর) পেরুর রাজধানী লিমায় কপ-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কপ-১৮ (ডারবান) সম্মেলনের পর দোহায় কপ-১৯, সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কপ-২১ সম্মেলন। কিন্তু তাতে আমাদের প্রাপ্তি কী? শুধু 'অংশগ্রহণ' ছাড়া আমাদের কোনো প্রাপ্তি নেই।
আল গোর নিজে তার প্রবন্ধে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বাড়লে ২০৫০ সাল নাগাদ দুই থেকে আড়াই কোটি বাংলাদেশিকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে। এর অর্থ প্রচুর মানুষ হারাবে তাদের বসতি, পেশা। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়া মানে কেবল বন্যা নয়, এর মানে নোনা পানির আগ্রাসন। সেই সঙ্গে ধানের আবাদ ধ্বংস হয়ে যাওয়া। দুই কোটি কৃষক, জেলে পেশা হারিয়ে শহরে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে এসে নতুন নতুন বস্তি গড়ে তুলবে। রিকশা চালানোর জীবন বেছে নেবে। সৃষ্টি হবে একটি শ্রেণির, যারা শহুরে মানুষের ভাষায় 'জলবায়ু উদ্বাস্তু'। এ জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নিয়ে রাজনীতি হবে। বিদেশে অর্থসাহায্য চাওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রাপ্ত সাহায্যের ব্যবহার নিয়ে নানা অনিয়মের খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে এবং খুব কম ক্ষেত্রেই সরকার এসব অনিয়ম বোধ করতে পেরেছে।
বলা ভালো, বাংলাদেশ এককভাবে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে না। বাংলাদেশ এককভাবে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ও তা সামগ্রিকভাবে বিশ্বের উষ্ণতা রোধ করতে খুব একটা প্রভাব রাখবে না। এ জন্য বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্তর্জাতিক আসরে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় বিদেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। কিন্তু এ সাহায্যের ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। গেলবার যে বন্যা হলো আবার আমাদের সে কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিল। বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় এখনো এ দেশে স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু 'সিডর' ও 'আইলা'র আঘাতে আমাদের যা ক্ষতি হয়েছিল সে ক্ষতি পোষাতে সরকারের বড়সড় উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ১ হাজার ২৬৮ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হলেও এখানেও 'রাজনীতি' ঢুকে গেছে। দলীয় বিবেচনায় টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ভাবতে অবাক লাগে, যেসব এনজিও জলবায়ু নিয়ে কাজ করেনি, যাদের কোনো অভিজ্ঞতাও নেই, শুধু দলীয় বিবেচনায় তাদের নামে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। জলবায়ু তহবিলের অর্থ পাওয়া উচিত ওইসব অঞ্চলে যেখানে ঘূর্ণিঝড়, প্লাবনের আঘাত বেশি আর মানুষ যুদ্ধ করে যেখানে বেঁচে থাকে। অথচ দেখা গেছে, জলবায়ুর জন্য বরাদ্দকৃত টাকা দেয়া হয়েছে ময়মনসিংহ পৌরসভাকে, মানিকগঞ্জের একটি প্রকল্পে কিংবা নীলফামারী তিস্তা বহুমুখী সমাজকল্যাণ সংস্থাকে। সিরাজগঞ্জের প্রগতি সংস্থাও পেয়েছে থোক বরাদ্দ। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের একটিরও জলবায়ুসংক্রান্ত কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
আমাদের জন্য তাই প্যারিস কপ-২১ সম্মেলনের গুরুত্ব অনেক। বাংলাদেশ পরিবেশগত নানা সমস্যায় আক্রান্ত। বাংলাদেশের একার পক্ষে এর সমাধান করা সম্ভব নয়। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই বাংলাদেশ আজ আক্রান্ত। সুতরাং বৈশ্বিকভাবে যদি বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি কমানো না যায় তাহলে বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করাও সম্ভব হবে না। তাই একটি চুক্তি অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে আরো প্রয়োজন জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলায় বৈদেশিক সাহায্যের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি এবং সেই সঙ্গে প্রযুক্তি হস্তান্তরের একটা 'কমিটমেন্ট'। জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে আমাদের যেতে হবে। সোলার বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, স্থানীয়ভাবে তাদের কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। সুতরাং আর্থিক সাহায্যের প্রশ্নটি অত্যন্ত জরুরি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সত্য, বিশ্বনেতৃবৃন্দ বার বার সাহায্যের কথা বললেও সে সাহায্য কখনই পাওয়া যায়নি। প্যারিস সম্মেলন চলাকালে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি উদ্বেগজনক সংবাদ প্রকাশ করেছে জার্মান ওয়াচ নামে একটি সংস্থা। প্রতি বছর বৈশ্বিক জলবায়ুসূচক তারা প্রকাশ করে। শীর্ষ সম্মেলন চলাকালেই তারা প্রকাশ করেছে বৈশ্বিক জলবায়ুসূচক ২০১৬।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝড়, বন্যা, ভূমিধস ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকা এরা প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে ৬ নাম্বারে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর শীর্ষে রয়েছে হন্ডুরাস। তারপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে মিয়ানমার, হাইতি, ফিলিপাইন ও নিকারাগুয়া। তাই প্যারিস সম্মেলনটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক। শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তি হলেও তাতে যদি আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকে তাহলে ওই চুক্তি মূল্যহীন হয়ে যাবে।
ইতোমধ্যে বিশ্বনেতৃবৃন্দের সবাই, যারা কপ-২১-এ যোগ দিয়েছিলেন, তারা প্যারিস ছেড়েছেন। তারা দেশীয় কর্মকর্তাদের রেখে গেছেন, যারা বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে দেনদরবার করবেন। তবে একটা চুক্তি হোক_ এ প্রত্যাশা সবার। Daily Jai Jai Din 07.12.15

0 comments:

Post a Comment