রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক মূল্যায়ন প্রসঙ্গে কিছু কথা

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি সরকার মূল্যায়ন করছে বলে আমাদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। ৬ ডিসেম্বর একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি কর্তৃক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন (আমাদের সময়, ৭ ডিসেম্বর)। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বললেন এমন এক সময়Ñ যখন পাকিস্তানি নেতাদের নানা ধৃষ্টতামূলক মন্তব্য বাংলাদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং কোনো কোনো মহল থেকে প্রকাশ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানানো হয়। পাঠক স্মরণ করতে পারেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় তারা যে ‘উদ্বিগ্ন’ ও ‘বেদনাগ্রস্ত’Ñ এ কথাটিও তারা উল্লেখ করতে ভোলেননি। শুধু তা-ই নয়, ইসলামাবাদে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে ডেকে তারা বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বা নৃশংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং এ ধরনের ঘটনার জন্য পাকিস্তানের কোনো দায় ছিল না।’ কী ধৃষ্টতাপূর্র্ণ কথা! মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান কোনো অপরাধ করেনি! তাহলে কারা ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল? কারা আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করেছিল? মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সেনারা যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তা তো একাধিক রিপোর্টে আছে। অ ১৯৭২
জবঢ়ড়ৎঃ নু ঃযব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়সসরংংরড়হ ড়ভ ঔঁৎরংঃং, মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া প্রয়াত সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির বক্তব্যÑ যা ছাপা হয়েছিল ডধংযরহমঃড়হ চড়ংঃ-এ ১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট, এঁরহহবংং ইড়ড়শ ড়ভ জবপড়ৎফং, এবড়ৎমব ডধংযরহমঃড়হ টহরাবৎংরঃু’ং ঘধঃরড়হধষ ঝবপঁৎরঃু অৎপযরাবং, অহঃযড়হু গধংশধৎবহযধং-এর ঝঁহফধু ঞরসবং-এর প্রতিবেদনে (১৩ জুন, ১৯৭১) উল্লেখ আছে গণহত্যার কথা। আজ এত বছর পর এই গণহত্যার প্রশ্ন তোলা এবং পাকিস্তানি সেনারা এ গণহত্যা চালায়নিÑ এ প্রশ্ন তোলা অবান্তর। আজ পাকিস্তান এ প্রশ্নটি তুলে দুই দেশের সম্পর্ককে একটি প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করছে। এ প্রসঙ্গে আমি জাতিসংঘ সনদের মূলনীতির ১ ও ৭ নম্বর ধারাটি উল্লেখ করতে চাই। ১ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সকল সদস্যের সার্বভৌমত্ব ও সমতার মূলনীতির উপর এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত।’ আর ৭ নম্বর ধারায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান সনদ জাতিসংঘকে কোনো রাষ্ট্রের নিছক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার দিচ্ছে না বা সেরূপ বিষয়ের নিষ্পত্তির জন্য কোনো সদস্যকে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হতে হবে না।’ এ ধারাটি যদি আমরা অনুসরণ করি তাহলে দেখা যাবে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য জাতিসংঘ সনদের মূলনীতির ৭ নম্বর ধারাকে ‘কনট্রাডিক্ট’ করে। এই ধারা অনুযায়ী পাকিস্তানের কোনো অধিকার নেই বাংলাদেশের কোনো অভ্যন্তরীণ ঘটনায় মন্তব্য বা সমালোচনা করার। ফলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বক্তব্যটি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেনি। বিভিন্ন মহল থেকে এর সমালোচনা করা হয়েছে। ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকরের পর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ তখনো এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাল পাকিস্তান। আসলে ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের যে ৪১ বছরের ইতিহাসÑ এ  ইতিহাস সব সময় ‘আস্থা ও বিশ্বাস’-এর নিরিখে পরিচালিত হয়েছে, এটা বলা যাবে না। এই সম্পর্ক উজ্জ্বল ছিলÑ এটিও বলা যাবে না। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা ছিল, এর সমাধান হয়নি এতদিন পরও। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। একটি মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছিল এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনোর ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি পাকিস্তান কখনোই সম্মান জানায়নি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যে হত্যাযজ্ঞ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চালিয়েছিল, এ জন্য ক্ষমাও চায়নি কোনোদিন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হলেও পাকিস্তানের নেতারা তা করেননি। এমনকি পাকিস্তানের অনেক বুদ্ধিজীবী ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধি পাকিস্তান সরকারের প্রতি ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানালেও পাকিস্তানে অতীতে কোনো সরকারই এ কাজটি করেনি। বরং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ‘এসব পুরনো কথা’ এবং ‘এসব ভুলে’ সামনের দিকে তাকাতে বলা হয়েছে। কিন্তু একাত্তরে গণহত্যার কথা বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায় কীভাবে? পাকিস্তান সরকার কিংবা শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো এই গণহত্যা স্বীকার করে না তাদের দলীয় স্বার্থে। তবে শুভবুদ্ধির কিছু মানুষ আছেনÑ যারা গণহত্যার কথা স্বীকার করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন গণহত্যার কথা অস্বীকার করেছে, ঠিক তখনই ঢাকায় পাকিস্তানের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারপারসন হিনা জিলানি স্বীকার করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশটির নাগরিকদের একটি অংশ। তিনি ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা স্বীকার করেন (একটি জাতীয় দৈনিক, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫)। তাই পাকিস্তানের শাসকচক্র ১৯৭১ সালের গণহত্যার কথা স্বীকার না করলেও সাধারণ মানুষের একটি অংশ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম মনে করেÑ সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় যেসব সমস্যা ছিল, তার সমাধান হয়নি। ‘ডেড ইস্যু’ অর্থাৎ এগুলো মূল্যহীন।
১৯৭৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়টা অনেক লম্বা। এত দীর্ঘ সময় দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সমস্যাগুলোর পূর্ণ সমাধান হয়েছে, তা বলা যাবে না। পাকিস্তানের কাছে পাওনা সম্পদ ফেরত, বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অগ্রগতি তেমন হয়নি। পাকিস্তানের কাছে পাওনা সম্পদের বিষয়টি একাধিকবার বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। ১৯৭৪ সালে প্ল্যানিং কমিশন ২ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা পাওনা দাবি করে একটি রিপোর্ট প্রণয়ন করেছিল। ১৯৭১ সালের যুক্ত পাকিস্তানের সম্পত্তি, জনসংখ্যা, সংখ্যাসাম্য নীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও সম্পদের পরিমাণ হিসাব করে ওই পাওনা টাকার দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল। গত ৪০ বছরে এ ব্যাপারে তেমন অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে এই দাবি উত্থাপন করলেও পাকিস্তান এ ব্যাপারে কোনো উৎসাহ দেখায়নি। তবে ‘বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ’ বাংলাদেশ বিমানকে একটি পুরনো টাইপের বোয়িং বিমান দিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু যুক্ত পাকিস্তানের সম্পদের তুলনায় তা কিছুই নয়। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় পাকিস্তান নীতিগতভাবে এ ব্যাপারে একটি ‘কাউন্সিল’ গঠন করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারেও পরবর্তী সময়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানি নাগরিকরা ‘বিহারি’ হিসেবে পরিচিত। এসব পাকিস্তানি নাগরিক এখনো পাকিস্তানে যেতে চান। এটি সত্য, আটকেপড়া কয়েক পাকিস্তানি ইতোমধ্যে পাকিস্তানে চলে গেছেন। প্রায় ২ লাখ পাকিস্তানি এখনো ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছেন। ১৯৮৫ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক তাদের নিতে রাজি থাকলেও পরে বেনজির ভুট্টোর বিরোধিতার কারণে ওই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে যায়। বেনজির ভুট্টো তাদের পাকিস্তানি বলতেও রাজি ছিলেন না। বর্তমানে এ ব্যাপারে তেমন কিছু শোনা যায় না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেভাবে অগ্রগতি হওয়ার কথা ছিল, তাও হয়নি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে পাকিস্তানের রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ২৭ দশমিক ৬ ভাগ হারে। অথচ বাংলাদেশ থেকে আমদানি বেড়েছে মাত্র ৯ দশমিক ২ ভাগ হারে। দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণও কমতির দিকে।
২০১০-১১ সময়সীমায় বাণিজ্যের পরিমাণ যেখানে ছিল ৯৮৩ মিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ৩৪০ মিলিয়ন ডলারে। পাকিস্তানি নাগরিক, এমনকি ঢাকায় দূতাবাসের কর্মচারীরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অপকর্মে নিজেদের জড়িত করছেন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে ভারতীয় জাল নোটের ‘অবৈধ ব্যবসা’ তথা পাচারের সঙ্গে পাকিস্তানি বেশকিছু নাগরিক জড়িত। কয়েকজন ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারও হয়েছে। এমনকি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাজহার খান (তিনি ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনে কর্মরত ছিলেন) ‘অকূটনৈতিক কাজ’-এ জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ তাকে বহিষ্কার করেছিল। বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বিস্তারে কোনো কোনো পাকিস্তানি জড়িতÑ এমন অভিযোগও আছে।
সার্ক, কমনওয়েলথ, ডি-৮ কিংবা ওআইসিসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় থাকার কথা থাকলেও তা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় পাকিস্তান যখন ‘হস্তক্ষেপ’ করে, তখন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও অবনতি হতে বাধ্য। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানিদের নেতিবাচক প্রচারটি বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম সহ্য করবে না। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব আরও শক্তিশালী হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি সামাজিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। আর্থিক ভিত্তি, নারী শিক্ষা,  বৈদেশিক রিজার্ভ, মুদ্রামান স্বাস্থ্যসেবা, শিুশ মৃত্যুহার কমানো, রেমিট্যান্স ইত্যাদি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিসস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে।
আমাদের জন্য পাকিস্তান কোনো ক্ষেত্রেই কোনো ‘মডেল’ নয়। সার্কে এ দুটি দেশ আছে বটে কিন্তু এ ক্ষেত্রেও পাকিস্তান মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ককে যতটুকু গুরুত্ব দেয়, সার্কের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন আর অত গুরুত্ব দেয় না। বাংলাদেশের ব্যাপারে পাকিস্তান তার মানসিকতায় যদি পরিবর্তন না আনে, তাহলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবনতি হতে বাধ্য। পাকিস্তান তার মানসিকতায় পরিবর্তন আনবেÑ এই বিশ্বাসও রাখতে পারছি না। ফলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের কথা বলেন, তখন আমরা স্পষ্ট নইÑ ওই পুনর্মূল্যায়ন বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। কিন্তু এটি করা বোধহয় ঠিক হবে না। এটি করা হলে বিশ্বসমাজে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি বাজে ধারণা পৌঁছে যেতে পারে। পাকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশ তার হাইকমিশনকে ‘ডাউন গ্রেড’ করতে পারে, দূতাবাস স্টাফ কমিয়ে আনতে পারে। তবে সব দিক ভেবে-চিন্তেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। চিরবৈরী  পাকিস্তান ও ভারত কখনো সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ‘উষ্ণ’ না থাকলেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রয়েছে। গত সপ্তাহেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসলামাবাদ সফর করেছেন। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ‘মূল্যায়ন’-এর প্রশ্নে ভেবে-চিন্তে এবং আগামী দিনগুলোর কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অবশ্যই তা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়েই করতে হবে। Daily Amader Somoy 13.12.15

0 comments:

Post a Comment