রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে কী পেল বিশ্ব



ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সদ্য সমাপ্ত জলবায়ু সম্মেলন (যা কপ-২১ নামে পরিচিত) শেষ হয়ে যাওয়ার পর যে প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে এই ‘সমঝোতা’ কি আদৌ কার্যকর হবে? নাকি ১৯৯৭ সালে জাপানের প্রাচীন রাজধানী কিয়োটোতে বিশ্বের উষ্ণতা রোধকল্পে যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে আবারও! বলা ভালো, বিশ্বের উষ্ণতা রোধকল্পে কিয়োটো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছিল- বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলো সামগ্রিকভাবে বায়ুম-লে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ১৯৯০ সালের তুলনায় শতকরা ৫ দশমিক ২ ভাগ হারে হ্রাস করবে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশ, দেশটি হ্রাস করবে শতকরা ৭ ভাগ, ইইউর দেশগুলো করবে ৮ ভাগ, জাপান ৬ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু বুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। ফলে কিয়োটো চুক্তি অকার্যকর হয়ে যায়। এরপর একের পর এক বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। প্যারিসে শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতা হলো বটে, এবং ফ্রান্সের এটা ছিল একটা ‘কূটনৈতিক অভ্যুত্থান’ কিন্তু সমঝোতাটি ইতোমধ্যেই নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বলা হচ্ছেÑ এটা একটা ‘জগাখিচুড়ি সমঝোতা’। এটা কোনো চুক্তি নয়। চুক্তি হবে ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিলের মধ্যে। ওই সময় জাতিসংঘের মহাসচিব নিউইয়র্কে একটি সম্মেলন ডাকবেন। এবং জাতিসংঘের অন্তর্র্ভুক্ত দেশগুলো চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে। শতকরা ৫৫ ভাগ দেশ যদি এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করে (যার মাঝে আবার শীর্ষ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মাঝে ৫৫ ভাগ দেশ অন্তর্র্ভুক্ত থাকতে হবে) তাহলেই চুক্তিটি কার্যকর হবে। প্রশ্ন সেখানেই। বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো প্যারিসে উপস্থিত থেকে একটি সমঝোতা চুক্তির ব্যাপারে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করলেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, তেল ও গ্যাস উত্তোলনকারী সংস্থাগুলোর চাপ, করপোরেট হাউসগুলোর ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ইত্যাদি নানা কারণে বড় কিছু দেশ মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। রিপাবলিকানদের পেছনে বড় অর্থলগ্নি করেছে আন্তর্জাতিক তেল উত্তোলনকারী কোম্পানিগুলো। সুতরাং প্যারিসে ওবামা একটি সমঝোতার ব্যাপারে তার সমর্থন ব্যক্ত করলেও ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র নিউইয়র্কে এই চুক্তিটি স্বাক্ষর করবে কিনা সে প্রশ্ন থাকলই। চিন ও ভারত বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশ। কার্বন হ্রাসের ব্যাপারে এই দেশ দুটির যুক্তি হচ্ছেÑ কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করলে তাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। চিন ও ভারত কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর এই কয়লা পোড়ানোর ফলে বায়ুম-লে প্রচুর কার্বন ড্রাইঅক্সাইড নির্গমন হয়, যা বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট। ফলে দেশ দুটোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলই।
বিশ্বের ১৯৫টি দেশের সরকার তথা রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রায় সবাই প্যারিস সম্মেলনে যোগ দিয়ে এই সম্মেলনের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতির (যাদের একটা বড় অংশ আবার এনজিও প্রতিনিধি) ফলে সেখানে কত টন কার্বন নিঃসরণ হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই। কিন্তু কোপেনহেগেনে (২০০৯ সালের ডিসেম্বর) যে কপ-১৫ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার একটি পরিসংখ্যান আছে। প্রায় ১৫ হাজার প্রতিনিধি ওই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। আর খরচ হয়েছিল ১২২ মিলিয়ন ডলার। আর জাতিসংঘের মতে, এসব প্রতিনিধিকে আনা, নেওয়া, গাড়ি ব্যবহারের কারণে তারা বায়ুম-লে ৪০ হাজার ৫০০ টন কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করেছিল। পাঠক, এ থেকে ধারণা করতে পারেন এবার কত টন কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুম-লে নিঃসরণ হয়েছে। কিন্তু ফল কী? একটি সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু চুক্তি হবে কয়েক মাস পর। চুক্তি মানার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বলা হচ্ছেÑ ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা হবে। এর জন্য বায়ুম-লে কার্বন নির্গমন হ্রাস করতে হবে। প্রশ্ন এখানেইÑ কে কতটুকু হ্রাস করবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনকে কি একই কাতারে আমরা দেখব? কিংবা রাশিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলো কতটুকু কমাবে? এ ব্যাপারে সমঝোতা চুক্তিতে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। সমঝোতায় আছে উন্নত বিশ্ব জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার সাহায্য দেবে। এটা শুনতে ভালোই শোনায়। কিন্তু এই অর্থ কে দেবে? কোন দেশ কতটুকু দেবে, তার কোনো উল্লেখ নেই। দ্বিতীয়ত, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো নানা ক্যাটাগরিতে বিভক্ত (ভালনারেবল ২০, রেইন ফরেস্ট কোয়ালিশন ইত্যাদি)। এই দেশগুলোর মাঝে অর্থ বণ্টনের ভিত্তি কী হবে? তৃতীয়ত, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এই অর্থ কীভাবে ম্যানেজ করবে? কেননা উন্নয়নশীল বিশ্বে দুর্নীতির বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত। বাংলাদেশে জলবায়ু ফান্ডে প্রাপ্ত টাকা বরাদ্দ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। এক সময় কথা হয়েছিল প্রাপ্ত টাকা বিলি-বণ্টনের বিষয়টি দেখভাল করবে বিশ্বব্যাংক। কিন্তু এক সময় বিশ্বব্যাংক এখান থেকে সরে যায়। বিষয়টি যে শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য তা নয়, বরং উন্নয়নশীল বিশ্বেরও। বিশেষ করে সাগরপাড়ের অনেক দেশ নিয়ে এ রকম সমস্যা আছে। সমঝোতা স্মারকে উন্নয়নশীল বিশ্বের স্বার্থ দেখা হয়নি। আইনি বাধ্যবাধকতার বিষয়টিও অত কঠোর নয়। অর্থাৎ সাগরপাড়ের দেশগুলো, যারা বিশ্বের উষ্ণতা বেড়ে গেলে, সাগর-মহাসগরে পানির পরিমাণ বেড়ে গেলে, তাদের বিশাল এলাকা সাগরগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কোনো ক্ষতিপূরণের দাবি করতে পারবে না। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আসবে তাদের মর্জিমাফিকের ওপর।
একটা সমঝোতা স্মারকে দেশগুলো স্বাক্ষর করেছে। এর প্রয়োজন ছিল। কেননা বিশ্বের উষ্ণতা যে বেড়ে যাচ্ছে, সাগর উত্তপ্ত হচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছেÑ এ সবই বাস্তব। এ ব্যাপারে কারও কোনো বক্তব্য নেই। পৃথিবী উত্তপ্ত হচ্ছে, গ্রিনল্যান্ড ও এনটার্কটিকায় বরফ গলছে। এর জন্য একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়া প্রয়োজন ছিল। এটা সবাই উপলব্ধি করেন। কিন্তু কর্মপরিকল্পনাটা কী, কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমানো যাবে তার কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা প্যারিস সম্মেলনে নেওয়া হয়নি। এটা বলা যাচ্ছে বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে বায়ুম-লে কার্বনের পরিমাণ বাড়ছে। অর্থাৎ শিল্পে, কলকারখানায়, যানবাহনে অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহার করার ফলে বায়ুম-লে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু এই জ্বালানির ব্যবহার আমরা কমাব কীভাবে? জ্বালানি ব্যবহারের সাথে উন্নয়নের প্রশ্নটি সরাসরিভাবে জড়িত। জীবাশ্ম জ্বালানি কম ব্যবহার করলে কার্বন নিঃসরণ কম হবে, এটা সত্য। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিশ্বের কাছে কি বিশাল জ্বালানি আছে? উন্নয়নশীল বিশ্ব জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। উন্নত বিশ্বের কাছে ‘নয়া প্রযুক্তি’ থাকলেও তাদের অনীহা রয়েছে উন্নয়নশীল বিশ্বে এই প্রযুক্তি সরবরাহে। সোলার এনার্জির একটা বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও উন্নয়নশীল বিশ্বে এই এনার্জির ব্যবহার বাড়ছে না। বাংলাদেশে যে পরিমাণে এর ব্যবহার বাড়ানো উচিত ছিল তা কিন্তু হয়নি। কেননা এর জন্য যে খুচরা যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়, তা বিদেশ থেকে আনতে হয়। খরচ অনেক বেশি পড়ে, যা আমাদের সাধ্যের মধ্যে পড়ে না। এ সেক্টরে যতদিন পর্যন্ত না বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া যাবে, ততদিন বিকশিত হবে না। আর এই সেক্টর বিকশিত না হলে মানুষ জ্বালানির জন্য নির্ভরশীল থাকবে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় মানুষের নির্ভরশীলতা আরও বেড়েছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো এমনকি সাগরপাড়ের দেশগুলোর জ্বালানি দরকার। তারা বিকল্প জ্বালানি অর্থাৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্ভাবন করতে পারেনি। ফলে তাদের পক্ষে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করাও সম্ভব হবে না।
ফলে একটা প্রশ্ন থেকেই গেল যে, প্যারিস চুক্তি শেষ পর্যন্ত কি বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে আদৌ কোনো সাহায্য করবে? মার্কিন তথা বাংলাদেশীয় সংস্থাগুলোর স্বার্থ এখানে বেশি। জ্বালানি একটা বিশাল ‘ব্যবসা’। এই ‘ব্যবসা’ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এটা কখনই চাইবে না বাংলাদেশীয় সংস্থাগুলো। প্যারিসে একটি সমঝোতা হয়েছে। এর প্রয়োজন ছিল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওসিসটেমের অধ্যাপক মাইলেস এলেন তাই ইতোমধ্যে প্যারিস চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ৩৫০ অঙ্গসংগঠনটির প্রধান বিল মেকিব্বেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের সাথে জড়িত বড় বড় ব্যবসায়িক তথা বহুজাতিক সংস্থাগুলোর কারণে এই ‘সমঝোতা’ শেষ পর্যন্ত ভ-ুল হয়ে যাবে। দাতব্য সংস্থা অক্সফামও তাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। ফলে একটা সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বটে, কিন্তু তাতে আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। যারা অনলাইনে নিয়মিত বিভিন্ন জার্নাল পাঠ করেন, তারা দেখবেন প্যারিস চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ করার সংখ্যাই বেশি। তারপরও একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে এতগুলো দেশ এক সাথে প্যারিসে মিলিত হয়েছিল। বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই সেখানে গিয়েছিলেন। এবং তারা সবাই এক বাক্যে একটি চুক্তির কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ থেকেও প্রতিনিধি প্যারিসে পাঠানো হয়েছিল। বন ও পরিবেশমন্ত্রী সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বাংলাদেশ প্যারিস সমঝোতাকে স্বাগত জানালেও প্রতিনিধি দলের কোনো কোনো সদস্য স্বীকার করেছেন সমঝোতা স্মারকে অনেক বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে। এমনকি শিল্পোন্নত দেশগুলো যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বা আইএনডিসি জমা দিয়েছে তা রিভিউ করার প্রয়োজন রয়েছে। কেননা জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী বর্তমান শতাব্দীর শেষে বৈশ্বিক তাপমাত্রা তিন ডিগ্রির বেশি বাড়বে। অথচ চুক্তিতে ২ ডিগ্রির বেশি বাড়তে না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাঁচ বছর পর কার্বন নিঃসরণ কমানোর পর্যালোচনায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর লক্ষ্যমাত্রা পুনঃনির্ধারণ প্রয়োজন। সমঝোতা স্মারকে দুর্বলতা থাকলেও একটি ঐকমত্য হয়েছে, এটাই বড় কথা। শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের ‘কমিটমেন্ট’ এবার রক্ষা করবে, এটাই সবাই আশা করে
Daily Amader Somoy
20.12.15

0 comments:

Post a Comment