সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন একটি
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী জোটে বাংলাদেশু যোগ দিয়েছে। এই জোটকে বলা হচ্ছে
‘ইসলামিক মিলিটারি অ্যালায়েন্স টু ফাইট টেরোরিজম’ (আইএমএএফটি)। অর্থাৎ
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেই এই জোটের জন্ম। এখানে কোনো একটি সন্ত্রাসবাদী
সংগঠনের কথা বলা হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়া-ইরাকে জন্ম নেয়া ইসলামিক
স্টেট বা দায়েশের (আরবি নাম) বিরুদ্ধে আলাদাভাবে বিমান হামলা পরিচালনা করছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট ও রাশিয়া। অনেক আগেই মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে একটি জোট- ‘দ্য গ্লোবাল কোয়ালিশন টু
কাউন্টার আইএসআইএল’। এখানে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে আইএসআইএল তথা
ইসলামিক স্টেটের কথা। ৬৫টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত এই জোটের মূল টার্গেট
ইসলামিক স্টেট। এখন এর পাশাপাশি গঠিত হল আইএমএএফটি। একটির নেতৃত্বে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র, অপরটির নেতৃত্বে সৌদি আরব। উভয় জোটের স্বার্থ কি এক? অর্থাৎ
উভয় জোটই কি ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে? বিষয়টি আমার
কাছে অস্পষ্ট। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটে বাংলাদেশকে
যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশ এ জোটে যোগ দেয়নি। এখন সৌদি
আরবের নেতৃত্বাধীন জোটে বাংলাদেশ যোগ দিল। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ মার্কিন
নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিল না কেন? নাকি ওই জোটে যোগ দেয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ
হিসেবে আগে সৌদি জোটে যোগ দিল!
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ না দেয়ার পেছনে বাংলাদেশের
জোটনিরপেক্ষ নীতির কথা আমাকে বলতে চেয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার
আলম। এক টিভি টকশোতে তিনি আমাকে এ ব্যাখ্যাই দিয়েছিলেন। তবে জানিয়েছিলেন,
‘অসামরিক ও জাতিসংঘের উদ্যোগে যে কোনো উদ্যোগকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে।’
অর্থাৎ আমি ধরে নিয়েছি, যদি কোনো ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে সিরিয়ায়,
তাহলে বাংলাদেশ মার্কিন জোটকে সহযোগিতা করবে এবং প্রয়োজনে জোটে যোগ দেবে।
এখন সৌদি জোটে, যার চরিত্র অনেকটা সামরিক, বাংলাদেশ যোগ দিল। ফলে জোটে যোগ
দেয়া নিয়ে প্রশ্ন যে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। মজার ব্যাপার, বেশ কিছু দেশ
রয়েছে যেগুলো উভয় জোটেই আছে (জর্ডান, আরব আমিরাত, বাহরাইন, তুরস্ক, কুয়েত
ইত্যাদি)। সৌদি আরব মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটেও আছে। এখন অনেক প্রশ্ন সামনে
চলে এলো। সৌদি আরব নিজে যেখানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে এবং ওই
জোটেরও টার্গেট আইএসের সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড জব্দ করা, সেখানে দেশটি
আলাদাভাবে কেন সন্ত্রাসীদের উৎখাতের নামে আলাদা একটি জোট গঠন করল?এর
অনেক কারণ আছে। এক. সৌদি আরব নিজে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে অন্যতম একটি
‘অ্যাক্টর’ অর্থাৎ অন্যতম নির্ধারক হিসেবে নিজেকে দেখাতে চায়। অতীতের কোনো
সৌদি বাদশাহ এভাবে সৌদি পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো বড় ভূমিকা
পালন করেননি। কিন্তু বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের ‘অ্যাপ্রোচ’
একটু ভিন্ন। তিনি সৌদি আরবকে দেখতে চান এ অঞ্চলের রাজনীতির অন্যতম নির্ধারক
হিসেবে। তাই তার নেতৃত্বে একটি সামরিক জোটের প্রয়োজন ছিল। দুই. সৌদি আরব
পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে তার প্রভাব বাড়াতে চায়। এর লক্ষণ হিসেবে আমরা
দেখেছি ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের হস্তক্ষেপ তথা সৌদি বিমান বাহিনীর
ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ। এর আগে লেবাননের গৃহযুদ্ধে সৌদি ট্যাংক বহরকে আমরা
লেবাননে প্রবেশ করতে দেখেছি। অতীতে কুয়েতের আমির যখন ইরাকি সেনাদের দ্বারা
উৎখাত হন (১৯৯০), তখন সৌদি আরব আমিরকে আশ্রয় দিয়েছিল বটে, কিন্তু আমিরের
সমর্থনে কোনো সেনা বা বিমান পাঠায়নি। ২০১১ সালে তিউনিশিয়ায় ‘জেসমিন বিপ্লব’
জাইনাল আবেদিন বেন আলিকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও এবং বেন আলি সৌদি আরবে আশ্রয়
নিলেও সৌদি আরব তিউনিশিয়ায় হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু বাদশাহ সালমান বিন
আবদুল আজিজ ক্ষমতাসীন হয়ে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনেন। আর
তারই ফলস্বরূপ নতুন এক ‘সৌদি আরব’কে আমরা দেখছি। তিন. সৌদি আরবের
নীতিনির্ধারকদের একটা বড় ভয় ইরানকে নিয়ে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের
রাজনীতিতে ইরানের ভূমিকা বাড়ছে। ইরানের এই ভূমিকাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
এখন স্বীকারও করে। ইরানের সঙ্গে ছয়-জাতি পারমাণবিক চুক্তি, ইরানের ধর্মীয়
নেতা খামেনিকে ওবামার গোপন চিঠি লেখা ইত্যাদি প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্র এ
অঞ্চলে ইরানের ভূমিকাকে স্বীকার করে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরানের বিখ্যাত
দার্শনিক রামিন জাহানবেগলুর (Ramin Jahanbegloo) একটি মন্তব্য আমি উল্লেখ
করতে চাই। জাহানবেগলু লিখেছিলেন, 'from now on Iran will be a full partner
in the big game in the Middle East and the world including through
intensified sectarian proxy wars in the region.' অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে
সিয়া-সুন্নি যে দ্বন্দ্ব, সেখানে ইরান একটি ফ্যাক্টর এবং ইরানকে সঙ্গে
নিয়েই মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খুঁজতে হবে (পাঠক ইয়েমেন, ইরাক,
লেবানন এবং সৌদি আরবে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারেন)।
সৌদি রাজবংশের ভয়টা এখানেই- খোদ সৌদি আরবে শিয়া প্রভাবাধীন একটি
অভ্যুত্থান এবং সেই অভ্যুত্থানে রাজবংশের উৎখাতের আশংকা! এখন তথাকথিত
‘সন্ত্রাস দমনের’ নামে একটি বৃহত্তর সামরিক জোট সৌদি আরবের নিরাপত্তাকে
নিশ্চিত করতে পারে। চার. এই জোটে সিরিয়াকে রাখা হয়নি। এটা সবাই জানে, সৌদি
আরব চাচ্ছে সিরিয়ায় আসাদের উৎখাত। কিন্তু সৌদি পছন্দের তালিকায় আইএসও নেই।
সম্প্রতি আসাদবিরোধী দলগুলোর একটি সম্মেলন হয়ে গেল রিয়াদে। সেখানে এমন অনেক
দল অংশ নিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আছে। এক্ষেত্রে সৌদি
আরবের ভূমিকা কী হবে এসব দল ও জোটের বিরুদ্ধে? অনেকেই জানেন, ইসলামিক
স্টেটের নেতৃত্বে সিরিয়া ও ইরাকের একটা অংশ নিয়ে তথাকথিত একটি জিহাদি
রাষ্ট্র ‘সুন্নিস্তান’-এর জন্ম হয়েছে, যারা ওয়াহাবি মতাদর্শ ও আদি ইসলামিক
রাষ্ট্রের ধ্যান-ধারণায় পরিচালিত হচ্ছে। সৌদি রাষ্ট্রের ভিত্তিই হচ্ছে এই
ওয়াহাবি মতাদর্শ। এ ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে আইএসের সঙ্গে সৌদি
নীতিনির্ধারকদের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও আদর্শগতভাবে মিল তো আছেই। সুতরাং
সৌদি-আইএস সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। পাঁচ. সৌদি আরবের আয়ের উৎস হচ্ছে
তার তেলসম্পদ। সৌদি আরবে প্রমাণিত জ্বালানি তেলের রিজার্ভের পরিমাণ ২৫৯
মিলিয়ন ব্যারেল (বিশ্বের ২৪ ভাগ)। দৈনিক উৎপাদন ৭৯ লাখ ব্যারেল। তেলের দাম
কমে যাওয়ায় সৌদি রিজার্ভে টান পড়েছে। এটাও হতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যে
স্থলযুদ্ধ শুরু করে সৌদি আরব তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে চায়। মার্কিন জনমত
যুদ্ধের বিপক্ষে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে ওবামা প্রশাসন ২০১৬ সালের
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আর ‘যুদ্ধ’ শুরু করতে চায় না। এক্ষেত্রে সৌদি
আরব একটি ‘প্রক্সি ওয়ার’ শুরু করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মোদ্দা কথা,
‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ একটি সামরিক জোট গঠনে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যকে
হালকাভাবে নেয়া যাবে না।২০০১ সালে
যুক্তরাষ্ট্র যখন বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ শুরু করেছিল,
তখন কিন্তু সৌদি আরবকে অতটা তৎপর দেখা যায়নি। সঙ্গত কারণেই ২০১৫ সালে এসে
সৌদি আরব যখন সন্ত্রাসবিরোধী একটি জোট গঠন করার উদ্যোগ নেয়, তখন নানা
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এখানে সঙ্গত কারণেই যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে
তা হচ্ছে, বাংলাদেশ এই জোটে যোগ দিল কেন? বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ
পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘কারও সঙ্গে শত্রুতা
নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’ নীতি অনুসরণ করে আসছে। এখন এই জোটে যোগ দেয়ায়
বাংলাদেশ সেই নীতি থেকে সরে এলো কিনা, সেটা একটা প্রশ্ন। উপরন্তু
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৫তম অনুচ্ছেদে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা,
সংহতি ও উন্নয়নে’র কথা বলা হয়েছে। ২৫(ক)-তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ
‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তিপ্রয়োগ পরিহার এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ
নিরস্ত্রীকরণের জন্য চেষ্টা করিবেন’। অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে
হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথাও বলা
হয়েছে ওই অনুচ্ছেদে। তাই জোটে যোগ দিয়ে আগামীতে অন্য কোনো রাষ্ট্রের
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাংলাদেশ হস্তক্ষেপ করবে কিনা, ‘শক্তিপ্রয়োগে’ অংশ নেবে
কিনা, এ প্রশ্ন থাকলই। যদিও জোটের পূর্ণাঙ্গ ভূমিকা কী হবে তা এ মুহূর্তে
স্পষ্ট নয়।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
জানিয়েছেন, এই জোটের উদ্যোগে রিয়াদে একটি কেন্দ্র হবে। এবং এই কেন্দ্রের
মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী তথ্য-উপাত্ত ও অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে। তবে
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এসপিএ আমাদের জানাচ্ছে, ‘সন্ত্রাসের
বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামরিক অভিযান সমন্বয় ও তাতে সহায়তা করতে সৌদি নেতৃত্বাধীন
এ জোট গঠন করা হয়েছে।’ বাংলাদেশ আরও যুক্তি দেখিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির
অংশ হিসেবে অন্য মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ এই কেন্দ্রে যোগ দেয়ার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তত্ত্বগতভাবে এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশ সন্ত্রাসের
বিরুদ্ধে সোচ্চার। এ ক্ষেত্রে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে তথ্য বিনিময় আমাদের
অনেক সাহায্য করবে। বাংলাদেশে আইএসের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক আছে। আইএস আছে
কী নেই, এ নিয়ে সংশয় আছে। সাইট ইন্টেলিজেন্সের পক্ষ থেকে আইএসের অস্তিত্ব
এবং বেশ ক’টি হত্যাকাণ্ড ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে আইএসের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা
হলেও বাংলাদেশ সরকার তা অস্বীকার করেছে। এখন যদি আগামীতে এই জোট আইএসের
বিরুদ্ধে কোনো সামরিক অভিযান পরিচালনা করে, তাহলে বাংলাদেশ আইএসের টার্গেটে
পরিণত হতে পারে। এতে করে বাংলাদেশে আইএসের হুমকি আরও বাড়বে। আল কায়দা এ
অঞ্চলে (অর্থাৎ ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমারে) তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশের কোনো কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে সে
খবর আমরা জানি না। তবে স্থানীয় জঙ্গিরা যে আল কায়দা ও আইএসের সঙ্গে
যোগাযোগের চেষ্টা করছে- এ খবর গোয়েন্দারা আমাদের জানিয়েছে। এখন একটা ভয়ের
কারণ হয়ে দাঁড়াল, বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যেতে পারে।সৌদি
আরবের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থ কতটুকু
নিশ্চিত করতে পারবে, সে ব্যাপারে এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এক
সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ইসলামিক বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ
গুরুত্ব দেয়া হতো। সংবিধানের এই ধারাটি এখন আর নেই। বাতিল করা হয়েছে। ফলে
সৌদি জোটে যোগদানের কোনো প্রয়োজন আমাদের ছিল না। ভারত কোনো জোটেই যোগ
দেয়নি। ওমানও যোগ দেয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ দিল। এই জোটে অন্য যেসব দেশ
রয়েছে, সামরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে সবাই দুর্বল।বিশ্বে
বাংলাদেশের সামরিক নেতৃত্ব যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেছে। এখন সৌদি আরব
বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞতাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে। অথচ সৌদি আরব
এখনও বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে দেয়নি। ফলে জোটে যোগ দিয়ে
বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হবে- এ প্রশ্ন থাকলই। তবে এই জোটের ভবিষ্যৎ
ইতিমধ্যে নানা প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। জোটের অন্যতম শরিক পাকিস্তান কিছুটা
অবাকই হয়েছে এই জোট গঠনে এবং জোটে পাকিস্তানের নাম থাকায়। তাদের বক্তব্য,
পাকিস্তানের সঙ্গে পরামর্শ না করেই এ জোটের ঘোষণা দেয়া হয়। আমি নিশ্চিত নই,
এই জোট গঠনে বাংলাদেশের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা আদৌ হয়েছিল কিনা। সৌদি আরব
এ ধরনের একটি জোট গঠন করতে যাচ্ছে, কিংবা বাংলাদেশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে
প্রারম্ভিক আলোচনা হয়েছে- এটাও আমাদের অনেকের জানা নেই। ফলে সৌদি
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যখন ১৫ ডিসেম্বর এই
জোট প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন, তখন বিষয়টি আমাদের অবাকই করেছে। এমন হয়েছে
কিনা- সৌদি আরব একাই সিদ্ধান্ত নিয়ে তা জোটবদ্ধ দেশগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে
শুধু? এটা যদি সত্য হয়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। জোট নিয়ে পাকিস্তানের
প্রশ্ন তোলা এই আশংকাকেই সামনে নিয়ে এলো মাত্র।
Daily Jugantor
19.12.15
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment