রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ট্রাম্পের মুসলমানবিদ্বেষ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নতুন মাত্রা

যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বক্তব্য নতুন করে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ একটি মাত্রা এনে দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে সব মুসলমানের প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নাডিনোতে এক মুসলমান দম্পতির হামলায় ১৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর ট্রাম্প এই আহ্বান জানালেন। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আমেরিকা ও ইসলামকে কখনোই মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড় করিয়ে দিতে পারি না।’ একজনের দোষের জন্য কখনো পুরো ধর্মকে দোষারোপ করা যাবে না বলেও মনে করেন ওবামা। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনও ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। আর পেন্টাগনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য জাতীয় নিরাপত্তাকে দুর্বল করেছে। প্যারিসে নভেম্বরে আইএস জিহাদিদের হাতে ১২৯ জন মানুষ নিহত হওয়ার রেশ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে তাসফিন মালিক ও সৈয়দ রিজওয়ান ফারুক দম্পতির গুলিতে মারা গেল ১৪ জন। এই দম্পতির সঙ্গে আইএসের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে। এর আগে ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাইয়ে হামলা, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে নাইরোবির ওয়েস্ট গেটমলে হামলা, জানুয়ারিতে (২০১৫) প্যারিসের শার্লি এবদো ম্যাগাজিন কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা—সবই একই সূত্রে গাঁথা। এসব হামলা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে টুইন টাওয়ার হামলারই নতুন এক রূপ। অর্থাত্ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা ও এক দেশ থেকে অন্য দেশে তা ছড়িয়ে দেওয়া। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী মুসলমানবিদ্বেষী মনোভাব শক্তিশালী হচ্ছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিরা আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে—এমন একটি আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে আসিয়ান সম্মেলনের প্রাক্কালে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে ইসলামিক জঙ্গিরা তত্পর। এদের কর্মকাণ্ড একাধিকবার আন্তর্জাতিক সংবাদের জন্ম দিয়েছে। ফিলিপাইনে আবু সায়াফ গ্রুপের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কিংবা ইন্দোনেশিয়ায় জামিয়া ইসলামিয়ার হাতে বিদেশি নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এই দেশ দুটি সম্পর্কে বিশ্বে একটি বাজে ধারণার জন্ম দিয়েছে। এ অঞ্চলে আইএসের নেটওয়ার্ক কতটুকু সম্প্রসারিত হয়েছে, তা জানা না গেলেও আল-কায়েদার প্রভাব আছে। এ অঞ্চলের বিভিন্ন ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে আল-কায়েদা একটা সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ফলে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের জঙ্গিরাও যে এতে উত্সাহিত হবে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে জঙ্গি তত্পরতার সঙ্গে ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীকে জড়িত করলেও অভিযুক্ত জঙ্গিদের ব্যক্তিজীবন ও তাদের জীবনধারা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইসলাম ধর্মের সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। প্যারিস হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল হামিদ আবাউদ নিজে কোনো দিন কোরআন পড়েননি, নামাজও পড়তেন না। তাঁর চাচাতো বোন নারী বোমাবাজ হাসনা আইত বুলাচেন পশ্চিমা সংস্কৃতি ও জীবনে বিশ্বাসী ছিলেন—এমনটাই জানা যায়। ফলে জঙ্গি তত্পরতার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই বলেই অনেকে মনে করেন।
যে প্রশ্নটি এখন অনেকেই করার চেষ্টা করেন, তা হচ্ছে এর শেষ কোথায়? প্যারিস কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ার ট্র্যাজেডিই কি শেষ? যেভাবে প্যারিসে এখনো সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, তাতে কি এ ধরনের হামলা ভবিষ্যতে রোধ করা সম্ভব হবে? এর জবাব সম্ভবত ‘না’ বাচক। কেননা ইউরোপে বিশাল এক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে আইএস। একটি ‘শক্তি’ তাদের উত্সাহ জোগাচ্ছে। সম্ভবত ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে এই আন্দোলনের পেছনে। সুদূরপ্রসারী একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এবং ভবিষ্যতেও হবে বলে আশঙ্কা করছি। কতগুলো উদ্দেশ্য পরিষ্কার। ৯/১১-এর পর যেভাবে একটি ‘মুসলমানবিদ্বেষী’ মনোভাব সারা যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে গিয়েছিল, আজ প্যারিস ঘটনাবলির পর সারা ইউরোপেও তেমনি একটা ‘মুসলমানবিদ্বেষী’ মনোভাব ছড়িয়ে গেছে। এখানে মুসলমানরা (যেসব শরণার্থীকে ইতিমধ্যে ইউরোপে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে) সব সময় থাকবে এক ধরনের ‘নিরাপত্তাবলয়’-এর ভেতর। তাদের সব কর্মকাণ্ড মনিটর করা হচ্ছে। তারা ইউরোপে আশ্রয় পেয়েছে বটে; কিন্তু তাদের এক ধরনের ‘বস্তিজীবন’ যাপনে বাধ্য করা হবে। তাদের জন্য তৈরি করা হবে ‘কংক্রিটের বস্তি’ এবং সেখানেই তাদের বসবাসে বাধ্য করা হবে। ইউরোপের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা নিষিদ্ধ করা হবে। জার্মানিতে হিটলার যেভাবে ইহুদিদের ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’ রাখতেন কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী যুগে যেভাবে হোমল্যান্ড সৃষ্টি করে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা করে রাখা হতো, অনেকটা সেভাবেই সিরীয় মুসলমান অভিবাসীদের এখন এক ধরনের ‘ঘেটো’ জীবনযাপনে বাধ্য করা হবে। উগ্রপন্থীরা তথা কনজারভেটিভরা প্যারিস ঘটনায় ‘উপকৃত’ হয়েছে। ফ্রান্সে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তারা নির্বাচনে ‘বিজয়ী’ হয়ে জাতীয় রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে। এখন তাদের দিয়ে এক ধরনের ‘নোংরা রাজনীতি’ করানো হবে। অর্থাত্ ‘ইউরোপ হবে মুসলমানমুক্ত’—এ ধরনের একটি স্লোগান ইউরোপের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। ইতিমধ্যে পোল্যান্ডসহ বেশ কটি দেশ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বাদ দিয়ে খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বী শরণার্থীদের গ্রহণ করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে সেখানে কট্টরপন্থীরা সক্রিয় হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য এর বড় প্রমাণ। তাঁর এই মুসলমানবিদ্বেষী মনোভাব বাহ্যত আইএসকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘অবস্থান’ করতে সাহায্য করবে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ৬৫ দেশের সমন্বয়ে একটি আইএসবিরোধী অ্যালায়েন্স রয়েছে। রাশিয়া এই জোটে নেই। কিন্তু রাশিয়া আলাদাভাবে আইএসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। তবে অচিরেই আইএসবিরোধী অভিযানে ফাটল দেখা দেবে। পশ্চিমা শক্তিগুলোর মাঝে যদি ফাটল থাকে, তাতে লাভ ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের। অধ্যাপক চসসুডোভস্কি তাঁর বহুল আলোচিত গ্রন্থ ঞযব ষেড়নধষরুধঃরড়হ ড়ভ ডধত্ : অসবত্রপধ'ং খড়হম ধিত্ ধমধরহংঃ ঐঁসধহরঃু গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, বিশ্বের সর্বত্র জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন ‘হাত’ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নামে যে অভিযান পরিচালনা করে আসছে, তাতে মূলত তিনটি উদ্দেশ্য কাজ করছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করা, অর্থনৈতিক অবরোধ ও সরকার পরিবর্তন। ইরাক ও লিবিয়ার ক্ষেত্রে এই স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করা হয়েছে। সিরিয়ার ক্ষেত্রে এই স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করা হলেও তা সফল হয়নি। এই স্ট্র্যাটেজি কোনো পরিবর্তন ডেকে আনতে পারেনি। যেসব দেশে এই স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ করা হয়েছে, সেখানে দরিদ্রতা বেড়েছে, অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে এবং এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে (ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়া)। ‘মানবাধিকার রক্ষা ও পশ্চিমা গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার নামে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা সেখানে কোনো সুফল বয়ে আনেনি।
ইউরোপে কিংবা পশ্চিম আফ্রিকায় অতিসম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে সেখানে সন্ত্রাসীরা একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এতে সন্ত্রাসীরা প্যারিসের সমাজজীবনের কত গভীরে প্রবেশ করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়। গোয়েন্দাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে একাধিক স্থানে আক্রমণ চালানো হয়েছিল। খোদ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ যখন একটি স্টেডিয়ামে ফুটবল ম্যাচ উপভোগ করছিলেন, ওই স্টেডিয়ামের বাইরে তখন তিন আত্মঘাতী বোমারু নিজেদের বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দিয়েছিল। গোয়েন্দারা সেটা আঁচ করতে পারেনি। চিন্তা করা যায় সন্ত্রাসীরা কালাশনিকভ রাইফেল ব্যবহার করে ‘পাখির মতো’ নির্বিচারে একটি কনসার্ট হলে মানুষ হত্যা করেছিল। এই রাইফেল সিরিয়া থেকে আসেনি। সংগ্রহ করা হয়েছিল ফ্রান্সের ভেতর থেকেই। ফ্রান্সে যে এ রকম একটি হামলা হতে পারে, তা ইসলামিক স্টেটের প্রপাগান্ডা ম্যাগাজিন ‘দাবিক’-এ ফেব্রুয়ারি মাসের সপ্তম সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছিল। ফ্রান্স কেন, সব ইউরোপীয় রাষ্ট্র তথা যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা এখানেই যে ‘দাবিক’-এ অভিযুক্ত আবাউদের (ফ্রান্সে তাঁর পরিচিতি ছিল আবু উমর আল বালঝিকি নামে) সাক্ষাত্কার ছাপা হলেও তা প্রতিরোধে তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। যেমনটি তারা নিতে পারেনি নিউ ইয়র্কে  ‘টুইন টাওয়ার’-এর ক্ষেত্রেও। টুইন টাওয়ারে হামলার ১৪ বছর পর প্যারিসে বড় ধরনের একটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হলো। এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরপরই আইএসের অপারেটিভরা ক্যালিফোর্নিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা চালাল।
২০০১ সালে অস্তিত্ব ছিল আল-কায়েদার। আজ দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়েছে ইসলামিক স্টেট। টার্গেট একটাই—মুসলমানবিরোধী একটা জগত্ গড়ে তোলা। ২০০১ সালের পর দীর্ঘদিন মুসলমানবিরোধী একটা মনোভাব যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন মুসলমানরা, যারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তারা সেখানে একটা আতঙ্কের মধ্যে ছিল। সেই পরিবেশ থেকে বের হয়ে এসে মুসলমানরা যখন মার্কিন সমাজে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে, ঠিক তখনই ক্যালিফোর্নিয়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আইএসের সম্পৃক্ততা ‘আবিষ্কৃত’ হলো। তাসফিন রিজওয়ান দম্পতি যে বাড়িতে থাকতেন, সেখানে পুলিশ হানা দিয়ে বেশ কিছু বিস্ফোরকও পেয়েছে। এ খবর আমরা পেয়েছি পত্রপত্রিকা থেকে। এ ঘটনা মার্কিন সমাজে যে প্রভাব ফেলবে, মুসলমানবিদ্বেষী একটা মনোভাব যে আবারও সর্বত্র ছড়িয়ে যাবে, তা একরকম নিশ্চিত করেই বলা যায়। মুসলমানবিদ্বেষী মনোভাব কেন শক্তিশালী হয়েছে তার স্পষ্ট কারণও রয়েছে। তুলনামূলক বিচারে মার্কিন সমাজে মুসলমানরা অতটা ভয়ংকর নয়, বরং শান্ত ও শিক্ষিত। মাত্র ১ শতাংশ মুসলমান বাস করে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০৫০ সালে তা হবে ২.১ শতাংশ। মুসলমানরা যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার হারে দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী। এমনকি মার্কিনিদের চেয়েও মুসলমানরা শিক্ষিত। প্রথম অবস্থানে রয়েছে ইহুদিরা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রায় দুই হাজার ৫০০ মসজিদ রয়েছে, যে মসজিদগুলো প্রধানত জাতিগতভাবেই প্রতিষ্ঠিত। যেমন বাংলাদেশি মুসলমানদের নিজস্ব মসজিদ রয়েছে, তেমনি পাকিস্তানি আমেরিকানদেরও আলাদা মসজিদ রয়েছে। ৯/১১-এর ঘটনাবলির পর এই মসজিদগুলো বারবার আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশি আমেরিকানরা যেখানে বসবাস করে (বিশেষ করে নিউ ইয়র্কে) সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে তারা বাসাবাড়িতে মার্কিন পতাকা উত্তোলন করে রেখেছে দীর্ঘদিন। সেই পরিস্থিতি অবশ্য এখন আর নেই। তবে সর্বশেষ ক্যালিফোর্নিয়ার ঘটনাবলির পর মুসলমানবিদ্বেষী মনোভাবটা আবার চাঙ্গা হবে এবং রিপাবলিকানরা এটাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইস্যু করবে—এটা দিব্যি দিয়ে বলা যায়। ব্যক্তিজীবনে ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত। চূড়ান্ত বিচারে তিনি মনোনয়ন না পেলেও মনোনয়নপ্রত্যাশী ট্রেড ক্রুজ কিংবা বেন কারসন কোনো অংশে কম যান না। মুসলমানবিদ্বেষী হিসেবে এ দুজনেরও পরিচিতি আছে। ক্যালিফোর্নিয়ার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এই দৌড়ে জেব বুশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। রিপাবলিকান শিবিরে কট্টরপন্থীরা শক্তিশালী হচ্ছে। ওবামা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বটে; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে মার্কিন সমাজে যে মুসলমানবিরোধী জনমত শক্তিশালী হচ্ছে, তা তিনি উপেক্ষা করবেন কিভাবে? টেক্সাসের স্কুলের ছোট্ট বালক আহমেদ মোহাম্মদের ‘কাহিনী’ নিশ্চয়ই আমাদের সবার মনে আছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে আমরা ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর নতুন এক রূপ প্রত্যক্ষ করব। ১৪ বছর পর নতুন করে আবারও ‘মুসলমানবিরোধী’ রাজনীতি শুরু হবে! সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশ আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন মেরিন সেনা পাঠালেও লিবিয়ায় ওবামা কোনো সেনা পাঠাননি। এমনকি সিরিয়ায় সেনাবাহিনী পাঠানোর একটা সম্ভাবনা তৈরি হলেও (২০১৪) ওবামা শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলকেই বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণের নির্দেশ দিতে তিনি ভুল করেননি। পরিস্থিতি গত এক বছরে আরো অবনতি হয়েছে। আইএস জঙ্গিরা তাদের জঙ্গি তত্পরতা  বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে তত্পর হয়েছে। আবারও নতুন করে এক ধরনের ‘ইসলাম ফোবিয়ায়’ আক্রান্ত হতে পারে বিশ্ব! ‘৯/১১ সিনড্রোম’ (টুইন টাওয়ারে হামলা, ২০০১) নতুন করে আবার ফিরে আসছে! অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায় নতুন করে যে ‘ইসলাম ফোবিয়া’ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তাতে রিপাবলিকানদের ২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে পারে। যারা পর্দার অন্তরালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘রাজনীতি’ নিয়ন্ত্রণ করে তারা এটিই চাইছে। বিশ্বে উত্তেজনা কারোরই কাম্য নয়। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, তথাকথিত এই ‘ইসলাম ফোবিয়া’ অর্থাত্ মুসলমানবিদ্বেষী মনোভাব বিশ্বে আবার নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। এতে বিস্মিত হবে বিশ্বশান্তি। Daily Kalerkontho 15.12.15

0 comments:

Post a Comment