রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

রোহিঙ্গা সংকটে আমাদের কূটনীতি কতটা সফল


সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহল যতটা সোচ্চার হয়েছে, আমাদের কূটনীতি কি ততটা সফল হয়েছে? এই সংকটের শুরু গত ২৫ আগস্ট থেকেÑ যখন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। এর পর প্রায় তিন মাস পার হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের কোনো ইতিবাচক মনোভাব পরিলক্ষিত হয়নি। তবে এটা যে একটা বড় ধরনের সংকট, তা আন্তর্জাতিক মহল স্বীকার করে নিয়েছে। গত রবিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) তিনটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা (জাপান, জার্মানি ও সুইডেন) ঢাকা সফর করে মিয়ানমার গেছেন। সেখানে তারা এশিয়া-ইউরোপ মিটিং বা আসেম সম্মেলনে যোগও দিয়েছিলেন। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও আসেম সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রাপ্তি কী? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাব আমরা কতটুকু কাজে লাগাতে পেরেছি? ১৬ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটির ভোটাভুটিতে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। ১৩৫টি রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের একটি বড় বিজয় অর্জিত হয়েছে। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে রাশিয়া ও চীন। আর ভারত ভোটাভুটিতে অনুপস্থিত ছিল। এর ব্যাখ্যা আমরা কীভাবে দেব? চীন ও রাশিয়ার জাতীয় স্বার্থ রয়েছে মিয়ানমারে। এ বিষয়টি আমরা বহুবার আলোচনা করেছি। আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারিনি। বাংলাদেশে রাশিয়ার যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে। রাশিয়া থেকে আমরা কয়েক হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র কিনছি। বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে দিচ্ছে রাশিয়া। নতুন করে বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। চীনও আমাদের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা প্রশ্নে আমরা চীন ও রাশিয়ার কাছে আমাদের ‘অবস্থান’ তুলে ধরতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এটা ঠিক, মিয়ানমারে চীন ও রাশিয়ার স্বার্থ রয়েছে। জাতীয় স্বার্থের আলোকে দেশ দুটি তাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে। তবে রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের সরকারিনীতি কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে দেশান্তরিত হয়, তখন ওই সমাজকে গণতান্ত্রিক বলা যাবে না। পশ্চিমাদের কাছে একটা প্রত্যাশা ছিল সু চিকে ঘিরে। তাদের ধারণা ছিল, মিয়ানমারে সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু করবেন সু চি। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা গেল, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গোষ্ঠীস্বার্থেই তিনি কাজ করছেন। রোহিঙ্গা ইস্যু সামনে রেখেই সু চি যে ব্যর্থ হয়েছেন, এটা আগামীতে সেনাবাহিনী ব্যবহার করবে। সেনাবাহিনীর পক্ষে এটা বলা সহজ হবে যে, মিয়ানমারে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণে সু চি ব্যর্থ হয়েছেন। ২০১৫ সালের নভেম্বরে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে তথাকথিত ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর সংসদ বসেছিল ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে অং সান সু চি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন হাতিন কিয়াউ (ঐঃরহ কুধ)ি। তার মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালে। এর আগে ২০২০ সালের দিকে সেখানে নির্বাচন হবে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, এতে বহির্বিশ্বে সু চির ভাবমূর্তি যথেষ্ট নষ্ট হয়েছে। পুনরায় তার ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল অং চাইয়াং হতে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। সেনাবাহিনীর সমর্থনকারী একাধিক রাজনৈতিক দল রয়েছে। আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী এসব রাজনৈতিক দল ব্যবহার করবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের কী হবে? মিয়ানমার কি তাদের ফিরিয়ে নেবে? রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার কয়েকটি শর্তের কথা বলছে। প্রথমত রয়েছেÑ তারা যে মিয়ানমারের নাগরিক, তা প্রমাণ করতে হবে। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার। মিয়ানমারের এসব নাগরিককে তারা বলছে ‘বাঙালি’। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবেন না। কেননা তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জীবন বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন। ফলে তাদের কাছে নাগরিকত্ব প্রমাণ করা সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র থাকার কথা নয়। দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গা সন্তানদেরও প্রমাণ করতে হবে তাদের মা-বাবা রাখাইনে অনেক আগে থেকেই বসবাস করে আসছিলেন। এটিও সম্ভব হবে না। তৃতীয়ত, রাখাইনের বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বাড়িঘরের কোনো অস্তিত্ব নেই। ফলে রোহিঙ্গাদের পক্ষে তাদের বাড়িঘরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছেন। নতুন করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ‘আস্থার সংকট’-এর যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা রয়ে গেছে। ফলে রোহিঙ্গারা কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইবেন না। একটু সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, রোহিঙ্গা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এতে মিয়ানমারের রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটেছে বলে বলা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের অবস্থান আশাব্যঞ্জক নয়। অং সান সু চিসহ মিয়ানমারের নেতারা মিথ্যাচারের আশ্রয় নিচ্ছেন বারবার। ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত আসিয়ানের ৩১তম সম্মেলনে সু চি বলেছিলেন, সমঝোতা চুক্তি হলে তিন সপ্তাহের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। এটা সময়ক্ষেপণ করার একটা কৌশল। এর আগে গত অক্টোবরে সু চি বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা ফিরতে চান না। তিনি একবার এমন কথাও বলেছেন যে, মুসলমানরা কেন চলে যাচ্ছেন, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এসেছিলেন মিয়ানমারের বিশেষ দূত কিউ টিন। কিন্তু ফল শূন্য। তাই একাধিক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বাংলাদেশ সফর, এমনকি আসেম শীর্ষ সম্মেলনও আমাদের জন্য একটি সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। আমরা ওই সম্মেলন আমাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারি। এ নভেম্বরেই আসছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বাংলাদেশে এসে মিয়ানমারেও যাবেন। আমরাও এ সুযোগটি আমাদের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারি। মোদ্দা কথা, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের পাশে আছে। এখন দরকার কূটনৈতিক যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করা। দুঃখজনক হলেও আমরা তা পারিনি। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসেম সম্মেলনে যোগদানের আগে ঢাকা সফর করে গেলেন গত শনিবার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দেখাও হয়েছে। নিশ্চয় বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরেছে। আসেম সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার থেকে মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিদোতে ওই শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। আসেম (অঝঊগ-অংরধ-ঊঁৎড়ঢ়ব গববঃরহম) একটি বড় সংগঠন। বর্তমানে ৫১টি দেশ ও দুটি আঞ্চলিক সংস্থা আসেমের সদস্য। ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশ (ভারতসহ) এবং চীন আসেমের সদস্য। ফলে আসেম সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বাংলাদেশ একটি সুযোগ পাবে রোহিঙ্গা সমস্যাটা তুলে ধরার। আসিয়ান সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রশ্নে কোনো আলোচনা হয়নি বটে তবে আসিয়ানভুক্ত অনেক দেশ ওই সংকটটি সম্পর্কে অবগত। আমাদের উচিত ছিল ওইসব দেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রশ্নে একটা শক্ত অবস্থানে যাওয়া। বিশেষ করে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া কিংবা থাইল্যান্ড বরাবরই রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের ভূমিকার সমালোচনা করে আসছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী কুয়ালালামপুরে আয়োজিত একটি বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব পর্যন্ত দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের কোনো প্রতিনিধি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীÑ কেউ এসব দেশে গেছেন, এটা আমার জানা নেই। ২০১২ সালে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হলে শত শত রোহিঙ্গা যখন সাগরে দিনের পর দিন ভাসছিলেন, তখন থাইল্যান্ড একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ব্যাংককে। এর পর মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বের করে দেওয়ার প্রবণতা কমেছিল। আমরা তারপর থেকে রোহিঙ্গাদের প্রশ্নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করিনি। এর রেশ ধরেই আবারও সৃষ্টি হয়েছে ওই সংকট। তাহলে এর সমাধান হবে কীভাবে? বাকি রোহিঙ্গারা এভাবেই ক্যাম্পে থেকে মানবেতর জীবনযাপন করবেন? যেহেতু রোহিঙ্গা সংকটের একটি মানবিক দিক আছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যথেষ্ট সচেতন, সেহেতু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি সংবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত শনিবার ঢাকা সফর করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংই কথা বলেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপে সহযোগিতা করতে চীনের আগ্রহের কথা তিনি জানিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো খবর। চীন আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। বাংলাদেশে চীনের যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে। চীনের যথেষ্ট প্রভাব আছে মিয়ানমার সরকারের ওপর, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর ওপর তাদের প্রভাব অনেক। এ ক্ষেত্রে চীন যদি উদ্যোগ নেয়, তাহলে একটা অর্থপূর্ণ সংলাপ হতে পারে। দ্বিতীয় সংবাদটিও উৎসাহব্যঞ্জক। মার্কিন সিনেটর জেফ মার্কেল গত শনিবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত মার্কিন কংগ্রেসে উপস্থাপন করবেন। তার সঙ্গে আরও এক সিনেটর ও তিন কংগ্রেসম্যান ছিলেন। নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় ঘটনা। আমরা ওই সফর আমাদের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারি। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিবারক কূটনীতি বলে একটা কথা আছে। বিশ্ব রাজনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে, ওই পরিবর্তন সামনে রেখে ও শান্তি নিশ্চিত করতে অনেক রাষ্ট্র নিবারক কূটনীতি বা ‘প্রিভেনটিভ ডিপ্লোমেসি’ প্রয়োগ করে। নিবারক কূটনীতির মূল কথা হচ্ছে, দুটি দেশ যাতে কোনো বিপদ বা বিতর্কে জড়িয়ে না যায়Ñ যাতে করে এ বিপদ সংঘর্ষের পর্যায়ে উপনীতি না হয় এবং যাতে সব বিপদ নিষ্পত্তি করার জন্য পারস্পরিক বিশ্বাসের আবহাওয়া সৃষ্টি করা যায়, এ লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া। রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ এই নিবারক কূটনীতি প্রয়োগ করে আসছে। তারপরও কথা থেকে যায়। সদ্য আসা ৬ লাখ ২০ হাজারসহ মোট ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে হবে মিয়ানমারকে। তারা মিয়ানমারের নাগরিক। চীনের ‘সংলাপ’-এর উদ্যোগকে আমি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। চীনের ওপর আস্থা রাখাটা জরুরি। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এখন দেখার পালা চীন কী উদ্যোগ নেয়! আমাদের ভুললে চলবে না, চীনের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে মিয়ানমারে। রাখাইনে ৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার খরচ করে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে চীন (যা এক সময় করার কথা ছিল কক্সবাজারের সোনাদিয়ায়) এবং ২ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে তেল ও গ্যাস উত্তোলন খাতে। গত এপ্রিলে সেখানে উত্তোলন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৭৭০ কিলোমিটার দূরে চীনের ইউনান প্রদেশে। এখন চীন যদি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মধ্যস্থতা করে, তাহলে তা আমাদের জন্য হবে বড় পাওয়া। এ জন্যই আমাদের যা দরকার, তা হচ্ছে দক্ষ কূটনীতি। সরকার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিশনও গঠন করতে পারেÑ যারা সরকারকে সহযোগিতা করবেন এবং প্রয়োজনে বিদেশে রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন।
Daily Amader Somoy
21.11.2017

0 comments:

Post a Comment