রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ট্রাম্পের সফর কতটা বৈশ্বিক, কতটা সাম্রাজ্যবাদী?

Image result for Trump cartoon

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সদ্য সমাপ্ত এশিয়া সফর একাধিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট দীর্ঘ সময় (১২ দিন) এশিয়া সফর করলেন। দ্বিতীয়ত, তার চীন সফর ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা ট্রাম্পের শাসনামলে দু’দেশের সম্পর্ক কোনদিকে যায়, তা নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা-কল্পনা ছিল। ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার আগে ও পরে চীন সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছিলেন তাতে একটা ধারণার জন্ম হয়েছিল যে, তিনি চীনের ব্যাপারে বেশ কঠোর হবেন। তাই তার চীন সফরের দিকে সবার বিশেষ দৃষ্টি ছিল। তৃতীয়ত, তিনি ভিয়েতনামে অনুষ্ঠিত অ্যাপেক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। ট্রাম্প চলতি বছরের প্রথমদিকে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তিটি বাতিল করে দেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলভুক্ত ১২টি দেশের সঙ্গে অ্যাপেক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। তাই দেখার বিষয় ছিল তার ওই সফরে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়।


ট্রাম্পের এ সফরে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন দিকে টার্ন নিয়েছে। বলা যেতে পারে, চীনের ব্যাপারে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। তাকে চীনে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে, যা ওবামার শেষ সময়ে তার চীন সফরের সময় দেয়া হয়নি। চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক সম্পর্ক চীনের অনুকূলে। এ নিয়ে অতীতে ট্রাম্প নানা বিরূপ মন্তব্য করেছেন। চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথাও তিনি বলেছিলেন। কিন্তু চীনে এসে তিনি তার সুর বদল করলেন। বললেন, বাণিজ্য ঘাটতির জন্য চীনকে দায়ী করা যাবে না। তিনি উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন এবং একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন। তার সফরে বাণিজ্য ছিল প্রধান। উল্লেখ্য, এ সফরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২৫ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চীনের ‘জ্বালানি ক্ষুধা’ মেটাতে আলাস্কা থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস চীনে রফতানি করা হচ্ছে। ৩৭০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ৩০০টি বোয়িং বিমানও কিনবে চীন। এ ক্ষেত্রে চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়ার কারণে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ‘কৌশলগত সম্পর্কের’ ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এটা অনেকের কাছে স্পষ্ট, দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটা চিন্তার কারণ। তাই একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল যে, চীনের বিরুদ্ধে প্রক্সি বাহিনী হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো কৌশল। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে ব্যবহার করেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। তখন ইউরোপে কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হয়েছিল। আজ একুশ শতকে এসে স্নায়ুযুদ্ধের নতুন ক্ষেত্র হয়েছে এশিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়নের বদলে চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট। আর চীনের বিরুদ্ধে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারতকে ব্যবহার করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তাই ভারতকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র।

চীনের সঙ্গে ভারতের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচির ব্যাপারে ভারতের আপত্তি রয়েছে। ভারত তাতে যোগ দেয়নি, যদিও বাংলাদেশ যোগ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবহার করতে চায়। অনেকের মনে থাকার কথা, কিছুদিন আগে ভারত দক্ষিণ চীন সাগরে ৪টি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছিল। ভারত ভিয়েতনাম নিয়ন্ত্রিত এলাকায় দক্ষিণ চীন সাগরে গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাব্যতা নিয়ে গভীর কূপ খননে নিয়োজিত রয়েছে। চীন এ কাজকে ভালো চোখে দেখছে না। ডোকলাম নিয়ে অতিসম্প্রতি ভারত ও চীনের দ্বন্দ্ব ও সম্ভাব্য একটি সংঘর্ষের খবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, আফগানিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে নয়া স্ট্র্যাটেজি, তাতে যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত সেখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করুক। আফগানিস্তানে ভারতের ভূমিকা বাড়ছে। সেখানে ভারতের একটি বিমান ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভারত মহাসাগরে প্রভাববলয় বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে চীনের একধরনের ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ চলছে। চীনের পাশাপাশি ভারতও ভারত মহাসাগরভুক্ত কোনো কোনো দেশে তাদের নৌঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করছে। ফলে চীনকে ‘ঘিরে ফেলার’ যুক্তরাষ্ট্রের যে দীর্ঘ স্ট্র্যাটেজি তাতে ভারত অন্যতম অংশীদার হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই ট্রাম্প যখন এশিয়ায় দীর্ঘ সফরে এলেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক নিয়েও আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল অনেকের।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ট্রাম্প তার চীন সফরে চীনবিরোধী কোনো বক্তব্য দেননি। চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। তিনি ‘নিষিদ্ধ নগরী’ (বেইজিং) পরিদর্শন করেছেন। সঙ্গে ছিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ট্রাম্প তার নাতির গাওয়া একটি চীনা সঙ্গীত শি জিনপিংকে শুনিয়েছেন। এই সঙ্গীত শুনে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই গায়কী ‘এ-প্লাস’ পাওয়ার যোগ্য। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে প্রশংসা করতে তিনি এতটুকু দ্বিধাবোধ করেননি। সম্প্রতি চীনে কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কংগ্রেস শেষ হয়েছে। কংগ্রেসে শি জিনপিং আবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে ‘মহান নেতা’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এমনকি তাকে ‘রাজার’ সঙ্গে তুলনা করতেও দ্বিধাবোধ করেননি (গার্ডিয়ান, ২৫ অক্টোবর ২০১৭)। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে হামবুর্গে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল। এবার আবারও তাদের সাক্ষাৎ হল।

সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে চীনের কোনো কোনো সিদ্ধান্তে ট্রাম্প খুশি। চীন উত্তর কোরিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে চীন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ভালো করেই জানে, উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ করতে হলে চীনের সাহায্য প্রয়োজন। এজন্যই ট্রাম্প চীনে গিয়ে চীনবিরোধী কোনো শক্ত মন্তব্য করেননি। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে উত্তর কোরিয়াবিরোধী একটি অ্যালায়েন্স গড়ে তুলতে হলে ট্রাম্পের প্রয়োজন চীনের সহযোগিতা। তবে দক্ষিণ চীন সাগর প্রশ্নে তিনি ‘স্ট্যাটাস কো’ পন্থা অবলম্বন করেন কিনা, সেটিই বড় প্রশ্ন এখন। দক্ষিণ চীন সাগরের আশপাশে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ নিয়মিত টহল দেয়। এটা চীন কোনোমতে মেনে নেয়নি। চীন মনে করে এ অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজের চলাচল তার সার্বভৌমত্ব খর্বের শামিল। দক্ষিণ চীন সাগর চীনের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করে বেইজিং। ইতিমধ্যে চীন সেখানে তার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রচুর গ্যাস ও তেল রয়েছে এ অঞ্চলে, যা কিনা চীনের জ্বালানি ক্ষুধা মেটাতে সাহায্য করবে। এ অঞ্চলের ওপর তাইওয়ান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামেরও দাবি রয়েছে। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালত চীন-ফিলিপাইন দ্বন্দ্বে ফিলিপাইনের দাবির পক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু ফিলিপাইন চীনের আর্থিক সহযোগিতার (২৪ বিলিয়ন ডলার) পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর তার দাবি থেকে সরে এসেছে। চীনের সঙ্গে ফিলিপাইনের সম্পর্ক এখন ভালো। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতার্তে ইতিমধ্যে চীন সফর করেছেন। এ এলাকার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণ এলাকাটির স্ট্রাটেজিক গুরুত্ব। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার ষষ্ঠ নৌবহরের রসদ সরবরাহের জন্য এ রুটের গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং দক্ষিণ চীন সাগরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সীমান্ত না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র এ এলাকার ব্যাপারে তার আগ্রহ হারায়নি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে চীন সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দক্ষিণ চীন সাগরের প্রশ্নটি উত্থাপন করেননি। বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সফরের সময় সঙ্গত কারণেই উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেছেন। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অ্যালায়েন্স গড়ে তুলতে তিনি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে ব্যবহার করবেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় ইতিমধ্যে ‘থাড’ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। এটি দেশটিকে উত্তর কোরিয়ার যে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা করবে। যদিও ‘থাড’ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিয়ে একধরনের ‘বিভ্রান্তি’ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, ‘থাড’ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সব খরচ দক্ষিণ কোরিয়াকে বহন করতে হবে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া তাতে রাজি হয়নি। এ বিরোধের কোনো সমাধান হয়নি। তবে একটা ভালো খবর হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালে ট্রাম্প প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী অসামরিক এলাকায় যেতে পারেননি। এতে করে উত্তর কোরিয়া যে কোনো ধরনের ‘প্রভোকেশন’ থেকে নিবৃত্ত থাকবে। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কেন্দ্রে ‘আগাম হামলা’ চালাতে পারেন! প্রেসিডেন্ট বুশ ২০০৩ সালে ইরাকে ‘আগাম হামলা’ চালিয়েছিলেন। বুশের যুক্তি ছিল, সাদ্দাম হোসেনের কাছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র রয়েছে। সাদ্দাম হোসেন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা চালানোর(?) আগেই বুশ ইরাকের সব সমরাস্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। অথচ পরে জানা গেল সাদ্দাম হোসেনের কাছে কোনো ধরনের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ছিল না। এখন ট্রাম্প একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে। আগাম হামলা বা প্রিয়েমটিভ অ্যাটাকের সূচনা যাতে ট্রাম্প করতে না পারেন, সেজন্য ডেমোক্রেটরা কংগ্রেসে একটি বিল উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। এ বিল কংগ্রেসে পাস হলে ট্রাম্প আর উত্তর কোরিয়ায় আগাম হামলা চালাতে পারবেন না। তারপরও চূড়ান্ত বিচারে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেন, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হয়ে টিপিপি চুক্তি বাতিল ঘোষণা করেছেন। প্রশান্ত মহাসাগরের সীমান্তঘেঁষা ১২টি দেশ (যে দেশগুলোর কয়েকটিতে সফর করলেন ট্রাম্প) এই টিপিপির অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশ্বের ৪০ ভাগ জিডিপির অধিকারী এ দেশগুলো। টিপিপির মাধ্যমে একটি শুল্কমুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র টিপিপি বাতিল করায় অন্য দেশগুলো কী করবে, তা স্পষ্ট নয়। চীন টিপিপিতে ছিল না। ফলে বাকি ১১টি দেশ (যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া) চীনের সঙ্গে এ ধরনের একটি চুক্তি করতে পারে। বলা ভালো, জাপান এ চুক্তিটি ইতিমধ্যে ‘রেটিফাই’ করেছে। ট্রাম্পের এ সফরে টিপিপির বিকল্প নিয়ে তেমন একটা আলোচনা না হলেও ট্রাম্প বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে টিপিপিভুক্ত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্তভাবে তাদের পণ্যের যে সুবিধা পেত, তা এখন না থাকায় এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য কীভাবে বাড়বে, তা নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকলই। উপরন্তু টিপিপিভুক্ত ১১টি দেশ যদি সত্যি সত্যিই চীনের সঙ্গে একটি শুল্কমুক্ত চুক্তি করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এটাকে ভালো চোখে দেখবে না, এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে ‘বাণিজ্য যুদ্ধের’ সম্ভাবনা বাড়বে বৈকি!

আগামী দিনের বিশ্ব রাজনীতিতে এশিয়া-প্যাসিফিক একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তার উপস্থিতি বাড়াতে চায়। তিনটি বড় অর্থনীতির দেশ এ অঞ্চলে অবস্থিত- চীন, জাপান ও ভারত। বেইজিংয়ে তিনি যতই লালগালিচা সংবর্ধনা পান না কেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কই আগামী দিনের বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসন যে ভারতকে ব্যবহার করবে, তা অ্যাপেক সম্মেলনে দেয়া ট্রাম্পের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে। ট্রাম্পের এ সফর প্রমাণ করল এ অঞ্চলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতেও এর কোনো কমতি হবে না।
Daily Jugantor
16.11.2017

0 comments:

Post a Comment