কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষকদের আহত হওয়ার ঘটনা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি ছাত্র সংগঠনের তাণ্ডব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষকের পদোন্নতির উদ্যোগ ও তাতে শিক্ষকদের বাধাদান কিংবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়ার যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে প্রমাণ হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক ধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা চরমে উঠেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে খোদ সরকার সমর্থক শিক্ষকরা আহত ও বিব্রত হয়েছেন। কুষ্টিয়ায় ছাত্রলীগের হামলায় যারা আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের শীর্ষস্থানীয় নেতা। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষকের পদোন্নতিতে আপত্তি জানিয়েছেন। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে এবং তাতে যৌন অপরাধীকে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, সেখানে ভিসি কী করে শাস্তিপ্রাপ্ত ওই শিক্ষকের পদোন্নতির উদ্যোগ নেন? যদিও শেষ মুহূর্তে তা তিনি স্থগিত করেছেন। এ জন্য তিনি সাধুবাদ পেতেই পারেন। এটা করলে ১৩৮তম সিন্ডিকেটের একটি সিদ্ধান্তকে তিনি লংঘন করতেন। সিন্ডিকেটের ওই সিদ্ধান্তে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে পদোন্নতির নীতিমালা কী হবে। বিতর্কিত ওই শিক্ষক নীতিমালার শর্ত পূরণ করেননি। তিনি পদোন্নতি চান কিভাবে? আরও মজার ব্যাপার, বিতর্কিত ওই শিক্ষক আওয়ামী ঘরানার শিক্ষক হলেও তার পদোন্নতির তদবির করেছিলেন খোন্দকার মুস্তাহিদুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ। অধ্যাপক হোসেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের চাপে মাথানত করবেন কেন?
আজ বঙ্গবন্ধু পরিষদের ব্যানারে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরাই এ পদোন্নতির বিরোধিতা করছেন একটাই কারণেÑ আর তা হচ্ছে বিতর্কিত ওই শিক্ষক পদোন্নতির শর্ত পূরণ করেননি। শুধু তাই নয়, তিনি যে বিভাগে চাকরি করেন, ওই বিভাগে তার ‘ভূমিকা’ নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। তার উদ্যোগে সিলেবাস ছাড়া এমফিলে ছাত্র ভর্তি করানো হয়েছে। এসব বিভাগে উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়েছে যাদের নিয়ে, খোদ তাদের কারও কারও এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি নেই। সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দিয়ে এই উচ্চতর কমিটি গঠন করার উদ্যোগ এরই মধ্যে নানা বিতর্কের জš§ দিয়েছে। সর্বশেষ ঘটনায় ইতিহাস বিভাগের একজন শিক্ষককে দিয়ে উচ্চতর কমিটি গঠিত হয়েছে। যিনি কোনদিন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়েননি, ব্রিটিশ ভারত নিয়ে যার পিএইচডি গবেষণা এবং বর্তমানে প্রশাসনে উচ্চ পদে আসীন, তিনি এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে উচ্চতর শিক্ষা কমিটির সভাপতি। কার স্বার্থে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে? এখানেও অধ্যাদেশকে পাশ কাটিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতদিন শুনতাম রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের কথা। এখন দেখলাম ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ এমফিল, পিএইচডি কোর্সে ছাত্রও ভর্তি করানো হচ্ছে। যিনি কোনদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি, তাকেও ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ উচ্চতর কোর্সে ভর্তি করানো হয়েছে। এটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাহিনী।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমাবর্তনে তিনি যান এবং প্রায় ক্ষেত্রেই তিনি উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের কথা বলেন। তিনি এটাও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, শিক্ষার মানোন্নয়ন করা ছাড়া এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমরা টিকে থাকতে পারব না। চ্যান্সেলরের এ বক্তব্যটি সঠিক ও যুক্তিযুক্ত। আমার দুঃখ লাগে যখন দেখি বেসরকারি তো বটেই, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিরা পর্যন্ত শিক্ষার মানোন্নয়নের ব্যাপারে আদৌ কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না। বরং গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন।
দলীয়করণ ও আÍীয়করণের শীর্ষে পৌঁছে গেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশেষ করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনাম হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কাহিনী নিয়ে মজার সংবাদ পরিবেশন করেছিল একটি জাতীয় দৈনিক। ভর্তি পরীক্ষার ৫০ লাখ টাকা নিয়ে আর নিজের জন্য পাজেরো ক্রয় করে অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ শিক্ষার মানোন্নয়ন কতটুকু করলেন, জানি না। কিন্তু একটি প্রশ্নের তিনি জš§ দিলেনÑ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও আগামী দিনে একটি সার্টিফিকেট সর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে! এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় অধ্যাপক পদে পদোন্নতি হয়েছেÑ এই সংবাদও পত্রিকায় দেখেছি। দুদক কি আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে?
আমি আশান্বিত হয়েছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হিসেবে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের নিয়োগে। তিনি বলেছিলেন, তিনি জাবিকে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে চান। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি হয়েছিলাম তার বক্তব্যে। কিন্তু তার বিশ্ববিদ্যালয়েই উচ্চশিক্ষার অনিয়ম নিয়ে উপরে উল্লিখিত ঘটনা ঘটল। যাদের পিএইচডি নেই এবং সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োজিত (আইনানুযায়ী সহকারী অধ্যাপকরা পিএইচডি কমিটিতে থাকতে পারেন না), তাদের নিয়েই পিএইচডি কমিটি গঠিত হয়েছে। নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষককেও তিনি পদোন্নতি দিতে চেয়েছিলেন। হায়রে শিক্ষক রাজনীতি! এখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগ বলে কিছু নেই। বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা দু’বছর আগেও নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন বামমনা শিক্ষকদের সঙ্গে। আজ ক্ষুদ্র স্বার্থে সেই বিএনপিপন্থী শিক্ষকরাই গেলেন ভিসির কাছে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির মাফ চাইতে। অথচ অভিযুক্ত ওই শিক্ষক আওয়ামী ঘরানার, অধ্যাপক আবদুল বায়েস যার নেতা। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পর বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেখানে বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা তাদের নিজেদের স্বার্থে এক হয়েছেন। যদিও মূলধারার আওয়ামী লীগপন্থীরা আলাদা অবস্থান নিয়েছেন।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে আমি ধন্যবাদ জানাই একটি কারণে, তিনি আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের কোন গ্র“পকে সমর্থন করছেন না। অবশ্যই তিনি আওয়ামী ঘরানার লোক। এক-এগারোতে জেলেও গেছেন। মুক্তিযোদ্ধা এ শিক্ষক যখন ভিসির দায়িত্ব পেলেন, এরপর তিনি আওয়ামী লীগের শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে আর জড়াননি। এটা একটা শুভ লক্ষণ। আইনে যা আছে, সেটাই তিনি অনুসরণ করবেন। বিতর্কিত ওই শিক্ষকের ব্যাপারে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের চাপে পড়ে তিনি একটি ‘ভুল’ করতে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি বিষয়টি উচ্চ আদালতে ‘রেফার’ করবেন। এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। উচ্চ আদালতের নির্দেশেই তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। সেদিন তৎকালীন ভিসিকে উচ্চ আদালত ডেকেছিলেন। তাকে ভর্ৎসনাও করেছিলেন। আজ মাননীয় বিচারপতিরা আবার বিষয়টি শুনবেন। গেল দু’বছরে তার ‘মনোভাবের’ পরিবর্তন যদি হয়ে থাকে, তিনি পদোন্নতি পেতেই পারেন। এটা তার অধিকারও বটে। কিন্তু তিনি যদি তার মনোভাব পরিবর্তন না করে থাকেন, তিনি পদোন্নতির জন্য বিবেচিত নাও হতে পারেন। মনে রাখতে হবে, যে ঘটনায় তিনি শাস্তি পেয়েছিলেন, তাতে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীর মতামতও আদালত নিয়েছিলেন। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওইসব আইনজীবীর মতামতও নিতে পারে। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। একটি ‘ভুল’ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে অধ্যাপক হোসেন বিতর্কিত হবেন, আমরা কেউ-ই তা চাই না। আমার ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয়কে আবার অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত হতে পারে এটি। আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের মাঝে অনেকেই আছেন, যারা ভিসি হতে চান। সুতরাং সব বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নৈতিক স্খলনের ঘটনায় (যেখানে একজন শিক্ষককে যৌন হয়রানি করা হয়েছিল এবং তিনি মান-সম্মানের ভয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন) আমি লজ্জিত, দুঃখিত ও মর্মাহত। এসব কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ আমি হারিয়ে ফেলেছি। এখানে আর শিক্ষকতা করা যাবে বলে মনে হয় না।
রাজধানীর অদূরে ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক কাহিনী শুনলামÑ যিনি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ক্লাস নেবেন, তার ওই বিষয়ে কোন ডিগ্রিই নেই। উচ্চশিক্ষার এ হালহকিকত সম্পর্কে কি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী অবগত আছেন? জাবিতে কোন কোন বিভাগে যাদের নিয়ে পিএইচডি, এমফিল কমিটি গঠিত হয়েছে, তাদের অনেকেরই উচ্চতর ডিগ্রি নেই। এদের নিয়ে কিভাবে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন করবেন শিক্ষামন্ত্রী? অন্য বিভাগের শিক্ষক এনে উচ্চশিক্ষার কমিটি হচ্ছে। কিন্তু আইন তা অনুমোদন করে না।
এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে অচিরেই উচ্চশিক্ষায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটবে। ‘পাজেরো’ গাড়ি ক্রয় করে জগন্নাথের ভিসি নিজের ‘ভিসিগিরি’ দেখিয়েছেন! কিন্তু জগন্নাথে শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি কী করেছেন? আড়াই থেকে তিন বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দলীয় বিবেচনায় কিছু ‘চেনা মুখকে’ অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। এতে করে অধ্যাপক পদের মানমর্যাদা তিনি অনেক নিচে নামিয়ে এনেছেন। রংপুর আর পাবনার ভিসিরা আÍীয়করণের রেকর্ড গড়েছেন। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, এর জবাব আমরা কার কাছে চাইব? আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় (জাহাঙ্গীরনগর) নিয়ে আমি আতংকিত। আগামী তিন থেকে চার বছর পর সিনিয়র শিক্ষকরা সবাই অবসরে যাবেন। তারপর? কারা হবেন ভিসি? কী তাদের কোয়ালিটি? অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি চলে যাবেন ঢাকায়। কিন্তু জাবির প্রশাসনে যে ‘সংকট’ তৈরি হচ্ছে ধীরে ধীরে, তা তিনি ‘পরিষ্কার’ করবেন কিভাবে? ‘স্বপ্নের জাহাঙ্গীরনগরের’ কথা বলে তিনি সবার মাঝে একটা আবেদন সৃষ্টি করতে পেরেছেন বটে, কিন্তু শিক্ষার মানোন্নয়নের ব্যাপারে তার কোন ভূমিকা আমার চোখে পড়ে না। যাদের পিএইচডি নেই, কিংবা অন্য বিভাগের শিক্ষক নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেই কমিটিকে আপনি যদি অনুমোদন দেন, তাহলে উচ্চশিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে একজন বিচক্ষণ মানুষ হিসেবেই এ জাতি জানে। এক-এগারোর সময়ে তিনি নতি স্বীকার করেননি। আজ তথাকথিত ‘শিক্ষক-রাজনীতির’ কারণে তিনি যদি আÍসমর্পণ করেন, তাহলে সেটা হবে তার ‘পরাজয়’। একজন ভিসি অন্যায়ের কাছে মাথানত করবেনÑ অন্তত অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে এটা আমি প্রত্যাশা করি না। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে আপনি একটি ‘রিভিউ কমিটি’ গঠন করুন, আমরা সচেতন শিক্ষকরা সবাই আপনাকে সমর্থন করব।
Daily JUGANTOR
01.12.12
0 comments:
Post a Comment