রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

নয়া বিশ্বব্যবস্থার স্বরূপ

স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল আজ থেকে আঠারো বছর আগে, ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে, যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটেছিল। সেই সঙ্গে পতন ঘটেছিল �সোভিয়েত ধাঁচের� সমাজতন্ত্রের। কার্ল মার্কস যে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের কথা চিন্তা করেছিলেন, তা বিংশ শতাব্দীতে বড় ধরনের আলোড়ন তুলেছিল, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু তা টেকেনি। সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকেছিল মাত্র ৭৩ বছর। চীনে এখন আর সমাজতন্ত্র নেই। সেখানে এক নতুন সমাজব্যবস্থা বিকশিত হচ্ছে, একুশ শতকে যার বিকাশ আমরা দেখতে পাব। সেই সমাজব্যবস্থাকে আর যা-ই হোক, সমাজতান্ত্রিক বলা যাবে না। তাহলে সঙ্গত কারণেই যে প্রশ্নটা ওঠে, তা হচ্ছে কোন ধরনের নয়া বিশ্বব্যবস্থা আমরা একুশ শতকে প্রত্যক্ষ করব? স্নায়ুযুদ্ধের সময় ছিল দুই পরাশক্তির (যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) মাঝে প্রভাব বিস্তার করার এক নগ্ন প্রতিযোগিতা। এখন এক পরাশক্তি নেই বটে; কিন্তু প্রভাব-বলয় বিস্তার করার প্রবণতা রয়ে গেছে। আর তা হচ্ছে একতরফা, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক এককভাবে বিশ্বরাজনীতি �নিয়ন্ত্রণ� করার প্রতিযোগিতা। এখানে প্রতিপক্ষ বানানো হচ্ছে মুসলিম বিশ্বকে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ব আসর থেকে যখন প্রতিপক্ষ সোভিয়েত ইউনিয়ন হারিয়ে গেল, তখনই ২০০১ সালে ঘটল �নাইন-ইলেভেনে�র মতো ঘটনা। �আবিষ্কার� করা হলো আল কায়দা নামে একটি �সন্ত্রাসী� সংগঠনের। সারা বিশ্বকে জানানো হলো ওসামা বিন লাদেনের কথা। তারপর পার হয়ে গেছে নয় বছর। �আফগানিস্তান� ও �ইরাক� এখন যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। কিন্তু সেই লাদেনকে আজও পাওয়া যায়নি। গত সপ্তাহেও আফগানিস্তানে শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার জেনারেল ম্যাকক্রিস্টাল বলেছেন, লাদেন এখনও বেঁচে আছেন।

লাদেন একটি �মিথ�। এটাকে সামনে রেখেই যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক তত্পরতা চালায় এবং চালিয়ে আসছে স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর থেকেই। একসময় ধারণা করা হয়েছিল, হোয়াইট হাউসে আফ্রো-আমেরিকান ওবামার অবস্থান, বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতিতে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু ১৪ মাস হয়ে গেল। কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। এমনকি তাকে নোবেল পুরস্কারও দেয়া হলো �শান্তির� জন্য। �শান্তি�তে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ওবামা কিন্তু নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করার সময় যুদ্ধের পক্ষেই যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। তিনি শান্তিবাদী নেতা মার্টিন লুথার কিং কিংবা গান্ধীজীর নাম উল্লেখ করেছিলেন বটে; কিন্তু যুক্তি দেখিয়েছেন যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা। স্পষ্ট করেই তিনি উল্লেখ করেছেন : 'A non-violent movement could not have halted Hitler's armies. Negotiations can not convince Al Qaeda's leadership to lay down their arms'। তাই তার যুক্তি : So, yes, the instrument of war do have a role to play in preserving the peace'। কী অদ্ভুত যুক্তি! শান্তির জন্যই যুদ্ধ দরকার। এই যুক্তি কি গ্রহণ করে নেয়া যায়? বাগদাদ কিংবা কাবুলে �শান্তির জন্য যুদ্ধ� বন্ধ হয়নি, হবেও না, শুধু দীর্ঘায়িত হবে মাত্র। তবে সত্য কথাটিই বেরিয়ে আসে যখন ওবামা বলেন : 'Where force is necessary, we have a moral of strategic interest in binding ourselves to certain rules of conduct'। ওটাই হচ্ছে আসল কথা� strategic interest বা কৌশলগত স্বার্থ। এই স্বার্থ ইরাকে ছিল, এখন আফগানিস্তানেও আছে, যে কারণে এখনও ওবামাকে সেখানে সৈন্য পাঠাতে হয়।

২০০৩ সালের মার্চে ইরাক দখল করে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যে যুক্তিতে বুশ ইরাকে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, পরবর্তী সময়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে তার সেই যুক্তি সঠিক ছিল না। অর্থাত্ ইরাকের কাছে �উইপন্স অফ মাস ডেস্ট্রাকশন� ছিল না। ইতোমধ্যে ৭ বছর পার হয়ে গেছে। ইরাকে নতুন করে একটি নয়া সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু রক্ত ঝরা বন্ধ হয়নি। ওবামা উত্তরাধিকার সূত্রে এই �যুদ্ধ� পেয়েছেন বটে; কিন্তু �যুদ্ধ� তিনি বন্ধ করতে পারেননি। সেখানে এখনও মার্কিন সৈন্য রয়েছে, যদিও ওবামা অঙ্গীকার করেছেন আগামী ২০১১ সালের মধ্যে সেখান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। কিন্তু সেখানে �যুদ্ধ� আর রক্তঝরা কি বন্ধ হবে?
প্রতিদিনই এখনও আত্মঘাতী বোমা হামলার খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইরাক সরকার এই রক্তঝরা বন্ধ করতে পারেনি। বলে রাখি, ইরাকে এ পর্যন্ত চার হাজারের বেশি মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়েছে। আর খরচ? নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজের মতে, ওই যুদ্ধে ২০১৫ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হবে ২ দশমিক ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার। ইরাক যুদ্ধে মানুষের জীবনের মূল্য কত, তাও হিসাব করে দেখানো হয়েছে। দেখা গেছে, প্রত্যেক নিহত সৈনিকের জন্য খরচ হবে ৬০ থেকে ৭০ লাখ ডলার। এ যুদ্ধ অযাচিতভাবে শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর সে দেশের প্রেসিডেন্টই এখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন। আগামীতে আমরা অখণ্ড ইরাককে হয়তো নাও পেতে পারি। উত্তরে কুর্দি অধ্যুষিত এলাকা, দক্ষিণাঞ্চলে ইরান সমর্থিত শিয়া অঞ্চল আর বাগদাদকেন্দ্রিক মধ্যাঞ্চল আলাদা হয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের �ইসরাইলি লবি� সম্ভবত সেটাই চাইছে। বারাক ওবামার শাসনামলে যদি এই কাজটি সম্পন্ন হয়, আমি অবাক হব না।

যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছিল ২০০১ সালের অক্টোবরে, সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস করে দেয়ার পর। অভিযোগ ছিল, আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে আফগানিস্তানের তালেবানরা আশ্রয় দিয়েছে। তারপর আট বছর পার হয়ে গেছে। লাদেনকে পাওয়া যায়নি কোথাও। আর যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো বাহিনী এখনও দেশটি দখল করে আছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে নিজস্ব ২৩টি ব্যাটালিয়ন আর ন্যাটোর রয়েছে ২০টি ব্যাটালিয়ন। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব রয়েছে ৬৮ হাজার সৈন্য। আরও ৩০ হাজার সৈন্য পাঠানোর ব্যাপারে জেনারেল ম্যাকক্রিস্টালের অনুরোধ ওবামা সম্প্রতি রক্ষা করেছেন। যুদ্ধকৌশল ও সেনাসদস্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যখন নিতে যাচ্ছেন ওবামা, ঠিক তখনই এসেছিল শান্তি পুরস্কারের খবরটি। ওবামা অবাকই হয়েছিলেন। যেখানে আফগানিস্তানে নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য মারা
যাচ্ছে, যখন জেনারেল ম্যাকক্রিস্টাল বলেছেন সেনাসদস্য না বাড়ালে সেখানে এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয় ঘটবে, তখন �শান্তির জন্য� ওবামাকে নোবেল পুরস্কার দেয়াটা আসলেই তামাসায় পরিণত হলো এখন।

নোবেল কমিটি বলেছিল, বারাক ওবামার সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও নিয়ন্ত্রণ সংলাপকে বেগবান করেছে। কিন্তু বাস্তবতা কি তা-ই বলে? রাশিয়ার সঙ্গে একটি �শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে� গেলেও, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এ দুটি দেশের স্বার্থের পরিপন্থী। এমনকি ভারত ও ইসরাইলের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নীরব সমর্থন থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইরান বারবার তাদের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির কথা বলে এলেও যুক্তরাষ্ট্র এই বক্তব্য গ্রহণ করেনি। যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে এখনও �চাপে�র মুখে রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য একটাই� ইসরাইলকে খুশি করা। পাঠক লক্ষ্য করবেন, ইসরাইলের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বক্তব্য নেই। এমনকি বুশ প্রশাসনের আমলের শেষের দিকে ইসরাইলকে ঢ-ধরনের রাডার সরবরাহ করা হয়েছে, যা কিনা ইসরাইল ইরানের বিমানবাহিনীর তত্পরতা পর্যবেক্ষণ করবে। ভারতের পারমাণবিক কর্মসূচিকেও সাহায্য-সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কি আদৌ পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে, নাকি নির্দিষ্ট দু-একটি দেশের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে তাদের উত্কণ্ঠা এত বেশি?

ওবামা প্রশাসন অতিসম্প্রতি ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে রাশিয়ার বরাবরই আপত্তি ছিল। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত উত্তেজনা হ্রাসে আদৌ কি কোনো সাহায্য করবে? যুক্তরাষ্ট্র চায় জর্জিয়ার ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তি, যাতে আপত্তি রয়েছে রাশিয়ার। গেল বছর জর্জিয়া-রাশিয়া �যুদ্ধে� যুক্তরাষ্ট্র জর্জিয়ার পক্ষ অবলম্বন করেছিল। কৃষ্ণসাগরে জর্জিয়ার সঙ্গে একটি নৌ মহড়ায়ও অংশ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের Joint Task Force-East (JTF-East)। বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ার ৭টি বিমান ঘাঁটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে। মধ্যএশিয়ায় কিরগিজস্তানের মানাস বিমান ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন ধরেই ব্যবহার করে আসছে। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়াতেও যুক্তরাষ্ট্র একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, রোমানিয়ার কনস্টানজা শহরের কাছাকাছি মিখাইল কোগালনাইসেনু (Michail Kogalniceanu) বিমান ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্র অদূর ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে পারে। অথচ পূর্ব ইউরোপের এই দেশগুলো ছিল একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্তৃত্বাধীন ওয়ারশ� সামরিক জোটের আওতায়। গরবাচেভের শাসনকালে ১৯৮৮ সালে ওয়ারশ� জোট ভেঙে দেয়া হলেও, ন্যাটো ভেঙে দেয়া হয়নি; বরং ন্যাটোর সম্প্রসারণ হয়েছে। পূর্ব ইউরোপের ওয়ারশ� জোটভুক্ত দেশগুলো এখন ন্যাটোর সদস্য। আরও লক্ষ্য করার বিষয়, ন্যাটোর ৬০ বছরের ইতিহাসে (জন্ম ১৯৪৯) এই প্রথমবারের মতো ন্যাটোর সেনা মোতায়েন করা হয়েছে ইউরোপের বাইরে, আফগানিস্তানে। বুশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বটে; কিন্তু ওবামা তা বাতিল করে দেননি। তিনি শুধু সমর্থনই করেননি; বরং আফগানিস্তানে আরও সক্রিয় হতে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ওবামার এসব সিদ্ধান্ত কি প্রমাণ করে তিনি সত্যি সত্যিই যুদ্ধ চান না, তিনি শান্তি চান? আর �শান্তি চান� (?) বলেই নোবেল কমিটি তাকে পুরস্কৃত করেছিল!
ওবামা নিজেও অবাক হয়েছিলেন এই পুরস্কার পেয়ে। অবাক হয়েছেন আরও অনেকেই। লন্ডনের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্র্যাটেজিক্যাল স্ট্র্যাডিজের সিনিয়র ফেলো ফ্রিজপেট্রিক তাই প্রশ্ন রেখেছেন এভাবে : Is this a joke? We all thought it was a joke। তিনি আরও
বলেছেন, 'I think it will be embrassed by it, and it will be unhelpful in the domestic milieu'। ফ্রিজপেট্রিকের সঙ্গে হয়তো কেউ কেউ একমত হবেন। কিন্তু বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে তার ওপর সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক। সাধারণ মানুষ চেয়েছে একটি চুক্তি হবে। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধিরোধ করা সম্ভব হবে। ওবামা কোপেনহেগেন গেলেন। মাত্র চারটি দেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা করে তা মানতে বাধ্য করলেন মালদ্বীপ কিংবা তুভালুর মতো দেশকে, যারা বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। স্পষ্টতই বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা যুক্তরাষ্ট্র হারিয়েছে। শুধু টাকার আশ্বাস দিয়ে গরিব দেশগুলোকে সামাল দেয়া হয়েছে। ওবামার কায়রোর বক্তৃতা মুসলিম বিশ্বে তার সম্পর্কে একটা ভালো ইমেজ গড়ে তুলেছিল। মুসলিম বিশ্ব তাকে �বন্ধু� ভাবতে শুরু করেছিল। তার দায়িত্ব এখন আরও বাড়ল। ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি ইসরাইলি নেতাদের কতটুকু রাজি করাতে পারবেন, সেটাই দেখার বিষয়। ইসরাইলি আগ্রাসন বারবার মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় সৃষ্টি করছে। ১৯৯৩ সালে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের মধ্যস্থতায় আরাফাত ও রাবিন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। তারপর ১৯৯৯ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল �উই রিভার� চুক্তি। কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছরেও শান্তি সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাবিন ও আরাফাত দু�জনই আজ প্রয়াত। কট্টরপন্থীরা আজ ইসরাইলে ক্ষমতায়। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ওবামা মধ্যপ্রাচ্যে কতটুকু শান্তি নিশ্চিত করতে পারবেন, সেটাই দেখার বিষয়। কাজটি তার জন্য খুব সহজ নয়। ওয়াশিংটনের �ইসরাইলি লবি� তাকে এ কাজটি করতে দেবে�এ বিশ্বাস আমি রাখতে পারছি না। এই �ইসরাইলি লবি� যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া, অর্থনীতি এবং রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে।

বিকাশমান নয়া বিশ্বব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র একটি �শক্তি�, তাতে কোনো সন্দেহ নেই; কিন্তু একক শক্তি নয়। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুটা হলেও সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের �নয়া সম্পর্ক� নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ঘিরে যে �স্বপ্নের জাল� তৈরি হয়েছিল তা ফিকে হয়ে গেছে। ওবামার �অ্যাপ্রোচ� ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু তার সঙ্গে তার পূর্বসূরি বুশের নীতির কোনো পার্থক্য নেই। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের পরিস্থিতি এখনও বিরাজ করছে। নয়া বিশ্বব্যবস্থার জন্য ওটা কোনো ভালো খবর নয়।
(সুত্র, আমার দেশ, ২৬/০৩/২০১০)

2 comments: