রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

মিসরের গণবিপ্লব ও আরব বিশ্বে পরিবর্তনের ঢেউ

তিউনিসিয়ার গণ-অভ্যুত্থান যখন তুঙ্গে তখন আল-জাজিরা টিভি এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছিল, 'streets creates change', অর্থাৎ রাজপথ পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদক তিউনিসের রাস্তায় হাজার হাজার লোকের উপস্থিতি লক্ষ রেখে এ মন্তব্যটি করেছিলেন। এ মন্তব্যটি কত সঠিক ছিল তা শুধু জাইন এল আবিদিন বেন আলীর দেশত্যাগের মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়নি, একই সঙ্গে মিসরের ঘটনাবলিই এর বড় প্রমাণ। তিউনিসিয়ার 'জেসমিন বিপ্লব' এখন মিসর, ইয়েমেন, আলজেরিয়া ও জর্ডানেও ছড়িয়ে পড়েছে। সমগ্র আরব বিশ্বেই আজ পরিবর্তনের ঢেউ। রাজপথ আজ 'রাজনীতি' নির্ধারণ করছে। এই পরিবর্তন আরব বিশ্বকে কোথায় নিয়ে যাবে বলা মুশকিল। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, তিউনিসিয়ার জেসমিন বিপ্লব
গোটা আরব বিশ্বকে একটি বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। সংস্কার এখানে আসতেই হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামাও বলেছেন সেই সংস্কারের কথা। তিউনিসিয়ার স্থানীয় ভাষায় 'খোবজিসটেস' (khobyistes বলে একটি শব্দ চালু রয়েছে, যার অর্থ বেকার জনগোষ্ঠী। একজন খোবজিসটেস মোহম্মদ বওকুজিজি চাকরি না পেয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর আত্মহত্যা তিউনিসিয়ায় জেসমিন বিপ্লবের সূচনা করেছিল। আজ মিসরে যে গণবিপ্লবের সূচনা হয়েছে, তার পেছনে রয়েছে সেই খোবজিসটেস-এর ভূমিকা। হঠাৎই মিসরে গণবিপ্লবের জন্ম হয়েছে, এটা মনে করা ঠিক হবে না। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, ঘৃণা আর বিদ্বেষ হঠাৎ করেই বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে তিউনিসিয়া জেসমিন বিপ্লব বিক্ষোভকারীদের অনুপ্রাণিত করেছে। গত ১৮ জানুয়ারি কায়রোতেও মোহম্মদ বওকুজিজির মতো এক ব্যক্তি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে গণবিপ্লবকে উস্কে দিয়েছেন।

৮২ বছর বয়সী হোসনি মুবারক দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায়। ২০০৬ সালে শেষবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তথাকথিত 'বিজয়ের' পর হোসনি মুবারক বলেছিলেন, তিনি যত দিন বেঁচে থাকবেন, তত দিন ক্ষমতায় থাকতে চান। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই নির্বাচনে তিনি আবারও অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন_এমনটিই শোনা গিয়েছিল। যাঁরা মিসরের রাজনীতির কিছু খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা জানেন ১৯৫২ সালের পর থেকে সেরা নেতৃত্বই মিসরকে দিয়ে আসছেন। ১৯৫২ সালে মিসরে রাজতন্ত্রের উৎখাত হয়েছিল। তরুণ সেনা কর্মকর্তারা জেনারেল নাগিবকে ক্ষমতায় বসালেও মূল নেতা ছিলেন কর্নেল জামাল আবদুল নাসের। ষাটের দশকে নাসের সারা আরব জাহানের এক অবিস্মরণীয় নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর 'প্যান অ্যারাবিজম' চিন্তাধারা ওই সময় সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন। বাহ্যত ১৯৫২ সালের পর থেকে মাত্র চারজন শাসক এ দেশটি শাসন করেছেন_নাগিব, জামাল আবদুল নাসের, আনোয়ার সাদাত ও হোসনি মুবারক। লে. কর্নেল জামাল আবদুল নাসের ১৯৫৪ সালে জেনারেল নাগিবকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও ১৯৫৬ সালে তিনি ভোটে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর ভাইস প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৮১ সালে আনোয়ার সাদাত আততায়ীর হাতে মারা গেলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক দায়িত্ব নেন। সাদাত ছিলেন সেনাবাহিনীর লোক, আর হোসনি মুবারক বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা। তাঁর শাসনামলে দীর্ঘদিন কোনো ভাইস প্রেসিডেন্ট না থাকলেও অব্যাহত গণবিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জানুয়ারি তিনি সাবেক গোয়েন্দা সংস্থাপ্রধান ওমর সুলেইমানকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করেছেন। সুলেইমান একজন সেনা কর্মকর্তা। সম্ভবত সুলেইমানই হতে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।

রাজতন্ত্র উৎখাতের পর থেকে মিসরে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু রয়েছে, সেখানে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির আদৌ কোনো লেশ নেই। ক্ষমতাসীনরাই বারবার নির্বাচিত হয়ে আসছেন। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে যে বিরোধী দল থাকে, মিসরে তা নেই। জামাল আবদুল নাসের তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যই একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম দিয়েছিলেন। সেই রাজনৈতিক দলটির পরিবর্তিত রূপ হচ্ছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। এনডিপি ১৯৭৬ সাল থেকেই ক্ষমতায়। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থায় একটি পার্লামেন্ট রয়েছে বটে; কিন্তু সেখানে বিরোধী দলের তেমন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। সেখানে এনডিপির রয়েছে ৫০০ সদস্য, সেখানে বিরোধী দলের মাত্র ২০ জন। বিরোধী দলের সবাই 'স্বতন্ত্র' সদস্য। ধারণা করা হয়, এদের সঙ্গে নিষিদ্ধ 'মুসলিম ব্রাদারহুডের' একটা সম্পর্ক রয়েছে।
এ নিবন্ধটি যখন তৈরি করছি তখন টানা পাঁচ দিন মিসরে প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পদত্যাগের দাবিতে জনগণ আন্দোলন করে যাচ্ছে। এ আন্দোলনের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয়। প্রথমত, এ আন্দোলন গড়ে উঠেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। কোনো দলের নেতৃত্বে এ আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে না। তিউনিসিয়ার জেসমিন বিপ্লবের সঙ্গে এ গণবিপ্লবের মিলটা এখানেই। দ্বিতীয়ত, তরুণ সমাজই এই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। 'ফেইসবুক' আর 'টুইটার' ব্যবহার করে এরা তরুণ সমাজকে সংগঠিত করেছে। 'এপ্রিল ৬ ইয়ুথ মুভমেন্ট' ও এর নেত্রী আসমা মাহফুজের নাম পাওয়া গেছে, যারা গণবিক্ষোভকে সংগঠিত করছে। সংগঠনটির সঙ্গে রাজনীতির কোনো যোগসূত্র নেই। এ রকমটিও দেখা গিয়েছিল তিউনিসিয়ায়। তৃতীয়ত, মিসরে বিরোধী দল হিসেবে 'ইসলামিক ব্রাদারহুডের' একটা পরিচিতি রয়েছে, যারা কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত। বর্তমান গণবিক্ষোভে এদের কোনো ভূমিকা নেই। কিংবা অপর আরেকটি বিরোধী দল 'আল ওয়াসাত পার্টি'র কোনো তৎপরতাও লক্ষ করা যাচ্ছে না। তরুণ সমাজ ও বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি এই গণবিপ্লবকে সংগঠিত করেছে। চতুর্থত, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অভাব মিসরের গণবিপ্লবের মূল কারণ। তিউনিসিয়ায়ও ঠিক এমনটি হয়েছিল। তিউনিসিয়ার মতো মিসরেও একটি শ্রেণীর জন্ম হয়েছে, যারা ক্ষমতায় থেকে অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছে। অন্যদিকে অপর একটি শ্রেণী দিনে দিনে গরিব হচ্ছে।

মিসরে জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের নিচে দৈনিক দুই ডলারের নিচে আয় করেন, যা জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী দারিদ্র্যসীমার অন্তর্ভুক্ত। মিসরে যত ভিক্ষুক রয়েছে, অন্য কোনো আরব দেশে এত ভিক্ষুক দেখা যায় না। ঠিক তেমনি প্রচুর 'কোটিপতির' জন্ম হয়েছে, যা উত্তর আফ্রিকা তথা মাগরেবভুক্ত দেশগুলোতে দেখতে পাওয়া যায় না। এই ধনী-গরিব বৈষম্য 'গণবিপ্লবের' পথকে প্রশস্ত করেছে। একাধিক কারণে মিসরের এই গণবিপ্লব গুরুত্বের দাবি রাখে। এই গণবিপ্লব শুধু যে মিসরেই একটি বড় ধরনের পরিবর্তন ডেকে আনবে তা নয়; বরং আরব বিশ্বের জন্য এই 'বিপ্লব' একটি মেসেজ পেঁৗছে দিচ্ছে। আর তা হচ্ছে রাজনৈতিক তথা অর্থনৈতিক সংস্কারটা খুব জরুরি। দারিদ্র্য, বেকারত্ব আর কর্মসংস্থান প্রতিটি আরব দেশের অন্যতম সমস্যা। বেকারত্বের মধ্যে একটা বড় সংখ্যা হচ্ছে তরুণ সমাজ। এরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ও প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী। কিন্তু এদের জন্য চাকরির কোনো ক্ষেত্র নেই। বেকার। বেঁচে থাকার জন্য অনেকেই উচ্চশিক্ষা নিয়েও ভিন্ন পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থান দরকার। যদিও এর জন্য সাম্প্রতিককালের বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থাও কম দায়ী নয়। খাদ্যদ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্য এই গণ-অসন্তোষের আরেকটি কারণ। ইয়েমেন ও জর্ডানে খাদ্যদ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্যের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও আরব বিশ্বের নেতারা ছিলেন এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত। খাদ্যদ্রব্যের ঊর্ধ্বমূল্য হ্রাস করা, সাধারণ মানুষের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা ছিলেন উদাসীন, যা পরিণতিতে বিক্ষোভকে সংগঠিত করে। ক্ষমতাসীনদের মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি অসন্তোষের অন্যতম কারণ।

বেন আলী ও তাঁর পরিবার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছে। ঠিক তেমনি হোসনি মুবারকের পরিবার সম্পর্কেও একই কথা শোনা যায়। হোসনি মুবারকের ছেলে জামাল ইতিমধ্যে দেশ ত্যাগ করেছেন। শোনা যায়, যাওয়ার সময় তিনি নিয়ে গেছেন ৪৮টি বড় স্যুটকেস। লায়লা বেন আলী নিয়ে গিয়েছিলেন দেড় টন সোনা। ক্ষমতাসীনরা এভাবেই রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে। আজকে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তিউনিসিয়ায় ও মিসরে, ঠিক একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে ইয়েমেন, জর্ডান, আলজেরিয়া, স্কান কিংবা লিবিয়ায়। লেবানন কিংবা সিরিয়াও এ ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই। লিবিয়ায় গাদ্দাফি ক্ষমতায় আছেন ১৯৬৯ সাল থেকে। তিনি লিবিয়াকে পরিণত করেছেন একটি 'পুলিশি রাষ্ট্রে'। তথাকথিত 'জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের' নামে সব ক্ষমতা তাঁর নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত। সেখানে কোনো বিরোধী দল নেই। দুই ছেলে সাইফ ও মুতাচ্ছিমের মধ্যে যে কেউ গাদ্দাফি-পরবর্তী লিবিয়ায় ক্ষমতাসীন হবেন। দারিদ্র্য ও বেকারত্বও এখানে বেশ। আলজেরিয়ায় আবদুল আজিজ বুতেফ্লিকা ক্ষমতায় আছেন ১৯৯৯ সাল থেকে। সংবিধান সংশোধন করে তৃতীয়বারের মতো তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। খাদ্যের দাবিতে দেশটিতে বিক্ষোভ হয়েছে। সুদানে জেনারেল ওমর হাসান আল বসির ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায়। আর জর্ডানে এখনো রাজতন্ত্র রয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এখানে বিক্ষোভ হয়েছে। ইয়েমেনে প্রেসিডেন্ট আলী সালেহ আবদুল্লাহ ক্ষমতায় আছেন ৩২ বছর। এখানেও ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য প্রকট। তিউনিসিয়া ও মিসরের মতো এখানেও তরুণ সমাজের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইয়েমেন নিয়ে ভয়টা এখানেই যে এ দেশটিতে 'আল-কায়েদা' অনেক শক্তিশালী, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যা অন্যতম মাথাব্যথার কারণ।

তিউনিসিয়াসহ সমগ্র উত্তর আফ্রিকায় যে গণবিপ্লবের জন্ম হয়েছে, তার পরিণতিতে দেশগুলোকে কোথায় নিয়ে যায় বলা মুশকিল। সেখানে বিকল্প কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই, যারা সরকার গঠন করতে পারে। অসংগঠিতভাবে 'গণবিপ্লব' পরিচালিত হচ্ছে। তবে সংগঠনের দায়িত্বে রয়েছে তরুণ সমাজ, মিসরের 'এপ্রিল ৬ ইয়ুথ মুভমেন্ট'-এর মতো সিভিল সংগঠনগুলো, যাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তবে একটা ভয় আছে এ অঞ্চলে, বিশেষ করে আলজেরিয়ায় Aqim বা Al-qaeda in the Islamic Maghreb অত্যন্ত শক্তিশালী। অয়রস-এর পক্ষে হয়তো রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা সম্ভব হবে না; কিন্তু এদের শক্তিশালী করবে। বিকল্প সম্ভাবনা সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ, যা আলজেরিয়া, মিসর কিংবা ইয়েমেনের ক্ষেত্রে এক ধরনের বাস্তবতা। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ভূমিকাও আছে এ অঞ্চলের ব্যাপারে। ইসরায়েলের পর মিসরে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সাহায্য দেয়, যার পরিমাণ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে মিসরের ভূমিকাকে যুক্তরাষ্ট্র উপেক্ষা করতে পারে না। মিসরে তার স্বার্থ রয়েছে। স্বার্থ রয়েছে ইয়েমেন এবং জর্ডানেও। এখানে এসে যায় মূল প্রশ্নটি_যে গণবিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে, তাতে করে কারা ক্ষমতাসীন হচ্ছেন ওই সব দেশে? তিউনিসিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ঘান্নুচি এখনো গ্রহণযোগ্য হননি। সেখানে এখনো বিক্ষোভ হচ্ছে। মিসরে ওমর সুলেইমানকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করে হোসনি মুবারক একটি 'সমাধানের' পথ খুঁজছেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের সমর্থন তাতে পাওয়া যায়নি। আন্দোলন অব্যাহত থাকলে সেনাবাহিনী এ দেশ দুটিতে ক্ষমতা দখল করবে। স্পষ্টতই আরব অসম একটি বড় ধরনের পরিবর্তন জন্য তৈরি হচ্ছে।

লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com

0 comments:

Post a Comment