রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

সন্তু বাবু আসলে কী চান

অতি সম্প্রতি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়িতে সহিংস ঘটনাবলীর পর পরিস্থিতি যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে, ঠিক তখনই পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা পরিস্থিতিকে আবারও উস্কে দিচ্ছেন, সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন অস্থিরতা। সদ্য প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকে তিনি একটি সাক্ষাত্কার দিয়েছেন, যা ছাপা হয়েছে ১৪ মার্চ। ওই সাক্ষাত্কারে তিনি যেসব কথাবার্তা বলেছেন, তা আবার পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করতে যথেষ্ট। এখানে একটা কথা বলা ভালো, জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা শান্তিচুক্তি অনুযায়ী গঠিত আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন সেই ১৯৯৯ সাল থেকে, এগার বছর। তিনি আদৌ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নির্বাচিত প্রতিনিধি নন। পাহাড়ি জনগণ তাকে গত ১১ বছরে কখনও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেনি। তিনি স্বঘোষিত নেতা এবং বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের কথা থাকলেও, শুধু সন্তু বাবুর কারণে গত ১১ বছর পরিষদের কোনো নির্বাচন হয়নি। যেখানে বিগত দু’বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে এখনও প্রশ্ন উঠছে এবং যেখানে বলা হচ্ছে একটি ‘অনির্বাচিত সরকার’ রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করতে পারে না, সেখানে ১১ বছর ধরে কোনো নির্বাচন ছাড়াই যে ব্যক্তি অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা ধরে রাখছেন, তার কর্মকাণ্ড নিয়ে এখনই প্রশ্ন তুলতে হবে। প্রয়োজনে তাকে বিচারের মুখোমুখিও করতে হবে। গত ১১ বছরে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের ‘ক্ষমতা পরিচালনার’ জন্য সরকার কত টাকা ব্যয় করেছে, তার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। কেননা সাংবিধানিকভাবেই এই পরিষদ ‘অবৈধ’।
অতীতেও সন্তু লারমা রাষ্ট্র তথা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সরকার এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেয়নি কিংবা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরকারের এটাকে ‘দুর্বলতা’ হিসেবে দেখছেন সন্তু লারমা। তাই একের পর এক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধানবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। গত ১৪ মার্চ প্রকাশিত সাক্ষাত্কারে তিনি নতুন করে যেসব কথাবার্তা বলেছেন, তা অনেকটা এ রকম : ১. শান্তিচুক্তির যথাযথভাবে বাস্তবায়ন তথা ভূমির বিরোধ নিষ্পত্তিতে ভূমি কমিশনকে কার্যকর করা; ২. সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন উত্তরণ’ ও অস্থায়ী সেনা ছাউনি প্রত্যাহার করা; ৩. বাঙালিদের সম্মানজনকভাবে সমতলে পুনর্বাসন; ৪. ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা; ৫. পাকিস্তান আমল থেকে পাহাড়িদের অস্তিত্ব বিলীন করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত রয়েছে; ৬. এখনও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছে; ৭. যেসব পাহাড়ি পুলিশ বাহিনীতে রয়েছে, তাদের পার্বত্য অঞ্চলে নিয়ে যেতে হবে; ৮. রাঙামাটিতে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। এটা প্রতিহত করা হবে (দেখুন, কালেরকণ্ঠ, ১৪ মার্চ)।
সন্তু লারমার প্রতিটি বক্তব্য আপত্তিকর ও সংবিধান বিরোধী। সংবিধান বিরোধী কথাবার্তা বলার জন্য তাকে অভিযুক্ত করা যায়। আরও একটি আপত্তিকর কথা তিনি বলেছেন—বাঙালিদের তিনি চিহ্নিত করেছেন ‘সেটেলার’ হিসেবে। বাঙালিরা ‘সেটেলার’ নন, বরং চাকমারাই ‘সেটেলার’। চাকমাদের মতো বাঙালিরাও সেখানে বসবাস করে আসছে যুগ যুগ ধরে। এক সময় এ অঞ্চল ছিল বিরান, জনমানবশূন্য। ধীরে ধীরে সেখানে বসতি হয়েছে। চাকমারা যে সেখানে ‘ভূমিপুত্র’ নন, তার বড় প্রমাণ পার্বত্য অঞ্চলে কখনও কোনো পাহাড়িদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকী জাতিবহির্ভূত অন্যসব উপজাতীয় গোষ্ঠীই এখানে তুলনামূলকভাবে নতুন বসতি স্থাপনকারী। এখানকার আদিম জনগোষ্ঠীর মাঝে থ্রু, খ্যাং, পাংখো এবং কুকিরা ‘কুকী’ উপজাতির ধারাভুক্ত। ধারণা করা হয় এরা প্রায় ২শ’ থেকে ৫শ’ বছর আগে এখানে স্থানান্তরিত হয়ে আগমন করে। চাকমারা আজ থেকে মাত্র দেড়শ’ থেকে ৩০০ বছর আগে মোগল আমলের শেষদিক থেকে নিয়ে ব্রিটিশ শাসনামলের প্রথমদিকে বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে। প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ এবং ব্রিটিশ প্রশাসক টি এইচ লেউইন-এর মতে, অ মত্বধঃবত্ চড়ত্ঃরড়হ ড়ভ ঃযব ঐরষষ ঃত্রনবং ধঃ চত্বংবহঃ খরারহম রহ ঃযব ঈযরঃঃধমড়হম ঐরষষ ঞত্ধপঃং ঁহফড়ঁনঃবফষু পধসব ধনড়ঁঃ ঃড়ি মবহবত্ধঃরড়হং ধমড় ভত্ড়স অত্ধপধহ. ঞযরং রং ধংংবত্ঃবফ নড়ঃয নু ঃযবরত্ ড়হি ঃত্ধফরঃরড়হং ধহফ নু ত্বপড়ত্ফং রহ ঈযরঃঃধমড়হম ঈড়ষষবপঃড়ত্ধঃব. পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমা বা মগ জনগোষ্ঠী ১৭৮৪ সালে এ অঞ্চলে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে এবং আধিপত্য বিস্তার করে। এরা আরাকানি বর্মী জনগোষ্ঠী ও ধর্মে বৌদ্ধ মতাবলম্বী এবং এরা তিনটি ধারায় বিভক্ত (জুমিয়া, রোয়াং ও রাজবংশী মারমা)। বোমরা বার্মার শীন পর্বত থেকে নিয়ে তাশন পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য অঞ্চল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আগমন করে। খ্রিস্টান মিশনারি তত্পরতার ফলে এদের বেশিরভাগ অংশই বর্তমানে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান। লুসাইরাও এখন বেশিরভাগ খ্রিস্টান। মুরংরা প্রকৃতি পূজারি ও এদের কোনো ধর্মগ্রন্থ নেই। চাকমারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। শুধু ভাষাতাত্ত্বিক বিবেচনায়ই নয়, বরং অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের নিরিখেও দেখা যায় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ওইসব মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে মিলের চেয়ে অমিল এবং বিস্তর অনৈক্য বর্তমান। ইতিহাস থেকে জানা যায়, চাকমাদের মতো মারমা রাজা ১৭৭৪ সালে তত্কালীন চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রথমে রামুতে, ঈদগরে, তারপর মাতামুহুরী উপত্যকায় এবং সবশেষে ১৮০৪ সালে বর্তমান বান্দরবানে বসতি স্থাপন করেন। উত্তর বার্মা থেকে ম্রো বা মুরংরা অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষেরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসেছিল। ত্রিপুরাদের আদি নিবাস ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। ১৬৬১ সালে ত্রিপুরার সিংহাসন নিয়ে ছত্রমানিক্যের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিলে গোবিন্দ মানিক্য নিজেই দীঘিনালায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। এভাবে গোবিন্দ মানিক্য কিংবা তার আগের বা পরের রাজাদের অনুসারী কিংবা অনুসারীদের আত্মীয়-স্বজন পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে চলে আসে। লুসাইদের মূল বসবাস ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লুসাই পাহাড়ে। তারা প্রায় ১৫০ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এসেছিল। খুমিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসের আগে আরাকানে বসবাস করত। বোমরা ১৮৩৮-৩৯ সালের দিকে লিয়ানকুং (খরধহশঁহম) নামে এক সর্দারের নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে খিয়াংরা আরাকানের উমাতাং পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করত। সেখান থেকেই তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই ও চন্দ্রঘোনা অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। চাকমারা এসেছিল চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে। তারা আরাকান থেকে এ অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল। পাংখোরা এসেছিল ভারতের মিজোরাম থেকে। আর তংচঙ্গারা চাকমাদের একটি উপশাখা (দেখুন, সুগত চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি ও সংস্কৃতি, ১৯৯৩)। সুতরাং আজ সন্তু লারমা কীভাবে নিজেদের আদিবাসী বলে দাবি করেন? পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩টি উপজাতির কেউই এ অঞ্চলের ‘ভূমিজ সন্তান’ নন। তারা সেটেলার, এ অঞ্চলে বসতি গড়েছেন মাত্র। বাঙালিরাও একই ধারায় এখানে কালক্রমে বসতি গড়েছে। কেননা বিস্তীর্ণ এ অঞ্চল ছিল জনমানবশূন্য। আরাকানে ও ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে অত্যাচারিত হয়ে তারা ‘সুখের আশায়’ এখানে বসতি গড়েছে মাত্র। সুতরাং তিনি যখন বাঙালিদের সরিয়ে নেয়ার দাবি করেন, তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধান বাঙালিদের অধিকার দিয়েছে এ অঞ্চলে থাকা ও চলাফেরা করার। সন্তু লারমার কোনো অধিকার নেই এ ধরনের ‘বর্ণবাদী’ কথাবার্তা বলার। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির প্রতি সন্তু লারমার আনুগত্য কতটুকু, এ নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে তিনি এক সময় যুদ্ধ করেছিলেন। পাঠকদের এখানে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চাকমাদের ভূমিকা ছিল স্বাধীনতা বিরোধী। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামে চাকমাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে চাকমা রাজা ত্রিবিদ রায় (বর্তমান রাজা দেবাশীষ রায়ের পিতা) ও বোমাং রাজার ভাই পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। ত্রিবিদ রায় একটিবারের জন্যও বাংলাদেশে আসেননি। তিনি এখনও ইসলাবাদে থাকেন এবং এখনও তিনি পাকিস্তানের মন্ত্রী। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি সার্কেলের রাজারা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের বাইরে থাকতে চাইলেও ১৯৭১ সালে তাদের অনুসারীরা বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা তথাকথিত ‘শান্তিবাহিনী’ গঠন করেছিল। এই শান্তিবাহিনীই পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন সন্তু লারমা ও তার বড় ভাই প্রয়াত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। আগামীতে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তাদেরকে এই বিচারের আওতায় আনা হবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয় এখন। মুক্তিযুদ্ধে সন্তু লারমার ভূমিকা ছিল স্বাধীনতার বিপক্ষে। সেই ‘অপরাধে’ তারও তো বিচার হওয়া উচিত।
সন্তু লারমা বার বার সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করেছেন। আবারও সেনা প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। এর অর্থ কী? সেনা প্রত্যাহারের ফলে যে ‘শূন্যতার’ সৃষ্টি হবে, সেই ‘শূন্যতা’ তিনি পূরণ করতে চান পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের দিয়ে। সেনাবাহিনী সরকারের অধীনে কাজ করে। দেশটির শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সাংবিধানিকভাবেই সেনাবাহিনীর উপর বর্তিয়েছে। যে সেনাবাহিনীকে নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের এত গর্ব, সেই সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করে একটি অসত্ উদ্দেশ্য সাধন করছেন সন্তু লারমা। বিবেকবান মানুষদের আজ তাই সতর্ক থাকা উচিত। যেসব পাহাড়ি পুলিশ তথা বিডিআর-এ আছেন, তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘স্থায়ী’ নিয়োগ দেয়ারও দাবি তুলেছেন তিনি। কেন? এই পাহাড়িদের তিনি ব্যবহার করতে চান বাঙালিদের বিরুদ্ধে? তার উদ্দেশ্য সত্ নয়। নিশ্চয়ই তাদের কেউ না কেউ পাহাড়ি এলাকায় থাকবেন। আবার বদলি হয়ে অন্যত্র যাবেন। এটাই নিয়ম। এই নিয়ম কেন ভাঙতে চান সন্তু লারমা? সন্তু বাবু চান না রাঙামাটিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হোক। কেন? তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার। তিনি নিজে মাস্টার্স করেছেন। তিনি চান না খুমি, লুসাই, চাক, লিয়াং, পাংখো, রিয়াং, বোম কিংবা মুরং উপজাতির কেউ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোক। এরা সবচেয়ে অবহেলিত। সরকার সংবিধানের ১৪নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সমাজের ‘অনগ্রসর শ্রেণীর’ জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়। অথচ এর সুবিধা নিচ্ছে চাকমারা। চাকমারা আজ শতকরা ৯৪ ভাগ উচ্চশিক্ষিত, সম্পদশালীও বটে; কিন্তু মুরং, খিয়াং, চাক, পাংখোদের এই সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায় না। সময় এসেছে উপজাতীয় ‘এই অনগ্রসর শ্রেণী’র জন্য কিছু করার। সরকার একটি আলাদা কমিশন গঠন করতে পারে, যারা যাচাই-বাছাই করে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করবে। আর অবিলম্বে রাঙামাটিতে না হোক খাগড়াছড়ি কিংবা বান্দরবানে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হোক। সেই সঙ্গে আমি এটাও চাইব অনগ্রসর উপজাতীয় ছেলেমেয়েরা যাতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনে পয়সায় ও সরকারি অর্থানুকূল্যে পড়াশোনা করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হোক। মনে রাখতে হবে চাকমা বা ত্রিপুরারা অনগ্রসর উপজাতির অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রস্তাবিত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাহাড়ি-বাঙালিরাও বৃত্তি নিয়ে পড়তে পারবেন।
সন্তু লারমা অতীতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও, এ দেশের মানুষ তাকে একজন পাহাড়ি নেতা হিসেবে সম্মান করে। এই সম্মান তাকে রাখতে হবে। তিনি যদি বর্ণবাদী আচরণ করেন, তাহলে তিনি শুধু বিতর্কিতই হবেন। বিদেশি সহযোগিতায় একটি তথাকথিত ‘চাকমা রাজ্য’ (?) প্রতিষ্ঠা করার যে স্বপ্ন তিনি দেখছেন, তা এ দেশের মানুষ কোনোদিনই হতে দেবে না। এ দেশের মানুষ পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে একদিন যুদ্ধ করেছিল। সেই যুদ্ধে চাকমারা আমাদের সঙ্গে শরিক হয়নি সত্য; কিন্তু যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে দেশটির জন্ম হলো, তার এক-দশমাংশ এলাকা আজ বিচ্ছিন্ন (?) হয়ে যাবে, সেখানে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হবে, এটা কিছুতেই হতে দেবে না। তাই সন্তু বাবুর শুভবুদ্ধির উদয় হোক—আমরা এটাই কামনা করব।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
ই-মেইল: tsrahmanbd@yahoo.com
[সূত্রঃ আমার দেশ, ২১/০৩/১০]

0 comments:

Post a Comment