প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর শেষ হয়েছে গত ২২ মার্চ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একজন বিশ্লেষক হিসেবে আমার কাছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত এ সফরের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় স্বার্থ কতটুকু রক্ষিত হলো, এটা বিবেচনায় নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভারত এ সফরকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, তাও বিবেচনায় নিতে হবে। তৃতীয়ত, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ সফরকে কোন দৃষ্টিতে দেখেছিল, তাও আমাদের ভাবতে হবে। এ সফরে আমাদের প্রাপ্তি কী? ৯১ সদস্যের এক বিশাল প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চীনে গিয়েছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই প্রতিনিধিদলে ‘অতিথি’ হিসেবে যাদের নেয়া হয়েছিল,
তারা কেউই চীনা বিশেষজ্ঞ নন। এমনকি পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করেন, তাদেরও কেউ নেই। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীকে ‘উপদেশ’ দেয়ার কেউ ছিলেন না। ফলে যা হবার তা-ই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর ছিল ‘রুটিন ওয়ার্ক’। প্রটোকল রক্ষা করার জন্য যা করতে হয় তা-ই করা হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, বাংলাদেশী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরের পর (২০০২), ফিরতি সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন চীনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়া বাও ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী চীনে গেলেন। এ সফরে আমাদের প্রাপ্তি তিনটি চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারক। চুক্তিগুলো হলো—অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা চুক্তি, শাহ্জালাল সারকারখানা নির্মাণে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি ও সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণে চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক হলো তেল ও গ্যাস খাতে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা-সংক্রান্ত। সূক্ষ্মভাবে দেখলে দেখা যাবে এগুলো মূলত ‘রুটিন ওয়ার্ক’। এসব চুক্তি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয়। জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হতে পারত ঘুমধুম-মুসে হাইওয়ে তৈরিতে চীনের প্রতিশ্রুতি আদায় করার মধ্য দিয়ে। এ মহাসড়কটি নির্মিত হলে সড়ক পথে চীনে যাওয়া সম্ভব। ঘুমধুম বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশী এলাকা আর মুসে হচ্ছে চীনের সীমান্ত শহর, যার সঙ্গে রয়েছে মিয়ানমারের সীমান্ত। যদিও প্রধানমন্ত্রী ইউনান প্রদেশে সফরের সময় তার সম্মানে দেয়া এক নৈশভোজে বলেছেন, তিনি চান চীনের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ।
এটি যদি মহাজোট সরকারের নীতি হয়ে থাকে তাহলে চীনা নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এ প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু যে যৌথ ঘোষণা আমরা পেয়েছি, তাতে মহাড়কের প্রশ্নটি কোথাও নেই। ঢাকায় ফিরে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের ব্যাপারে চীন আগ্রহ দেখিয়েছে। একই সঙ্গে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করার ব্যাপারেও তাদের আগ্রহ রয়েছে। দুটো বিষয়ই আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগ্রহ এক জিনিস, চুক্তি স্বাক্ষর এক জিনিস। আমি ধরে নিচ্ছি দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সড়ক নির্মাণের প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছে। চীন এতে সম্মতি দিলে বা আরও আলাপ-আলোচনা কিংবা এর টেকনিক্যাল দিক ইত্যাদি বিষয়গুলো যৌথ ইশতেহারে থাকত। তাহলে তা নেই কেন? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ একজন এর ব্যাখ্যা দিলে আমি খুশি হবো। এ মহাসড়ক নিয়ে আলোচনার আগে আমাদের বুঝতে হবে ভারত এটি চায় কিনা? মনে রাখতে হবে চীন ২০০৩ সালে ‘কুনমিং উদ্যোগের’ কথা বলেছিল। চীন তার ইউনান প্রদেশ, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোকে নিয়ে একটি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রস্তাব করেছিল। বাংলাদেশ ওই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিল। বাংলাদেশ ওই সময় তার পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতিও প্রণয়ন করেছিল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির জন্য তা ছিল এক নতুন অধ্যায়। কেননা পূর্বের দেশগুলো, যা একটি সম্ভাবনার দ্বার সৃষ্টি করেছিল, তা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ছিল উপেক্ষিত। পাঠক, স্মরণ করার চেষ্টা করুন বিগত জোট সরকারের সময় (২০০১-২০০৬) মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। শুধু তাই নয়, থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা বাংলাদেশে এসে (২০০২) একই বিমানে করে বাংলাদেশের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে থাইল্যান্ডে নিয়ে গিয়েছিলেন। কূটনীতির ইতিহাসে এটা একটা বিরল ঘটনা।
বাংলাদেশের পূর্বমুখী কূটনীতি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ভারতের ওপর থেকে তার নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারত। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশী পণ্যের বিশাল এক বাজার সৃষ্টি হতে পারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। ভারত চীনের ‘কুনমিং উদ্যোগের’ ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। ভারতের ভয় যদি ‘কুনমিং উদ্যোগ’ বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এ অঞ্চলে চীনের ‘কর্তৃত্ব’ ও ‘প্রভাব’ বৃদ্ধি পাবে। তাই ভারত এর বিকল্প হিসেবে গঙ্গা-মেকং উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রস্তাব করেছিল। ভারতের ইচ্ছা ও আগ্রহ দক্ষিণ এশিয়া তথা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অন্যতম নির্ধারক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। পাঠকদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ভারত এরই মধ্যে ১০ সদস্যবিশিষ্ট ‘এশিয়ান ডায়লগ পার্টনার’ এর সদস্য হয়েছে। বাংলাদেশ হতে পারেনি। বাংলাদেশ শুধু ‘আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম’র সদস্য। সেদিন সম্ভবত খুব দূরে নয়, যেদিন ভারত আসিয়ানের পূর্ণ সদস্য হবে। সুতরাং চীন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ সড়ক বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও ভারত তা চাইবে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই ‘ইচ্ছা’ তাই কাগজ-কলমেই থেকে যাবে। এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আগামীতে চীন বা মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা হবে বলেও মনে হয় না। তথাকথিত ‘কানেকটিভিটি’র যুক্তি তুলে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর ও চীনকে তা ব্যবহার করতে দেয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু ভারত কি তা চাইবে? ভারত কখনো চাইবে না চীন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করুক। এমনকি আমার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রও এমনটি চাইবে না। প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পর (চীনকেও গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হবে) ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল নেতিবাচক। ভারতকে বোঝাতে স্বয়ং পররাষ্ট্র সচিবকে বেইজিং থেকে নয়াদিল্লি সরাসরি উড়ে যেতে হয়েছিল। পররাষ্ট্র সচিব ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়েছেন বাংলাদেশ এমন কিছু করবে না, যাতে ভারতের স্বার্থে আঘাত লাগে (দেখুন পার্থ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিবেদন, যায়যায়দিন ২২ মার্চ, ২০১০)। এই যখন পরিস্থিতি তখন চট্টগ্রামে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর হবে, তা বিশ্বাস করতে পারছি না। তথাকথিত ‘কানেকটিভিটি’র নামে ভারতকে সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার চুক্তি করেছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার ভারত সফরের সময়। এখন এই ‘কানেকটিভিটি’ থাকল কোথায়? ‘কানেকটিভিটি’ কি এক দেশকেন্দ্রিক হয়ে গেল না?
গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ধরনের বন্দর চীন, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও বেলুচিস্তানের গাওদারে নির্মাণ করছে। বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বকে বিবেচনায় নিয়ে চীন আমাদের জন্য এ বন্দরটি নির্মাণ করে দিতে পারত। আমাদের জন্য এ ধরনের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর খুবই জরুরি। কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে এ ধরনের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথা দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। সোনাদিয়ায় এ বন্দরটি নির্মিত হলে বার্ষিক এক কোটি কনটেইনারের বেশি পণ্য হ্যান্ডেলিং করা যাবে। তখন পণ্য ওঠানামা ও পরিবহন খরচও অনেক কমে আসবে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায় এ জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা কে জোগাবে? চীনের অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য একটি সহায়ক শক্তি হতে পারে। কিন্তু মিজারুল কায়েসের সরাসরি বেইজিং থেকে নয়াদিল্লি গমন ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার আলাপ এ কথাই প্রমাণ করে গভীর সমুদ্রবন্দর চীনের ব্যবহারের ব্যাপারে ভারতের আপত্তি রয়েছে। ভারতের এ আপত্তির মুখে বাংলাদেশের পক্ষে চীনের সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ সম্ভব হয়ে উঠবে না। তাই ধারণা করছি, প্রধানমন্ত্রীর চীনকে বন্দর ব্যবহার করা সম্পর্কিত বক্তব্য কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অ্যালায়েন্স চীনের বিরুদ্ধে একটি শক্ত বলয় হিসেবে গড়ে উঠছে। ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক প্রযুক্তি সরবরাহ, দালাইলামার যুক্তরাষ্ট্র সফর, দালাইলামা কর্তৃক চীনের মিনচিয়াং প্রদেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বী উইগুরদের সমর্থন ও একই সঙ্গে আবার তিব্বতের স্বায়ত্তশাসন দাবি, এসব বিষয় চীনের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে চীন বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। চীন এমন কোনো প্রকল্পে হাত দেবে না, যা কিনা চীনের স্বার্থকে আঘাত করতে পারে আগামীতে। কূটনৈতিক সৌজন্যতাবোধ থেকে চীন প্রধানমন্ত্রীর সফরকে গ্রহণ করেছে। কিন্তু খুব একটা উচ্ছ্বাস ছিল না। যৌথ ইশতেহারে খুব আশাব্যঞ্জক কথাবার্তাও বলা হয়নি। বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণে চীনের সাহায্য আমরা চাইতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা চাইনি। সম্ভবত ভারত ও ইসরাইলি ‘লবী’ এমনটি চাইবে না।
সামরিক সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি অব্যাহত থাকবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন। কিন্তু অতীত ইতিহাস বলে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করে ঢাকায় প্রথমবারের মতো রাশিয়ার একটি অস্ত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন এবং তিনি চীনের বদলে রাশিয়া থেকে আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয় করেছিলেন (মোট মূল্য ১২৪ মিলিয়ন ডলার)। ওই সময় চীন মিগ-২৯ এর চীনা ভার্সন সরবরাহ করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ চীনের বদলে রাশিয়াকেই তখন বেছে নিয়েছিল। অভিযোগ আছে, মিগ-২৯ এর খুচরা যন্ত্রাংশ আসছে ভারত থেকে (ভারত রাশিয়া থেকে লাইসেন্স নিয়ে তা তৈরি করে)। এর ফলে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা আমাদের বেড়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা ভারত মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলে চীনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ভারত। চীনা নৌবাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে ভারতীয় নৌবাহিনী। মুম্বাই, কারওয়ার, কোচি, ভিসাকাপত্তন, পোর্ট ব্লেয়ারে রয়েছে ভারতীয় নৌ-বাহিনীর ঘাঁটি। সেই সঙ্গে সিসিলি, মাদাগাস্কার, মৌরিতুসে ভারতীয় নৌবাহিনীর বন্দর সুবিধা রয়েছে। এর পাশাপাশি দিয়াগো গার্সিয়াতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ঘাঁটি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের অতি সখ্য আগামীতে চীনের বিরুদ্ধে নতুন আরেকটি Containment Poliপু’র জন্ম দেয় কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। ইউরোপে অব্যাহত সোভিয়েত প্রভাব ও প্রতিপত্তিকে ক্ষুণ্ন করতে ১৯৫৬ সালে জর্জ কান্না এই Containment Poliপু’র জন্ম দিয়েছিলেন। এই তত্ত্বের মোদ্দা কথা হচ্ছে ‘ঘিরে ফেলা’। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঘিরে ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন চীনকেও ‘ঘিরে ফেলতে’ পারে যুক্তরাষ্ট্র। অতিসম্প্রতি জোনাথান হল্সলাগের (Jonathan Holslag) একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে (China of India : Prospects for Peace)। তাতে এসব কথা আছে। বৃহত্ শক্তির এ ক্ষমতার বিন্যাসে বাংলাদেশের জড়িত হওয়া সঙ্গত কারণেই চীন ভালো চোখে দেখবে না। বিশেষ করে শেখ হাসিনার ভারত সফর ও ভারতের সঙ্গে একটি ‘বিশেষ সম্পর্ক’ তৈরি করা চীনা নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। এখন ভারতের পর প্রধানমন্ত্রী চীন সফর করে চীনা বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দিতে চাইলেও আগামী দিনগুলোই প্রমাণ করবে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়।
লেখক : নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক
ই-মেইল : tsrahmanbd@yahoo.com
[সূত্রঃ আমার দেশ, ২৮/০৩/১০]
তারা কেউই চীনা বিশেষজ্ঞ নন। এমনকি পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করেন, তাদেরও কেউ নেই। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীকে ‘উপদেশ’ দেয়ার কেউ ছিলেন না। ফলে যা হবার তা-ই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফর ছিল ‘রুটিন ওয়ার্ক’। প্রটোকল রক্ষা করার জন্য যা করতে হয় তা-ই করা হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, বাংলাদেশী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরের পর (২০০২), ফিরতি সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন চীনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়া বাও ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে। এরপর এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী চীনে গেলেন। এ সফরে আমাদের প্রাপ্তি তিনটি চুক্তি ও একটি সমঝোতা স্মারক। চুক্তিগুলো হলো—অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা চুক্তি, শাহ্জালাল সারকারখানা নির্মাণে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি ও সপ্তম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণে চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক হলো তেল ও গ্যাস খাতে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা-সংক্রান্ত। সূক্ষ্মভাবে দেখলে দেখা যাবে এগুলো মূলত ‘রুটিন ওয়ার্ক’। এসব চুক্তি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয়। জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হতে পারত ঘুমধুম-মুসে হাইওয়ে তৈরিতে চীনের প্রতিশ্রুতি আদায় করার মধ্য দিয়ে। এ মহাসড়কটি নির্মিত হলে সড়ক পথে চীনে যাওয়া সম্ভব। ঘুমধুম বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশী এলাকা আর মুসে হচ্ছে চীনের সীমান্ত শহর, যার সঙ্গে রয়েছে মিয়ানমারের সীমান্ত। যদিও প্রধানমন্ত্রী ইউনান প্রদেশে সফরের সময় তার সম্মানে দেয়া এক নৈশভোজে বলেছেন, তিনি চান চীনের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ।
এটি যদি মহাজোট সরকারের নীতি হয়ে থাকে তাহলে চীনা নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এ প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু যে যৌথ ঘোষণা আমরা পেয়েছি, তাতে মহাড়কের প্রশ্নটি কোথাও নেই। ঢাকায় ফিরে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের ব্যাপারে চীন আগ্রহ দেখিয়েছে। একই সঙ্গে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করার ব্যাপারেও তাদের আগ্রহ রয়েছে। দুটো বিষয়ই আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগ্রহ এক জিনিস, চুক্তি স্বাক্ষর এক জিনিস। আমি ধরে নিচ্ছি দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় সড়ক নির্মাণের প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছে। চীন এতে সম্মতি দিলে বা আরও আলাপ-আলোচনা কিংবা এর টেকনিক্যাল দিক ইত্যাদি বিষয়গুলো যৌথ ইশতেহারে থাকত। তাহলে তা নেই কেন? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ একজন এর ব্যাখ্যা দিলে আমি খুশি হবো। এ মহাসড়ক নিয়ে আলোচনার আগে আমাদের বুঝতে হবে ভারত এটি চায় কিনা? মনে রাখতে হবে চীন ২০০৩ সালে ‘কুনমিং উদ্যোগের’ কথা বলেছিল। চীন তার ইউনান প্রদেশ, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোকে নিয়ে একটি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রস্তাব করেছিল। বাংলাদেশ ওই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিল। বাংলাদেশ ওই সময় তার পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতিও প্রণয়ন করেছিল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির জন্য তা ছিল এক নতুন অধ্যায়। কেননা পূর্বের দেশগুলো, যা একটি সম্ভাবনার দ্বার সৃষ্টি করেছিল, তা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ছিল উপেক্ষিত। পাঠক, স্মরণ করার চেষ্টা করুন বিগত জোট সরকারের সময় (২০০১-২০০৬) মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। শুধু তাই নয়, থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা বাংলাদেশে এসে (২০০২) একই বিমানে করে বাংলাদেশের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে থাইল্যান্ডে নিয়ে গিয়েছিলেন। কূটনীতির ইতিহাসে এটা একটা বিরল ঘটনা।
বাংলাদেশের পূর্বমুখী কূটনীতি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ ভারতের ওপর থেকে তার নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারত। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশী পণ্যের বিশাল এক বাজার সৃষ্টি হতে পারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। ভারত চীনের ‘কুনমিং উদ্যোগের’ ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। ভারতের ভয় যদি ‘কুনমিং উদ্যোগ’ বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এ অঞ্চলে চীনের ‘কর্তৃত্ব’ ও ‘প্রভাব’ বৃদ্ধি পাবে। তাই ভারত এর বিকল্প হিসেবে গঙ্গা-মেকং উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রস্তাব করেছিল। ভারতের ইচ্ছা ও আগ্রহ দক্ষিণ এশিয়া তথা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অন্যতম নির্ধারক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। পাঠকদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ভারত এরই মধ্যে ১০ সদস্যবিশিষ্ট ‘এশিয়ান ডায়লগ পার্টনার’ এর সদস্য হয়েছে। বাংলাদেশ হতে পারেনি। বাংলাদেশ শুধু ‘আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম’র সদস্য। সেদিন সম্ভবত খুব দূরে নয়, যেদিন ভারত আসিয়ানের পূর্ণ সদস্য হবে। সুতরাং চীন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ সড়ক বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও ভারত তা চাইবে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই ‘ইচ্ছা’ তাই কাগজ-কলমেই থেকে যাবে। এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আগামীতে চীন বা মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা হবে বলেও মনে হয় না। তথাকথিত ‘কানেকটিভিটি’র যুক্তি তুলে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর ও চীনকে তা ব্যবহার করতে দেয়ার কথাও বলেছেন। কিন্তু ভারত কি তা চাইবে? ভারত কখনো চাইবে না চীন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করুক। এমনকি আমার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রও এমনটি চাইবে না। প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পর (চীনকেও গভীর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হবে) ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল নেতিবাচক। ভারতকে বোঝাতে স্বয়ং পররাষ্ট্র সচিবকে বেইজিং থেকে নয়াদিল্লি সরাসরি উড়ে যেতে হয়েছিল। পররাষ্ট্র সচিব ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়েছেন বাংলাদেশ এমন কিছু করবে না, যাতে ভারতের স্বার্থে আঘাত লাগে (দেখুন পার্থ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিবেদন, যায়যায়দিন ২২ মার্চ, ২০১০)। এই যখন পরিস্থিতি তখন চট্টগ্রামে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর হবে, তা বিশ্বাস করতে পারছি না। তথাকথিত ‘কানেকটিভিটি’র নামে ভারতকে সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার চুক্তি করেছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার ভারত সফরের সময়। এখন এই ‘কানেকটিভিটি’ থাকল কোথায়? ‘কানেকটিভিটি’ কি এক দেশকেন্দ্রিক হয়ে গেল না?
গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ধরনের বন্দর চীন, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও বেলুচিস্তানের গাওদারে নির্মাণ করছে। বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বকে বিবেচনায় নিয়ে চীন আমাদের জন্য এ বন্দরটি নির্মাণ করে দিতে পারত। আমাদের জন্য এ ধরনের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর খুবই জরুরি। কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে এ ধরনের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথা দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। সোনাদিয়ায় এ বন্দরটি নির্মিত হলে বার্ষিক এক কোটি কনটেইনারের বেশি পণ্য হ্যান্ডেলিং করা যাবে। তখন পণ্য ওঠানামা ও পরিবহন খরচও অনেক কমে আসবে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায় এ জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা কে জোগাবে? চীনের অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা এ ক্ষেত্রে আমাদের জন্য একটি সহায়ক শক্তি হতে পারে। কিন্তু মিজারুল কায়েসের সরাসরি বেইজিং থেকে নয়াদিল্লি গমন ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার আলাপ এ কথাই প্রমাণ করে গভীর সমুদ্রবন্দর চীনের ব্যবহারের ব্যাপারে ভারতের আপত্তি রয়েছে। ভারতের এ আপত্তির মুখে বাংলাদেশের পক্ষে চীনের সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ সম্ভব হয়ে উঠবে না। তাই ধারণা করছি, প্রধানমন্ত্রীর চীনকে বন্দর ব্যবহার করা সম্পর্কিত বক্তব্য কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অ্যালায়েন্স চীনের বিরুদ্ধে একটি শক্ত বলয় হিসেবে গড়ে উঠছে। ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক প্রযুক্তি সরবরাহ, দালাইলামার যুক্তরাষ্ট্র সফর, দালাইলামা কর্তৃক চীনের মিনচিয়াং প্রদেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বী উইগুরদের সমর্থন ও একই সঙ্গে আবার তিব্বতের স্বায়ত্তশাসন দাবি, এসব বিষয় চীনের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে চীন বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। চীন এমন কোনো প্রকল্পে হাত দেবে না, যা কিনা চীনের স্বার্থকে আঘাত করতে পারে আগামীতে। কূটনৈতিক সৌজন্যতাবোধ থেকে চীন প্রধানমন্ত্রীর সফরকে গ্রহণ করেছে। কিন্তু খুব একটা উচ্ছ্বাস ছিল না। যৌথ ইশতেহারে খুব আশাব্যঞ্জক কথাবার্তাও বলা হয়নি। বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণে চীনের সাহায্য আমরা চাইতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা চাইনি। সম্ভবত ভারত ও ইসরাইলি ‘লবী’ এমনটি চাইবে না।
সামরিক সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি অব্যাহত থাকবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন। কিন্তু অতীত ইতিহাস বলে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করে ঢাকায় প্রথমবারের মতো রাশিয়ার একটি অস্ত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন এবং তিনি চীনের বদলে রাশিয়া থেকে আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয় করেছিলেন (মোট মূল্য ১২৪ মিলিয়ন ডলার)। ওই সময় চীন মিগ-২৯ এর চীনা ভার্সন সরবরাহ করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ চীনের বদলে রাশিয়াকেই তখন বেছে নিয়েছিল। অভিযোগ আছে, মিগ-২৯ এর খুচরা যন্ত্রাংশ আসছে ভারত থেকে (ভারত রাশিয়া থেকে লাইসেন্স নিয়ে তা তৈরি করে)। এর ফলে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা আমাদের বেড়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা ভারত মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলে চীনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে ভারত। চীনা নৌবাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে ভারতীয় নৌবাহিনী। মুম্বাই, কারওয়ার, কোচি, ভিসাকাপত্তন, পোর্ট ব্লেয়ারে রয়েছে ভারতীয় নৌ-বাহিনীর ঘাঁটি। সেই সঙ্গে সিসিলি, মাদাগাস্কার, মৌরিতুসে ভারতীয় নৌবাহিনীর বন্দর সুবিধা রয়েছে। এর পাশাপাশি দিয়াগো গার্সিয়াতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ঘাঁটি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের অতি সখ্য আগামীতে চীনের বিরুদ্ধে নতুন আরেকটি Containment Poliপু’র জন্ম দেয় কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। ইউরোপে অব্যাহত সোভিয়েত প্রভাব ও প্রতিপত্তিকে ক্ষুণ্ন করতে ১৯৫৬ সালে জর্জ কান্না এই Containment Poliপু’র জন্ম দিয়েছিলেন। এই তত্ত্বের মোদ্দা কথা হচ্ছে ‘ঘিরে ফেলা’। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঘিরে ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন চীনকেও ‘ঘিরে ফেলতে’ পারে যুক্তরাষ্ট্র। অতিসম্প্রতি জোনাথান হল্সলাগের (Jonathan Holslag) একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে (China of India : Prospects for Peace)। তাতে এসব কথা আছে। বৃহত্ শক্তির এ ক্ষমতার বিন্যাসে বাংলাদেশের জড়িত হওয়া সঙ্গত কারণেই চীন ভালো চোখে দেখবে না। বিশেষ করে শেখ হাসিনার ভারত সফর ও ভারতের সঙ্গে একটি ‘বিশেষ সম্পর্ক’ তৈরি করা চীনা নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। এখন ভারতের পর প্রধানমন্ত্রী চীন সফর করে চীনা বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দিতে চাইলেও আগামী দিনগুলোই প্রমাণ করবে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়।
লেখক : নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক
ই-মেইল : tsrahmanbd@yahoo.com
[সূত্রঃ আমার দেশ, ২৮/০৩/১০]
0 comments:
Post a Comment