বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে যখন খোদ শিক্ষামন্ত্রী তার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, সেখানে সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে একটি সংবাদ। তাতে বলা হয়েছে, আরও ৪৮টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দু'বছর পার করেছে। এই দু'বছর জাতীয় শিক্ষানীতি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইন সংসদে পাস করেছে। যে কারণে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উদ্যোক্তাদের আগ্রহের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তেমন নজর দিতে পারেনি। তবে নিশ্চিত করেই বলতে পারি, সরকারের টার্ম শেষ হওয়ার আগেই বেশক'টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাবে। মূল বিষয় এটি নয়। মূল বিষয় হচ্ছে_ আমাদের মতো দেশে এ ধরনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আর ক'টি প্রয়োজন? এমনিতেই যে ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে তার মধ্যে বেশক'টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৫টি থেকে ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় মানসম্মত, বাকিগুলো পরিচালিত হচ্ছে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। শুধু সার্টিফিকেট বিক্রিকে প্রাধান্য দিয়েই এরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে আউটার ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করার কোনো সুযোগ নেই; কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই আইনের ফাঁকফোকরের সুযোগ নিয়ে আউটার ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিষয়গুলো জানে; কিন্তু তাদের করার কিছু নেই। তারা শুধু সুপারিশ করতে পারে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় 'অদৃশ্য কারণে' এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত আউটার ক্যাম্পাসে নকলের মহোৎসব, সার্টিফিকেট বাণিজ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। আরও খারাপ খবর হচ্ছে, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পিতার (যিনি উপাচার্য) পদাঙ্ক অনুসরণ করে ছেলেকেও উপাচার্য বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। অনেকটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মতো। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের কোনো স্বচ্ছতা নেই। আয়ের একটি সিংহভাগ জমা হয় উপাচার্যের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে নয়। যিনি একদিন চাকরি করতেন, তিনি শিক্ষকতা না করেই হয়ে যান উপাচার্য, যিনি আদৌ কোনোদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেননি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বছরের পর বছর ধরে কেউ কেউ উপাচার্য থেকে যাচ্ছেন। প্রতি বছরই তদবিরের জোরে তারা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে নেন। আমার বিশ্বাস, মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে ফাইল উপস্থাপন করার সময় সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয় না। যার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে, তিনি যখন আবার উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। অনেক প্রশ্নবিদ্ধ পিএইচডি ডিগ্রিধারীকে আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা তথা উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। আমরা একটা 'ডাটাবেজ' তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তা এখন 'ডিপ ফ্রিজে', কেউ এটা নিয়ে এখন আর আলোচনা করে না। বর্তমানে মঞ্জুরি কমিশনে একজন সদস্য ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত। সঙ্গত কারণেই তিনি তথ্যের জন্য স্টাফদের ওপর নির্ভরশীল হন; আর তারা তাকে সঠিক তথ্যটি দেন না। এ জন্যই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভাল করার জন্য একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান দরকার। মঞ্জুরি কমিশনের বর্তমান কাঠামোয় তা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার জাতীয় সংসদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করেছে। এ আইনে শিক্ষার মান যাচাইয়ের জন্য একটি অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এটি খুবই জরুরি এবং যত দ্রুত এটি করা যায় ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।
আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধী নই, বরং 'রাজনীতিমুক্ত' বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য একেকটি মডেল হতে পারে। কিন্তু এর ব্যবস্থাপনাই হচ্ছে আসল। এ দেশে ভালো উদ্যোক্তা আছেন। বলতে দ্বিধা নেই_ দু'একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে ইচ্ছা করলেই যে কেউ ভর্তি হতে পারে না। তারা মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দেন। নিঃসন্দেহে এটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু গুটিকয়েক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে তো আমি ৫৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিচার করতে পারব না। পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় সাইনবোর্ড টানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই_ যেনতেনভাবে ছাত্র ভর্তি করা ও টাকার বিনিময়ে একটি সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া। আমি সচিবালয়ের অনেক কর্মকর্তাকে জানি, যারা কোনোদিন ক্লাস না করেই মাস্টার্স ডিগ্রি জোগাড় করে ফেলেছেন। তারা আবার কেউ কেউ ভিড় করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি করার জন্য। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাউন্সিল তা অনুমোদনও করছে। দুঃখ লাগে, এসব নিয়ে কেউ ভাবেন না। তাই নতুন করে ৪৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদনপত্রের কথা যখন শুনি, তখন আতঙ্কিত না হয়ে পারি না। কারা এখানে উপাচার্য হবেন? কারা এখানে পড়াবেন? কলেজে শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা যারা রাখেন না তারাই হচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন আউটার ক্যাম্পাসে! তাহলে কি আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঘরে ঘরে শত শত মাস্টার্স ডিগ্রিধারী তৈরি করব? আর মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েই আমরা শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটাব? আমাদের দেশে যত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে এমনটি নেই। শ্রীলংকায় শিক্ষার হার অনেক বেশি। সেখানেও এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নেই। নেই ভারত এবং পাকিস্তানেও। তাহলে আমরা করছি কার স্বার্থে? এ মুহূর্তে তাই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা ঠিক হবে না। উদ্যোক্তারা পুরনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারেন। জনাব মেনন রাজনীতি করেন। বর্তমানে যে দায়িত্বে তিনি রয়েছেন, সে দায়িত্বে থেকে তিনি যদি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নেন, তাহলে বিতর্কিত হবেন। স্বয়ং স্থায়ী পরিষদের সভাপতি হিসেবে তিনি যদি পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম দূর করার উদ্যোগ নেন, তাহলে ভালো করবেন। আমরা তার কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করি।
আমরা চাই, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি নিয়মের মধ্যে আসুক। শিক্ষাবিদরাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালান। যে আইনটি সংসদে সম্প্রতি পাস হয়েছে তা তুলনামূলক বিচারে যথেষ্ট ভালো; কিন্তু এর বাস্তবায়নই হলো আসল কথা। ছেলে বাবার মতো উপাচার্য হবেন, চাকরিজীবী হঠাৎ করে উপাচার্য হয়ে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবেন_ এটা হতে দেওয়া যায় না। নতুন আইনে তা নেই। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়ার আগে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কর্মকাণ্ড 'রিভিউ' এবং কঠোর হাতে অনিয়ম দূর করা দরকার। এ মুহূর্তে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের তাই প্রয়োজন নেই। সরকার ইতিমধ্যে আরও ৩টি থেকে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রয়োজনে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরি করে সেখানে আরও বেশকিছু ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিতে পারে। নতুন করে আরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়ে বিতর্কের মাত্রা আর বাড়ানো ঠিক
হবে না।
তারেক শামসুর রেহমান :বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য
tsrahmanbd@yahoo.com
[সূত্রঃ সমকাল, ০৪/০১/১১]
কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় 'অদৃশ্য কারণে' এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত আউটার ক্যাম্পাসে নকলের মহোৎসব, সার্টিফিকেট বাণিজ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। আরও খারাপ খবর হচ্ছে, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পিতার (যিনি উপাচার্য) পদাঙ্ক অনুসরণ করে ছেলেকেও উপাচার্য বানানোর প্রক্রিয়া চলছে। অনেকটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মতো। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের কোনো স্বচ্ছতা নেই। আয়ের একটি সিংহভাগ জমা হয় উপাচার্যের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে নয়। যিনি একদিন চাকরি করতেন, তিনি শিক্ষকতা না করেই হয়ে যান উপাচার্য, যিনি আদৌ কোনোদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেননি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বছরের পর বছর ধরে কেউ কেউ উপাচার্য থেকে যাচ্ছেন। প্রতি বছরই তদবিরের জোরে তারা রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিয়ে নেন। আমার বিশ্বাস, মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে ফাইল উপস্থাপন করার সময় সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয় না। যার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে, তিনি যখন আবার উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। অনেক প্রশ্নবিদ্ধ পিএইচডি ডিগ্রিধারীকে আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা তথা উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। আমরা একটা 'ডাটাবেজ' তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তা এখন 'ডিপ ফ্রিজে', কেউ এটা নিয়ে এখন আর আলোচনা করে না। বর্তমানে মঞ্জুরি কমিশনে একজন সদস্য ৫৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত। সঙ্গত কারণেই তিনি তথ্যের জন্য স্টাফদের ওপর নির্ভরশীল হন; আর তারা তাকে সঠিক তথ্যটি দেন না। এ জন্যই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখভাল করার জন্য একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান দরকার। মঞ্জুরি কমিশনের বর্তমান কাঠামোয় তা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার জাতীয় সংসদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করেছে। এ আইনে শিক্ষার মান যাচাইয়ের জন্য একটি অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এটি খুবই জরুরি এবং যত দ্রুত এটি করা যায় ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।
আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধী নই, বরং 'রাজনীতিমুক্ত' বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য একেকটি মডেল হতে পারে। কিন্তু এর ব্যবস্থাপনাই হচ্ছে আসল। এ দেশে ভালো উদ্যোক্তা আছেন। বলতে দ্বিধা নেই_ দু'একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে ইচ্ছা করলেই যে কেউ ভর্তি হতে পারে না। তারা মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দেন। নিঃসন্দেহে এটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু গুটিকয়েক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে তো আমি ৫৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিচার করতে পারব না। পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় সাইনবোর্ড টানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই_ যেনতেনভাবে ছাত্র ভর্তি করা ও টাকার বিনিময়ে একটি সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া। আমি সচিবালয়ের অনেক কর্মকর্তাকে জানি, যারা কোনোদিন ক্লাস না করেই মাস্টার্স ডিগ্রি জোগাড় করে ফেলেছেন। তারা আবার কেউ কেউ ভিড় করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি করার জন্য। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাউন্সিল তা অনুমোদনও করছে। দুঃখ লাগে, এসব নিয়ে কেউ ভাবেন না। তাই নতুন করে ৪৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদনপত্রের কথা যখন শুনি, তখন আতঙ্কিত না হয়ে পারি না। কারা এখানে উপাচার্য হবেন? কারা এখানে পড়াবেন? কলেজে শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা যারা রাখেন না তারাই হচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন আউটার ক্যাম্পাসে! তাহলে কি আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঘরে ঘরে শত শত মাস্টার্স ডিগ্রিধারী তৈরি করব? আর মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েই আমরা শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটাব? আমাদের দেশে যত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে এমনটি নেই। শ্রীলংকায় শিক্ষার হার অনেক বেশি। সেখানেও এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নেই। নেই ভারত এবং পাকিস্তানেও। তাহলে আমরা করছি কার স্বার্থে? এ মুহূর্তে তাই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা ঠিক হবে না। উদ্যোক্তারা পুরনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারেন। জনাব মেনন রাজনীতি করেন। বর্তমানে যে দায়িত্বে তিনি রয়েছেন, সে দায়িত্বে থেকে তিনি যদি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নেন, তাহলে বিতর্কিত হবেন। স্বয়ং স্থায়ী পরিষদের সভাপতি হিসেবে তিনি যদি পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়ম দূর করার উদ্যোগ নেন, তাহলে ভালো করবেন। আমরা তার কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করি।
আমরা চাই, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি নিয়মের মধ্যে আসুক। শিক্ষাবিদরাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালান। যে আইনটি সংসদে সম্প্রতি পাস হয়েছে তা তুলনামূলক বিচারে যথেষ্ট ভালো; কিন্তু এর বাস্তবায়নই হলো আসল কথা। ছেলে বাবার মতো উপাচার্য হবেন, চাকরিজীবী হঠাৎ করে উপাচার্য হয়ে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবেন_ এটা হতে দেওয়া যায় না। নতুন আইনে তা নেই। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়ার আগে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কর্মকাণ্ড 'রিভিউ' এবং কঠোর হাতে অনিয়ম দূর করা দরকার। এ মুহূর্তে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের তাই প্রয়োজন নেই। সরকার ইতিমধ্যে আরও ৩টি থেকে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রয়োজনে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরি করে সেখানে আরও বেশকিছু ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিতে পারে। নতুন করে আরও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়ে বিতর্কের মাত্রা আর বাড়ানো ঠিক
হবে না।
তারেক শামসুর রেহমান :বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য
tsrahmanbd@yahoo.com
[সূত্রঃ সমকাল, ০৪/০১/১১]
0 comments:
Post a Comment