রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

পারমাণবিক বিপর্যয় : চেরনোবিল থেকে ফুকুসিমা

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তভর্ুক্ত চেরনোবিলে (বর্তমানে ইউক্রেনে) পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসেপ্রায় একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো জাপানের ফুকুসিমা ডাইচি পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রেফুকুসিমা পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রে যে ৬টি চুিলস্ন ছিল তার মাঝে ৪টিই ধ্বংস হয়ে গেছেএর ফলে সারা বিশ্বব্যাপীই এখন পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রগুলো নিয়ে এক ধরনের আতংক ছড়িয়ে পড়েছে জার্মানী, সুইজারল্যান্ড, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে তাদের নিজ দেশে অবস্থিত পুরনো পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রগুলো আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে এবং পুন: পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেশুধু তাই নয়, পারমাণবিক শক্তির ভবিষ্যৎ নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছেবলা হচ্ছে পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রগুলো নিরাপদ নয়জাপানের মত দেশেও এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নিযদিও ফুকুসিমার পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রটি আধুনিক প্রজন্মের নয়এটি প্রায় ৪০ বছরের পুরনোকিন্তু তারপরও জাপান প্রযুক্তিবিদ্যায় সর্বোচ্চ সীমায় পেঁৗছালেও, তারা পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে ভয়টা হচ্ছে এক জায়গায় পারমাণবিক কেন্দ্রে যদি বিস্ফোরণ ঘটে তাহলে সেখান থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে, যা কী না শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য যথেস্টচেরনোবিলের ঘটনার ২৫ বছর পরও মাটিচাপা দেয়া চেরনোবিলের বিদু্যৎ কেন্দ্রটি থেকে এখনও সীমিত পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা বের হচ্ছেআমার মনে আছে চেরনোবিলের দুর্ঘটনার সময় আমি জার্মানীতে ছিলামঐ সময় জার্মানী পর্যন্ত তেজস্ক্রিয় ধূলিকণা বাতাসে ভেসে এসেছিলএর ফলশ্রুতি হিসেবে দীর্ঘদিন দুধ ও পালংশাক (স্পিনাট) খাওয়া বন্ধ করেছিল জার্মানবাসীইউক্রেনের সীমান্তবতর্ী বেলারুশ ও পোল্যান্ডের শত শত গরু হত্যা করা হয়েছিলঅনেকের মনে থাকার কথা ঐ সময় বাংলাদেশ পোল্যান্ড থেকে গুঁড়ো দুধ আমদানি নিষিদ্ধ করেছিলকেননা গুঁড়ো দুধে তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গিয়েছিলআজ ফুকুসিমার দুর্ঘটনার পর টোকিও পর্যন্ত শাক-সবজিতে সীমিত পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যাচ্ছেএটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ফুকুসিমার বিস্ফোরণের পর বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক শক্তির ওপর যে নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছিল তাতে ভাটা আসবেবিশ্বে জ্বালানি চাহিদা বাড়ছেফসিল ফুয়েল (তেল, গ্যাস) বিশ্বের ঊষ্ণতা বাড়ায়তাই পারমাণবিক জ্বালানির সম্ভাবনা বাড়ছিলচীন ও ভারত ব্যাপকহারে পারমাণবিক বিদু্যৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছেভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এ ব্যাপারে একাধিক চুক্তি করেছেযদিও এখন অব্দি ভারতের জ্বালানি উৎসের মাত্র ২ ভাগ আসে পারমাণবিক শক্তি থেকেকয়লা হচ্ছে ভারতের জ্বালানির অন্যতম উৎস, শতকরা ৫৫ ভাগগ্যাস থেকে পাওয়া যায় ৭ ভাগঅন্যদিকে পাকিস্তানে জ্বালানির অন্যতম উৎস হচ্ছে তেল (৪৩ ভাগ) ও গ্যাস (৪১ ভাগ)কয়লা থেকে পাওয়া যায় মাত্র ৫ ভাগজল বিদু্যৎ খাতে ভূটানের অংশ ৮০ ভাগ, আর নেপালের ৩১ ভাগএর অর্থ হচ্ছে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানির উৎস এখনও কয়লা (শতকরা ৪৬ ভাগ)এখানে তেলের উৎস ৩৪ ভাগ, গ্যাসের ১২ ভাগ, জল বিদু্যৎ ৬ ভাগবাংলাদেশের জ্বালানির অন্যতম উৎস গ্যাস হলেও (৬৬ ভাগ) এখন গ্যাসের রির্জাভ ফুরিয়ে আসছেতেলের ওপর নির্ভরশীলতা এখনও ৩১ ভাগকয়লার একটা সম্ভাবনা থাকলেও, পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১ ভাগসুতরাং সংগত কারণেই বাংলাদেশে পরমাণু জ্বালানির ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ছিলতবে বলাই বাহুল্য জ্বালানির যে বিপুল চাহিদা, এই চাহিদা পরমাণু জ্বালানি দিয়েও মেটান যাবে নাবাংলাদেশকে কয়লা নির্ভর বিদু্যৎ উৎপাদনে যেতে হবেএটা ছাড়া বাংলাদেশের কোন বিকল্প নেইপৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য কয়লার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীলবর্তমানে বিশ্বের কয়েকটি দেশে কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎ উৎপাদনের পরিমাণ হচ্ছে অষ্ট্রেলিয়া ৭৯ শতাংশ, চীন ৭৮, জার্মানি ৪৯, ভারত ৬৯, দক্ষিণ আফ্রিকা ৯২, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ

পরমাণু জ্বালানি সম্পর্কে বলা হয় এই জ্বালানির মাধ্যমে কার্বন নির্গমন হয় কমভারতে কয়লা পোড়ানোর ফলে সেখানে কার্বন নির্গমন হয় বছরে ২৭৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন মেট্রিক টনপাকিস্তানে এর পরিমাণ ২৯ দশমিক ৬ ও বাংলাদেশে ৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টনপরমাণু বিদু্যৎকেন্দ্র স্থাপনে সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে অসুবিধাওসুবিধা হলো অনেক কম খরচে বিদু্যৎ উৎপাদন করা যায়বিদু্যৎ উৎপাদনে প্রচলিত জ্বালানি যেমন গ্যাস, কয়লা, তেল এসব থেকে পরমাণু বিদু্যৎ কেন্দ্রে উৎপাদন খরচ অনেক কম হবেদীর্ঘমেয়াদে এই খরচ আরো কম হবেআমদানি-নির্ভর জ্বালানির ক্ষেত্রে পরমাণু বিদু্যৎকেন্দ্রে জ্বালানি খরচ সব থেকে কমঅন্যদিকে পরমাণু বিদু্যৎকেন্দ্রের সব থেকে বড় সমস্যা বিনিয়োগ স্থাপন করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন, কম আয়ের দেশগুলোর পক্ষে এ অর্থ সংগ্রহ অসম্ভব হয়ে পড়ে দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হলেও স্থাপনে খরচ প্রায় দি্বগুণএর জ্বালানি যে কোন দেশ থেকে আনা সম্ভব নয়বাংলাদেশ নিজেও উৎপাদন করতে পারবে নাকারণ আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা আছেনির্দিষ্ট দেশ থেকেই সবসময় জ্বালানি আনতে হবেতাদের সঙ্গে সবসময় ভালো সম্পর্ক থাকতে হবেবাংলাদেশের মত কম আয়ের দেশে তাই এ ধরনের বিশাল বিনিয়োগ একটি বড় সমস্যা

সাধারণত ৬০০ থেকে ১০০০ মেগাওয়াটের পরমাণু বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়৫০০ মেগাওয়াটের ওপরে বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হলে উৎপাদন খরচ কম হয়কিন্তু কেন্দ্র স্থাপনে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ খরচ হয়প্রচলিত বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রতি মেগাওয়াটের জন্য গড়ে খরচ হয় ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারকিন্তু আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোতেই পরমাণু কেন্দ্র স্থাপন করতে খরচ হয়েছে দেড় থেকে ২ ্বিিলয়ন ডলারসেই হিসাবে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে খরচ হবে দেড় বিলিয়ন ডলার বা ১৫০ কোটি ডলার বর্তমানে ২৫০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াটেরও বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপন করা যায়তবে এ খরচ দেশ ও স্থানভেদে ভিন্ন হয়জাপানে পরমাণু বিদু্যৎ উৎপাদনে খরচ হয় প্রতি ইউনিটে ৪ ডলার ৮০ সেন্টজাপানে কয়লায় খরচ হয় ৪ ডলার ৯৫ সেন্ট ও গ্যাসে ৫ ডলার ২১ সেন্টকোরিয়ায় পরমাণুতে ২ ডলার ৩৪ সেন্ট, কয়লায় ২ ডলার ১৬ সেন্ট ও গ্যাসে ৪ ডলার ৬৫ সেন্টফ্রান্সে পরমাণুতে ২ ডলার ৫৪ সেন্ট, কয়লায় ৩ ডলার ৩৩ সেন্ট ও গ্যাসে ৩ ডলার ৯২ সেন্টবর্তমানে বিশ্বে যে বিদু্যৎ উৎপাদন হয় তার ২১ ভাগই পরমাণু শক্তি থেকেএগুলো সবই প্রায় উন্নত দেশেবিশ্বে বর্তমানে পরমাণুভিত্তিক ৪২০টি বিদু্যৎ কেন্দ্র আছেএর মাঝে ফ্রান্সে ৬৯টি ফ্রান্সে মোট বিদু্যৎ-এর ৭.৯ শতাংশ উৎপাদন হয় পরমাণু শক্তি থেকে বেলজিয়ামে বিদু্যৎ কেন্দ্র ৫৮টিএর মোট বিদু্যৎ-এর ৫৮ ভাগই পারমাণবিক সুইডেনে ৪৪ ভাগ, কোরিয়ায় ৪০ ভাগ , জাপানে ৫৫, এবং যুক্তরাষ্ট্রে ২০ ভাগ আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে চীনে ৯ হাজার মেগাওয়াট, ভারতে ৪ হাজার ১২০, পাকিস্তানে ৪২৫ মেগাওয়াট পরমাণু বিদু্যৎ উৎপাদন হচ্ছেএসব দেশে আরো প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে২০২০ সালের মধ্যে চীন ৪০ হাজার, ভারত ২০ হাজার, ও পাকিস্তান ৭ হাজার মেগাওয়াটের পরমাণু বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপন করবেবাংলাদেশসহ ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, পোল্যান্ড, তুরস্ক, রুমানিয়া ও চিলিতে পরমাণু বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে বেশি জাতিসংঘ ২০০৭ সালের জুন মাসে বাংলাদেশকে পরমাণু বিদু্যৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলআগামি ২০৫০ সাল পর্যন্ত ৮টি উন্নয়নশীল দেশকে এই বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপনেরও অনুমতি দিয়েছে জাতিসংঘ

এখন ফুকুসিমার দুর্ঘটনার পর অনেক দেশ তার পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত করে দিতে পারেজার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশে বিক্ষোভ হয়েছে জার্মান সাময়িকী ঝঞঊজঘ-এর ফটো সাংবাদিক আনদ্রেই ক্রেমেনশুক সম্প্রতি চেরনোবিল সফর করেছেনজার্মান বেতার 'ডয়েচে ভেলেকে' তিনি জানিয়েছেন, চেরনোবিলের অর্ধেকটা মাটিচাপা দেয়া হয়েছেওই গ্রামে কেউ থাকে নাএত বছর পরও সেখানে বাতাসে তেজস্ক্রিয়া ধূলিকণা মিলছে (১৮ মার্চ, ২০১১)পরিসংখ্যান বলে ওই এলাকায় ক্যান্সার শতকরা ৪০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে বেলারুশের কৃষিবেলারুশ একটি স্বাধীন দেশ এখনইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দেশ হচ্ছে বেলারুশভয়টা হচ্ছে এখানেই যে এত বছর পরও পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যাচ্ছে সেখানেআজ ঠিক তেমনটি হতে যাচ্ছে ফুকুসিমায়চেরনোবিলের মত ফুকুসিমাকেও মাটি ও কংক্রিট দিয়ে ঢেকে দিতে হবেতাতে করে তেজস্ক্রিয়াতা বের হওয়া বন্ধ হবে কি? ফুকুসিমার দুর্ঘটনার পর এখনই ক্ষয়-ক্ষতির কিংবা মৃতু্যর খবর পাওয়া যাবে নাকতভাগ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে, তারও হিসাব পাওয়া যাবে অনেক পরেখোদ টোকিও শহরে (ফুকুসিমা ১১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত) যখন শাক-সবজিতে তেজস্ক্রিয়তা ধরা পড়েছে তখন তার অর্থ পরিষ্কার-বাতাসে তেজস্ক্রিয় ধূলিকণা জাপানের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং সাগরের পানিতেও এই তেজস্ক্রিয়তা ধরা পড়েছে১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বর্ষিত হয়েছিলতার ফল এখনও ভোগ করে চলছে জাপানবাসী আর ফুকুসিমা পারমাণবিক বিস্ফোরণের রেশ যে আগামিতে জাপানবাসীকে বছরের পর বছর বয়ে চলতে হবে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে নাএই দুর্ঘটনা জাপানের অর্থনীতিকেও আঘাত হানবেউন্নয়নশীল বিশ্বে জাপানি সাহায্যের প্রবাহ কমে যাবেবাংলাদেশের মত দেশও এ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে

ইতোমধ্যে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে (১৭ মার্চ) ৫টি পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রের কথা উলেস্নখ করা হয়েছে, যেখানে ফুকুসিমার মত বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারেএগুলো হচ্ছে কড়ুষড়ফুঁ বিদু্যৎ কেন্দ্র (বুলগেরিয়া), অশশঁলঁ বিদু্যৎ কেন্দ্র (তুরস্ক), গবঃংধসড়ৎ বিদু্যৎ কেন্দ্র (আর্মেনিয়া), ওহফরধহ ঢ়ড়রহঃ (যুক্তরাষ্ট্র) ও জাপানের ঝযরশধ বিদু্যৎ কেন্দ্রএই ৫টি পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্র অনেক পুরনোঅতীতে এখানে ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটেছে

ফুকুসিমার দুর্ঘটনা এখন বেশ কতগুলো প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছেএক.বিশ্বব্যাপী যে ৭০০টি পারমাণবিক চুলস্নী (একটি কেন্দ্রে একাধিক) রয়েছে, তা কতটুকু নিরাপদ দুই. চীন (২৭টি নির্মাণাধীন), ভারত (৫টি নির্মাণাধীন), রাশিয়া (১১টি) কি পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাবেতিন. বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক শক্তির উপর নির্ভরশীলতা (শতকরা ১৩ দশমিক ৫ ভাগ) কি কমে আসবেচার. জ্বালানির বিকল্প উৎস কিপাঁচ. 'ফসিল ফুয়েল' ব্যবহার হ্রাস করার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা কি এখন ভেস্তে গেল এবং বিশ্বের উষ্ণতা রোধ সংক্রান্ত যে চুক্তি ডারবানে স্বাক্ষর করার কথা (ডিসেম্বর, ২০১১), তা কী আদৌ স্বাক্ষরিত হবেছয়. উন্নয়নশীল বিশ্ব যে একধরনের 'জ্বালানি ফাঁদে' পড়তে যাচ্ছে, তার সমাধান কি আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি আগামিতে বিশ্ব সম্মেলনগুলোতে এসব প্রশ্ন উঠবে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোকে এখন থেকেই বিকল্প জ্বালানির উৎস খুঁজতে হবে সৌর বিদু্যৎ ও বায়ু বিদু্যৎ এক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনাএ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবেবাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সৌর ও বায়ু বিদু্যৎ-এর পাশাপাশি কয়লার ব্যবহার বাড়াতে হবেফুকুসিমায় পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষাএকটি সতর্ক বার্তাআমরা পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিএকটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে পরিবতির্ত পরিস্থিতিতে আমাদের নীতি-নির্ধারকদের বিষয়টি নিয়ে পুনরায় ভাবতে হবেবাংলাদেশ জাপান নয়সেই প্রযুক্তি ও জনবল আমাদের নেইতাই ফুকুসিমার দুর্ঘটনার পর সারাবিশ্ব যখন পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্র নিয়ে আতংকিত, বাংলাদেশ কোন অবস্থাতেই এই উৎকণ্ঠা উপেক্ষা করতে পারে নাসিদ্ধান্ত নেয়ার সময় তাই-এখনই

[লেখক:অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়]

ঃংৎধযসধহনফ@ুধযড়ড়.পড়স



1 comments:

  1. পড়ে খুব ভাল লেগেছে , অনেক ধন্যবাদ

    ReplyDelete