রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্জন কতটুকু

আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিজস্ব কোনো জেট বিমান নেই। থাকলে হয়তো তার পক্ষে বিদেশ ভ্রমণ আরো সহজ হতো। দীপু মনি তার এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, নাকি সমালোচনার জবাব দিয়েছেন, নাকি রসিকতা করেছেন এ নিয়ে আলোচনা করা এ লেখার মূল উদ্দেশ্য নয়। তার অভিযোগ, সাংবাদিকরা তার বিদেশ সফরকে ভালো চোখে দেখছেন না। ভুল তথ্য পরিবেশন করছেন। ৬০০ দিন নয়, গত সাড়ে চার বছরে তিনি মাত্র ৫১৭ দিন বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। বলেছেন, সেগুনবাগিচার অফিসে বসে থাকলে তো আর পররাষ্ট্রনীতিতে সাফল্য আসবে না। যেসব সাংবাদিক ভুল তথ্য পরিবেশন করেছেন, তাদের দেখে নেয়ারও হুমকি দিয়েছেন তিনি। মামলাও করতে পারেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যে অনেকেই হতাশ। তিনি নিজেকে কী ভাবেন আমরা জানি না। তবে তিনি একটি গণতান্ত্রিক সরকারের মন্ত্রী এটা মনে রাখা উচিত। তার কর্মকাণ্ড দেশে ও বিদেশে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তার বিদেশ ভ্রমণে খুশি, এটা বলা যাবে না। অবাক হয়ে যাই যখন শুনি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নিজেকে তুলনা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর বাংলাদেশ কি এক হলো? আন্তর্জাতিক আসরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান, ভূমিকা কি বাংলাদেশের অবস্থানের সঙ্গে মেলান যাবে? মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যস্ত থাকতে হয় নানা কারণে। তিনি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ান সবসময়। কিন্তু আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশের অবস্থান কি? কোন পর্যায়ে, কোন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিয়েছে বা দিচ্ছে? আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন না করলেও দীপু মনি নিজেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তুলনা করে হয়তো আবারো নিজেকে নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ করলেন। গত সাড়ে চার বছরে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অর্জনটা কি? পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদেশ সফর কি সাফল্যের মাপকাঠি? বিদেশ সফরকে সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে আমরা তা মানতে নারাজ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্র হিসেবে জানি পররাষ্ট্রনীতিতে কীভাবে সাফল্য অর্জন করা যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চয়ই বিদেশ সফর করবেন, তাতে কেউই আপত্তি করবে না। কিন্তু অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ, সেমিনারে অংশগ্রহণ, যে বিষয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, সে বিষয়ে সম্মেলনে যোগদান ইত্যাদি নানা বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেকে জড়িত করেছেন, যা তার আদৌ প্রয়োজন ছিল না। এতে অর্জন কতটুকু? সংবাদপত্রে দেখেছি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে ছবি তুলছেন কোনো কোনো শীর্ষ সম্মেলনে। কোন বিবেচনায় তিনি এ কাজটি করলেন? তার প্রটোকল কি তাকে এমন কাজ করতে অনুমতি দিয়েছে? শিশু-কিশোরদের মতো তিনি বিদেশি ভিভিআইপিদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করেছেন। কার জন্য? বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কি এই অটোগ্রাফ সংগ্রহের মধ্য দিয়ে লাভবান হয়েছে? তিনি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করে বললেন ৬০০ দিন নয়, তিনি ছিলেন ৫১৭ দিন বিদেশে। তাহলে পার্থক্য কতদিনের হলো? কোনো মন্ত্রী যখন বিদেশে যান, তখন রাষ্ট্রকে তার সব খরচ বহন করতে হয়। অঙ্কের হিসাবে এটা কম নয়। সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসে দীপু মনি প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি এত বেশি দিন বিদেশে কাটিয়েছেন। এর আগে অন্য কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এত বেশি দিন বিদেশে কাটাননি। তার আমলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে নিয়ে যত বেশি নেতিবাচক সংবাদ ছাপা হয়েছে, অন্য কোনো সময়ে এত নেতিবাচক সংবাদ ছাপা হয়নি। অনেক বিষয় : ড. ইউনূস ইস্যু, গার্মেন্টসে শ্রমমান, রানা প্লাজা ধস, মানবাধিকার লঙ্ঘন, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড, জিএসপি সুবিধা স্থগিত, হেফাজতে ইসলামের উত্থান ও শাপলা চত্বরের ঘটনা ইত্যাদি কোনো একটি ক্ষেত্রেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিদেশে উজ্জ্বল করতে পারেননি। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন যেখানে বলেছেন, বাংলাদেশের অনেক কিছু আছে গর্ব করার, সেখানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের এই সাফল্যকে বহির্বিশ্বে উপস্থাপন করতে পারেননি। তার ব্যর্থতা এখানেই। পররাষ্ট্রনীতি, বৈদেশিক বিষয়াদি সম্পর্কে তার জ্ঞান সীমিত এমনটি অনেকেই বলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বৈদেশিক সম্পর্ক সম্পর্কিত কোনো কোনো কমিটিতে তিনি কাজ করেননি। হঠাৎ করেই তিনি মন্ত্রী হন। তার অনেক বেফাঁস মন্তব্য অতীতে তাকে যেমনি বিব্রত করেছে, ঠিক তেমনি আমাদেরও করেছে। একুশ শতক উপযোগী একটি পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে তার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো কী কী, আমরা তা জানি না। আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়নি বাংলাদেশ আগামী ২০ বছরে পররাষ্ট্রনীতির কোন কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেবে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন আমাদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক কূটনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। চীন আমাদের নিকট প্রতিবেশীও বটে। কিন্তু চীনকে উপেক্ষা করে ভারতের সঙ্গে আমরা সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এতে চীন উপেক্ষিত থেকেছে। ভারত বড় অর্থনীতির দেশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত এখন বড় অবদান রাখছে। কিন্তু দরকষাকষিতে ভারতের কাছ থেকে আমরা কিছুই আদায় করতে পারিনি। ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থেকে আমরা উপকৃত হতে পারতাম। সে জন্য যে যে নীতি গ্রহণ করা দরকার ছিল তা আমরা করিনি। মনে হয়েছে ভারতকে তুষ্ট করাই যেন বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। তিস্তার পানি বণ্টনের সমস্যা দীর্ঘদিনের। পানির অভাবে উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরতে পারেনি। আমরা দরকষাকষি করব ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সরকারের সঙ্গে নয়। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমস্যাটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সমঝোতায় যাবে। কিন্তু আমরা পানি থেকে কেন বঞ্চিত হব? বাংলাদেশ তিস্তা প্রশ্নে শক্ত অবস্থানে যেতে পারেনি। ঠিক একই কথা প্রযোজ্য সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারেও। আমরা ভারতকে ট্রানজিট অথবা ট্রান্সশিপমেন্টের সুযোগ দিয়েছি। তিতাস নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারতীয় ২৮ চাকার ট্রাককে চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছি, কিন্তু নেপাল ও ভুটান ট্রান্সজিট পায়নি। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি ঝুলে আছে। সম্প্রতি ডা. দীপু মনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে বৈঠক করে শুধু উচ্চারণ সর্বস্ব প্রতিশ্রুতিই শুনেছেন পুনর্বার। ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক পত্রিকা আনন্দবাজার পত্রিকা আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর ও মনমোহনের সঙ্গে তার বৈঠকের পর অনেকটা রসাত্মকভাবে সংবাদ প্রকাশ করেছে। আবারো প্রশ্ন উঠেছে, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অর্জনের ঝুলিতে কিছুই নিতে পারলেন না কেন? সার্ক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী হিমালয় অঞ্চলের পানির সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ওপর আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের আগ্রহ তাতে নেই। ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়টিও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। ভারত সংবিধান সংশোধনের যুক্তি উপস্থাপন করলেও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পূর্বমুখী কূটনীতির গুরুত্ব থাকলেও এ ব্যাপারে অগ্রগতি নেই তেমন। এক সময় ‘কুনমিং উদ্যোগ’-এর কথা শোনা গেলেও এটা এখন পরিত্যক্ত বলেই মনে হয়। ভারত ‘কুনমিং উদ্যোগ’-এর পরিবর্তে ‘গঙ্গা মেকং সহযোগিতাকে’ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সম্ভবত এটা বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে এখন আর ‘কুনমিং উদ্যোগ’কে গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফলে কুনমিং-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার গহ্বরে। সাফটা চুক্তি অনুযায়ী সার্কের ভেতরে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, আমরা রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের কাছ থেকে তা আদায় করতে পারছি না। এই বিষয়ে এ পর্যন্ত দৃশ্যত উদ্যোগ-আয়োজন কম হয়নি, কিন্তু ফল শূন্য। বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বিপুল। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। ভারতের সঙ্গে যদি আমাদের সব কিছুতে এত বৈষম্য থাকে, তাহলে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতকে ‘খুশি’ করার একটি নীতি আমাদের অবস্থানকে দুর্বল করেছে। ভারতমুখী নীতি থেকে বাংলাদেশ যদি বেরিয়ে আসতে না পারে, তাহলে একটি ‘সফট পাওয়ার’ হিসেবে দাঁড়িয়ে আবার যে সম্ভাবনা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিল, সে ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ একটি ‘শক্তি’ হিসেবে দাঁড়াতে পারবে না। বাংলাদেশের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬-এর ওপরে। যেখানে মিসরের মতো দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২-এর নিচে নেমে গেছে, সেখানে বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধি অনেক দেশের ঈর্ষার কারণ। প্রায় ১৬ কোটি মানুষের এই দেশটিতে রয়েছে একটি শক্তিশালী তরুণ প্রজন্ম। তাদের সঠিক কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা, তা বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারকরা করতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। কীভাবে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে তার কোনো পরিকল্পনা নেই। যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশিদের শ্রমবাজার রয়েছে। কিন্তু এই শ্রমবাজার বিস্তৃত করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যে উদ্যোগটি নেয়া উচিত তা তারা নেয়নি। মাত্র কয়েক ঘণ্টার সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্কে এলেও, বিনিয়োগ বাড়ানো কিংবা শ্রমবাজার অনুসন্ধান করার ‘সময়’ তার হয়নি। সনাতন পররাষ্ট্রনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ রয়েছে তা বিবেচনায় নিয়ে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে না; বরং সংকুচিত হয়েছে। এটা পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা। অর্থনৈতিক কূটনীতি কিংবা জলবায়ু কূটনীতিতে বাংলাদেশের সাফল্য আশাব্যঞ্জক নয়। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ যে বড় ক্ষতির সম্মুখীন তা বিশ্ববাসী স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু আমরা বিশ্ববাসীর এই স্বীকারোক্তিকে কাজে লাগাতে পারিনি। আমরা গুরুত্ব দিয়েছি বিদেশ থেকে অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টিকে। কিন্তু শুধু অর্থপ্রাপ্তির দাবি অব্যাহত রাখা জলবায়ু কূটনীতির সাফল্য প্রমাণ করে না। আসলে গত সাড়ে চার বছরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশ সফরকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। বারবার বিদেশে গেছেন। শুধু শুধু বিদেশ সফর দিয়ে পররাষ্ট্রনীতিতে সফলতা আনা যায় না। একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ, কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদেশ ভ্রমণের ঘটনা একটি হতে পারে। কিন্তু বারবার এমন হলে তা তো বিতর্ক বাড়বেই। বিদেশি ভিভিআইপিদের অটোগ্রাফ না নিয়ে প্রটোকল ভেঙে ছবি না তুলে তিনি যদি একুশ শতকের উপযোগী একটি পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ হাতে দিতেন, আমাদের বিশ্বাস আমরা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরো শক্তিশালী করত পারতাম। সংবাদপত্রে তার ‘ভ্রমণ কাহিনী’ নিয়ে যা ছাপা হয়েছে তা মিথ্যা নয়। পুরোটাই সত্য। কিন্তু তাই বলে অবিবেচকের মতো ‘মামলা’ করার হুমকি দেবেন, তা সমর্থনযোগ্য নয় এবং তা সরকারের ইমেজ বৃদ্ধিতেও এমন কাজ সাহায্য করবে না। সরকারের শেষ সময়ে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি বিদ্যমান বাস্তবতা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেন, তাতে বরং সরকারেরই লাভ। একটি কথা খুব গুরত্বের সঙ্গে মনে রাখা দরকার তাহলো, গঠনমূলক সমালোচনা আমলে নিলে যে কোনো কারোর পক্ষেই সঠিক পথের সন্ধান করে নেয়া খুব সহজ। তাছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সমালোচনা তো হবেই। দায়বদ্ধতা-জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া মানে গণতন্ত্রের অন্যতম একটি শর্ত পূরণ হওয়া। আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চার পথ প্রশস্তকরণের কথা বলব, কিন্তু এর যে অবশ্যম্ভাবী উপাদান সেগুলো উপেক্ষা করব এমনটি হলে গণতন্ত্রই বিপন্ন হবে, রাজনীতি বেপথে যাবে। 
দৈনিক মানবকন্ঠ ০৩.-৮.২০১৩ 

0 comments:

Post a Comment