রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

'আরব বসন্ত' তৃতীয় ধাপ অতিক্রম করছে

'আরব বসন্ত' এখন তৃতীয় ধাপ অতিক্রম করছে। তিউনেসিয়ার এক সাধারণ ফল বিক্রেতা বওয়াকুজিজি নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে যে 'বিপ্লব'-এর সূচনা করেছিলেন ২০১১ সালে, তা সমগ্র আরব বিশ্বে একটি বড় পরিবর্তন ডেকে আনলেও ২০১৩ সালের ৩ জুলাই মিসরে মুরসির উৎখাতের মধ্য দিয়ে সেই 'বিপ্লব'-এর নতুন একটি ধারা তৈরি হলো। 'আরব বসন্ত' এখন তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে। মিসরের এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন তিউনেসিয়া কিংবা ইয়েমেনের চলমান রাজনীতিকে কতটুকু প্রভাবান্বিত করবে, বলা মুশকিল। তবে এটা সত্য, মিসরের এই পরিবর্তনে তিউনেসিয়া ও ইয়েমেনে ইসলামবিরোধী শক্তি আরো উৎসাহিত হবে। 'আরব বসন্ত' গোটা আরব বিশ্বে একটা পরিবর্তন ডেকে এনেছিল। আর তা হচ্ছে, স্বৈরাচারী সরকারের উৎখাত। বেন আলি, আলি সালেহ, হোসনি মুবারক, যাঁরা দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন, তাঁদের পতন ঘটেছিল। এর মধ্যে শুধু হোসনি মুবারকেরই বিচার শুরু হয়েছিল। বাকিদের কারো বিচার হয়নি, বলা যেতে পারে বিচার আদৌ শুরুই হয়নি। তাঁদের পাশাপাশি বাকি ছিলেন আসাদ। সিরিয়ায় আসাদের পতন এক সময় আসন্ন মনে হলেও, এখন মনে হচ্ছে, এ পতন এখন অনিশ্চিত। আন্তর্জাতিক 'অ্যাক্টরগুলো' এখন সিরিয়ার ব্যাপারে সক্রিয়। তাই আসাদের পতন প্রলম্বিত হচ্ছে। 'আরব বসন্ত' সেখানে ইসলামিক শক্তির ক্ষমতা গ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছিল। মিসরে ইসলামপন্থীরা বিজয়ী হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ও সংসদ নির্বাচনে ইসলামপন্থী দল, বিশেষ করে মুসলিম ব্রাদারহুড ও আল নূর পার্টির বিজয় 'আরব বসন্ত'-এর দ্বিতীয় ধারার সূচনা করেছিল। একই ঘটনা ঘটেছিল তিউনেসিয়ায়। কিন্তু এ ধারা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মুরসির পতনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধারার সূচনা হলো। এ ধারার মূলশক্তি এখন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা, যাদের পেছনে সমর্থন রয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলোর। এখন দেখার পালা, এই তৃতীয় ধারায় তিউনেসিয়া শরিক হয় কি না।
যুক্তরাষ্ট্রের একাডেমিক সার্কেলে প্রশ্ন উঠেছে, মিসরের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? মুরসিকে উৎখাত করার পর থেকে তাঁর সমর্থকরা কায়রোতে প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, মিসর ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আফ্রিকান ইউনিয়নের এ বক্তব্যকে হালকাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। কেননা সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর এখন অব্দি রাজনীতি তাদের নিয়ন্ত্রণে, এটা বলা যাবে না। বরং দিনে দিনে দুই শক্তির মধ্যে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছে। মিসরের সমাজ বলতে গেলে এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে রয়েছে ইসলামপন্থী দলগুলো, অন্যদিকে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ, লিবারেল তথা ডেমোক্র্যাটরা। এটা স্পষ্ট যে ধর্মনিরপেক্ষ তথা লিবারেলরা মুরসির উৎখাতকে সমর্থন জানিয়েছে। সমস্যাটা তৈরি হয়েছে সেখান থেকেই। কেননা যেখানে প্রয়োজন ছিল একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করা, সেখানে ইসলামপন্থীরা হাজেম এল বেবলাওয়ের নেতৃত্বাধীন সরকারে যোগ দেয়নি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসলামপন্থীদের সরকারে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এখন ইসলামপন্থী তথা মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির সরকারে যোগ না দেওয়ায়, সরকার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তাই প্রশ্নটা থাকবে, কোন পথে এখন মিসর? মিসর আলজেরিয়ার মতো পরিস্থিতি বরণ করে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, ১৯৯১ সালে আলজেরিয়ায় কী ঘটেছিল। এর আগে সাধারণ নির্বাচনে ইসলামপন্থীরা বিজয়ী হলে তাদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হয়নি। ফলে ১৯৯১-পরবর্তী সময়ে যে গৃহযুদ্ধ হয়, তাতে প্রায় এক লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সেনাবাহিনীই আলজেরিয়ার রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। যার সঙ্গে মিসরের রাজনীতির একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। স্বাধীনতার পর ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এনএলএফ) আলজেরিয়ার ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছে। আর এনএলএফের ক্ষমতা পরিচালনার পেছনে রয়েছে সেনাবাহিনী। সেখানে সেনাবাহিনীকে বলা হয় Le Paivoir। ফরাসি ভাষায় এর অর্থ 'শক্তি'। সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা 'ডিপার্টমেন্ট অব ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি' মূলত আলজেরিয়ার মূল 'রাজনৈতিক শক্তি'। প্রেসিডেন্ট বুতেফ্লিকা (১৯৯৯ সাল থেকে) গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারাই চালিত হন। ইসলামপন্থীদের মূলধারায় না নিয়ে আসায় তারা এখনো সেখানে একটি শক্তি। সেখানে এরই মধ্যে জন্ম হয়েছে আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠনের, যারা সেখানে আত্মঘাতী বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত। এসব জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা শুধু আলজেরিয়ায়ই সীমাবদ্ধ নেই, বরং তাদের তৎপরতা লিবিয়া ও সিরিয়াতেও লক্ষ করা গেছে।
'আরব বসন্ত' আরব বিশ্বে একটি সম্ভাবনা তৈরি করেছিল; আর তা হচ্ছে স্বৈরাচারী সরকারগুলোর উৎখাতের মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করা। এ ক্ষেত্রে তিউনেসিয়া একটি মডেল হতে পারত। মুসলিম ব্রাহারহুডের মতো এন্মাহ্দাও তিউনেসিয়ার অন্যতম ইসলামিক শক্তি। এন্মাহ্দার নেতা দীর্ঘদিন লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করেছেন। ২০১১ সালে বেন আলির পতনের পর সে বছরের অক্টোবরেই প্রথমবারের মতো যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে এন্মাহ্দা সংসদের নিম্নকক্ষে অন্যতম শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। ৩৭ শতাংশ ভোট তারা পেয়েছিল। ইচ্ছে করলে এন্মাহ্দা এককভাবে সরকার গঠন করতে পারত। কিন্তু তারা তা করেনি। সেখানে তিন শক্তির একটি কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়েছে। এন্মাহ্দা নেতা হামাদি জেবালি প্রধানমন্ত্রী হলেও সর্বজন গ্রহণযোগ্য মনসোয়া মাজুকিকে তারা প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছিল। মাজুকি বামমনা 'কংগ্রেস অব দ্য রিপাবলিক পার্টি'র নেতা। অন্যদিকে সোস্যাল ডেমোক্রেটিক ধারার দল (ডেমোক্রেটিক ফোরাম ফর লেবার অ্যান্ড লিবারটিজ বা এত্ত্বাকাতল) সরকারে যোগ দিয়েছিল। এত্ত্বাকাতল নেতা আবদের রাহমান লাদঘাম ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। লাদঘামের সঙ্গে আরো দুজন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন, যাঁদের একজন এন্মাহ্দান ও অন্যজন নিরপেক্ষ। মন্ত্রিসভায় দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এ কারণে দেখা যায়, তিউনেসিয়ায় বিপ্লবপরবর্তী তেমন কোনো অসন্তোষ সংঘটিত হয়নি। সেখানে যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মিসর এই মডেল অনুসরণ করতে পারত। কিন্তু মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতাদের হিসাবে ভুল ছিল। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে দলটির। ১৯২৫ সালে যে সংগঠনটির জন্ম, তাদের বিশাল জনপ্রিয়তা রয়েছে, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু ব্রাদারহুড নেতারা যেটা বুঝতে পারেননি, তা হচ্ছে মিসরে একটি ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি রয়েছে। যাদের প্রশাসনে, সেনাবাহিনীতে, অর্থনীতিতে অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী। তাহ্‌রির স্কোয়ারের ১৭ দিনের অবস্থান হোসনি মুবারকের পতন ঘটলেও সেদিন ধর্মনিরপেক্ষ তথা লিবারেল ও নারীবাদীরা ইসলামপন্থীদের সঙ্গে আন্দোলন করেছিল। মুবারকের পতনের পর সেখানে নতুন যে সংস্কৃতির জন্ম হয়েছিল, তাতে খুব দ্রুত এগোতে চাচ্ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি। তিনি শরিয়াহভিত্তিক একটি সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। তাঁর দ্রুত ইসলামীকরণ প্রক্রিয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল ধর্মনিরপেক্ষ ও নারীবাদীরা। হোসনি মুবারকবিরোধী আন্দোলনের মূল স্পিরিট ছিল reedom, social justice, অর্থাৎ 'রুটি, স্বাধীনতা ও সাম্য' প্রতিষ্ঠা। সাধারণ মানুষ চেয়েছিল, তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা লাঘব হবে, সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, বৈষম্য দূর হবে, তরুণরা পাবে চাকরি। কিন্তু তা হয়নি। মুরসি এদিকে দৃষ্টি দেননি। তিনি বেশিমাত্রায় ইসলামীকরণের দিকে ঝুঁকে পড়ায় সামাজিক খাত উপেক্ষিত হয়েছিল। আইএমএফ থেকে যে ঋণ পাওয়ার কথা, তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। ফলে ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র এক বছরের মাথায় মানুষের অসন্তোষ বাড়ছিল। মুরসি যদি তিউনেসিয়ার মডেল অনুসরণ করতেন, আমার ধারণা, এত তাড়াতাড়ি তাঁর পতন ঘটত না। তবে সেনাসমর্থিত আদলি মনসুরও ভুল করবেন, যদি তিনি ইসলামপন্থীদের মূলধারায় না আনেন। সেনাবাহিনীর সমর্থন থাকায় তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন বটে, কিন্তু অসন্তোষ দমন করতে পারবেন না। অসন্তোষ থাকবে এবং তা জঙ্গিবাদের জন্ম দেবে। এরই মধ্যে মিসরে আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গি সংগঠনের সীমিত তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। তারা আরো শক্তিশালী হবে।
'আরব বসন্ত' যে প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিল, তা ফিকে হয়ে আসছে। তিউনেসিয়া ও ইয়েমেনে এক ধরনের স্থিতিশীলতা থাকলেও মিসর, সিরিয়া কিংবা লিবিয়ায় অস্থিরতা 'আরব বসন্ত'কে একটি বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। 'আরব বসন্ত' জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। যে তরুণ প্রজন্ম এক সময় আরব বসন্তের জন্ম দিয়েছিল, সেই তরুণ প্রজন্ম এখন হতাশ। তাদের চাকরি নেই। বেকার সমস্যা বেড়েছে। এ চিত্র তিউনেসিয়া থেকে শুরু করে মিসর পর্যন্ত সর্বত্র। মিসরে মুরসি কেন উৎখাত হলেন, এটা নিয়ে নানা 'তত্ত্ব' থাকলেও একটা বিষয় স্পষ্ট তা হচ্ছে তিনি মিসরের অর্থনীতিকে বাগে আনতে পারেননি। যে কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হতাশা বাড়ছিল। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মিসরে আরব বসন্তের আগে (২০০৮) যেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ শতাংশ, ২০১৩ সালে তা ২ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। বেকারত্বের হার এখন সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি বাড়ছে। ২০০৯ সালে যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫ বিলিয়নে। ডলারের সঙ্গে মিসরের মুদ্রা পাউন্ডের বিনিময় হারের মারাত্মক পতন ঘটেছে। ২০০৯ সালে এক ডলারে পাওয়া যেত ৫ দশমিক ৬ পাউন্ড। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ পাউন্ডে। অর্থাৎ মুদ্রার (পাউন্ড) ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এ চিত্র তিউনেসিয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দ্বিতীয় আরেকটি সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে, তা হচ্ছে আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গি সংগঠনের উত্থান। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে জঙ্গিবাদী সংগঠন 'জাবহাত আল নুসরা' ও 'ইসলামিক স্টেট অব ইরাক' মুক্তাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছে। মিসরে ইসলামিক গ্রুপগুলোর মধ্যে জঙ্গিবাদীরা তৎপর হয়েছে। লিবিয়াতে তারা শক্তিশালী। গোটা আরব বিশ্বে যদি জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে ইসলামিক জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তাই একটি 'তিউনেসিয়ান মডেল' হতে পারে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার একমাত্র সমাধান। মিসরের সামরিক জান্তা যদি এটা উপলব্ধি করে, তাহলে তারা ভালো করবে। মুরসিকে অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি এবং সেই সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে একটি 'সমঝোতা' সেখানে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে। ক্যাবিনেটে মুরসির সমর্থকদের অন্তর্ভুক্তি ও প্রধানমন্ত্রী অথবা ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর একটি পদ দেওয়া, দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সংবিধানে সংশোধনী আনা ইত্যাদির মাধ্যমে মিসরে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সিরিয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আসাদকে উৎখাত নয়, বরং সেখানে সব দলের সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা, দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে। 'আরব বসন্ত' গোটা আরব বিশ্বে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ, আইনের শাসন, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার জন্ম দিলেও সমাজে বড় বিভক্তি ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে আরব বসন্ত তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। (নিউ ইয়র্ক থেকে)
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৫ জুলাই ২০১৩।

0 comments:

Post a Comment