নিউইয়র্ক যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। জ্যাকসন হাইটসের আশপাশে অনেক দোকান।
মালিকানা বাংলাদেশিদের। মুক্তধারার সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা। কবির বেকারি,
মালিকানা যেমনি বাংলাদেশিদের ঠিক তেমনি যারা কাজ করেন, তারাও বাংলাদেশি। এই
জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশি সাপ্তাহিক আজকাল। আজকাল চালাচ্ছেন মুসা, সাঈদ,
আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত। মুসা ঢাকায় সাংবাদিকতা করেছেন অনেক দিন। রাজনীতিও
করেছেন কিছুদিন। এখন আজকাল চালান, সম্পাদক। আজকাল অফিসে এ বিষয়টি নিয়েই
আলোচনা হচ্ছিল একদিন। সেদিন বোধ হয় খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন নিউইয়র্কের
বাংলা পত্রিকা নিয়ে গবেষণা হবে। কীভাবে পত্রিকাগুলো এ পর্যায়ে এসে
দাঁড়িয়েছে নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, গবেষণা হবে। চাই কি একটি পিএইচডির
গবেষণার বিষয়বস্তুও হতে পারে নিউইয়র্কের বাংলা পত্রিকা। হাজার মাইল দূরে
বসে বাঙালিরা কম বেতনে পত্রিকায় কাজ করছেন। এটা কি কম গর্বের? এখানে ঠিকানা
পত্রিকার নাম উল্লেখ না করলেই নয়। নিউইয়র্কের বাংলা পত্রিকার প্রসারে
অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন দুই ভাই, রব ও শাহীন। শাহীন রাজনীতি করেন।
কুলাউড়া থেকে এমপিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর রব রাজনীতি করেন না। এক সময়ের
কৃতী অ্যাথলেট। এখানে এসে জড়িয়ে গেছেন প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে। আজ তিনি
ঠিকানাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একটি প্রতিষ্ঠানে। সংবাদপত্র শিল্পের সঙ্গে
জড়িয়ে আছেন আবু তাহের, কৌশিক আহমেদ, নাজমুল আশরাফ, ফজলুর রহমান কিংবা
লাভলু আনসারদের নাম। বাংলা ভাষার জন্য এটা কি কম পাওয়া? বাংলাকে আমরা
রাষ্ট্রভাষা করেছি। বাংলাতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। পিএইচডি অভিসন্দর্ভ
হচ্ছে বাংলাতে। হাজার হাজার মাইল দূরে এসে এই বাংলা একটি স্থান দখল করে
নিয়েছে। আমি নিশ্চিত, একদিন এই বাংলা জাতিসংঘের অন্যতম ভাষা হবে। জ্যাকসন
হাইটস এলাকায় হাঁটতে গিয়ে, কেনাকাটা করতে গিয়ে কিংবা 'কাবাব কিং'-এ দুপুরে
খেতে গিয়ে আমরা বাংলাতেই কথা বলেছি। এটা কি অবাক করার বিষয় নয়?
ট্যাক্সিক্যাবে যিনি জেএফকে বিমানবন্দর থেকে জ্যামাইকা এলাকায় পেঁৗছে দিলেন
আমাকে অবাক করে দিয়ে, তিনি একজন মহিলা এবং বাঙালি। এই মহিলা যিনি বাংলাদেশ
থেকে এসেছিলেন তাও আবার ঢাকা শহর থেকে নয়, তিনি এখন নিউইয়র্কে ক্যাব
চালান। আমাদের প্রাপ্তিটা কি একেবারে কম?
বাংলাদেশ একটা 'সফ্ট' পাওয়ার। বিশ্বকে দেওয়ার অনেক কিছুই আছে আমাদের। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প, গার্মেন্ট_ সবকিছুতে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। রানা প্লাজায় 'হত্যাকাণ্ড' সাময়িকভাবে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও পোশাকশিল্পের কদর বহির্বিশ্বে থাকবেই। তাই রফতানিমুখী পোশাকশিল্পের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ক্ষীণ। অভিযোগ আছে, বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে কর্মরতদের কম মজুরি দেওয়া হয়। ১২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেস বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গার্মেন্ট রফতানিকারক দেশগুলোর পোশাকশিল্পের অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে (এষড়নধষ ডধমব ঞৎবহফং ভড়ৎ অঢ়ঢ়ধৎবষ ডড়ৎশবৎং, ২০০১-২০১১)। তাতে দেখা যায়, শুধু বাংলাদেশই নয়, প্রায় প্রতিটি শীর্ষস্থানীয় রফতানিকারক দেশে গার্মেন্ট সেক্টরে মজুরি কমেছে। বাংলাদেশ, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া ও এল সালভাদরে শ্রমিক মজুরি কমেছে শতকরা ১৪ দশমিক ৬ ভাগ হারে। জীবনযাত্রার মানের চেয়ে শতকরা ৩৬ ভাগ হারে কম বেতন দেওয়া হয় চীনে, ২২ ভাগ হারে কম বেতন ভিয়েতনামে। বাংলাদেশে এর পরিমাণ ১৪ ভাগ। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শ্রমিকদের (তৈরি পোশাক) বেতন কমেছে প্রায় সবক'টি দেশে। ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে শুরু করে ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডেও। সবচেয়ে বেশি কমেছে মেক্সিকোতে, শতকরা ২৮ দশমিক ৯ ভাগ। মোট ১০টি দেশ নিয়ে গবেষণা চালানো হয়, যে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রফতানি করে। রানা প্লাজার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি নেতিবাচক ধারণার জন্ম হলেও পৃথিবীর অনেক দেশেই তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ নজির রয়েছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে দু'জন নারী শ্রমিক (আদৌ কি এরা শ্রমিক?) এসেছিলেন এখানে। উদ্দেশ্য অর্থ সংগ্রহ করা ও বাংলাদেশের পোশাকশিল্প সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেওয়া! এরা কত অর্থ সংগ্রহ করেছেন, কোন কাজে এ অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে, এর একটা হিসাব নেওয়া প্রয়োজন। শ্রমিক কল্যাণে যদি অর্থ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে তাহলে শ্রমিক স্বার্থেই তা ব্যয় করা উচিত।
বাংলাদেশ নিয়ে নিউইয়র্কে গবেষণা হচ্ছে। বেশ ক'জন অধ্যাপক এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। একজন মার্কিন অধ্যাপক মওলানা ভাসানীকে নিয়ে গবেষণা করছেন। ওই গবেষণায় বেরিয়ে আসবে অজানা অনেক কথা। বাংলাদেশে শ্রমিক, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের কর্মীদের নিয়ে কাজ করতে চান কেউ কেউ। আমি নিজেও করতে পারি। সুযোগ পেয়েছি। যদিও এটা আমার ফিল্ড নয়। তবুও সুযোগ আছে। বাংলাদেশের সম্মানটা আরও উজ্জ্বল করতে পারি। ড. ইউনূসকে নিয়ে যা হয়েছে, তা হওয়া উচিত ছিল না। তাকে আমরা ব্যবহার করতে পারতাম। পশ্চিমা বিশ্ব এখন আর দারিদ্র্য কমানোর কথা বলছে না। বলছে চিরতরে দারিদ্র্য দূর করার। অর্থাৎ দারিদ্র্য আর থাকবে না। ড. ইউনূস দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাতে চেয়েছিলেন। ড. ইউনূসের এই ধারণা পশ্চিমা বিশ্ব গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ দিয়েই শুরু হতে পারত এই পরীক্ষা! ড. ইউনূসকে কাজ করতে দিলে ক্ষতির কী ছিল? বাংলাদেশকে উঠতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। এই স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে। পাঁচ-পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়ে গেল। বিএনপি নির্বাচনে জিতেছে। এক অর্থে জিতেছে আওয়ামী লীগও! কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সম্ভব, তা সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়_ এই ধারণা দেখলাম এই যুক্তরাষ্ট্রেও শক্তিশালী। এই ধারণার বিপক্ষে শক্তিশালী জনমত গড়ে তুলতে পারেনি সরকার। সরকারের ব্যর্থতা এখানেই। সরকার যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামোর কথা বলছে, এর পক্ষেও জনমত শক্তিশালী নয়। বিএনপিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে না পারলে সেটা হবে সরকারের ব্যর্থতা। প্রবাসী বাঙালিদের ধারণাটা তাই_ একটা সমঝোতা হোক, যাতে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। না হলে সংঘাত যদি বেড়ে যায়, তা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে দেখা দেবে।
এই নিউইয়র্ক শহরে বাংলাও ধীরে ধীরে অন্যতম ভাষা হয়ে উঠছে। বাঙালি ডাক্তারের সংখ্যা একেবারে কম নয়। মহিলা ডাক্তারও আছেন। এ রকম একজন ডা. মমিন রহমানের চেম্বারে যারা তার সহকর্মী সবাই প্রায় বাঙালি। বাঙালি রোগীরাই আসেন, বাংলাতেই কথা বলেন। বাঙালিরা তার কাছে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অমায়িক ডা. রহমান গল্পের ছলেই রোগী দেখেন। আমিও দেখিয়ে আসলাম তাকে। জ্যামাইকার ১৬১ নং স্ট্রিটের যেখানে তার চেম্বার, সেখানে গড়ে উঠেছে হাইরাইজ টাওয়ার, নাম 'আফতাব টাওয়ার'। মালিকানা বাংলাদেশিদের। ঢাকায় আফতাব পণ্যের সঙ্গে যারা পরিচিত (ইসলাম গ্রুপ), তারাই তৈরি করেছেন এই ভবন। এ ধরনের একাধিক ভবন রয়েছে এই নিউইয়র্ক শহরে। যাদের মালিকানা এই ইসলাম গ্রুপের কাছে। বাংলাদেশিরা আজ বহুজাতীয় সংস্থার জন্ম দিয়েছেন। এটা একটা বড় পাওয়া আমাদের জন্য।
হলিকস্ এলাকায় আমার বোন নীনা রশীদের বাড়ির পেছনের আঙ্গিনাও যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। লাউশাক, নিজের হাতে লাগানো আমাকে মনে করিয়ে দিল মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ। লাল শাক, লাউ, কুমড়ো সবই চাষ হচ্ছে। মাত্র ২৪ বছরে ফার্মাসিস্ট হওয়া আমার বোনের মেয়েরও আগ্রহ বাগান করায়। সবাই মিলে কাজ করেন। মাটি কিনে আনেন দশ ডলারে, গাছে দিতে হয় ভিটামিন (অর্থাৎ আমাদের সার)। এক টুকরো বাংলাদেশ এই নিউইয়র্কের সব জায়গায়।
নিউইয়র্ক
স ড. তারেক শামসুর রেহমান :অধ্যাপক
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ একটা 'সফ্ট' পাওয়ার। বিশ্বকে দেওয়ার অনেক কিছুই আছে আমাদের। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প, গার্মেন্ট_ সবকিছুতে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। রানা প্লাজায় 'হত্যাকাণ্ড' সাময়িকভাবে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও পোশাকশিল্পের কদর বহির্বিশ্বে থাকবেই। তাই রফতানিমুখী পোশাকশিল্পের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ক্ষীণ। অভিযোগ আছে, বাংলাদেশে পোশাকশিল্পে কর্মরতদের কম মজুরি দেওয়া হয়। ১২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেস বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গার্মেন্ট রফতানিকারক দেশগুলোর পোশাকশিল্পের অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে (এষড়নধষ ডধমব ঞৎবহফং ভড়ৎ অঢ়ঢ়ধৎবষ ডড়ৎশবৎং, ২০০১-২০১১)। তাতে দেখা যায়, শুধু বাংলাদেশই নয়, প্রায় প্রতিটি শীর্ষস্থানীয় রফতানিকারক দেশে গার্মেন্ট সেক্টরে মজুরি কমেছে। বাংলাদেশ, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া ও এল সালভাদরে শ্রমিক মজুরি কমেছে শতকরা ১৪ দশমিক ৬ ভাগ হারে। জীবনযাত্রার মানের চেয়ে শতকরা ৩৬ ভাগ হারে কম বেতন দেওয়া হয় চীনে, ২২ ভাগ হারে কম বেতন ভিয়েতনামে। বাংলাদেশে এর পরিমাণ ১৪ ভাগ। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শ্রমিকদের (তৈরি পোশাক) বেতন কমেছে প্রায় সবক'টি দেশে। ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে শুরু করে ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডেও। সবচেয়ে বেশি কমেছে মেক্সিকোতে, শতকরা ২৮ দশমিক ৯ ভাগ। মোট ১০টি দেশ নিয়ে গবেষণা চালানো হয়, যে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রফতানি করে। রানা প্লাজার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি নেতিবাচক ধারণার জন্ম হলেও পৃথিবীর অনেক দেশেই তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ নজির রয়েছে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে দু'জন নারী শ্রমিক (আদৌ কি এরা শ্রমিক?) এসেছিলেন এখানে। উদ্দেশ্য অর্থ সংগ্রহ করা ও বাংলাদেশের পোশাকশিল্প সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেওয়া! এরা কত অর্থ সংগ্রহ করেছেন, কোন কাজে এ অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে, এর একটা হিসাব নেওয়া প্রয়োজন। শ্রমিক কল্যাণে যদি অর্থ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে তাহলে শ্রমিক স্বার্থেই তা ব্যয় করা উচিত।
বাংলাদেশ নিয়ে নিউইয়র্কে গবেষণা হচ্ছে। বেশ ক'জন অধ্যাপক এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। একজন মার্কিন অধ্যাপক মওলানা ভাসানীকে নিয়ে গবেষণা করছেন। ওই গবেষণায় বেরিয়ে আসবে অজানা অনেক কথা। বাংলাদেশে শ্রমিক, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের কর্মীদের নিয়ে কাজ করতে চান কেউ কেউ। আমি নিজেও করতে পারি। সুযোগ পেয়েছি। যদিও এটা আমার ফিল্ড নয়। তবুও সুযোগ আছে। বাংলাদেশের সম্মানটা আরও উজ্জ্বল করতে পারি। ড. ইউনূসকে নিয়ে যা হয়েছে, তা হওয়া উচিত ছিল না। তাকে আমরা ব্যবহার করতে পারতাম। পশ্চিমা বিশ্ব এখন আর দারিদ্র্য কমানোর কথা বলছে না। বলছে চিরতরে দারিদ্র্য দূর করার। অর্থাৎ দারিদ্র্য আর থাকবে না। ড. ইউনূস দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাতে চেয়েছিলেন। ড. ইউনূসের এই ধারণা পশ্চিমা বিশ্ব গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ দিয়েই শুরু হতে পারত এই পরীক্ষা! ড. ইউনূসকে কাজ করতে দিলে ক্ষতির কী ছিল? বাংলাদেশকে উঠতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। এই স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে। পাঁচ-পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়ে গেল। বিএনপি নির্বাচনে জিতেছে। এক অর্থে জিতেছে আওয়ামী লীগও! কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সম্ভব, তা সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়_ এই ধারণা দেখলাম এই যুক্তরাষ্ট্রেও শক্তিশালী। এই ধারণার বিপক্ষে শক্তিশালী জনমত গড়ে তুলতে পারেনি সরকার। সরকারের ব্যর্থতা এখানেই। সরকার যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামোর কথা বলছে, এর পক্ষেও জনমত শক্তিশালী নয়। বিএনপিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে না পারলে সেটা হবে সরকারের ব্যর্থতা। প্রবাসী বাঙালিদের ধারণাটা তাই_ একটা সমঝোতা হোক, যাতে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। না হলে সংঘাত যদি বেড়ে যায়, তা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে দেখা দেবে।
এই নিউইয়র্ক শহরে বাংলাও ধীরে ধীরে অন্যতম ভাষা হয়ে উঠছে। বাঙালি ডাক্তারের সংখ্যা একেবারে কম নয়। মহিলা ডাক্তারও আছেন। এ রকম একজন ডা. মমিন রহমানের চেম্বারে যারা তার সহকর্মী সবাই প্রায় বাঙালি। বাঙালি রোগীরাই আসেন, বাংলাতেই কথা বলেন। বাঙালিরা তার কাছে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অমায়িক ডা. রহমান গল্পের ছলেই রোগী দেখেন। আমিও দেখিয়ে আসলাম তাকে। জ্যামাইকার ১৬১ নং স্ট্রিটের যেখানে তার চেম্বার, সেখানে গড়ে উঠেছে হাইরাইজ টাওয়ার, নাম 'আফতাব টাওয়ার'। মালিকানা বাংলাদেশিদের। ঢাকায় আফতাব পণ্যের সঙ্গে যারা পরিচিত (ইসলাম গ্রুপ), তারাই তৈরি করেছেন এই ভবন। এ ধরনের একাধিক ভবন রয়েছে এই নিউইয়র্ক শহরে। যাদের মালিকানা এই ইসলাম গ্রুপের কাছে। বাংলাদেশিরা আজ বহুজাতীয় সংস্থার জন্ম দিয়েছেন। এটা একটা বড় পাওয়া আমাদের জন্য।
হলিকস্ এলাকায় আমার বোন নীনা রশীদের বাড়ির পেছনের আঙ্গিনাও যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। লাউশাক, নিজের হাতে লাগানো আমাকে মনে করিয়ে দিল মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ। লাল শাক, লাউ, কুমড়ো সবই চাষ হচ্ছে। মাত্র ২৪ বছরে ফার্মাসিস্ট হওয়া আমার বোনের মেয়েরও আগ্রহ বাগান করায়। সবাই মিলে কাজ করেন। মাটি কিনে আনেন দশ ডলারে, গাছে দিতে হয় ভিটামিন (অর্থাৎ আমাদের সার)। এক টুকরো বাংলাদেশ এই নিউইয়র্কের সব জায়গায়।
নিউইয়র্ক
স ড. তারেক শামসুর রেহমান :অধ্যাপক
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
স্যার, আপনার লেখাটা পড়ে অনেক ভাল লাগল। নিজের দেশ সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু শুনতে কার না ভাল লাগে?
ReplyDeleteThank you Tawhid. Take care.
ReplyDelete