রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

মিশরের মতো সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বাংলাদেশে নেই

আজকালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. তারেক শামসুর রেহমান

কাউসার মুমিন: ড. তারেক শামসুর রেহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক। অধ্যাপনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর একজন বস্তুনিষ্ট কলামিস্ট এবং টেলিভিশন টকশো আলোচক হিসেবেও সুপরিচিত তিনি। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সর্বশেষ বিষয়-আশয়, রাজনৈতিক উত্তরণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, অপ্রচলিত নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষণ এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি তার আলোচনা ও আগ্রহের বিষয়। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য হিসেবেও দায়িত্বপালন করেছেন তিনি। সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষক ড. তারেক বর্তমানে তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফর উপলক্ষে নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন। গত মঙ্গলবার তিনি সাপ্তাহিক আজকাল অফিসে এলে তাঁর সাথে সমকালীন পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। আলোচনায় ড. তারেক জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক
উত্তরণের স্বার্থে সরকারী দলকে অবশ্যই নির্বাচন পদ্ধতি বিষয়ে বিরোধী দলের সাথে আলোচনায় বসতে হবে। এ ছাড়া তিনি আরও মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ের মিশরের মতো বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের কোনো সম্ভাবনা নেই। ড. তারেক শামসুর রেহমানের সাথে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো আজকালের পাঠকদের উদ্দেশ্যে এখানে তুলে ধরা হলো:Ñ
প্রশ্ন: আপনি আন্তর্জাতিক বিষয়ের একজন শিক্ষাবিদ। আপনার সাথে আলোচনা প্রথমেই একটু একাডেমিক বিষয় দিয়ে শুরু করবো। জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্রের জন্য আসলেই কতটা সহায়ক? অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলে থাকেন, জাতীয়তাবাদ প্রায়শই ফ্যাসিবাদের জন্ম দেয়। এমনকি আজকের বিশ্বের অনেক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মূলে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির চর্চা ও বিকাশকে দায়ী করে থাকেন কেউ কেউ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য বা উপাদানগুলো সম্পর্কে আপনার নিকট জানতে চাই।
ড. তারেক শামসুর রেহমান: প্রথমত আজকের বিশ্বের অনেক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মূলে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির চর্চা দায়ী এ মতের সাথে আমি একমত নই। জাতীয়তাবাদ থেকে ফ্যসিবাদের জন্ম হয় এই কথা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আংশিক সত্য হলেও তা ইউনিভার্সাল নয়। বরং জাতীয়তাবাদ আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম অনুসঙ্গ। জাতীয়তাবোধ থেকেই জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি। কোনো নির্দিষ্ট ভুখন্ডের মানুষ যখন ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, ইতিহাস ঐতিহ্য এবং আকাক্সক্ষার দিক থেকে পারস্পরিক নৈকট্য ও একাত্মতাবোধ করে তখনই তাদের মধ্যে একটি জাতীয়তাবোধের জন্ম নেয়। এভাবেই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদও বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডের সকল মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, ইতিহাস ঐতিহ্য এবং আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ একটি ইনক্লুসিভ আইডিয়া -এখানে সকল ভাষা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও আকাক্সক্ষাকে ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষের ধর্ম ইসলাম তাই ইসলাম ধর্ম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ উপাদান। পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম বর্ণ ভাষা ও সংস্কৃতির সমচর্চা, বিকাশ ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা রয়েছে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে।
বাঙালী জাতীয়তাবাদ সমগ্র বাংলাদেশকে ধারণ করে না। শুধুমাত্র ভাষাভিত্তিক এই জাতীয়তাবাদ একটি সংকীর্ণ আইডিয়ার (এই ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার) উপর দাঁড়িয়ে, জাতীয়তাবোধের সবগুলো উপাদান এখানে অনুপস্থিত। বাংলাদেশের সকল ভাষা সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব বাঙালী জাতীয়তাবাদে নেই। বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষীরাও বাংলাদেশের বাংলাভাষীদের সাথে মিলে একটি জাতি। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। পশ্চিম বঙ্গের বাঙ্গালীরা বাংলা ভাষায় কথা বললেও তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আকাক্সক্ষা আলাদা। এই যেমন ধরুন কবি নজরুলের চর্চার দিকটি যদি খেয়েল করেন তবে দেখবেন পশ্চিমবঙ্গ শুধু নজরুলের হিন্দু সংস্কৃতির লেখাগুলো পাঠ করে চর্চা করে, কিন্তু আমরা এখানে বাংলাদেশে সমগ্র নজরুলক চর্চা করি, তাঁর হিন্দু মুসলিম সংস্কৃতির সকল সৃষ্টি নির্বিশেষে আমরা তাঁকে ধারণ করি, কিন্তু সংস্কৃতিগত কারণেই পশ্চিমবঙ্গে সেটা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মতো তাদের একটি স্বাধীন ভুখন্ড নেই, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত কোনো ঐতিহ্য তাদের নেই, তারা বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের আকাক্সক্ষা করেননি। সুতরাং তারা জাতীয়তাবোধের দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা একটি জাতি। বাঙালী জাতীয়তাবাদের সাথে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূল পার্থক্য হলো প্রথমটি শুধু মাত্র ভাষাভিত্তিক, আর দ্বিতীয়টি জাতীয়তাবোধের সকল উপাদানকে ধারণ করে। এছাড়া বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষের ধর্মবিশ্বাস ইসলাম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রধান উপাদান। তবে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীস্টান নির্বিশেষে সকল ধর্ম বর্ণ ও সংস্কৃতির চর্চার মাধ্যমেই আমরা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কখনো ধর্মীয় উগ্রবাদকে প্রশ্রয় দেয় না।
প্রশ্ন: প্রেসিডেন্ট জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণা বর্তমান বিএনপির রাজনীতিতে কতটা প্রতিফলিত হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন? অনেক রাষ্ট্র বিজ্ঞানী বলছেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ক্রমশ ইসলামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আপনি কি মনে করেন যে বর্তমান বিএনপি প্রেসিডেন্ট জিয়ার জাতীয়তাবাদী আদর্শকে সম্পূর্ণভাবে ধারণ করতে পারছে?
ড. তারেক শামসুর রেহমান: প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে, না, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ক্রমশ ইসলামের দিকে ধাবিত হচ্ছে না। আমি আগেই বলেছি, ইসলাম বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের একটি অন্যতম প্রধান উপাদান। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষের ধর্ম ইসলাম, আপনি নিজে ধর্ম পালন করেন কি না বা মসজিদে যান কি না, সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থে বেশীরভাগ মানুষের বিশ্বাসের প্রতিফলন রাষ্ট্রনীতিতে ঘটতে হবে। আর প্রেসিডেন্ট জিয়ার জাতীয়তাবাদী রাজনীতি থেকে বর্তমান বিএনপি সরে এসেছে বলেও আমি মনে করি না। জিয়ার জাতীয়তাবাদী রাজনীতির শুরু আজ থেকে অনেক বছর আগে। ইতিমধ্যে বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপট অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু বিএনপি এখনো জিয়ার আদর্শে অটুট আছে বলে আমি মনে করি। অতি সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ইসলামিক রিভাইভালিজমের প্রভাব কিছুটা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উপর পড়েছে। এটা সময়ের প্রয়োজনে ঘটেছে, যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে বিএনপিকেও সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কিন্তু একে আমি কিছুতেই জিয়ার জাতীয়তাবাদী আদর্শ থেকে সরে আসা বলে মনে করি না। এটি বিএনপির আদর্শগত পরিবর্তন নয়, বরং কৌশলগত পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ধর্মের ভূমিকা কি হওয়া উচিত? গণতন্ত্র ও ধর্ম একসাথে চলতে পারে কি? বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে ইসলামপন্থী দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে কিছু বলুন। বাংলাদেশে উগ্রপন্থী ইসলাম উত্থানের সম্ভাবনা কতটুকু?
ড. তারেক শামসুর রেহমান: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ধর্মের ভূমিকা ইতিবাচক। ধর্ম ও গণতন্ত্র পরস্পরের পরিপূরক। আধুনিক গনতন্ত্রের সুতিকাগার ইউরোপের রাজনীতিতে ধর্মের অবস্থান সুস্পষ্ট। জার্মানীতে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি নামে রাজনৈতিক দল রয়েছে। প্রায় সমগ্র ইউরোপেই ক্রিশ্চিয়ান নাম দিয়ে রাজনৈতিক দলের নাম রয়েছে, তার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছে। এ বিষয়ে বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইডেনের উদাহরণ আমি দিতে পারি। তবে তারা নিজ ধর্মকে যেমন সম্মান করে, তেমনি অন্যের ধর্মের চর্চার অধিকারের সুরক্ষা দেয়। এরা ধর্ম বিষয়ে কখনো কট্টর নয়, ধর্ম চর্চা বিষয়ে জোর প্রয়োগ করে না, কখনো বলে না যে প্রতি রোববার আপনাকে চার্চে যেতেই হবে। কিন্তু তারপরও ধর্মের নামে ইউরোপের রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলের নামকরণ করেছে। সুতরাং বলা যায় বিগত দুশ বছর যাবত গণতন্ত্র চর্চাকারী ইউরোপের রাজনীতিতে ধর্ম একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং রাজনীতিতে অবশ্যই ধর্মের প্রযোজনীয়তা বা অবস্থান আছে এবং থাকা উচিত।
সুতরাং বাংলাদেশের মতো সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানের দেশে রাজনীতিতে ধর্মের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাবে না। বরং ধর্ম বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চার একটি অন্যতম উপাদান। গণতন্ত্র বিকাশে, গণতান্ত্রিক উত্তরণে ধর্মীয় রাজনৈতিক দল এবং মানুষের ধর্মবিশ্বাস সম্পুরক ভূমিকা পালন করছে। শুধু বাংলাদেশ নয় এখানে আমরা ইন্দোনেশিয়া, তিউনিশিয়া এবং মিশরের কথাও বলতে পারি। এই দেশগুলোর প্রত্যেকটিতেই দেশের সাধারণ জনগণ ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দিয়েছে। মিশরের বেলায় ধর্মীয় রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করছিলো। যদিও এখন সেনাবাহিনী সেখানে হস্তক্ষেপ করেছে কিন্তু সেটা ভিন্ন প্রেক্ষাপট। অর্থাত, আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশগুলোতে এই যে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোরও ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং ধর্ম ও গণতন্ত্র একসাথে চলতে পারে এবং তারা পরস্পরের পরিপূরক।
প্রশ্ন: একটু আগে আপনি মিশরের রাজনীতিতে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের ভূমিকার কথা বলছিলেন। আমরা জানি ইতিমধ্যেই সেনাবহিনী দেশটির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এই সেনা হস্তক্ষেপকে ক্যু বলতে নারাজ। মিশরের বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার পর্যবেক্ষণ কি? বাংলাদেশের রাজনীতিতে মিশরের মতো অবস্থার কোনো আশংকা আছে কি?
ড. তারেক শামসুর রেহমান: মিশরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে খুব সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই। এর সাথে মিশরের জাতীয় রাজনীতি, এ অঞ্চলের আঞ্চলিক রাজনীতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বশক্তিগুলোর জাতীয় স্বাথর্কেও মিলিয়ে দেখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের ৫ ম নৌবহর এ অঞ্চলে (বাহরাইনে) অবস্থিত। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই চাইবে না এ অঞ্চলে তার স্বার্থবিরোধী কোনো শক্তি ক্ষমতায় আসুক। এ ছাড়াও মিশরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুরসীর বেশকিছু ভুল সিদ্ধান্ত মিশরের রাজনীতিকে ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছে। আধুনিক মিশরের ৬০ বছরের সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যবস্থায় দেশটির সমাজ কাঠামোতে সেক্যুলার শক্তির অবস্থান অনেক শক্তিশালী হয়েছে। মুরসী তা হিসেব করতে ভুল করেছেন। তিনি খুব দ্রুত ইসলামের শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চেয়েছেন। ইসলামী শরীয়ার বেশ কিছু আইন বাস্তবায়ন ঘোষণার আগে আরও সময় নিতে পারতেন তিনি। এ ছাড়া এ বিষয়ে একটি জাতীয় সমঝোতার দিকেও যেতে পারতেন তিনি। বিশেষ করে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার বিষয়ে মুরসীর নেতিবাচক অবস্থান অগণতান্ত্রিক ছিলো। এখানে আমি মুরসীর চেয়ে ব্রাদারহুড দলের নেতৃবৃন্দকেই বেশী দোষ দেবো। তারা মুরসীকে সামনে রেখে মিশরে ক্ষুব দ্রুত ইসলামী শরীয়া আইন বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগী ছিলেন।
আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবার ওয়ান-ইলেভেন কিংবা মিশরের মতো সেনা হস্তক্ষেপের কোনো আশংকা নেই। কেননা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং মিশরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্প্রতি বিভিন্ন নামে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির চর্চা দেখা গেলেও বাস্তবে জাতীয় সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। ভোটাভুটির রাজনীতিতে তাদের নিজস্ব কোনো বড় দলও নেই। তারা দুটি বিরোধী বড় রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়ে থাকে। হিসেব করলে দেখা যাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের ভোট ৩-৪ শতাংশের মতো। সুতরাং ইসলামপন্থীরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো ফ্যাক্টর নয় এবং বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাছাড়া দিয়ে উঠার কোনো সুযোগও নেই। তবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সিটি কর্পরেশনগুলোর নির্বাচনী ফলাফলের রায়ে জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে যে বর্তমান সরকার অনুসৃত নীতিমালার প্রতি তাদের কোনো সমর্থন নেই। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের উচিত নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিরোধী দলের সাথে আলোচন অপূর্বক একটি সমঝোতায় আসা। নইলে নির্বাচনাকালীন রাজনৈতিক সংকট আবারও দেখা দিতে পারে এবং বিশ্ববাসীর নিকট একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ইমেজ আমরা হারাতে পারি।

0 comments:

Post a Comment