রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

জিএসপি: দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের প্রশ্ন

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুটো ঘটনার কথা উল্লেখ করতে পারি, যাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যথেষ্ট নষ্ট হয়েছে। প্রথমটি. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত আর দ্বিতীয়টি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনকে লিখিত এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের একটি চিঠি; যেখানে কমিশন স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের পুলিশ ‘নির্যাতনবান্ধব’ ও ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’। দুটি ঘটনাই বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য যথেষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এটা সত্য, কিন্তু যা চিন্তার কারণ তা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই পথ অবলম্বন করতে পারে। এমনিতেই বাংলাদেশের গার্মেন্টশিল্প নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার অর্থ— আগামীতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধার দাবিটি একটি বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল। তৈরি পোশাকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ পায় না। এ নিয়ে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছিল। ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের একটা বাজার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তথাকথিত ৫ হাজার পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ দিলেও এর মধ্যে খুব কম আইটেমই বাংলাদেশ সরবরাহ করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে ৫০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য, তাতে মাত্র এক শতাংশ শুল্কমুক্তের সুবিধা নেয় বাংলাদেশ। সুতরাং জিএসপি সুবিধা বাতিল হলেও বাংলাদেশ তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু বহির্বিশ্বে বিভিন্ন দেশে একটা ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে পারে এটি। আর এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের চিঠিও আমাদের জন্য একটি খারাপ সংবাদ। এতে করে আমাদের ভাবমূর্তি ঝুঁকির মুখে থাকল। আমাদের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি নিয়ে কতটুকু ভাবেন আমি জানি না, কিন্তু আমাদের জন্য এগুলো খারাপ খবর। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উষ্ণতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। বেশকিছু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। দুর্নীতির ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো সাহায্য পাচ্ছে না। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন না হওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন খুব ভালো চোখে দেখেনি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যু। ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকার যে ‘ব্যবহার’ করেছে, তাতে মার্কিন প্রশাসনের অনেকেই খুশি হতে পারেননি। এর সঙ্গে অতিসম্প্রতি যোগ হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংককে ‘ভেঙে ফেলা’র একটি উদ্যোগ। এসব ক্ষেত্রে মার্কিন কংগ্রেসের আইন প্রণেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে এক বিরূপ ধারণার জন্ম হয়েছে। জন কেরির বাংলাদেশে না আসা এর একটি অন্যতম কারণ। গত ২৫ জুন এই সফর নির্ধারিত থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়। তিন দিনের সফরে জন কেরি ভারতে এসেছিলেন ২৩ জুন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি একটা ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হতে বাধ্য। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন ছিল, তা নিতে নীতিনির্ধারকরা ব্যর্থ হয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে আমাদের নীতিনির্ধারকরা আরো একটু যতœবান হলে ভালো করতেন। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশ সফর ভালোবাসেন। এখন তার ঘন ঘন বিদেশ সফরের মধ্য দিয়ে জাতীয় স্বার্থ কতটুকু রক্ষিত হয়েছে, তা শুধু আগামীতে বলা সম্ভব। শুধু শুধু বিদেশ সফরের মধ্য দিয়ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হবে না। জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত খাতগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পররাষ্টনীতি পরিচালনা করতে হবে। মাত্র ৫ ঘণ্টার নিউইয়র্ক সফর করে মন্ত্রী তার নামের সুবিচার করতে পারেননি। একুশ শতকে বাংলাদেশের লক্ষ্য কী, অর্জন কী, ‘সফট পাওয়ার’ হিসেবে বাংলাদেশ কীভাবে তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করবে— এসবের কোনো দিকনির্দেশনা নেই আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে। ভারতের সঙ্গে আমাদের বেশকিছু বিষয় ঝুলে আছে। এ ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট নয়। তিস্তা চুক্তি নিয়ে যে ধ্রুম্রজাল, তার অবসান হয়নি। আমাদের স্বার্থে তিস্তা চুক্তি অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে এ চুক্তিটি এখন পর্যন্ত হচ্ছে না। চুক্তিটি না হওয়ার কারণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরই ঝুলে গেল। আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি যাওয়ার কথা। বাস্তবতা হচ্ছে, তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। আগামীতে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। এরপর ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন। এক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জি তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টিকে তার স্বার্থে ব্যবহার করবেন। তাকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র কোনো চুক্তি করতে পারবে না। দ্বিতীয়ত. মমতা এখন আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটে নেই। ফলে কেন্দ্র তার ওপর কোনো প্রভাব খাটাতে পারবে না। তৃতীয়ত. তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে আরো একটি পক্ষ আছে। আর তা হচ্ছে সিকিম। সিকিম হয়ে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্সের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটি থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলায় উত্তর খড়িবাড়ির কাছে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। সিকিম মূল প্রবাহে ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সিকিম তিস্তার উজানে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। দীর্ঘ দুই যুগেও তিস্তা নদীর পানির হিস্যা না পাওয়ায় প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পটি এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তিস্তা চুক্তিটির গুরুত্ব অনেক বেশি। এটা এখন ঝুলে গেল। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়েও অস্পষ্টতা আছে। ভারত বারবার বলছে, তারা টিপাইমুখে এমন কিছু করবে না, যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়। কিন্তু সংবাদপত্রে (ভারতীয়) প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ভারত এ প্রকল্প নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। খোদ মণিপুরেই প্রস্তাবিত এই বাঁধের ব্যাপারে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। টিপাইমুখ হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্টে যে হাইড্যাম নির্মিত হবে, তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা হবে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এটি নির্মিত হওয়ার কথা বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষে আসামের করিমগঞ্জে বরাক নদের ওপর। প্রস্তাবিত টিপাইমুখ হাইড্যামের অবস্থান বাংলাদেশের সীমানার খুবই কাছে। ফলে এ থেকে সৃষ্ট সব ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব যেমন— নদীগর্ভে অতিরিক্ত বালুর সঞ্চালন ও সঞ্চয়ন, হঠাৎ বন্যা, অতিবন্যা ইত্যাদির প্রভাব সম্পূর্ণটাই পড়বে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে সম্পূর্ণ হাওর জনপদের ওপর। আনুমানিক ১০-১৫ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলের হাওর, বিল-ঝিল, বাঁওড়, নদী-নালা বালুতে প্রায় ভরে যাবে। যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি)-এর সভা না হওয়ায় বাংলাদেশ টিপাইমুখ নিয়ে আলোচনার সুযোগ হারাল।
বাংলাদেশ তার বন্ধুকে সম্মান জানাতে জানে। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় সম্মানে সম্মানিত করেছিল। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে আরো একটু উদার হতে পারত। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ব্যাপারে যেসব জটিলতা রয়েছে, সেসব জটিলতা কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে ভারতের কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ করা যায় না। ভারতের রাষ্ট্রপতির ঢাকা সফরের সময় সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সে আশ্বাস পুরো রক্ষিত হয়নি। ছিটমহল নিয়ে সমস্যা, আজো রয়ে গেছে। বর্তমান বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আছে ১৭ হাজার ১৪৯ একর ভারতীয় ভূমি।
আর ভারতের ভূখণ্ডে রয়েছে ৭ হাজার ১১১ একর বাংলাদেশের ভূমি। এসব অঞ্চলের মানুষ এক মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভারত বড় দেশ। আগামী ৩০ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। সঙ্গত কারণেই ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে আমরাও উপকৃত হতে পারি। এজন্য প্রয়োজন ভারতের উদার মনোভাব। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য ভারতের অনুকূলে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি দিনে দিনে বাড়ছেই। অশুল্ক বাধা দূর করার প্রতিশ্রুতিও রক্ষিত হয়নি। ভারত-বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের পর খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো ট্রানজিট সুবিধা পায়নি। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির একটা কথা বলা হয়েছিল। সেখানেও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
জিএসপি সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্তটি যখন পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে, ঠিক তখনই ছাপা হয়েছিল (২৭ জুন) খবরটি— এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনকে একটি চিঠিতে উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের পুলিশ ‘নির্যাতনবান্ধব’ ও ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’। কমিশনের ওয়েবসাইটে এ চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে। কমিশনের অভিযোগ, দেশের সংবিধান ও আইনে সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার ও নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়টি উল্লেখ থাকার পরও ব্যাপকভাবে নির্যাতন চালানোর চর্চা রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর। কমিশনের ভাষ্য, পুলিশ ও নির্যাতন এখন সমার্থক হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন দলও বিরোধীদের দমনে পুলিশকে ব্যবহার করছে। চিঠিতে আরো বলা হয়, পুলিশ বাহিনীতে ঘুষ নেয়ার প্রবণতাও প্রচণ্ড। প্রায় সবার কাছ থেকেই ঘুষ নেয় পুলিশ। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের ওই চিঠিতে বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনের সংস্কারের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। অনেকেই স্বীকার করবেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ বিরোধী দলের নেতা ও কর্মীদের দমনে বেপরোয়া আচরণের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রকাশ্যে বিএনপির জনসভা ভেঙে দেয়া, সিনিয়র নেতাদের গুলিতে আহত করা, হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর রাতের আঁধারে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা পুলিশ তথা নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকাকে সামনে নিয়ে এসেছে। এ ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দিত হয়েছে। একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারের এক কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও পুলিশ প্রশাসন তাকে শুধু বদলি করেছে মাত্র। তাকে চাকরিচ্যুত করেনি। আজ বিষয়টি জাতিসংঘের নজরে আনল এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। এসব ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আজ কোথায় গিয়ে ঠেকল, তা সহজেই অনুমেয়। সুতরাং বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। আগামীতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও একটি বড় প্রশ্ন আছে। প্রধান বিরোধী দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আবারো নষ্ট হবে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা কোনো বিষয়কেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন না। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতিকে তারা হালকাভাবে নিয়েছেন। ঠিক তেমনি রানা প্লাজার ঘটনাটিকেও খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন, তা মনে হয় না। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চমহল থেকে বলা হলেও সরকার খুব একটা ‘গা’ করেনি। আজো হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা যায়নি। গার্মেন্টশিল্পে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, শ্রম মান বাড়ানো, কমপ্লায়েন্স বাধ্যতামূলক করা— এসব ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ আশাপ্রদ নয়। তাই জিএসপি সুবিধা স্থগিত হলো। এখন দেখতে হবে সরকার এরপর কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নিঃসন্দেহে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য একটি ‘ওয়েক-আপ কল’।

বনিকবার্তা ১৩ জুলাই ২০১৩ 

0 comments:

Post a Comment