রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

যে প্রশ্নের জবাব অজানা

মাত্র চব্বিশ বছর বয়স ফারহিনের। ফার্মেসিতে পিএইচডি করেছে। সম্পর্কে আমার ভাগ্নি, আমার বড় বোনের মেয়ে। আদবে-চালচলনে বাঙালি হলেও ফারহিন মার্কিন নাগরিক। জন্ম ওর কুয়েতে আর বেড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশে ও গেছে যখন ছোট ছিল। এই অক্টোবরে ও দেশে যাবে। অনেক প্রস্তুতি। কিন্তু আপত্তি আমার- দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। দেশে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আমি জানি ঈদের পর বড় ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট। এরই মধ্যে ঘটে গেছে আরও একটি ঘটনা- হাইকোর্টের দ্বিধাবিভক্ত রায়ে ইসিতে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এটা নিয়ে দাবি ছিল এবং কানাঘুষাও ছিল, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একটা পর্যবেক্ষণও ছিল। উচ্চ আদালতে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এখন জামায়াতের ভবিষ্যৎ কী, এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু জামায়াত এরই মাঝে ১২ ও ১৩ আগস্ট হরতাল আহ্বান করেছে। সুতরাং রাজনীতির ময়দান আবার উত্তপ্ত। এ পরিস্থিতিতে ফারহিনের ঢাকা যাওয়া কতটুকু সঙ্গত হবে, এটা নিয়ে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। কিন্তু বাচ্চাটাকে আমরা বোঝাতে পারি না। ওর কথা, বাংলাদেশ আমার দেশ। দেশে যাওয়া আমার অধিকার। আমি কেন আমার মায়ের দেশে যেতে পারব না? আমরা ওকে বোঝাতে পারি না- রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল ডাকে, লাগাতার হরতাল। এ হরতালে সাধারণ মানুষ থাকে ঝুঁকির মুখে। হরতালে যে সংঘর্ষ হয়, তাতে পড়ে মানুষ মারা যায়।
রক্তে যার বাঙালিত্ব, বাংলাদেশ যাকে টানে, নাড়ির টানে যে দেশটিকে দেখতে চায়, ‘রাজনীতি’ আজ এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, এ দেশ তার এক নাগরিককে দেশে যাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। ফারহিনের মতো অনেক ‘শিশু’ এ দেশের আবহাওয়ায় বড় হয়েছে। কিন্তু নিজের দেশটাকে দেখতে চায়। ছুটি কাটাতে চায় আÍীয়স্বজনের কাছে। ফারহিনের অনেক প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই।
দুই
নিউইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। একটু পরে আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে ‘ক্যাথ ল্যাবে’, হৃদযন্ত্রে অপারেশন হবে। ব্লক ধরা পড়েছে। রিং লাগাতে হবে। একের পর এক নার্স আসছে। হাজারটা প্রশ্ন। অতীত ইতিহাস জেনে নিচ্ছে। এমনি এক পুরুষ নার্স জানতে চাইল আমি কোন দেশের। ওর নাম জর্জ। কৃষ্ণাঙ্গ। বিশ থেকে ত্রিশের ঘরে বয়স। বললাম, বাংলাদেশী। ও অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, তোমার দেশে নাকি অনেক মানুষ! তোমরা নাকি সারাবছরই মারামারি কর! একজন কৃষ্ণাঙ্গ যুবক, যার কাছে বাংলাদেশ পরিচিত নয়, সে জেনেছে বাংলাদেশে শুধু মারামারি হয়! বললাম, এই নিউইয়র্কে প্রতিদিন যত সহিংস ঘটনা ঘটে, ঢাকা শহরে তা ঘটে না। জর্জ হাসল। কোনো কথা বলল না। আমাকে নিয়ে গেল ক্যাথ ল্যাবের দিকে। অপারেশনের পর ম্যানহাটনের এ হাসপাতালের ‘পোস্ট-অপারেটিভ’ ইউনিটে একদিন ছিলাম। জর্জ আমাকে দেখতে এসেছিল। আমাকে শুভ কামনা জানিয়েছিল। কিন্তু কেন জানি আমার মনে হচ্ছিল, জর্জ বলতে চাচ্ছে আমরা বাংলাদেশীরা খুব মারামারি করি! তাহলে কি জর্জ আমাকে বলতে চাচ্ছিল আমি সভ্য দেশের নাগরিক নই!
তিন
যারা রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন, তাদের কাছে নিউইয়র্কের ‘কাউন্সিল ফর ফরেন রিলেশন্স’ (সিএফআর) কোনো অপরিচিত নাম নয়। এই থিংক ট্যাংকটি মার্কিন নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে। বেশ কিছু বিষয় নিয়ে এরা গবেষণা করে থাকে। এর একটি হচ্ছে ধর্মীয় উগ্রবাদ। আল-কায়দার উত্থান এবং লাদেন পরবর্তী আল-কায়দার রাজনীতি ও বিস্তার নিয়ে বেশ ক’জন গবেষক কাজ করছেন এখানে। তবে শুধু আল-কায়দা কিংবা সন্ত্রাসবাদ নিয়েই যে এরা কাজ করেন, তা নয়। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ইত্যাদি নানা বিষয়ে এরা কাজ করে ও মনোগ্রাম প্রকাশ করে থাকে। বিখ্যাত ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনটি এদের সংস্থা থেকেই প্রকাশিত হয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্র হিসেবে সিএফআর বিষয়ে আমার আগ্রহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমাকে সপ্তাহে একবার ৬নং ট্রেনে চড়ে হান্টার কলেজে নামতে হয়। তারপর খানিক বাসে চড়ে ম্যানহাটনের ৭০নং স্ট্রিটে আমার ডাক্তার ও হাসপাতাল। আর এ হান্টার কলেজের পাশেই ৬৮নং স্ট্রিটে হ্যারল্ড প্রাট হাউস। সেখানেই সিএফআরের অফিস। লিজা শিল্ডসের সঙ্গে কথা বলে ওখানে যখন গেলাম, তখন দুপুরের রোদ। ম্যানহাটন যেন হাসছে। কোন দেশের মানুষ নেই এই ম্যানহাটনে? দশ বছর আগেও ম্যানহাটনে হেঁটেছি। সেই একই ছবি। উঁচু উঁচু ভবন। একটার সঙ্গে অপরটির যেন প্রতিযোগিতা!
বাংলাদেশ সিএফআরের গবেষকদের কাছে গুরুত্ব পাবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওরা বাংলাদেশ সম্পর্কে যে জানে না, তা নয়। বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান সম্পর্কে ওদের গবেষকদের ধারণা কম, কিন্তু জানে। বললাম, বাংলাদেশে কোনো ধর্মীয় মৌলবাদ নেই। হেফাজতে ইসলামকে কোনো ধর্মীয় উগ্র সংগঠন হিসেবে গণ্য করা ঠিক হবে না। তবে এটা ঠিক, আফগানিস্তানকে ওরা যেভাবে দেখে, সেভাবে বাংলাদেশকে দেখে না। বাংলাদেশকে ওরা একটি মডারেট মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে চিন্তা করে, যেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে! এই মার্কিন মুল্লুকে এসে দেখলাম আমাদের কেউ কেউ দেশেই বাংলাদেশকে পরিচিতি করাতে চান একটি ‘উগ্র ধর্মীয় রাষ্ট্র’ হিসেবে! যদিও এতে সরকার কিংবা বিরোধী দলেরও কোনো ভূমিকা নেই। যারা এ ধরনের কথা বলছেন, তারা সমাজের নামিদামি ব্যক্তি। অনেকেরই মনে থাকার কথা, মাত্র সপ্তাহ দু-এক আগে একজন শীর্ষস্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, বাংলাদেশে আল-কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে (?)। তার এ মন্তব্যটি একটি অনলাইন পত্রিকায় ছাপাও হয়েছিল। যতদূর মনে পড়ে, তিনি হেফাজতে ইসলামের ভেতরে আল-কায়দার এলিমেন্ট রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেটমেন্ট। আমি জানি না সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ স্টেটমেন্টকে কীভাবে নিয়েছে। এর পেছনে যদি কোনো সত্যতা থেকে থাকে, তাহলে তা আমাদের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। তবে মনে রাখতে হবে, এ ধরনের কোনো মন্তব্য মার্কিন কর্মকর্তাদের আশংকাকে উসকে দিতে পারে। তারা ‘গন্ধ’ খুঁজতে পারেন। এতে করে বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়তে পারেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী বাংলাদেশীরা। এর আগে দু’দুটো ঘটনায় দু’জন বাংলাদেশী এখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তথ্য অধিকার আইন বলে সব মুসলমানের তথ্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। সুতরাং আল-কায়দার সঙ্গে আদৌ কোনো বাংলাদেশী সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আল-কায়দার তৎপরতা সাম্প্রতিক সময়ে আরব বিশ্বে বেড়েছে। লিবিয়াতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হত্যা করেছিল আল-কায়দার সদস্যরা। বাগদাদে সাম্প্রতিক বোমাবাজির সঙ্গে আল-কায়দা জড়িত। তিউনিসিয়ায় সম্প্রতি ৯ জন সৈন্য জঙ্গিদের হাতে মারা গেছে। সিরিয়ায় সন্ত্রাসী সংগঠন ‘জাবহাত আল নুসরা’র তৎপরতা বেড়েছে। সিরিয়া ও ইরাক সীমান্তে আল-কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক’ শক্ত আস্তানা গেড়েছে- এ সংবাদ পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। সুতরাং আল-কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের তৎপরতা বেড়েছে। আমাদের আতংকের কারণ সেখানেই। বাংলাদেশ একটি মডারেট মুসলিম দেশ। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের উচিত এ ইমেজকে বহির্বিশ্বে প্রচার করা।
চার
একটা প্রশ্ন এখানে আমাকে অনেকেই করেছেন- জামায়াতে ইসলামীর ভবিষ্যৎ এখন কী? উচ্চ আদালতের দ্বিধাবিভক্ত রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এর অর্থ কি জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হচ্ছে? আদালতের এই রায়ের ফলে জামায়াতকে ঘিরে যে হাজারটা প্রশ্ন উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক। বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার (ভোয়া) বাংলা বিভাগ একটি দীর্ঘ সংলাপের আয়োজন করেছিল গেল সপ্তাহে। ওই টেলিকনফারেন্সে ঢাকা থেকে অংশ নিয়েছিলেন সুলতানা কামাল, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় থেকে ড. আলী রিয়াজ, আর নিউইয়র্ক থেকে আমি। সঞ্চালন করেছিলেন ভোয়ার আনিছ আহমেদ। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী ওই টেলিকনফারেন্সে যারা ঢাকা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের সবার জিজ্ঞাসা ছিল, জামায়াত কি শেষ পর্যন্ত তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবে? এমন প্রশ্নও কেউ কেউ করেছেন, এটা সরকারের এক ধরনের কৌশল কি-না?
হাইকোর্টের রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। সেটা ঠিকও নয়। রায়টি সর্বসম্মতিক্রমে হয়নি, এটাও বিবেচনায় নিতে হবে। দু’জন বিচারপতি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। একজন তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নিয়মমাফিক এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হবে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে। জামায়াত আপিল করেছেও। কিন্তু অতঃপর? আপিল বিভাগ কি হাইকোর্টের দ্বিধাবিভক্ত রায় বহাল রাখবেন? আর চার-পাঁচ মাস পর দেশে নির্বাচন হতে হবে। সুতরাং এ ধরনের একটি রায়ের গুরুত্ব যে অনেক বেশি, তা তো দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তবে কতগুলো বাস্তবতাকে আমরা অস্বীকার করতে পারব না। এক, জামায়াতের একটা ‘ভোট ব্যাংক’ আছে, হোক না তা ৪ থেকে ৫ ভাগ। এই ভোট ব্যাংকের ব্যাপারে বিএনপির যেমনি আগ্রহ রয়েছে, ঠিক তেমনি আগ্রহ রয়েছে আওয়ামী লীগেরও। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ড. গওহর রিজভীর ‘গোপন সংলাপ’ এর বড় প্রমাণ। দুই, জামায়াতের তরুণ প্রজন্মকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। এরা আধুনিক মনস্ক ও আধুনিক ইসলামিক ধ্যান-ধারণার অধিকারী। তিন, জামায়াত একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের বাংলাদেশী শাখা। রাজনীতিগতভাবে এরা মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের বাংলাদেশী সংস্করণ। দলটি নিষিদ্ধ হলে আন্তর্জাতিকভাবে একটা প্রতিক্রিয়া হবে। চার, সংবিধান ও আইনগতভাবে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ অনুসরণ করে সরকার নির্বাহী আদেশে দলটি নিষিদ্ধ ঘোঘণা করতে পারে। পাঁচ, দলটি নিষিদ্ধ হলেও দলটি অন্য নামে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অথবা বিএনপির ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। সরকার পরিবর্তন হলে পুরনো নামে তাদের আত্মপ্রকাশ হবে সময়ের ব্যাপার। দল নিষিদ্ধের ব্যাপারটি তাই কোনো সমাধান নয়। ছয়, অতীতেও জামায়াত নিষিদ্ধ হয়েছিল। আবার স্বনামে ফিরে এসেছে। অন্যান্য দেশের ইতিহাস বলে, কোনো দল নিষিদ্ধ হলেও তাদের নেতা-কর্মীরা নতুন নামে ফিরে এসেছে। সাত, এটা তো অস্বীকার করা যাবে না যে ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮- প্রতিটি সংসদীয় নির্বাচনে জামায়াত অংশ নিয়েছে। ১৯৭৯ সালে তারা ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল। আর ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, যে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। আট, যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টি ভিন্ন। যারা অপরাধ করেছে, তাদের সবারই শাস্তি হোক- এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই।
এখন দশম নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরনের একটি রায়, রায়ের আগে ‘গওহর-রাজ্জাক গোপন সংলাপ’ কিংবা ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ-জামায়াত যৌথ আন্দোলন ইত্যাদি নানা ইস্যু চলমান রাজনীতিতে যে প্রভাব ফেলবে, তা স্পষ্ট। জামায়াত যদি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে, তাহলে তারা সাধারণ মানুষের সমর্থন পাবে। আর যদি সহিংস প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে, সমর্থন তারা হারাবে। আদালতের এ রায় আরও একবার প্রমাণ করল, আমরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে আদালতের মাধ্যমে সমাধান করতে চাচ্ছি। এ প্রবণতা ভালো নয়। আদালতকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জড়ানো ভালো নয়। তাই জামায়াতকে নিয়ে অনেক প্রশ্নের জবাবই আমার জানা নেই।
পাঁচ
দিন যতই যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা ততই বাড়ছে। ফারহিনের মতো শত শত বাংলাদেশী দেশে আসতে চান। তাদের দেশে আসা অনিশ্চিত হবে যদি একটা ‘সমঝোতা’ না হয়। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন হবে- এ ব্যাপারেও আমি আস্থা রাখতে পারছি না। বাংলাদেশকে নিয়ে তাই সংশয় থেকেই গেল।
নিউইয়র্ক, ৩ আগস্ট ২০১৩
ড. তারেক শামসুর রেহমান : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
দৈনিক যুগান্তর,  ৬ আগস্ট ২০১৩।

0 comments:

Post a Comment