রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বিদ্যুৎ সংকট ও অপ্রচলিত নিরাপত্তা

এখন চৈত্র মাস, এপ্রিল সবে শুরু। এরই মধ্যে রাজধানীতে বিদ্যুৎ সংকট জনজীবনকে একটি অস্থিরতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এক ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ চলে যাওয়া যখন একরকম 'সহনীয়' হয়ে উঠেছিল, তখন আমাদের জানানো হলো 'লোডশেডিং' হবে দুই ঘণ্টা করে। বিদ্যুৎ যাঁরা বিতরণ করেন, তাঁদের কাছে এটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কেননা, বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না গ্যাসের অভাবে। গ্যাস নেই। বলা যেতে পারে গ্যাসের যে রিজার্ভ তা ধীরে ধীরে কমে আসছে। ফলে সংগত কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এপ্রিলেই পরিস্থিতি যখন এ রকম, তখন ভরা গ্রীষ্মে অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে, তা চিন্তা করতে পারি না। এই বিদ্যুৎ সংকটের সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত।
একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পৃক্ত। বিদ্যুৎ না থাকলে পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে। কৃষি জমিতে যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা না যায়, তাহলে সেচকাজে বিঘ্ন ঘটবে, উৎপাদন হ্রাস পাবে। সৃষ্টি হবে খাদ্য ঘাটতির। বিদ্যুৎ না থাকলে শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হবে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পে উৎপাদন হ্রাস ও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটা ক্রেতাদের ভুল 'সিগন্যাল' পেঁৗছে দিতে পারে। তাদের প্রয়োজন নির্ধারিত সময়ে তৈরি পোশাকের সরবরাহ। বিদ্যুৎ না থাকলে উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে। এ সব কিছুই পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করার জন্য যথেষ্ট। আমরা এ ধরনের সংকটকে বলছি অপ্রচলিত নিরাপত্তা। শুধু শত্রু-দেশ কর্তৃক আক্রমণ করার মধ্য দিয়েই একটি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে না। দেশের নিরাপত্তা বিঘি্নত হতে পারে জ্বালানি, পানি, জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা খাদ্য সংকটের কারণে। নিঃসন্দেহে এর মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

বিদ্যুতের যে সংকট হতে পারে, সে ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা কী? বিদ্যুৎ উপদেষ্টা আমাদের সরাসরি জানিয়ে দিলেন, তিন মাস লোডশেডিং সহ্য করতে হবে (আমার দেশ, ১৫ মার্চ)। গ্রামে ইরিগেশন শুরু হয়েছে। সেখানে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। বিদ্যুৎ উপদেষ্টার এই যুক্তির সঙ্গে কেউ দ্বিমত করবেন না। কিন্তু জুনে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে কিভাবে। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা রাজনীতিবিদ নন। কিন্তু তিনি কথা বলেছেন, রাজনীতিবিদদের মতো। বলেছেন, সাশ্রয়ী করে বিতরণ করা হবে। স্কুল-কলেজে সোলার প্যানেল বসানো হবে। বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব আশ্বাসের কথা। রাজনীতিবিদরা এভাবেই আশ্বাস দেন। আমরা তো আশ্বাসে খুশি নই। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়া দিয়ে কী হয়, তা তো আমরা জানি। আইলা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হেনেছিল ১১ মাস আগে। ওই ১১ মাসেও বাড়ি ফিরতে পারেনি আইলাবিধ্বস্ত শ্যামনগর ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। তাঁরা ত্রাণ চান না। চান বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ হোক। লবণ পানির প্রবেশ বন্ধ হোক। টাকাও বরাদ্দ হয়েছে। তাও বাঁধ নির্মিত হয়নি। কেন নির্মিত হয়নি, এ কথাও আমরা জানি। তাই উপদেষ্টা যখন বলেন, যখন আশ্বাস দেন_ তিন মাস পর সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি জানি ঠিক হবে না। হতে পারে না। এটা অঙ্কের হিসাব। বিদ্যুৎ উৎপাদন যদি বাড়ানো না যায়, তাহলে লোডশেডিং বন্ধ করা যাবে না। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা সাবেক সিএসপি, ডাকসাইটে আমলা। তিনি প্রকৌশলী নন। তবে আমার বিশ্বাস বিদ্যুৎ সংকট এবং এ সংক্রান্ত তথ্যাবলি তার হাতে আছে।

আমাদের এই মুহূর্তে চাহিদা পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে চার হাজার মেগাওয়াট। ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও প্রয়োজনের সময় তা পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে রেন্টাল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ৫৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটি কেন্দ্রের মধ্যে চারটি চলতি সেচ মৌসুমের মধ্যে এবং বাকি চারটি গ্রীষ্মের মধ্যে উৎপাদনে আনার কথা ছিল। এ ছাড়া আরো ৮৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করতে ১০টি পিকিং প্লান্ট বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে পিডিবি। এ ছাড়া ১৫০ মেগাওয়াট করে উৎপাদন ক্ষমতার চাঁদপুর কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পের ব্যাপারে গত মাসে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও এগুলোর সময়মতো বাস্তবায়ন নিয়েও সংশয় রয়েছে (যায়যায়দিন, ২৩ মার্চ)। তাই বিদ্যুৎ সংকট থেকে আমরা সহসা মুক্ত হচ্ছি বলে মনে হয় না। ভারত থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার একটা আশ্বাসের বাণী আমরা শুনে আসছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কাজ খুব এগিয়েছে বলে মনে হয় না। এর মধ্যে 'রাজনীতি' আছে। এবং সেই 'রাজনীতির' চক্রে আমরা আটকে যেতে পারি। আসলে যা প্রয়োজন, তা হচ্ছে নিজস্ব উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো। গ্যাস এত দিন আমাদের জন্য একটা সম্ভাবনার সৃষ্টি করলেও, এখন আমাদের গ্যাসের বিকল্প খুঁজতে হবে। সেই বিকল্প আমাদের আছে।
আমাদের গ্যাসের বিকল্প কয়লা। আমি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পক্ষে, জাতীয় কমিটি এর বিপক্ষে। এটা হতেই পারে। আমার যুক্তি

নিম্নরূপ_

১. উন্মুক্ত পদ্ধতিতে তুললে তোলা যাবে ৯০ ভাগ, আর ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে তুললে তোলা যাবে ১০ ভাগ (কারো কারো মতে ২০ ভাগ)। বড় পুকুরিয়ায় আমরা ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে তুলছি। এখন ফুলবাড়ী, জামালগঞ্জ, দিঘীপাড়া ও খালাসপীরে যে কয়লা মজুদ রয়েছে, তার ১০ ভাগ যদি উত্তোলন করি, তাহলে ২৫০ কোটি মেট্রিক টনের প্রায় পুরোটাই তো মাটির নিচে রয়ে গেল। প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে তো আমরা লাভবান হলাম না।

২. উন্মুক্ত পদ্ধতি উত্তোলন করলে কিছু লোক ভিটেবাড়ি হারাবে, উদ্বাস্তু হবে, এটা সত্য। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের যদি পুনর্বাসন করা যায়, যদি তাদের জন্য বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন সৃষ্টি করা যায়, সেটা কি নেহাত খারাপ?

৩. উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ব্যবহার উপযোগী কিছু সহসম্পদ (চীনামাটি, কাচ, বালি, নুড়িপাথর) পাওয়া যায়। তাতে তো আমাদের লাভ;

৪. ফুলবাড়ীর কয়লা দিয়ে ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার কথা। প্রথম পর্যায়ে ৫০০ মেগাওয়াট ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০০ মেগাওয়াট। ৫০০ মেগাওয়াটের জন্য প্রয়োজন ১.৫ মিলিয়ন টন কয়লা (বছরে), যা কিনা ফুলবাড়ীতে উৎপাদিত কয়লার এক-দশমাংশ;

৫. ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প চালু করা সম্ভব হলে প্রতিবছর জিডিপিতে প্রায় এক-শতাংশ সংযোজন হতে পারে। প্রকল্প মেয়াদকালে জিডিপিতে অবদান রাখবে প্রায় ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার;

৬. দেশে আবিষ্কৃত পাঁচটি কয়লা খনিতে যে কয়লা রয়েছে, তা ৭৩ টিসিএফ গ্যাসের সমতুল্য, যা কিনা আমাদের ৩০ থেকে ৪০ বছরের জ্বালানি নিরাপত্তা দেবে। যদিও সবটা হয়তো তোলা যাবে না। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে রিজার্ভের অনেকটাই তোলা সম্ভব;

৭. ভারতে উৎপাদিত কয়লার শতকরা ৮১ ভাগ আসে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে;

৮. বড়পুকুরিয়ায় ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে মাত্র ১০ ভাগ কয়লা তোলাও সম্ভব হবে না।

আমি কোনো বহুজাতিক কোম্পানির পক্ষে কথা বলছি না। বলছি বাস্তবতা ও তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে। বিশ্বের ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় কয়লা থেকে। বর্তমানে বিশ্বের কয়েকটি কেন্দ্রে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ হচ্ছে_অস্ট্রেলিয়া ৭৯ শতাংশ, চীন ৭৮, জার্মানি ৪৯, ভারত ৬৯, দক্ষিণ আফ্রিকা ৯২, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৫০ ও বাংলাদেশে ৫ শতাংশ। সুতরাং সেখানে আমরা বড় ধরনের 'এনার্জি ট্র্যাপ' বা 'জ্বালানি ফাঁদ'-এ পড়তে যাচ্ছি। সেখানে কয়লা ছাড়া কোনো বিকল্প আপাতত নেই এবং তা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হলে আমরা আমাদের সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারব। এখানে সমস্যা হচ্ছে আমাদের জ্বালানিনীতি এখনো প্রণীত হয়নি। অধ্যাপক মোমিন পাটোয়ারী কমিটি ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে যে রিপোর্ট দিয়েছিল, তাতে রপ্তানির সুযোগ না পেয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের কথা বলেছিল। এখানে ২৫ বছরের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রয়েলটির পরিমাণ বাড়িয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ করা ও খনির মালিকানা ১০০ শতাংশ রাষ্ট্রের কাছে রেখে জ্বালানিনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করা যায়।

উল্লেখ্য, ভারতীয় (ড. অজয় কুমার ঘোষ) ও বাংলাদেশি ভূতত্ত্ববিদরা (ড. ইউনুস আকন) উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা আহরণের কথাই বলেছেন। অবশ্যই আমরা সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি কিংবা পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার বাড়াব। কিন্তু জ্বালানির যে বিপুল চাহিদা, তাতে এই তিন শক্তি খুব একটা অবদান রাখতে পারবে না। কিছুদিন আগে জনৈক জন গ্রের একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম (গার্ডিয়ান, মার্চ-২০০৮, অ্যাপোকবিলিয়াটিক রিলিজিয়ন অ্যান্ড দ্য ডেথ অব ইউটোপিয়া)। গ্রে বলেছিলেন, একুশ শতকে যুদ্ধ হবে জ্বালানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তেল ও গ্যাস যাদের নিয়ন্ত্রণে, তারাই পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করবে। আমি তাই বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। বিদ্যুৎ না দিতে পারলে জন-অসন্তোষ বাড়বে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে ইতিমধ্যে নতুন শিল্প স্থাপন বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে চাহিদা ২৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে প্রতিদিন ১৯০ থেকে ১৯৫ কোটি ঘনফুট (সমকাল ২৬ সেপ্টেম্বর, '০৯) গ্যাস। এই চাহিদা আমরা পূরণ করব কিভাবে? তাহলে কি নতুন শিল্পকারখানা স্থাপিত হবে না? আমরা কি নির্ভরশীল থাকব পার্শ্ববর্তী কোনো দেশের ওপর? এর সমাধানটাই বা হবে কিভাবে। জ্বালানি সংকট আমরা কিভাবে মেটাব? এ বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলের বক্তব্য থাকলে আমি খুশি হতাম।

কিন্তু তাদের কোনো বক্তব্য নেই। এমনকি সরকার 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এর কথা বলছে বটে, কিন্তু বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হবে না। চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ ঘাটতি 'শূন্যের' কোটায় নামিয়ে আনার যে ঘোষণা একসময় বিদ্যুৎ উপদেষ্টা দিয়েছিলেন, তা কাগজে-কলমেই থেকে গেছে। ঘাটতি কমাতে দুই কোটি ৬০ লাখ 'এনার্জি সেভিং বাল্ব' সরবরাহ, ঢাকায় সাতটি জোনে ভাগ করে ছুটির দিন নির্দিষ্ট করে দিয়ে বিদ্যুৎ বাঁচানো, রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ রাখা, বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করা, ভারত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করা, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা (৪.৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে) ইত্যাদি গ্রহণ করা হলেও তা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে কতটুকু সাহায্য করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকেও বাংলাদেশ ৯০০ কোটি ডলারের সহায়তা চেয়েছিল। কিন্তু এই অর্থের প্রতিশ্রুতি আমরা পাইনি। সুতরাং বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা একটা উদ্বেগের মধ্যে থেকে গেলাম। এখন গ্যাসের রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই গভীর সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলন এবং কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারে আমরা যদি দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত না নিই, তাহলে চলতি গ্রীষ্মেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। এবং আগামীতে প্রধানমন্ত্রী যে সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করা যাবে না। রাজনীতির ময়দানেও এই বিদ্যুৎ ঘাটতি অন্যতম একটি ইস্যু হয়ে দেখা দিতে পারে। সুতরাং সিদ্ধান্তটি দিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। শুধু কথার ফুলকি ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করা যাবে না।
মানুষ নির্বাচিত একটি সরকারের কাছ থেকে বারবার আশ্বাসের বাণী শুনতে চায় না। বিদ্যুৎপ্রাপ্তি তাদের একটা অধিকার। এই অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। এ জন্য বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা চারদলীয় জোট সরকারকে দায়ী করে পার পাওয়া যাবে না। তাদের ব্যর্থতাই মহাজোট সরকারকে ক্ষমতায় এনেছে। মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রেখেছে। মাত্র ১৪ মাসের মধ্যে এই আস্থা ফিকে হয়ে আসবে_ এটা প্রত্যাশিত নয়, তাই জরুরি ভিত্তিতে সরকার বিদ্যুৎ খাতের দিকে নজর দেবে_এটাই মানুষ চায়।

লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
[সূত্রঃ কালের কণ্ঠ, ০৪/০৪/১০]

0 comments:

Post a Comment