যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিতে তাই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে সমর্থন করা হচ্ছে। মিসর ও তিউনিসিয়ায় এই স্ট্র্যাটেজি সফল হয়েছে। তিউনিসিয়ায় পর্দার অন্তরালে সেনাবাহিনীই ক্ষমতা পরিচালনা করছে। আর মিসরে তারা সরাসরি ক্ষমতায়। লিবিয়ায়ও তেমনটি হতে যাচ্ছে। তিউনিসিয়া কিংবা মিসরে বিপ্লবীরা 'বিপ্লব'কে সম্পন্ন করলেও ক্ষমতার স্বাদ তারা পাননি। আর লিবিয়ায় পাবেন, সেটা মনে করারও কোনো কারণ নেই
আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ডমিনো তত্ত্ব বা উড়সরহড় বভভবপঃ বলে একটা কথা আছে। যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চাশের দশকে প্রথমবারের মতো এই তত্ত্বের কথা প্রচার করেছিল। পঞ্চাশের দশকে ইন্দোচীনে যখন সমাজতন্ত্রীরা একের পর এক রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন হচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র এই 'ডমিনো তত্ত্ব'র কথা প্রচার করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, সমাজতন্ত্রীদের ঠেকাতে সামরিক হস্তক্ষেপ। ডমিনো তত্ত্বে বলা হয়েছে, কোনো একটি রাষ্ট্রে যদি সমাজতন্ত্রীরা ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে পাশের রাষ্ট্রটিও সমাজতন্ত্রীদের দখলে চলে যাবে। অনেকগুলো তাস যদি দাঁড় করিয়ে রাখা যায়, একটিকে টোকা দিয়ে ফেলে দিলে এক এক করে পাশের তাসগুলোও পড়ে যাবে। এটাই হচ্ছে ডমিনো তত্ত্বের মূল কথা_ একটি রাষ্ট্র যদি সমাজতন্ত্রীদের দখলে চলে যায়, তাহলে পাশের রাষ্ট্রটিও এর প্রভাবে প্রভাবিত হবে এবং একসময় ওই রাষ্ট্রটিতেও সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪তম প্রেসিডেন্ট ডেভিড আইজেন হাওয়ার (রিপাবলিকান, ১৯৫৩-১৯৬১) ১৯৫৪ সালের ৭ জুলাই বলেছিলেন, ঋরহধষষু ুড়ঁ যধাব নৎড়ধফবৎ পড়হংরফবৎধঃরড়হ ঃযধঃ সরমযঃ ভড়ষষড় িযিধঃ ুড়ঁ ড়িঁষফ পধষষ ঃযব ্তুভধষষরহম ফড়সরহড়্থ চৎরহপরঢ়ষব. ণড়ঁ যধাব ধ ৎড় িড়ভ ফড়সরহড়বং ংবঃ ঁঢ়, ুড়ঁ শহড়পশ ড়াবৎ ঃযব ভরৎংঃ ড়হব, ধহফ যিধঃ রিষষ যধঢ়ঢ়বহ ঃড় ঃযব ষধংঃ ড়হব রং ঃযব পবৎঃধরহঃু ঃযধঃ রঃ রিষষ মড় ড়াবৎ াবৎু য়ঁরপশষু. ঝড় ুড়ঁ পড়ঁষফ যধাব ধ নবমরহহরহম ড়ভ ধ ফরংরহঃবমৎধঃরড়হ ঃযধঃ ড়িঁষফ যধাব ঃযব সড়ংঃ ঢ়ৎড়ভড়ঁহফ রহভষঁবহপব. এর অর্থ পরিষ্কার, সমাজতন্ত্রের প্রসার ঠেকাও! স্নায়ুযুদ্ধের সময়ও যুক্তরাষ্ট্র এই ডমিনো তত্ত্ব ব্যবহার করেছিল। এর পরের ইতিহাস সবার জানা। আজ মধ্যপ্রাচ্য তথা সাগরের ভুক্ত দেশগুলোর সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান দেখে সেই ডমিনো তত্ত্বের কথাই মনে হয়ে গেল। জানুয়ারিতে বেকার এক কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট মোহাম্মদ বওকুজিজির আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে তিউনিসিয়ায় যে গণঅসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে, তা ছড়িয়ে গেছে সমগ্র আরব বিশ্বে, আলজেরিয়া থেকে শুরু করে বাহরাইন পর্যন্ত। ইতিমধ্যে তিউনিসিয়ার বেন আলির মতো পতন ঘটেছে হোসনি মোবারকের। আর লিবিয়ায় কর্নেল গাদ্দাফির পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ডমিনো তত্ত্বের মতোই পতন ঘটছে তিউনিসিয়া ও মিসরের দীর্ঘদিনের একনায়কতন্ত্রী শাসকদের, যারা ক্ষমতায় ছিলেন দীর্ঘ ২৩ ও ৩০ বছর ধরে। আর গাদ্দাফির ৪১ বছরের শাসন এখন 'তাসের ঘর'-এর মতোই ভেঙে পড়েছে। লিবিয়া কার্যত এখন দু'ভাগ হয়ে গেছে। পূর্বাঞ্চলে বিপ্লবীরা তাদের নিজস্ব প্রশাসন চালু করেছে। ডমিনো তত্ত্বের মতে, পরের দেশ কোনটি_ ইয়েমেন, আলজেরিয়া নাকি বাহরাইন? প্রতিটি দেশেই গণবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকার নানা সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করলেও (আলজেরিয়ায় ১৯৯২ সাল থেকে চালু হওয়া জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে। ইয়েমেনে প্রেসিডেন্ট সালেহ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। বাহরাইনে বিরোধী দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে) এ অঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত, তা বলা যাবে না। গণঅসন্তোষের ঢেউ এসে লেগেছে সৌদি আরবেও।
আমরা যদি ডমিনো তত্ত্ব অনুসরণ করি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন এখানে অনিবার্য। যেমনটি আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম ইন্দোচীনে কিংবা লাতিন আমেরিকায়। চিলি, নিকারাগুয়া, গ্রানাডা, এল সালভাদর কিংবা গুয়েতেমালার ইতিহাস আমাদের অনেকেরই জানা। তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র এখানে সামরিক হস্তক্ষেপ করবে? সামরিক হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত করার জন্যই কি দেশে দেশে গণঅভ্যুত্থানের 'সৃষ্টি' করা হচ্ছে? আমরা যেন ভুলে না যাই পারস্য উপসাগরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের 'স্ট্রাইক ফোর্স'। বাহরাইনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পঞ্চম ফ্লিটের ঘাঁটি। মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্বের যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ অনেক বেশি। যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন, তারা জানেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেশ কিছুদিন ধরে এৎবধঃবৎ গরফফষব ঊধংঃ চড়ষরপু নিয়ে কাজ করছে। আজকে মিসরে 'ফেসবুক' ও 'টুইটার'ভিত্তিক যে বিপ্লবের জন্ম (জবাড়ষঁঃরড়হ ২.০) তা প্রমোট করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। যারা ইন্টারনেটভিত্তিক এই গণবিক্ষোভকে সংগঠিত করেছিল, তাদের অনেকেই ওয়াশিংটনে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কধভধুধ গড়াবসবহঃ কিংবা অঢ়ৎরষ ৬ গড়াবসবহঃ-কে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটাই_ মিসরে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করা, যাদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। এলবারাদির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওয়াশিংটনের সমর্থন ছিল। এখন লিবিয়ার ব্যাপারেও দীর্ঘস্থায়ী যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি কাজ করছে। প্রথমত, লিবিয়ায় যদি দীর্ঘদিন অস্থিতিশীলতা বজায় থাকে তাহলে তা পার্শ্ববর্তী নাইজার, আলজেরিয়া ও সুদানেও ছড়িয়ে যাবে। ফলে ব্যাপক অঞ্চলজুড়ে সৃষ্টি হবে অস্থিতিশীলতার। আর এই অস্থিতিশীলতা বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। এমনই এক পরিস্থিতিতে অনেকটা 'ইরাকি মডেলে' যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ পাবে। এমনকি ন্যাটোর সৈন্য মোতায়েনের প্রশ্নও তখন উঠবে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ লিবিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, লিবিয়ার তেলসম্পদের ওপর (লিবিয়া ১২তম তেল রফতানিকারক দেশ) পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আগ্রহ ব্যাপক। তিনটি দেশ লিবিয়ার তেলের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল (ইতালির ২৯ ভাগ, ফ্রান্সের ১৪ ভাগ, স্পেনের ১০ ভাগ)। তারা চাইবে তেলের ওপর তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখা। প্রয়োজনে পশ্চিমা শক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়াকে ভাগ করতেও দ্বিধা করবে না। লিবিয়া কার্যত এখন দু'ভাগে বিভক্ত। পূর্বাঞ্চলে গাদ্দাফিবিরোধী শক্তি ক্ষমতা দখল করেছে। আর পশ্চিমাঞ্চল (ত্রিপোলিসহ) নিয়ন্ত্রণ করছে গাদ্দাফির সমর্থকরা। পূর্বাঞ্চলেও তেলকূপ রয়েছে, যেখানে কাজ করছে ঊঘও (ইতালি), ঞঙঞঅখ (ফ্রান্স) ও জঊচঝঙ (স্পেন)-এর মতো বহুজাতিক সংস্থাগুলো। তৃতীয়ত, লিবিয়ায় সংকট যদি অব্যাহত থাকে (অথবা অব্যাহত রাখা হয়), তাহলে অবধারিতভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে (তেলের দাম বেড়ে এখন ব্যারেলপ্রতি ১১৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে)। ফলে বিশ্বে তেল সংকটের সৃষ্টি হবে। এ সুযোগে গ্রিনল্যান্ডের পাশ ঘেঁষে আর্কটিক সাগরে (অৎপঃরপ ঝবধ) তেল উত্তোলনের একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। বহুজাতিক সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে এটা চেয়ে আসছে। কিন্তু পরিবেশবাদীদের বাধার কারণে আর্কটিক সাগরে তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলন শুরু হয়নি। অথচ এখানে তেলের বিপুল ভাণ্ডার রয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের একজন গবেষক উধারফ খলঁহমমৎবহ-এর উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এ ধরনের একটি সংবাদই প্রকাশ করে। চতুর্থত, লিবিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ শুধু আজকেই তৈরি হয়নি। কয়েক বছর আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ওয়েসলি ক্লার্ক সাতটি দেশের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যেখানে পাঁচ বছরের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানো হবে। ওই সাতটি দেশ হচ্ছে_ ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইরান। ইরাকে পরিবর্তন এসেছে অনেক আগেই। এখন লিবিয়ার পালা। আর ইরানের পরিস্থিতিও লক্ষ্য রাখার মতো। ২০০৯ সাল থেকেই সেখানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সোমালিয়া ও সুদানে পরিবর্তন সময়ের ব্যাপার। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, বড় ধরনের একটি পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা হয়েছে। লিবিয়া সেই পরিবর্তনেরই একটা অংশ। একটি মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে লিবিয়া। ইতিমধ্যে এক হাজারের ওপরে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শেষ দিন পর্যন্ত গাদ্দাফি ত্রিপোলি ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। তবে স্পষ্টতই, তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। তিনি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছেন। আজ না হোক কাল তাকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প হচ্ছে সেনা নেতৃত্ব, যার ওপর প্রভাব খাটানো সহজ। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিতে তাই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে সমর্থন করা হচ্ছে। মিসর ও তিউনিসিয়ায় এই স্ট্র্যাটেজি সফল হয়েছে। তিউনিসিয়ায় পর্দার অন্তরালে সেনাবাহিনীই ক্ষমতা পরিচালনা করছে। আর মিসরে তারা সরাসরি ক্ষমতায়। লিবিয়ায়ও তেমনটি হতে যাচ্ছে। তিউনিসিয়া কিংবা মিসরে বিপ্লবীরা 'বিপ্লব'কে সম্পন্ন করলেও ক্ষমতার স্বাদ তারা পাননি। আর লিবিয়ায় পাবেন, সেটা মনে করারও কোনো কারণ নেই।
ড. তারেক শামসুর রেহমান : অধ্যাপক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ডমিনো তত্ত্ব বা উড়সরহড় বভভবপঃ বলে একটা কথা আছে। যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চাশের দশকে প্রথমবারের মতো এই তত্ত্বের কথা প্রচার করেছিল। পঞ্চাশের দশকে ইন্দোচীনে যখন সমাজতন্ত্রীরা একের পর এক রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন হচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র এই 'ডমিনো তত্ত্ব'র কথা প্রচার করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, সমাজতন্ত্রীদের ঠেকাতে সামরিক হস্তক্ষেপ। ডমিনো তত্ত্বে বলা হয়েছে, কোনো একটি রাষ্ট্রে যদি সমাজতন্ত্রীরা ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে পাশের রাষ্ট্রটিও সমাজতন্ত্রীদের দখলে চলে যাবে। অনেকগুলো তাস যদি দাঁড় করিয়ে রাখা যায়, একটিকে টোকা দিয়ে ফেলে দিলে এক এক করে পাশের তাসগুলোও পড়ে যাবে। এটাই হচ্ছে ডমিনো তত্ত্বের মূল কথা_ একটি রাষ্ট্র যদি সমাজতন্ত্রীদের দখলে চলে যায়, তাহলে পাশের রাষ্ট্রটিও এর প্রভাবে প্রভাবিত হবে এবং একসময় ওই রাষ্ট্রটিতেও সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪তম প্রেসিডেন্ট ডেভিড আইজেন হাওয়ার (রিপাবলিকান, ১৯৫৩-১৯৬১) ১৯৫৪ সালের ৭ জুলাই বলেছিলেন, ঋরহধষষু ুড়ঁ যধাব নৎড়ধফবৎ পড়হংরফবৎধঃরড়হ ঃযধঃ সরমযঃ ভড়ষষড় িযিধঃ ুড়ঁ ড়িঁষফ পধষষ ঃযব ্তুভধষষরহম ফড়সরহড়্থ চৎরহপরঢ়ষব. ণড়ঁ যধাব ধ ৎড় িড়ভ ফড়সরহড়বং ংবঃ ঁঢ়, ুড়ঁ শহড়পশ ড়াবৎ ঃযব ভরৎংঃ ড়হব, ধহফ যিধঃ রিষষ যধঢ়ঢ়বহ ঃড় ঃযব ষধংঃ ড়হব রং ঃযব পবৎঃধরহঃু ঃযধঃ রঃ রিষষ মড় ড়াবৎ াবৎু য়ঁরপশষু. ঝড় ুড়ঁ পড়ঁষফ যধাব ধ নবমরহহরহম ড়ভ ধ ফরংরহঃবমৎধঃরড়হ ঃযধঃ ড়িঁষফ যধাব ঃযব সড়ংঃ ঢ়ৎড়ভড়ঁহফ রহভষঁবহপব. এর অর্থ পরিষ্কার, সমাজতন্ত্রের প্রসার ঠেকাও! স্নায়ুযুদ্ধের সময়ও যুক্তরাষ্ট্র এই ডমিনো তত্ত্ব ব্যবহার করেছিল। এর পরের ইতিহাস সবার জানা। আজ মধ্যপ্রাচ্য তথা সাগরের ভুক্ত দেশগুলোর সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান দেখে সেই ডমিনো তত্ত্বের কথাই মনে হয়ে গেল। জানুয়ারিতে বেকার এক কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট মোহাম্মদ বওকুজিজির আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে তিউনিসিয়ায় যে গণঅসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে, তা ছড়িয়ে গেছে সমগ্র আরব বিশ্বে, আলজেরিয়া থেকে শুরু করে বাহরাইন পর্যন্ত। ইতিমধ্যে তিউনিসিয়ার বেন আলির মতো পতন ঘটেছে হোসনি মোবারকের। আর লিবিয়ায় কর্নেল গাদ্দাফির পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ডমিনো তত্ত্বের মতোই পতন ঘটছে তিউনিসিয়া ও মিসরের দীর্ঘদিনের একনায়কতন্ত্রী শাসকদের, যারা ক্ষমতায় ছিলেন দীর্ঘ ২৩ ও ৩০ বছর ধরে। আর গাদ্দাফির ৪১ বছরের শাসন এখন 'তাসের ঘর'-এর মতোই ভেঙে পড়েছে। লিবিয়া কার্যত এখন দু'ভাগ হয়ে গেছে। পূর্বাঞ্চলে বিপ্লবীরা তাদের নিজস্ব প্রশাসন চালু করেছে। ডমিনো তত্ত্বের মতে, পরের দেশ কোনটি_ ইয়েমেন, আলজেরিয়া নাকি বাহরাইন? প্রতিটি দেশেই গণবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন সরকার নানা সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করলেও (আলজেরিয়ায় ১৯৯২ সাল থেকে চালু হওয়া জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে। ইয়েমেনে প্রেসিডেন্ট সালেহ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। বাহরাইনে বিরোধী দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে) এ অঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত, তা বলা যাবে না। গণঅসন্তোষের ঢেউ এসে লেগেছে সৌদি আরবেও।
আমরা যদি ডমিনো তত্ত্ব অনুসরণ করি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন এখানে অনিবার্য। যেমনটি আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম ইন্দোচীনে কিংবা লাতিন আমেরিকায়। চিলি, নিকারাগুয়া, গ্রানাডা, এল সালভাদর কিংবা গুয়েতেমালার ইতিহাস আমাদের অনেকেরই জানা। তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র এখানে সামরিক হস্তক্ষেপ করবে? সামরিক হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত করার জন্যই কি দেশে দেশে গণঅভ্যুত্থানের 'সৃষ্টি' করা হচ্ছে? আমরা যেন ভুলে না যাই পারস্য উপসাগরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের 'স্ট্রাইক ফোর্স'। বাহরাইনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর পঞ্চম ফ্লিটের ঘাঁটি। মধ্যপ্রাচ্যে বিশ্বের যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ অনেক বেশি। যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন, তারা জানেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেশ কিছুদিন ধরে এৎবধঃবৎ গরফফষব ঊধংঃ চড়ষরপু নিয়ে কাজ করছে। আজকে মিসরে 'ফেসবুক' ও 'টুইটার'ভিত্তিক যে বিপ্লবের জন্ম (জবাড়ষঁঃরড়হ ২.০) তা প্রমোট করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। যারা ইন্টারনেটভিত্তিক এই গণবিক্ষোভকে সংগঠিত করেছিল, তাদের অনেকেই ওয়াশিংটনে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কধভধুধ গড়াবসবহঃ কিংবা অঢ়ৎরষ ৬ গড়াবসবহঃ-কে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা দেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটাই_ মিসরে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি করা, যাদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। এলবারাদির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওয়াশিংটনের সমর্থন ছিল। এখন লিবিয়ার ব্যাপারেও দীর্ঘস্থায়ী যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি কাজ করছে। প্রথমত, লিবিয়ায় যদি দীর্ঘদিন অস্থিতিশীলতা বজায় থাকে তাহলে তা পার্শ্ববর্তী নাইজার, আলজেরিয়া ও সুদানেও ছড়িয়ে যাবে। ফলে ব্যাপক অঞ্চলজুড়ে সৃষ্টি হবে অস্থিতিশীলতার। আর এই অস্থিতিশীলতা বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। এমনই এক পরিস্থিতিতে অনেকটা 'ইরাকি মডেলে' যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ পাবে। এমনকি ন্যাটোর সৈন্য মোতায়েনের প্রশ্নও তখন উঠবে। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ লিবিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, লিবিয়ার তেলসম্পদের ওপর (লিবিয়া ১২তম তেল রফতানিকারক দেশ) পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর আগ্রহ ব্যাপক। তিনটি দেশ লিবিয়ার তেলের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল (ইতালির ২৯ ভাগ, ফ্রান্সের ১৪ ভাগ, স্পেনের ১০ ভাগ)। তারা চাইবে তেলের ওপর তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখা। প্রয়োজনে পশ্চিমা শক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়াকে ভাগ করতেও দ্বিধা করবে না। লিবিয়া কার্যত এখন দু'ভাগে বিভক্ত। পূর্বাঞ্চলে গাদ্দাফিবিরোধী শক্তি ক্ষমতা দখল করেছে। আর পশ্চিমাঞ্চল (ত্রিপোলিসহ) নিয়ন্ত্রণ করছে গাদ্দাফির সমর্থকরা। পূর্বাঞ্চলেও তেলকূপ রয়েছে, যেখানে কাজ করছে ঊঘও (ইতালি), ঞঙঞঅখ (ফ্রান্স) ও জঊচঝঙ (স্পেন)-এর মতো বহুজাতিক সংস্থাগুলো। তৃতীয়ত, লিবিয়ায় সংকট যদি অব্যাহত থাকে (অথবা অব্যাহত রাখা হয়), তাহলে অবধারিতভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে (তেলের দাম বেড়ে এখন ব্যারেলপ্রতি ১১৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে)। ফলে বিশ্বে তেল সংকটের সৃষ্টি হবে। এ সুযোগে গ্রিনল্যান্ডের পাশ ঘেঁষে আর্কটিক সাগরে (অৎপঃরপ ঝবধ) তেল উত্তোলনের একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে। বহুজাতিক সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে এটা চেয়ে আসছে। কিন্তু পরিবেশবাদীদের বাধার কারণে আর্কটিক সাগরে তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলন শুরু হয়নি। অথচ এখানে তেলের বিপুল ভাণ্ডার রয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের একজন গবেষক উধারফ খলঁহমমৎবহ-এর উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এ ধরনের একটি সংবাদই প্রকাশ করে। চতুর্থত, লিবিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ শুধু আজকেই তৈরি হয়নি। কয়েক বছর আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ওয়েসলি ক্লার্ক সাতটি দেশের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যেখানে পাঁচ বছরের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানো হবে। ওই সাতটি দেশ হচ্ছে_ ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইরান। ইরাকে পরিবর্তন এসেছে অনেক আগেই। এখন লিবিয়ার পালা। আর ইরানের পরিস্থিতিও লক্ষ্য রাখার মতো। ২০০৯ সাল থেকেই সেখানে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সোমালিয়া ও সুদানে পরিবর্তন সময়ের ব্যাপার। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, বড় ধরনের একটি পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা হয়েছে। লিবিয়া সেই পরিবর্তনেরই একটা অংশ। একটি মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে লিবিয়া। ইতিমধ্যে এক হাজারের ওপরে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শেষ দিন পর্যন্ত গাদ্দাফি ত্রিপোলি ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। তবে স্পষ্টতই, তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। তিনি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছেন। আজ না হোক কাল তাকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প হচ্ছে সেনা নেতৃত্ব, যার ওপর প্রভাব খাটানো সহজ। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিতে তাই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে সমর্থন করা হচ্ছে। মিসর ও তিউনিসিয়ায় এই স্ট্র্যাটেজি সফল হয়েছে। তিউনিসিয়ায় পর্দার অন্তরালে সেনাবাহিনীই ক্ষমতা পরিচালনা করছে। আর মিসরে তারা সরাসরি ক্ষমতায়। লিবিয়ায়ও তেমনটি হতে যাচ্ছে। তিউনিসিয়া কিংবা মিসরে বিপ্লবীরা 'বিপ্লব'কে সম্পন্ন করলেও ক্ষমতার স্বাদ তারা পাননি। আর লিবিয়ায় পাবেন, সেটা মনে করারও কোনো কারণ নেই।
ড. তারেক শামসুর রেহমান : অধ্যাপক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteফন্ট জনিত সমস্যার সমাধান আশা করছিঃ
ReplyDelete"আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ডমিনো তত্ত্ব বা উড়সরহড় বভভবপঃ বলে একটা কথা আছে..."
"যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪তম প্রেসিডেন্ট ডেভিড আইজেন হাওয়ার (রিপাবলিকান, ১৯৫৩-১৯৬১) ১৯৫৪ সালের ৭ জুলাই বলেছিলেন, ঋরহধষষু ুড়ঁ যধাব নৎড়ধফবৎ পড়হংরফবৎধঃরড়হ ঃযধঃ সরমযঃ ভড়ষষড় িযিধঃ ুড়ঁ ড়িঁষফ পধষষ ঃযব ্তুভধষষরহম ফড়সরহড়্থ চৎরহপরঢ়ষব. ণড়ঁ যধাব ধ ৎড় িড়ভ ফড়সরহড়বং ংবঃ ঁঢ়, ুড়ঁ শহড়পশ ড়াবৎ ঃযব ভরৎংঃ ড়হব, ধহফ যিধঃ রিষষ যধঢ়ঢ়বহ ঃড় ঃযব ষধংঃ ড়হব রং ঃযব পবৎঃধরহঃু ঃযধঃ রঃ রিষষ মড় ড়াবৎ াবৎু য়ঁরপশষু. ঝড় ুড়ঁ পড়ঁষফ যধাব ধ নবমরহহরহম ড়ভ ধ ফরংরহঃবমৎধঃরড়হ ঃযধঃ ড়িঁষফ যধাব ঃযব সড়ংঃ ঢ়ৎড়ভড়ঁহফ রহভষঁবহপব. এর অর্থ পরিষ্কার, সমাজতন্ত্রের প্রসার ঠেকাও!..."
"যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন, তারা জানেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেশ কিছুদিন ধরে এৎবধঃবৎ গরফফষব ঊধংঃ চড়ষরপু নিয়ে কাজ করছে"
ধন্যবাদ।।
ReplyDelete