পাকিস্তান থেকে অতি সম্প্রতি যেসব খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে করে এ ধারণাই শক্তিশালী হচ্ছে যে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির দিন সম্ভবত শেষ হয়ে আসছে। গত ২ এপ্রিল পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংবিধানের ১৮তম সংশোধনী বিল উত্থাপন ও তা পরে পাসও হয়েছে। এই বিলে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনী প্রধান নিয়োগ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে পার্লামেন্ট বাতিল করার ক্ষমতাও প্রেসিডেন্টের হাত থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই সংশোধনীটি পাস হলে একই ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে সংবিধানে যে নিষেধাজ্ঞা আছে তাও বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে এই বিলটি অনুমোদিত হয়েছে এবং তা সিনেটেও পাস হয়ে যাবে। কেননা ক্ষমতাসীন পিপিপি এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করে এবং বিরোধী দলের সমর্থন ছিল এই বিলটির পেছনে। এই বিলটি পাস হলে প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাহীন এক ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। তার চেয়েও বড় কথা সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। সুপ্রিমকোর্টের একটি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের দুর্নীতি দমন সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবল ব্যুরো প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে সুইজারল্যান্ডের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। এর আগে কোর্ট ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। ‘মি. টেন পারসেন্ট’ হিসেবে খ্যাত আসিফ জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির এন্তার অভিযোগ রয়েছে। এক কোটি ৩০ লাখ ডলার পাচারের দায়ে জারদারি ও তার স্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৩ সালে জেনেভার একটি আদালতে দণ্ডিত হয়েছিলেন। পরে আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সেই রায় বাতিল হয়ে যায়। এমনকি জারদারির সুইস ব্যাংকে জব্দ করা ৬ কোটি ডলারের ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ২০০৭ সালে পিপিপির সঙ্গে একটি সমঝোতার পরিপ্রেক্ষিতে দায়মুক্তির অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে বেনজির ভুট্টো ও আসিফ জারদারি পাকিস্তানে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের ১৭ সদস্যবিশিষ্ট ফুল বেঞ্চ গেল বছরের ১৭ ডিসেম্বর এক ঐতিহাসিক রায়ে ওই অধ্যাদেশটি বাতিল ঘোষণা করেছিল। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, কোর্ট জারদারির দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।
এমনিতেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব ভালো নয়। জঙ্গি তত্পরতা দিন দিন বাড়ছেই। গেল বছর পাকিস্তান ঘুরে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তিনি প্রেসিডেন্ট, সেনাপ্রধান ও উপজাতীয় নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে গেছেন। হিলারি ক্লিনটনের এই সফরের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি নেতাদের একটি বার্তা তিনি পৌঁছে দিতে চেয়েছেন বলে আমার ধারণা। এখনও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযান চলছে। সেখান থেকে তালেবানদের পরিপূর্ণভাবে উত্খাত করা যাবে কি-না, সেটাই দেখার বিষয়। তবে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সমস্যা তত প্রকট নয়। সেখানকার তালেবান নেতা হাফিজ গুল বাহাদুরের সঙ্গে একটি সমঝোতায় গেছে পাকিস্তান সরকার এবং সেই সমঝোতা কাজ করছে। দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান তালেবান নেতা প্রয়াত বায়তুল্লাহ মেহসুদের শক্ত ঘাঁটি। তিনি তেহরিক-ই-তালেবান নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। উল্লেখ্য, মেহসুদ গুয়ানতানামো ঘাঁটিতে বন্দি ছিলেন। অভিযোগ আছে, একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি পাকিস্তানে আসেন এবং পাকিস্তানি তালেবানদের সংগঠিত করেন। তার নির্দেশেই বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ড্রোন বিমান হামলায় তিনি মারা গেছেন, এমন খবরও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং এর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান ‘অপারেশন’ কতটুকু সফল হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বেলুচিস্তান সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কারণে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বেলুচিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। বেলুচিস্তানের সুই গ্যাস দিয়ে পাকিস্তানের জ্বালানি চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু এ অঞ্চল বরাবরই অবহেলিত। উন্নয়নের ছোঁয়া এখানে লাগেনি। বেলুচিস্তানে ২০০১ সালে গঠিত হয় বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি। এর নেতৃত্বে আছেন বেলুচ মারি, যিনি এক সময় মস্কোতে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৫ সালে এরা সুই গ্যাস কেন্দ্রে হামলা চালালে তাদের নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে তারা আলোচনায় আছেন। আফগান সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব অনেক বেশি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। এখানে আরব সাগর ঘেঁসে রয়েছে গাওদার সামুদ্রিক বন্দর। যে বন্দরটি তৈরি করে দিচ্ছে চীন, যেখানে তার বিনিয়োগ ১ বিলিয়ন ডলার। চীনের যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে এই অঞ্চলটির ব্যাপারে। চীন ‘মুক্তার মালা’ বা 'String of Pearls' এর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে এই গাওদার একটি বড় ভূমিকা রাখছে। চীন পৃথিবীর তৃতীয় অথনৈতিক শক্তি। ২০১০ সালে জিএনপিতে জাপানকে ছাড়িয়ে যাবে চীন, আর যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে ২০২০ সালে। চীন 'String of Pearls'-এর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী হয়ে ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে অ্যারাবিয়ান গালফ্ পর্যন্ত যে সমুদ্রপথ, ওই সমুদ্রপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় চীন। কেননা এটি তার জ্বালানি সরবরাহের পথ। চীনের জ্বালানি চাহিদা প্রচুর। গাওদারে চীনা নৌবাহিনীর একটি ছোট ইউনিটও থাকার কথা, যেখান থেকে ভারত মহাসাগরের সব ধরনের নৌ-মুভমেন্ট লক্ষ্য করা যাবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রেরও আগ্রহ রয়েছে গাওদার সামুদ্রিক বন্দরের ব্যাপারে। ইরানের সীমান্ত থেকে মাত্র ৭২ কিলোমিটার দূরে গাওদার। আর হরমুজ প্রণালী থেকে দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। এই হরমুজ প্রণালী দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের তেল পশ্চিমা বিশ্ব, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করা হয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, অদূর ভবিষ্যতে ইরানের রেভ্যুলেশন গার্ড বাহিনী এই হরমুজ প্রণালীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীও এই গাওদার সামুদ্রিক বন্দরের ব্যাপারে আগ্রহী। এখান থেকে ইরান আক্রমণ (?) তাদের জন্য অনেক সহজ। চীন তার পূর্বাঞ্চলে ইউনান প্রদেশে মধ্য এশিয়ার গ্যাস গাওদার বন্দর দিয়েই পাইপলাইনের মাধ্যমে নিয়ে যেতে চায়। এ ব্যাপারে একটি মহাপরিকল্পনাও তারা প্রণয়ন করছে। সুতরাং সঙ্গত কারণেই বেলুচিস্তান আগামী দিনগুলোতে উত্তপ্ত থাকবে। বেলুচিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বৃহত্ শক্তির, বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি প্রতিফলিত হবে। স্বাধীন একটি বেলুচিস্তান (?) অনেকের কাছেই তাই আকর্ষণীয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ বিষয়টি যে জানে না, তা নয়। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক, অসন্তোষ সেখানে আছে। পাকিস্তান ভিত্তিক জুনদুল্লাহ (Jundullah) গোষ্ঠীর তত্পরতায় বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এরা ইরানের বেভ্যুলেশনারি গার্ডের দ্বিতীয় ব্যক্তিসহ আরও কয়েকজনকে আত্মঘাতী বোমার মাধ্যমে হত্যা করেছে। ইরানের অভিযোগ, জুনদুল্লাহ’র ঘাঁটি বেলুচিস্তানে। সুন্নি প্রধান জুনদুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্র প্রটেক্ট করছে বলেও ইরানের অভিযোগ। ইরান পাকিস্তানকেও অভিযুক্ত করেছে। ওই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। বেলুচিস্তানের ঘটনাবলি তাই লক্ষ্য রাখার মতো। ইরান যদি আগামীতে বেলুচিস্তান সীমান্তে অবস্থিত জুনদুল্লাহ’র ঘাঁটিতে আক্রমণ করে বসে, আমি অবাক হব না। সুতরাং আসিফ জারদারির জন্য বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সেই সঙ্গে ইরানের ভূমিকা অন্যতম চিন্তার কারণ। অভিযোগ আছে, বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পেছনে সিআইএ’র হাত রয়েছে। জারদারি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঠেকাতে যদি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেন, তা তার পতনকে ডেকে আনবে মাত্র।
প্রেসিডেন্ট জারদারির একটা বড় সমস্যা তিনি পাকিস্তানের এই সঙ্কটে প্রধান বিরোধী দল মুসলিম লীগের (নওয়াজ শরীফ) সমর্থন পুরোপুরি পাননি। তিন সপ্তাহ আগে নওয়াজ শরীফ প্রেসিডেন্ট জারদারির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনেক দিন ধরেই এই দুই নেতার মাঝে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। এক সময় মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল। এখন এসব অতীত। শরীফ বারবার দাবি করে আসছিলেন, প্রেসিডেন্টের হাতে যে অগাধ ক্ষমতা রয়েছে, বিশেষ করে সংসদ ভেঙে দেয়ার ক্ষমতা, তা বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে জারদারি তখন স্পষ্ট করে কোনো কথা দেননি। এখন কোনো ক্ষমতাই তার হাতে থাকছে না। যদিও এর আগে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, তিনি কিছু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেবেন। এরই মধ্যে তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণভার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। এখন সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে।
সুতরাং শরীফ-জারদারি সম্পর্কের ওপর জারদারির ভাগ্য নির্ভর করছে। ক্রমবর্ধমান তালেবান তত্পরতা ও মার্কিন চাপের মুখে জারদারির এই মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল শরীফের সাহায্য ও সহযোগিতা। এর ব্যত্যয় ঘটল। শরীফ এখন চাইবেন তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করতে।
পাকিস্তানে সত্যিকার অর্থেই দুঃসময় যাচ্ছে। জঙ্গিরা আজ পাকিস্তানের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। ভুলে গেলে চলবে না, একটি ‘গ্রান্ড ডিজাইন’ বা মহাপরিকল্পনার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র তার অভঢ়ধশ নীতি পরিচালনা করছে। অর্থাত্ জঙ্গি তথা তালেবানদের উত্খাতে যৌথভাবে একটি নীতি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই নীতির আওতায় আফগানিস্তানে প্রায় ১ লাখ (যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী) সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। আরও ৩০ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে ওবামা প্রশাসন। এখন আগামীতে এই সেনাবাহিনীর একটা অংশ যদি পাক-আফগান সীমান্তে নিয়োজিত করা হয়, আমি অবাক হব না। জারদারি যদি এ ধরনের প্রস্তাবে রাজি হন (?) তাহলে আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, যুদ্ধ পাকিস্তানের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তবে এটা তো সত্য, অত্যন্ত গোপনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র আসছে পাকিস্তানে। হিলারি ক্লিনটনের পাকিস্তান সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উপজাতীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন। উপজাতীয় নেতাদের তিনি ব্যবহার করতে চান (আরেকটা আফগানিস্তানের মতো) তালেবানদের বিরুদ্ধে। এই স্ট্র্যাটেজি আদৌ সফল হবে কিনা, বলা মুশকিল। তবে পাকিস্তানের রাজনীতি যে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত নেই। আগামী ৫ বছর পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পাবে। কিন্তু এই সাহায্য সেনাবাহিনীকে এতটুকুও খুশি করতে পারেনি। কেননা জারদারি এরই মধ্যে অত্যন্ত ক্ষমতাধর আইএসআই-এ (সেনা গোয়েন্দা সংস্থা) সিভিলিয়ান নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেনা নেতৃত্বের অসন্তোষের এটাও একটা কারণ।
সেনাবাহিনী এখন ‘ব্লেম গেম’-এর আশ্রয় নিয়ে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে জারদারিকে অপসারণ করতে পারে। জারদারির জন্য আরও একটি খারাপ খবর ছিল, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ৮ হাজার লোকের দুর্নীতির তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে রেহমান মালিক, আহমেদ মুকতার, হোসাইন হাক্কানি, ওয়াজিদ শামসুল হাসানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম রয়েছে, যারা জারদারির খুব কাছের লোক। এতে করে ধারণা করা স্বাভাবিক যে পাকিস্তানে একটি ‘চক্র’ অত্যন্ত সুকৌশলে জারদারি ও তার সমর্থকদের ক্ষমতা থেকে হটাতে চায়। গত ১৯ নভেম্বরের ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিন (Zardari in the Crosshairs) ও টাইম ম্যাগাজিনে (Corruption charges Loom for Pak's Pro-US President, Nov 27, 2009) মন্তব্য করা হয়েছিল যে, জারদারির দিন ফুরিয়ে আসছে। এসব মন্তব্য এখন সত্য বলে পরিণত হলো। সংবিধান সংশোধনের ফলে তিনি ক্ষমতাহীন এক ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ থেকে কি তিনি মুক্তি পাবেন? সুপ্রিমকোর্ট তার দুর্নীতির তদন্তের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তার কী হবে? সুইজারল্যান্ডের কোর্ট যদি আবার সেখানে দায়ের করা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে, তাহলে? জারদারির নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। এখন তিনি পদত্যাগ করে স্পিকারের কাছে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাবেন কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।
লেখক : আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল : tsrahmanbd@yahoo.com
[সূত্রঃ আমার দেশ, ১২/০৪/১০]
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে এই বিলটি অনুমোদিত হয়েছে এবং তা সিনেটেও পাস হয়ে যাবে। কেননা ক্ষমতাসীন পিপিপি এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করে এবং বিরোধী দলের সমর্থন ছিল এই বিলটির পেছনে। এই বিলটি পাস হলে প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাহীন এক ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। তার চেয়েও বড় কথা সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। সুপ্রিমকোর্টের একটি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের দুর্নীতি দমন সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবল ব্যুরো প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে সুইজারল্যান্ডের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। এর আগে কোর্ট ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। ‘মি. টেন পারসেন্ট’ হিসেবে খ্যাত আসিফ জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির এন্তার অভিযোগ রয়েছে। এক কোটি ৩০ লাখ ডলার পাচারের দায়ে জারদারি ও তার স্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৩ সালে জেনেভার একটি আদালতে দণ্ডিত হয়েছিলেন। পরে আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সেই রায় বাতিল হয়ে যায়। এমনকি জারদারির সুইস ব্যাংকে জব্দ করা ৬ কোটি ডলারের ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ২০০৭ সালে পিপিপির সঙ্গে একটি সমঝোতার পরিপ্রেক্ষিতে দায়মুক্তির অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে বেনজির ভুট্টো ও আসিফ জারদারি পাকিস্তানে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের ১৭ সদস্যবিশিষ্ট ফুল বেঞ্চ গেল বছরের ১৭ ডিসেম্বর এক ঐতিহাসিক রায়ে ওই অধ্যাদেশটি বাতিল ঘোষণা করেছিল। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল, কোর্ট জারদারির দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।
এমনিতেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব ভালো নয়। জঙ্গি তত্পরতা দিন দিন বাড়ছেই। গেল বছর পাকিস্তান ঘুরে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তিনি প্রেসিডেন্ট, সেনাপ্রধান ও উপজাতীয় নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে গেছেন। হিলারি ক্লিনটনের এই সফরের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি নেতাদের একটি বার্তা তিনি পৌঁছে দিতে চেয়েছেন বলে আমার ধারণা। এখনও দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযান চলছে। সেখান থেকে তালেবানদের পরিপূর্ণভাবে উত্খাত করা যাবে কি-না, সেটাই দেখার বিষয়। তবে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সমস্যা তত প্রকট নয়। সেখানকার তালেবান নেতা হাফিজ গুল বাহাদুরের সঙ্গে একটি সমঝোতায় গেছে পাকিস্তান সরকার এবং সেই সমঝোতা কাজ করছে। দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান তালেবান নেতা প্রয়াত বায়তুল্লাহ মেহসুদের শক্ত ঘাঁটি। তিনি তেহরিক-ই-তালেবান নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। উল্লেখ্য, মেহসুদ গুয়ানতানামো ঘাঁটিতে বন্দি ছিলেন। অভিযোগ আছে, একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি পাকিস্তানে আসেন এবং পাকিস্তানি তালেবানদের সংগঠিত করেন। তার নির্দেশেই বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ড্রোন বিমান হামলায় তিনি মারা গেছেন, এমন খবরও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং এর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান ‘অপারেশন’ কতটুকু সফল হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বেলুচিস্তান সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কারণে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বেলুচিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। বেলুচিস্তানের সুই গ্যাস দিয়ে পাকিস্তানের জ্বালানি চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু এ অঞ্চল বরাবরই অবহেলিত। উন্নয়নের ছোঁয়া এখানে লাগেনি। বেলুচিস্তানে ২০০১ সালে গঠিত হয় বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি। এর নেতৃত্বে আছেন বেলুচ মারি, যিনি এক সময় মস্কোতে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৫ সালে এরা সুই গ্যাস কেন্দ্রে হামলা চালালে তাদের নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে তারা আলোচনায় আছেন। আফগান সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব অনেক বেশি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। এখানে আরব সাগর ঘেঁসে রয়েছে গাওদার সামুদ্রিক বন্দর। যে বন্দরটি তৈরি করে দিচ্ছে চীন, যেখানে তার বিনিয়োগ ১ বিলিয়ন ডলার। চীনের যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে এই অঞ্চলটির ব্যাপারে। চীন ‘মুক্তার মালা’ বা 'String of Pearls' এর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে এই গাওদার একটি বড় ভূমিকা রাখছে। চীন পৃথিবীর তৃতীয় অথনৈতিক শক্তি। ২০১০ সালে জিএনপিতে জাপানকে ছাড়িয়ে যাবে চীন, আর যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে ২০২০ সালে। চীন 'String of Pearls'-এর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী হয়ে ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে অ্যারাবিয়ান গালফ্ পর্যন্ত যে সমুদ্রপথ, ওই সমুদ্রপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় চীন। কেননা এটি তার জ্বালানি সরবরাহের পথ। চীনের জ্বালানি চাহিদা প্রচুর। গাওদারে চীনা নৌবাহিনীর একটি ছোট ইউনিটও থাকার কথা, যেখান থেকে ভারত মহাসাগরের সব ধরনের নৌ-মুভমেন্ট লক্ষ্য করা যাবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রেরও আগ্রহ রয়েছে গাওদার সামুদ্রিক বন্দরের ব্যাপারে। ইরানের সীমান্ত থেকে মাত্র ৭২ কিলোমিটার দূরে গাওদার। আর হরমুজ প্রণালী থেকে দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। এই হরমুজ প্রণালী দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের তেল পশ্চিমা বিশ্ব, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করা হয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, অদূর ভবিষ্যতে ইরানের রেভ্যুলেশন গার্ড বাহিনী এই হরমুজ প্রণালীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীও এই গাওদার সামুদ্রিক বন্দরের ব্যাপারে আগ্রহী। এখান থেকে ইরান আক্রমণ (?) তাদের জন্য অনেক সহজ। চীন তার পূর্বাঞ্চলে ইউনান প্রদেশে মধ্য এশিয়ার গ্যাস গাওদার বন্দর দিয়েই পাইপলাইনের মাধ্যমে নিয়ে যেতে চায়। এ ব্যাপারে একটি মহাপরিকল্পনাও তারা প্রণয়ন করছে। সুতরাং সঙ্গত কারণেই বেলুচিস্তান আগামী দিনগুলোতে উত্তপ্ত থাকবে। বেলুচিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বৃহত্ শক্তির, বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি প্রতিফলিত হবে। স্বাধীন একটি বেলুচিস্তান (?) অনেকের কাছেই তাই আকর্ষণীয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ বিষয়টি যে জানে না, তা নয়। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক, অসন্তোষ সেখানে আছে। পাকিস্তান ভিত্তিক জুনদুল্লাহ (Jundullah) গোষ্ঠীর তত্পরতায় বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এরা ইরানের বেভ্যুলেশনারি গার্ডের দ্বিতীয় ব্যক্তিসহ আরও কয়েকজনকে আত্মঘাতী বোমার মাধ্যমে হত্যা করেছে। ইরানের অভিযোগ, জুনদুল্লাহ’র ঘাঁটি বেলুচিস্তানে। সুন্নি প্রধান জুনদুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্র প্রটেক্ট করছে বলেও ইরানের অভিযোগ। ইরান পাকিস্তানকেও অভিযুক্ত করেছে। ওই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। বেলুচিস্তানের ঘটনাবলি তাই লক্ষ্য রাখার মতো। ইরান যদি আগামীতে বেলুচিস্তান সীমান্তে অবস্থিত জুনদুল্লাহ’র ঘাঁটিতে আক্রমণ করে বসে, আমি অবাক হব না। সুতরাং আসিফ জারদারির জন্য বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সেই সঙ্গে ইরানের ভূমিকা অন্যতম চিন্তার কারণ। অভিযোগ আছে, বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পেছনে সিআইএ’র হাত রয়েছে। জারদারি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঠেকাতে যদি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেন, তা তার পতনকে ডেকে আনবে মাত্র।
প্রেসিডেন্ট জারদারির একটা বড় সমস্যা তিনি পাকিস্তানের এই সঙ্কটে প্রধান বিরোধী দল মুসলিম লীগের (নওয়াজ শরীফ) সমর্থন পুরোপুরি পাননি। তিন সপ্তাহ আগে নওয়াজ শরীফ প্রেসিডেন্ট জারদারির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনেক দিন ধরেই এই দুই নেতার মাঝে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। এক সময় মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল। এখন এসব অতীত। শরীফ বারবার দাবি করে আসছিলেন, প্রেসিডেন্টের হাতে যে অগাধ ক্ষমতা রয়েছে, বিশেষ করে সংসদ ভেঙে দেয়ার ক্ষমতা, তা বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে জারদারি তখন স্পষ্ট করে কোনো কথা দেননি। এখন কোনো ক্ষমতাই তার হাতে থাকছে না। যদিও এর আগে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, তিনি কিছু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেবেন। এরই মধ্যে তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণভার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। এখন সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে।
সুতরাং শরীফ-জারদারি সম্পর্কের ওপর জারদারির ভাগ্য নির্ভর করছে। ক্রমবর্ধমান তালেবান তত্পরতা ও মার্কিন চাপের মুখে জারদারির এই মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল শরীফের সাহায্য ও সহযোগিতা। এর ব্যত্যয় ঘটল। শরীফ এখন চাইবেন তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করতে।
পাকিস্তানে সত্যিকার অর্থেই দুঃসময় যাচ্ছে। জঙ্গিরা আজ পাকিস্তানের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। ভুলে গেলে চলবে না, একটি ‘গ্রান্ড ডিজাইন’ বা মহাপরিকল্পনার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র তার অভঢ়ধশ নীতি পরিচালনা করছে। অর্থাত্ জঙ্গি তথা তালেবানদের উত্খাতে যৌথভাবে একটি নীতি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই নীতির আওতায় আফগানিস্তানে প্রায় ১ লাখ (যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী) সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। আরও ৩০ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে ওবামা প্রশাসন। এখন আগামীতে এই সেনাবাহিনীর একটা অংশ যদি পাক-আফগান সীমান্তে নিয়োজিত করা হয়, আমি অবাক হব না। জারদারি যদি এ ধরনের প্রস্তাবে রাজি হন (?) তাহলে আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, যুদ্ধ পাকিস্তানের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তবে এটা তো সত্য, অত্যন্ত গোপনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র আসছে পাকিস্তানে। হিলারি ক্লিনটনের পাকিস্তান সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উপজাতীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন। উপজাতীয় নেতাদের তিনি ব্যবহার করতে চান (আরেকটা আফগানিস্তানের মতো) তালেবানদের বিরুদ্ধে। এই স্ট্র্যাটেজি আদৌ সফল হবে কিনা, বলা মুশকিল। তবে পাকিস্তানের রাজনীতি যে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত নেই। আগামী ৫ বছর পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার পাবে। কিন্তু এই সাহায্য সেনাবাহিনীকে এতটুকুও খুশি করতে পারেনি। কেননা জারদারি এরই মধ্যে অত্যন্ত ক্ষমতাধর আইএসআই-এ (সেনা গোয়েন্দা সংস্থা) সিভিলিয়ান নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেনা নেতৃত্বের অসন্তোষের এটাও একটা কারণ।
সেনাবাহিনী এখন ‘ব্লেম গেম’-এর আশ্রয় নিয়ে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে জারদারিকে অপসারণ করতে পারে। জারদারির জন্য আরও একটি খারাপ খবর ছিল, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ৮ হাজার লোকের দুর্নীতির তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে রেহমান মালিক, আহমেদ মুকতার, হোসাইন হাক্কানি, ওয়াজিদ শামসুল হাসানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম রয়েছে, যারা জারদারির খুব কাছের লোক। এতে করে ধারণা করা স্বাভাবিক যে পাকিস্তানে একটি ‘চক্র’ অত্যন্ত সুকৌশলে জারদারি ও তার সমর্থকদের ক্ষমতা থেকে হটাতে চায়। গত ১৯ নভেম্বরের ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিন (Zardari in the Crosshairs) ও টাইম ম্যাগাজিনে (Corruption charges Loom for Pak's Pro-US President, Nov 27, 2009) মন্তব্য করা হয়েছিল যে, জারদারির দিন ফুরিয়ে আসছে। এসব মন্তব্য এখন সত্য বলে পরিণত হলো। সংবিধান সংশোধনের ফলে তিনি ক্ষমতাহীন এক ব্যক্তিতে পরিণত হবেন। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ থেকে কি তিনি মুক্তি পাবেন? সুপ্রিমকোর্ট তার দুর্নীতির তদন্তের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তার কী হবে? সুইজারল্যান্ডের কোর্ট যদি আবার সেখানে দায়ের করা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে, তাহলে? জারদারির নৈতিক পরাজয় ঘটেছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না। এখন তিনি পদত্যাগ করে স্পিকারের কাছে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাবেন কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।
লেখক : আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল : tsrahmanbd@yahoo.com
[সূত্রঃ আমার দেশ, ১২/০৪/১০]
0 comments:
Post a Comment