পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন ১৭ ডিসেম্বর। ১৭ সদস্যের ফুল বেঞ্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে দুর্নীতি ও ফৌজদারি মামলা মওকুফ করে জারি করা একটি অধ্যাদেশ বাতিল ঘোষণা করেছেন। কোর্ট তার রায়ে বলেছেন, ওই অধ্যাদেশ জারি করা ছিল অবৈধ ও সংবিধান-বহিভূêত। এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ কর্তৃক জারি করা ওই অধ্যাদেশের মেয়াদ ২৮ নভেম্বর শেষ হয়ে যায়।
পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত করেনি। এর ফলে জারদারির ভাগ্য এখন অনিশ্চিত হয়ে গেল। কেননা জারদারির বিরুদ্ধে ৯টি মামলা এখন পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। সে সঙ্গে নূøনতম ৪ জন সিনিয়র মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এখন আবার তদন্ত হবে। এর মধ্য দিয়ে জারদারির বড় ধরনের নৈতিক পরাজয় হল। বিরোধী দলগুলো এরই মাঝে তার পদত্যাগ দাবি করে বসছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আহমেদ মুখতারকে বিদেশে যেতে দেয়া হয়নি।
বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তার এক সময়ের আন্দোলনের মিত্র নওয়াজ শরিফের সঙ্গেও তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। শরিফ বেশ কিছুদিন ধরেই প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা কমানোর দাবি করে আসছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জিলানির সঙ্গেও জারদারির একটি ‘শীতল সম্পর্ক’ ছিল। আত্মঘাতী বোমা হামলা বন্ধ করতে না পারায় জারদারির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। উপরন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার অতি মাখামাখি সাধারণ মানুষ পছন্দ করেনি। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন জেনারেলরা তার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্রোন’ বিমানের বারবার হামলা ও ওই হামলা বন্ধে জারদারির ব্যর্থতায় সেনাবাহিনী অসন্তুষ্ট ছিল- এ খবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে অতি সম্প্রতি। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে- এটাও সেনা অসন্তোষের আরেকটি কারণ। সেনাবাহিনী চায় একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব, যা জারদারি নিশ্চিত করতে পারেননি। আগামী নভেম্বরে (২০১০) বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কিয়ানির মেয়াদ শেষ হবে। প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতাবলে একজন নয়া সেনাপ্রধান নিয়োগ করবেন। বিষয়টি নিয়েও সেনা কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু সরকারের উদাসীনতা ছিল লক্ষ্য করার মতো। সব মিলিয়ে জারদারির অবস্থা এখন নাজুক। ‘মি· টেন পারসেন্ট’ হিসেবে খ্যাত জারদারি যখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন, তখন অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। ১৯৯৪ সালে ফ্রান্সের একটি কোম্পানির কাছ থেকে তিনি ৩টি সাবমেরিন ক্রয় করার সময় ৫০ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নিয়েছিলেন। স্ত্রী বেনজির ভুট্টো তখন প্রধানমন্ত্রী। সুইস ব্যাংকে রক্ষিত তার ৫০ মিলিয়ন ডলার সুইস সরকার আটকে দিয়েছিল। এখন সে ব্যাপারে আবার তদন্ত হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো থাকলেও হিলারি ক্লিনটনের পাকিস্তান সফরের সময় তালেবানদের দমনের ব্যাপারে প্রশাসনের ব্যর্থতায় তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তান নেতাদের একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন বলে আমার ধারণা। এখন দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযানের ফলে সেখান থেকে তালেবানদের পরিপূর্ণভাবে উৎখাত করা যাবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। তবে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সমস্যাটি অত প্রকট নয়। সেখানকার তালেবান নেতা হাফিজ গুল বাহাদুরের সঙ্গে একটি সমঝোতায় গেছে পাকিস্তান সরকার এবং সে সমঝোতা কাজ করছে। দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে তালেবান নেতা বায়তুল্লাহ মেহসুদের শক্ত ঘাঁটি। তিনি ইতিমধ্যে তেহরিক-ই-তালেবান নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। উল্লেখ্য, মেহসুদ গুয়ানতানামো ঘাঁটিতে বন্দি ছিলেন। অভিযোগ আছে, একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি পাকিস্তানে আসেন এবং পাকিস্তানি তালেবানদের সংগঠিত করেন। তার নির্দেশেই বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন দ্রোন বিমান হামলায় তিনি মারা গেছেন, এমন খবরও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। সেনাবাহিনীর দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান ‘অপারেশন’ কতটুকু সফল হয়, সেটাই দেখার বিষয় এখন।
বেলুচিস্তান সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছে, সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কারণে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বেলুচিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। বেলুচিস্তানের সুই গ্যাস দিয়ে পাকিস্তানের জ্বালানি চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু এ অঞ্চল বরাবরই অবহেলিত। উন্নয়নের ছোঁয়া এখানে লাগেনি। বেলুচিস্তানে ২০০১ সালে গঠিত হয় বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি। এর নেতৃত্বে আছেন বেলুচমারি, যিনি একসময় মস্কোতে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৫ সালে এরা সুই গ্যাস কেন্দ্রে হামলা চালালে, তাদের নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে তারা আলোচনায় আছেন। আফগান সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব অনেক বেশি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। এখানে আরব সাগর ঘেঁষে রয়েছে গাওদার সামুদ্রিক বন্দর। যে বন্দরটি তৈরি করে দিচ্ছে চীন, যেখানে তার বিনিয়োগে ১ মিলিয়ন ডলার। চীনের যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে এই অঞ্চলটির ব্যাপারে। চীন মুক্তার মালা বা ‘ঝঃৎরহম ড়ভ ঢ়বধৎষং’-এর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে এই গাওদার একটি বড় ভূমিকা রাখছে। চীন পৃথিবীর তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি। ২০১০ সালে জিএনপিতে জাপানকে ছাড়িয়ে যাবে চীন, আর যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে ২০২০ সালে। চীন 'String of pearls'-এর যে নীতি গ্রহণ করেছে তাতে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী হয়ে ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে এরাবিয়ান গালফ পর্যন্ত যে সমুদ্রপথ, এই সমুদ্রপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় চীন। কেননা এ পথ তার জ্বালানি সরবরাহের পথ। চীনের জ্বালানি চাহিদা প্রচুর। গাওদারে চীনা নৌবাহিনীর একটি ছোট ইউনিটও থাকার কথা, যেখান থেকে ভারত মহাসাগরের সবধরনের নৌ মুভমেন্ট লক্ষ্য করা যাবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রেরও আগ্রহ রয়েছে গাওদার সামুদ্রিক বন্দরের ব্যাপারে। ইরানের সীমা থেকে মাত্র ৭২ কিলোমিটার দূরে গাওদার। আর হরমুজ প্রণালী থেকে দূরত্ব মাত্র ৪০০ কিলোমিটার। এই হরমুজ প্রণালী দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের তেল পশ্চিমা বিশ্ব, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করা হয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন অদূর ভবিষ্যতে ইরানের রেগুলেটর গার্ড বাহিনী এই হরমুজ প্রণালীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীও এই গাওদার সামুদ্রিক বন্দরের ব্যাপারে আগ্রহী। এখান থেকে ইরান আক্রমণ (?) তাদের জন্য অনেক সহজ। চীন তার পূর্বাঞ্চলে ইউনান প্রদেশে মধ্য এশিয়ার গ্যাস গাওদার বন্দর দিয়েই পাইপলাইনের মাধ্যমে নিয়ে যেতে চায়। এ ব্যাপারে একটি মহাপরিকল্পনাও তারা প্রণয়ন করছে। সঙ্গত কারণেই বেলুচিস্তান আগামী দিনগুলোতে উত্তপ্ত থাকবে। বেলুচিস্তানে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বৃহৎ শক্তির, বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি প্রতিফলিত হবে। স্বাধীন একটি বেলুচিস্তান(?) অনেকের কাছেই তাই আকর্ষণীয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ বিষয়টি যে জানে না, তা নয়। কিন্তু যেকোন কারণেই হোক অসন্তোষ সেখানে আছে। অতি সম্প্রতি জুনদুল্লাহ গোষ্ঠীর তৎপরতায় বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এরা ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ডের দ্বিতীয় ব্যক্তিসহ আরও কয়েকজনকে আত্মঘাতী বোমার মাধ্যমে হত্যা করেছে। ইরানের অভিযোগ জুনদুল্লাহর ঘাঁটি বেলুচিস্তানে। সুন্নি প্রধান জুনদুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্র প্রমোট করছে বলেও ইরানের অভিযোগ। ইরান পাকিস্তানকেও অভিযুক্ত করেছে। ওই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। বেলুচিস্তানের ঘটনাবলী তাই লক্ষ্য রাখার মতো। ইরান যদি আগামীতে বেলুচিস্তান সীমান্তে অবস্থিত জুনদুল্লাহর ঘাঁটিতে আক্রমণ করে বসে, আমি অবাক হব না। সুতরাং আসিফ জারদারির জন্য বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সে সঙ্গে ইরানের ভূমিকা অন্যতম চিন্তার কারণ। অভিযোগ আছে বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পেছনে সিআইএ’র হাত রয়েছে। জারদারি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঠেকাতে যদি কোন কার্যকর ব্যবস্থা না নেন, তা তার পতনকে ডেকে আনবে মাত্র।
প্রেসিডেন্ট জারদারির একটা বড় সমস্যা তিনি পাকিস্তানিদের এই সংকটে প্রধান বিরোধী দল মুসলিম লীগের (নওয়াজ শরিফ) সমর্থন পুরোপুরি পায়নি। দু’সপ্তাহ আগে নওয়াজ শরিফ প্রেসিডেন্ট জারদারির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনেক দিন ধরেই এই দুই নেতার মাঝে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। এক সময় মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল। এখন এসব অতীত। শরিফ বারবার দাবি করে আসছিলেন, প্রেসিডেন্টের হাতে যে অগাধ ক্ষমতা রয়েছে বিশেষ করে সংসদ ভেঙে দেয়ার ক্ষমতা, তা বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে জারদারি এতদিন স্পষ্ট করে কোন কথা দেননি। এখন শরিফের সঙ্গে আলোচনা বৈঠকে তিনি ঘোষণা করেছেন, তিনি কিছু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেবেন। তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণভার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। বাকি ক্ষমতাগুলো এখনও দেননি। সুতরাং শরিফ-জারদারি সম্পর্কের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ক্রমবর্ধমান তালেবান তৎপরতা ও মার্কিন চাপের মুখে জারদারির এ মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল শরিফের সাহায্য ও সহযোগিতা। এর ব্যত্যয় ঘটল। যা কিনা জারদারির জন্য কোন ভালো ফল বয়ে আনবে না।
পাকিস্তানে সত্যিকার অর্থেই দুঃসময় যাচ্ছে। জঙ্গিরা আজ পাকিস্তানের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। ভুলে গেলে চলবে না একটি ‘গ্রান্ড ডিজাইন’ বা মহাপরিকল্পনার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র তার অভঢ়ধশ নীতি পরিচালনা করছে। অর্থাৎ জঙ্গি তথা তালেবানদের উৎখাতে যৌথভাবে একটি নীতিমালা পাকিস্তান ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই নীতির আওতায় আফগানিস্তানে প্রায় ১ লাখ (যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোবাহিনী) সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। আরও ৩০ হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছেন ওবামা প্রশাসন। এখন আগামীতে এই সেনাবাহিনীর একটা অংশ যদি পাক-আফগান সীমান্তে নিয়োজিত করা হয়- আমি অবাক হব না। জারদারি যদি এ ধরনের প্রস্তাবে রাজি হন(?), তাহলে আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি যুদ্ধ পাকিস্তানের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তবে এটা তো সত্য অত্যন্ত গোপনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র আসছে পাকিস্তানে। হিলারি ক্লিনটনের পাকিস্তান সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উপজাতীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। উপজাতীয় নেতাদের তিনি ব্যবহার করতে চান (অনেকটা আফগানিস্তানের মতো) তালেবানদের বিরুদ্ধে। এই স্ট্রাটেজি আদৌ সফল হবে কিনা বলা মুশকিল। তবে পাকিস্তানের রাজনীতি যে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, এ ব্যাপারে কারও কোন দ্বিমত নেই। জারদারির জন্য আরও একটি খারাপ খবর, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ৮ হাজার লোকের দুর্নীতির তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে রেহমান মালিক, আহমেদ মুখতার, হোসাইন হাক্কানি, ওয়াজিদ কায়সুল হাসানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম রয়েছে, যারা জারদারির খুব কাছের লোক। এতে করে ধারণা করা স্বাভাবিক, পাকিস্তানে একটি ‘চক্র’ অত্যন্ত সুকৌশলে জারদারি ও তার সমর্থকদের ক্ষমতা থেকে হটাতে চান। ১৯ নভেম্বরে ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনে(Zardari in the crossliains) ও টাইম ম্যাগাজিনে (Coruption charges Loom for pakÕs pro-us president, Nov 27, 2009) মন্তব্য করা হয়েছে, জারদারির দিন ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু জারদারির বিকল্প কে? প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি? অত্যন্ত নম্র ও ভদ্রমেজাজের ও পীরবংশের সন্তান গিলানি জারদারির বিকল্প হতে পারেন- তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তাতে করে কি পাকিস্তানের মূল সমস্যার সমাধান করা যাবে? আমার মনে হয় না। ‘তালেবানি রাজনীতি’ আজ পাকিস্তানের অস্তিত্বকে একটি বড় ধরনের হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
ড· তারেক শামসুর রেহমানঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক
পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত করেনি। এর ফলে জারদারির ভাগ্য এখন অনিশ্চিত হয়ে গেল। কেননা জারদারির বিরুদ্ধে ৯টি মামলা এখন পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। সে সঙ্গে নূøনতম ৪ জন সিনিয়র মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এখন আবার তদন্ত হবে। এর মধ্য দিয়ে জারদারির বড় ধরনের নৈতিক পরাজয় হল। বিরোধী দলগুলো এরই মাঝে তার পদত্যাগ দাবি করে বসছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আহমেদ মুখতারকে বিদেশে যেতে দেয়া হয়নি।
বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তার এক সময়ের আন্দোলনের মিত্র নওয়াজ শরিফের সঙ্গেও তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। শরিফ বেশ কিছুদিন ধরেই প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা কমানোর দাবি করে আসছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জিলানির সঙ্গেও জারদারির একটি ‘শীতল সম্পর্ক’ ছিল। আত্মঘাতী বোমা হামলা বন্ধ করতে না পারায় জারদারির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। উপরন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার অতি মাখামাখি সাধারণ মানুষ পছন্দ করেনি। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন জেনারেলরা তার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্রোন’ বিমানের বারবার হামলা ও ওই হামলা বন্ধে জারদারির ব্যর্থতায় সেনাবাহিনী অসন্তুষ্ট ছিল- এ খবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে অতি সম্প্রতি। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে- এটাও সেনা অসন্তোষের আরেকটি কারণ। সেনাবাহিনী চায় একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব, যা জারদারি নিশ্চিত করতে পারেননি। আগামী নভেম্বরে (২০১০) বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কিয়ানির মেয়াদ শেষ হবে। প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতাবলে একজন নয়া সেনাপ্রধান নিয়োগ করবেন। বিষয়টি নিয়েও সেনা কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু সরকারের উদাসীনতা ছিল লক্ষ্য করার মতো। সব মিলিয়ে জারদারির অবস্থা এখন নাজুক। ‘মি· টেন পারসেন্ট’ হিসেবে খ্যাত জারদারি যখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন, তখন অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। ১৯৯৪ সালে ফ্রান্সের একটি কোম্পানির কাছ থেকে তিনি ৩টি সাবমেরিন ক্রয় করার সময় ৫০ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নিয়েছিলেন। স্ত্রী বেনজির ভুট্টো তখন প্রধানমন্ত্রী। সুইস ব্যাংকে রক্ষিত তার ৫০ মিলিয়ন ডলার সুইস সরকার আটকে দিয়েছিল। এখন সে ব্যাপারে আবার তদন্ত হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো থাকলেও হিলারি ক্লিনটনের পাকিস্তান সফরের সময় তালেবানদের দমনের ব্যাপারে প্রশাসনের ব্যর্থতায় তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তান নেতাদের একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন বলে আমার ধারণা। এখন দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে সেনা অভিযানের ফলে সেখান থেকে তালেবানদের পরিপূর্ণভাবে উৎখাত করা যাবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। তবে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সমস্যাটি অত প্রকট নয়। সেখানকার তালেবান নেতা হাফিজ গুল বাহাদুরের সঙ্গে একটি সমঝোতায় গেছে পাকিস্তান সরকার এবং সে সমঝোতা কাজ করছে। দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে তালেবান নেতা বায়তুল্লাহ মেহসুদের শক্ত ঘাঁটি। তিনি ইতিমধ্যে তেহরিক-ই-তালেবান নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। উল্লেখ্য, মেহসুদ গুয়ানতানামো ঘাঁটিতে বন্দি ছিলেন। অভিযোগ আছে, একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি পাকিস্তানে আসেন এবং পাকিস্তানি তালেবানদের সংগঠিত করেন। তার নির্দেশেই বেনজির ভুট্টোকে হত্যা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন দ্রোন বিমান হামলায় তিনি মারা গেছেন, এমন খবরও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। সেনাবাহিনীর দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান ‘অপারেশন’ কতটুকু সফল হয়, সেটাই দেখার বিষয় এখন।
বেলুচিস্তান সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছে, সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের কারণে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বেলুচিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। বেলুচিস্তানের সুই গ্যাস দিয়ে পাকিস্তানের জ্বালানি চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু এ অঞ্চল বরাবরই অবহেলিত। উন্নয়নের ছোঁয়া এখানে লাগেনি। বেলুচিস্তানে ২০০১ সালে গঠিত হয় বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি। এর নেতৃত্বে আছেন বেলুচমারি, যিনি একসময় মস্কোতে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৫ সালে এরা সুই গ্যাস কেন্দ্রে হামলা চালালে, তাদের নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে তারা আলোচনায় আছেন। আফগান সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব অনেক বেশি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। এখানে আরব সাগর ঘেঁষে রয়েছে গাওদার সামুদ্রিক বন্দর। যে বন্দরটি তৈরি করে দিচ্ছে চীন, যেখানে তার বিনিয়োগে ১ মিলিয়ন ডলার। চীনের যথেষ্ট স্বার্থ রয়েছে এই অঞ্চলটির ব্যাপারে। চীন মুক্তার মালা বা ‘ঝঃৎরহম ড়ভ ঢ়বধৎষং’-এর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে এই গাওদার একটি বড় ভূমিকা রাখছে। চীন পৃথিবীর তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি। ২০১০ সালে জিএনপিতে জাপানকে ছাড়িয়ে যাবে চীন, আর যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে ২০২০ সালে। চীন 'String of pearls'-এর যে নীতি গ্রহণ করেছে তাতে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী হয়ে ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে এরাবিয়ান গালফ পর্যন্ত যে সমুদ্রপথ, এই সমুদ্রপথের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় চীন। কেননা এ পথ তার জ্বালানি সরবরাহের পথ। চীনের জ্বালানি চাহিদা প্রচুর। গাওদারে চীনা নৌবাহিনীর একটি ছোট ইউনিটও থাকার কথা, যেখান থেকে ভারত মহাসাগরের সবধরনের নৌ মুভমেন্ট লক্ষ্য করা যাবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রেরও আগ্রহ রয়েছে গাওদার সামুদ্রিক বন্দরের ব্যাপারে। ইরানের সীমা থেকে মাত্র ৭২ কিলোমিটার দূরে গাওদার। আর হরমুজ প্রণালী থেকে দূরত্ব মাত্র ৪০০ কিলোমিটার। এই হরমুজ প্রণালী দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের তেল পশ্চিমা বিশ্ব, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করা হয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন অদূর ভবিষ্যতে ইরানের রেগুলেটর গার্ড বাহিনী এই হরমুজ প্রণালীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীও এই গাওদার সামুদ্রিক বন্দরের ব্যাপারে আগ্রহী। এখান থেকে ইরান আক্রমণ (?) তাদের জন্য অনেক সহজ। চীন তার পূর্বাঞ্চলে ইউনান প্রদেশে মধ্য এশিয়ার গ্যাস গাওদার বন্দর দিয়েই পাইপলাইনের মাধ্যমে নিয়ে যেতে চায়। এ ব্যাপারে একটি মহাপরিকল্পনাও তারা প্রণয়ন করছে। সঙ্গত কারণেই বেলুচিস্তান আগামী দিনগুলোতে উত্তপ্ত থাকবে। বেলুচিস্তানে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বৃহৎ শক্তির, বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি প্রতিফলিত হবে। স্বাধীন একটি বেলুচিস্তান(?) অনেকের কাছেই তাই আকর্ষণীয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ বিষয়টি যে জানে না, তা নয়। কিন্তু যেকোন কারণেই হোক অসন্তোষ সেখানে আছে। অতি সম্প্রতি জুনদুল্লাহ গোষ্ঠীর তৎপরতায় বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এরা ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ডের দ্বিতীয় ব্যক্তিসহ আরও কয়েকজনকে আত্মঘাতী বোমার মাধ্যমে হত্যা করেছে। ইরানের অভিযোগ জুনদুল্লাহর ঘাঁটি বেলুচিস্তানে। সুন্নি প্রধান জুনদুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্র প্রমোট করছে বলেও ইরানের অভিযোগ। ইরান পাকিস্তানকেও অভিযুক্ত করেছে। ওই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। বেলুচিস্তানের ঘটনাবলী তাই লক্ষ্য রাখার মতো। ইরান যদি আগামীতে বেলুচিস্তান সীমান্তে অবস্থিত জুনদুল্লাহর ঘাঁটিতে আক্রমণ করে বসে, আমি অবাক হব না। সুতরাং আসিফ জারদারির জন্য বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সে সঙ্গে ইরানের ভূমিকা অন্যতম চিন্তার কারণ। অভিযোগ আছে বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পেছনে সিআইএ’র হাত রয়েছে। জারদারি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঠেকাতে যদি কোন কার্যকর ব্যবস্থা না নেন, তা তার পতনকে ডেকে আনবে মাত্র।
প্রেসিডেন্ট জারদারির একটা বড় সমস্যা তিনি পাকিস্তানিদের এই সংকটে প্রধান বিরোধী দল মুসলিম লীগের (নওয়াজ শরিফ) সমর্থন পুরোপুরি পায়নি। দু’সপ্তাহ আগে নওয়াজ শরিফ প্রেসিডেন্ট জারদারির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনেক দিন ধরেই এই দুই নেতার মাঝে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। এক সময় মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল। এখন এসব অতীত। শরিফ বারবার দাবি করে আসছিলেন, প্রেসিডেন্টের হাতে যে অগাধ ক্ষমতা রয়েছে বিশেষ করে সংসদ ভেঙে দেয়ার ক্ষমতা, তা বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে জারদারি এতদিন স্পষ্ট করে কোন কথা দেননি। এখন শরিফের সঙ্গে আলোচনা বৈঠকে তিনি ঘোষণা করেছেন, তিনি কিছু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেবেন। তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণভার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। বাকি ক্ষমতাগুলো এখনও দেননি। সুতরাং শরিফ-জারদারি সম্পর্কের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ক্রমবর্ধমান তালেবান তৎপরতা ও মার্কিন চাপের মুখে জারদারির এ মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল শরিফের সাহায্য ও সহযোগিতা। এর ব্যত্যয় ঘটল। যা কিনা জারদারির জন্য কোন ভালো ফল বয়ে আনবে না।
পাকিস্তানে সত্যিকার অর্থেই দুঃসময় যাচ্ছে। জঙ্গিরা আজ পাকিস্তানের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। ভুলে গেলে চলবে না একটি ‘গ্রান্ড ডিজাইন’ বা মহাপরিকল্পনার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র তার অভঢ়ধশ নীতি পরিচালনা করছে। অর্থাৎ জঙ্গি তথা তালেবানদের উৎখাতে যৌথভাবে একটি নীতিমালা পাকিস্তান ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই নীতির আওতায় আফগানিস্তানে প্রায় ১ লাখ (যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোবাহিনী) সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। আরও ৩০ হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছেন ওবামা প্রশাসন। এখন আগামীতে এই সেনাবাহিনীর একটা অংশ যদি পাক-আফগান সীমান্তে নিয়োজিত করা হয়- আমি অবাক হব না। জারদারি যদি এ ধরনের প্রস্তাবে রাজি হন(?), তাহলে আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি যুদ্ধ পাকিস্তানের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তবে এটা তো সত্য অত্যন্ত গোপনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র আসছে পাকিস্তানে। হিলারি ক্লিনটনের পাকিস্তান সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি উপজাতীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। উপজাতীয় নেতাদের তিনি ব্যবহার করতে চান (অনেকটা আফগানিস্তানের মতো) তালেবানদের বিরুদ্ধে। এই স্ট্রাটেজি আদৌ সফল হবে কিনা বলা মুশকিল। তবে পাকিস্তানের রাজনীতি যে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, এ ব্যাপারে কারও কোন দ্বিমত নেই। জারদারির জন্য আরও একটি খারাপ খবর, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ৮ হাজার লোকের দুর্নীতির তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে রেহমান মালিক, আহমেদ মুখতার, হোসাইন হাক্কানি, ওয়াজিদ কায়সুল হাসানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম রয়েছে, যারা জারদারির খুব কাছের লোক। এতে করে ধারণা করা স্বাভাবিক, পাকিস্তানে একটি ‘চক্র’ অত্যন্ত সুকৌশলে জারদারি ও তার সমর্থকদের ক্ষমতা থেকে হটাতে চান। ১৯ নভেম্বরে ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনে(Zardari in the crossliains) ও টাইম ম্যাগাজিনে (Coruption charges Loom for pakÕs pro-us president, Nov 27, 2009) মন্তব্য করা হয়েছে, জারদারির দিন ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু জারদারির বিকল্প কে? প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি? অত্যন্ত নম্র ও ভদ্রমেজাজের ও পীরবংশের সন্তান গিলানি জারদারির বিকল্প হতে পারেন- তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তাতে করে কি পাকিস্তানের মূল সমস্যার সমাধান করা যাবে? আমার মনে হয় না। ‘তালেবানি রাজনীতি’ আজ পাকিস্তানের অস্তিত্বকে একটি বড় ধরনের হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
ড· তারেক শামসুর রেহমানঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক
0 comments:
Post a Comment