রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

আন্দোলনের হুমকি ও সরকারের করণীয় আন্দোলনের হুমকি ও সরকারের করণীয়

খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুমকিকে আমি গুরুত্ব দিতে চাই। এই ‘হুমকির’ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যদি আবার পাল্টা হুমকি দেয়, তাহলে তো পরিস্থিতির অবনতি হতে বাধ্য। আমরা আশা করব বিরোধী দলের ‘হুমকি’কে বিবেচনায় নিয়ে সরকার সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে। সরকার হুমকির জবাব দেবে কর্মসূচি
দিয়ে আর তা বাস্তবায়ন করে।


সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া চট্টগ্রামের এক জনসভায় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও তিনি নির্দিষ্ট করে কোন কর্মসূচি দেননি। বরং এক ধরনের প্রস্তুতির কথা বলেছেন। আগামীতে তিনি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে জনসভা করবেন এবং সরকারবিরোধী জনমত সংগঠিত করার চেষ্টা করবেন। সরকার গঠনের ১৪ মাসের মাথায় এসে বিরোধী দল সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। একদিকে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংকটে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, তখন বিরোধী দলের এ আন্দোলনের ডাক নিঃসন্দেহে চলমান রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা এনে দেবে। এর আগে গত ৩ মার্চ জাতীয় সংসদে যে ঘটনা ঘটেছিল, তা সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হতে বাধ্য। সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের একে অপরের বিরুদ্ধে গালাগাল, ধমক দেয়া, দু’জন মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে ‘খুনি’ ও ‘ফেরাউন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা, আর যাই হোক সংসদীয় রাজনীতির স্পিরিটের সঙ্গে বেমানান। ভাবতে অবাক লাগে, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর নির্ধারিত ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট ব্যয় হয়েছে একে অপরকে গালাগাল করার মধ্য দিয়ে। আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যরা (সরকারি) কবরে কার লাশ আছে তা নিয়ে আলোচনা করতে সময় পান, কিন্তু সময় পান না দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে, সময় পান না তথাকথিত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা। ২৬ ফেব্র“য়ারির একটি সংবাদপত্র আমাদের জানাচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কিছু খবর। এক মাস পর এ নিবন্ধ যখন তৈরি করছি, তখনও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমেনি। গেল বছরের তুলনায় মোটা ইরি চালের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে ১৭ দশমিক ৩৯ ভাগ, লতা চালের ২০ ভাগ, পাম অয়েলের ১৯ দশমিক ২৭ ভাগ (নয়া দিগন্ত)। সরকার ২২ টাকা দরে সাধারণ মানুষের জন্য মোটা চাল বিক্রি করছে; কিন্তু সেখানে ক্রেতা নেই। কারণ ওই চাল পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত, মানুষ খেতে পারে না। সংবাদপত্রে এ খবরও প্রকাশিত হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামে ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কি সংসদ সদস্যরা কখনও সংসদে আলোচনা করেছেন? দক্ষিণ তালপট্টি সমুদ্রের গর্ভে হারিয়ে গেছে চিরদিনের জন্য। বিশ্ববাসী যে আশংকা এতদিন করে আসছিল, তা-ই সত্য বলে প্রমাণ হল। আমাদের সংসদ সদস্যরা কি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার সময় পেয়েছেন এতটুকু? তারা কি এর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি এতটুকুও? এটা কি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়?

দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ডিসেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। নভেম্বরে (২০০৯) এ হার ছিল ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি আবার দুই অংক অতিক্রম করার আশংকা রয়েছে (কালের কণ্ঠ, ১ মার্চ ২০১০)। কেননা বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব জিনিসের দাম বাড়ছে। এখন মূল্যস্ফীতি কিংবা আমাদের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে কি সংসদে কখনও আলোচনা হয়েছে? অর্থমন্ত্রী রেমিট্যান্সের দোহাই আর কত দেবেন? আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে পোশাক শিল্প। কিন্তু বিশ্বমন্দার কারণে তৈরি পোশাক শিল্প আজ আক্রান্ত। পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে, শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করে পোশাক তৈরির কারখানাগুলো আজ ধ্বংস করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) নিট পোশাক রফতানি থেকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ কোটি ২৬ লাখ আট হাজার ডলার কম আয় হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নিটওয়্যার রফতানি হয়েছিল ৩২৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। চলতি ২০০৯-২০১০ সময়সীমায় রফতানির পরিমাণ ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ কমে আয় হয়েছে ৩০০ কোটি ৭৯ লাখ ৫ হাজার ডলার (কালের কণ্ঠ, ৩ মার্চ)। এ ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তা তো আমাদের চিন্তার কারণ। কেননা লাখ লাখ মহিলা এ পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত। নিটওয়্যার রফতানি করা না গেলে বন্ধ হয়ে যাবে আরও অনেক কারখানা। এতে করে সৃষ্টি হবে এক সামাজিক সমস্যার। এ থেকে আমাদের উত্তরণ কিভাবে সম্ভব? আমাদের সংসদ সদস্যরা কি বিষয়টি নিয়ে ভাবেন? তাদের তো নীতি প্রণয়ন করার কথা। তারা যদি সংসদে ‘কুস্তি করার’ (স্পিকারের ভাষায়) মানসিকতা নিয়ে থাকেন, তাহলে নিটওয়্যার শিল্প নিয়ে ভাবনার সময় কই তাদের।

ইদানীং বিদ্যুতের ঘাটতি দেশে এরই মধ্যে যে একটি বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে, তা কি আমাদের সংসদ সদস্যরা উপলব্ধি করেন? খোদ ঢাকা শহরে দিনে ও রাতে বিদ্যুৎ থাকে না চার থেকে পাঁচবার। অথচ গরম এখনও পুরোপুরি পড়েনি। গ্রীষ্ম শুরুর আগেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় অসহনীয় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির হিসাব অনুযায়ী, ২ মার্চ পিক আওয়ারে খুলনাসহ ২১ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৪৪ দশমিক ৯ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল মাত্র ৩৯৩ দশমিক ৩ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ২৫১ দশমিক ৬ মেগাওয়াট (যায়যায়দিন ৩ মার্চ, ২০১০)। সঙ্গে বিদ্যুৎ প্রাপ্তির প্রশ্নে রাজধানীর জেলা শহরগুলোর বৈষম্য বাড়ছে। এ বৈষম্য নিয়ে একসময় কথা উঠবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। এটা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। কিন্তু কিভাবে? আমাদের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো গ্যাস পাচ্ছে না। উপরন্তু কেন্দ্রগুলো অনেক পুরনো। আমাদের কয়লা আছে। মজুদের পরিমাণ ২৫০ কোটি টন। খনিমুখে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা ছাড়া কোন বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু কী অদ্ভুত দেশে আমরা বসবাস করি, রিজার্ভ কয়লা রেখে আমরা মূলত ভারত থেকে কয়লা আমদানি করে ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা করা হচ্ছে কার স্বার্থে? কয়লা উত্তোলন নিয়ে একটা সমস্যা আছে সত্য (উš§ুক্ত বা ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতি), কিন্তু জাতীয় স্বার্থে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। গভীর সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলনও আমরা করতে পারছি না। এখানে পিএসসি নিয়ে সমস্যা আছে। একটা সমাধানে তো আমাদের পৌঁছাতে হবে। দুঃখ লাগে যখন দেখি আমাদের সংসদ সদস্যরা এ সংকট নিয়ে এক দিনও সংসদে আলোচনা করলেন না। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে সাহস করে কেউ জিজ্ঞেস করলেন না ডিজিটাল বাংলাদেশ কিভাবে হবে, যদি বিদ্যুৎই না থাকে? সংসদ সদস্যরা ভিআইপি। তাদের এলাকায় লোডশেডিং হয় না। কিন্তু আমরা করদাতা ও ভোটার। আমাদের বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ প্রাপ্তিকে আমি মানবাধিকারের সঙ্গে তুলনা করতে চাই। চাই জ্বালানির পুরো বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হোক।

সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয়েছেÑ একজন প্রভাষ মণ্ডলের স্বীকারোক্তি, ‘বাঁধ বেঁধে দেন, নয় তো মেরে রেখে যান’ (কালের কণ্ঠ, ৩ মার্চ)। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীকে লক্ষ্য করে প্রভাষ মণ্ডলের এ উক্তি। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের প্রভাষ মণ্ডলরা ত্রাণ চান না। আইলার আঘাতের পর ১১ মাস পার হয়ে গেছে। কেন বেড়িবাঁধ তৈরি হল না? কেন এখনও সেখানকার মানুষকে লবণপানির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়? সংসদ সদস্যদের মধ্যে কেউ কি আছেন, যিনি সাহস করে প্রভাষ মণ্ডলের কথাটাই প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করবেন? পত্রিকায় ছাপা হয়েছে আরও একটি সংবাদÑ ত্রিশালে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কেউ কি বিমানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করবেন, এতে করে কত ধানী জমি নষ্ট হবে? কত কৃষক তার জমি হারাবে? যেখানে প্রতিবছর আমরা কৃষি জমি হারাচ্ছি ৮২ হাজার হেক্টর করে, সেখানে ত্রিশালে নতুন একটি বিমানবন্দর তৈরি হলে আমরা অনেক কৃষিজমি হারাব। এমনিতেই বাংলাদেশে ৭ কোটি মানুষ সারাবছরই খাদ্য সংকটে থাকে। এখন কৃষিজমির পরিমাণ কমে গেলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে। ফলে খাদ্য সংকট বাড়বে। সুতরাং ত্রিশালে বিমানবন্দর তৈরি করার আদৌ প্রয়োজন নেই। এ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এজন্যই সংসদ। কিন্তু সংসদে যা দেখছি, তাতে আস্থা রাখতে পারছি না। আমাদের হতাশা বাড়ছে। স্পিকার একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি প্রয়োজনে পদত্যাগের (?) হুমকিও দিয়েছেন। তাতে কিছুটা ‘কাজ’ বোধহয় হয়েছে। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী দিনগুলোর জন্য। আমাদের সংসদ সদস্যদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, আমরা শুধু এটাই আশা করতে পারি। আমি বিশ্বাস করি, সংসদ যদি কার্যকর হতো, যদি বিরোধী দল কথা বলার সুযোগ পেত, তাহলে আন্দোলনের ‘হুমকি’ দিত না বিরোধী দল। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা সংসদীয় গণতন্ত্র চেয়েছি।
কিন্তু সেই ‘গণতন্ত্র’ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। শুধু একটি ‘নির্বাচন’-এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। গণতন্ত্র সহনশীলতার কথা বলে। গণতন্ত্র পরস্পরের প্রতি আস্থা রাখার কথা বলে। অবশ্যই বিরোধী দলের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। বিশ্বাস রাখতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়, যা সংসদে আলোচনা হয় না; প্রধানমন্ত্রী ভারত ও চীন সফরে যেসব চুক্তি করেছেন, তা সংসদে উপস্থাপন করা প্রয়োজন। যাতে আলোচনা হতে পারে, সমালোচনা হতে পারে। জাতি জানতে পারে সবকিছু। জাতিকে সব বিষয়ে অবগত করার দায়িত্ব যেমনি সরকারি দলের, তেমনি বিরোধী দলেরও। সরকারি দল জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। এই যুক্তি তুলে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়াও ঠিক নয়। গণতন্ত্র এ কথাই বলে, বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়েই সরকার পরিচালনা করতে হবে। স্পিকার একবার বলেছিলেন বিরোধী দল তো সরকারেরই একটা অংশ। তত্ত্বগতভাবে কথাটা ঠিক। কিন্তু বাংলাদেশে এই প্র্যাকটিস নেই। আর নেই বিধায় সরকার গঠনের ১৪ মাসের মাথায় বিরোধী দল হুমকি দিল আন্দোলনের। যদিও খালেদা জিয়া ‘আন্দোলনের’ রূপরেখা এখনও দেননি। তবে বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, তাতে হরতাল, অবরোধ করা বিচিত্র কিছু নয়। কিন্তু এই হরতাল কোন সমাধান বয়ে আনবে না। এতে করে সহিংসতা বাড়বে। মানুষের ভোগান্তি তাতে বাড়ে। এটা কোন সমাধান নয়। খালেদা জিয়া চট্টগ্রামের জনসভায় সরকারের ব্যর্থতার অনেক দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। তাকে এখন বলতে হবে সংকট সমাধানে তার কর্মসূচি। বিরোধী দলের উচিত ছিল একটি ‘ছায়া মন্ত্রিসভা’ গঠন করা। তা তিনি এখনও করেননি। ছায়া মন্ত্রিসভা সংসদীয় রাজনীতির একটি অংশ। এতে বিরোধী দলের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি বিশেষ বিশেষ বিষয়ে সংসদে কথা বলবেন। এক ব্যক্তির সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া ঠিক নয়। শোভনও নয়। বিরোধী দলের এমপিদের কাজের ক্ষেত্র ভাগ করে দিলে কাজেরও সুবিধা হয়। খালেদা জিয়া তার বক্তৃতায় শেখ মুজিবেরও প্রশংসা করেছেন। এটাই সঠিক নীতি। যার যা প্রাপ্য তাকে তা দিতে হয়। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। না হলে তো সেটা একদলীয় হয়ে পড়বে। এ দেশের দুই মহান ব্যক্তিÑ শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমান। কেউ কারও সঙ্গে তুল্য নন। তারা দু’জন তাদের অবস্থানে থেকে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। তাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করা, বিশেষ করে সংসদে কাম্য নয়। শোভনও নয়। এ প্রবণতা আমরা যদি রোধ করতে পারি, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে।

খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুমকিকে আমি গুরুত্ব দিতে চাই। এই ‘হুমকির’ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যদি আবার পাল্টা হুমকি দেয়, তাহলে তো পরিস্থিতির অবনতি হতে বাধ্য। আমরা আশা করব বিরোধী দলের ‘হুমকি’কে বিবেচনায় নিয়ে সরকার সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে। সরকার হুমকির জবাব দেবে কর্মসূচি দিয়ে আর তা বাস্তবায়ন করে। রাজপথে পাল্টা মিছিল করলে উত্তেজনা শুধু বাড়বে। সমস্যার সমাধান হবে না। আর সাধারণ মানুষও এটাকে ভালোভাবে নেবে না। আমরা রাজনীতিতে অস্থিরতা চাই না। চাই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি। চাই সংসদই হোক সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। আর এজন্য সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ জরুরি।

ড. তারেক শামসুর রেহমান :রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[সূত্রঃ যুগান্তর, ০২/০৪/১০]

0 comments:

Post a Comment