রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

মিসরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা কতটুকু

মিসরে তিন দর্শকের একনায়ক হোসনি মোবারকের পতনের পর যে প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে মিসরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা কতটুকু? দীর্ঘ ১৮ দিন কায়রোর তাহরির স্কোয়ারে অবস্থান নিয়ে হাজার হাজার মিসরবাসি হোসনি মোবারকের পতন ঘটিয়েছেন বটে, কিন্তু তাদের ছটি দাবীর একটি দাবীও পূরণ হয়নিমিসরবাসী এই গণঅভু্যত্থানকে অভিহিত করেছিল জবাড়ষঁঃরড়হ ২.০ হিসেবেসামাজিক নেটওয়ার্ক 'ফেসবুক' আর 'টুইটার' যে সমাজে কত বড় পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে জবাড়ষঁঃরড়হ ২.০ তার বড় প্রমাণআন্দোলনকারীদের প্রথম দাবি ছিল একটি -বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়াকিন্তু তা হয়নিএকটি সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছেসাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল হুসেইন তানতাবি এই সামরিক কাউন্সিলের প্রধানতার সাথে আছেন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামি হাফেজ আনানসহ নূ্যনতম ছ'জন সেনা ও বিমান বাহিনীর ঊধর্্বতন কর্মকর্তামিসরে যে ঘটনা ঘটেছে, তাকে সামরিক পরিভাষায় আমরা বলতে পারি ঝড়ভঃ ঈড়ঁঢ়-ফব-বঃধঃ অর্থাৎ ভদ্রজনিত সামরিক অভু্যত্থানগেল শুক্রবার অর্থাৎ ১১ ফেব্রুয়ারি তাহরিব স্কোয়ার জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিলকয়েক লক্ষ মানুষ সেদিন সেখানে উপস্থিত হয়েছিলশুধু মানুষ আর মানুষতখনই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল হোসনি মোবারকের ভাগ্যযদিও তার মাত্র কয়েকদিন আগেই হোসনি মোবারক জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন তিনি কিছু ক্ষমতা নবনিযুক্ত ভাইস প্রেসিডেন্টের হাত ছেড়ে দিচ্ছেনতবে ক্ষমতায় থাকবেন সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।। কিন্তু বিপস্নবীরা ছিলেন অনড়তাদের দাবি ছিল একটাই হোসনি মোবারকের ক্ষমতা ত্যাগশেষ পর্যন্ত তার বিশ্বস্ত সেনাবাহিনীই তাকে বাধ্য করলো ক্ষমতা ছেড়ে দিতেকিন্তু তাতে করে কী মিসরের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে?

মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব বিশ্বের ইতিহাস সাক্ষী দেয় সেনাবাহিনী একবার ক্ষমতা নিলে, সহজে ক্ষমতা ছাড়ে নাসিরিয়ায় ছাড়েনিইরাকেও ছাড়েনি দীর্ঘদিনসেনাবাহিনী সিরিয়ায় ক্ষমতা দখল করেছিল ১৯৬৩ সালেজেনারেল আসাদ ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন ১৯৭১ সালে২০০০ সালে তার স্বাভাবিক মৃতু্যর পর তার ছেলে বাসার আল আসাদ এখন সে দেশের প্রেসিডেন্টসুদানে জেনারেল ওমর হাসান আল বসির ক্ষমতায় আছেন ১৯৮৯ সাল থেকেগাদ্দাফি লিবিয়াতে আছেন ৪২ বছরইয়েমেনে আলী আবদুলস্নাহ সালেহ আছেন ৩২ বছর ধরেতিউনিসিয়ায় ক্ষমতাচু্যত জইন আল আবেদিন বেন আলী ছিলেন ২৩ বছরআলজেরিয়াতে বুতেফ্লিকাও আছেন ১৩ বছর ধরেআর মিসরে সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষমতায় সেই ১৯৫২ সাল থেকেইকোন আরব দেশেই প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র বিকশিত হয়নিসেনাবাহিনীর ঊধর্্বতন জেনারেলরা বছরের পর বছর ক্ষমতা ধরে রেখেছেন

এখানে রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার জন্ম হয়নিবিকশিত হয়নি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি

মিসরের রাজনীতি বুঝতে হলে এ অঞ্চলের উত্থান-পতনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বুঝতে হবে সেনাবাহিনী আরব বিশ্বের রাজনীতিতে একটি শক্তিতিউনিশিয়ায় সেনাবাহিনী সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ায় পতন ঘটে জইন আল আবেদিন বেন আলীর, যিনি নিজেও সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল ছিলেনআজ সেনাবাহিনী হোসনি মোবারকের পাশে না দাঁড়ানোর ফলে তাকে সরে যেতে হয়হোসনি মোবারক এখন ক্ষমতায় নেইমিসরে সেনাবাহিনীর এই ভূমিকাকে নিশ্চিত করেছিলেন কর্ণেল গামাল আবদুন নাসেরনাসের সেনাবাহিনীর মধ্যে ফ্রি অফিসার্স ক্লাব গঠন করেছিল ১৯৪৯ সালেএই ফ্রি অফিসার্স ক্লাবের উদ্যোগেই ১৯৫২ সালে সামরিক অভু্যত্থান পরিচালিত হয় ক্ষমতায় থাকার জন্য সেনাবাহিনীর জেনারেলরা রাজনৈতিক সংগঠনও জন্ম দিয়েছেন ১৯৫২-৫৬ সালে নাসের গঠন করেছিলেন 'লিবারেশন র্যালি'১৯৫৭-৭০ সালে গঠিত হয়েছিল 'ন্যাশনাল ইউনিয়ন'১৯৭১ সালে সাদাত গঠন করেছিলেন আরব সোশ্যালিষ্ট ইউনিয়ন১৯৭৯ সালে সাদাত এটাকে ভেঙ্গে গঠন করেছিলেন 'নিউ ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন'আর মোবারক গঠন করেছিলেন 'ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি'মিসরে একমাত্র ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টি' ক্যাডার ভিত্তিক পার্টিনাসের থেকে শুরু করে হোসনি মোবারক, যিনি এক সময় বিমান বাহিনীর প্রধান ছিলেন, তারা নিজ স্বার্থে দল গঠন করেছেনএখানে সঠিক অর্থে কোন রাজনৈতিক আদর্শের ওপর ভিত্তি করে দল গঠিত হয়নিক্ষমতায় থাকার জন্যই তারা দল করেছেনসেখানে সুবিধাবাদীদের ভিড় হয়েছেসেই রানী মৌমাছি তত্ত্বের মতএকটি রানী মৌমাছিকে কেন্দ্র করে যেমনি একটি মৌচাকের সৃষ্টি হয়; ঠিক তেমনি একজন জেনারেলকে কেন্দ্র করেই সুবিধাভোগীরা 'ক্ষমতার চাক'-এর জন্ম দিয়েছিলেন নাসের এ থেকে আরব জাতীয়তাবাদের কথা বলে একটা দর্শন প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছিলেনকিন্তু আনোয়ার সাদাত কিংবা হোসনি মোবারকের কোন দর্শন ছিল না তিউনিসিয়ায় একই ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছিসেনাবাহিনীও একটি সুবিধা ভোগী শ্রেণীকে কেন্দ্র করে বেন আলী দীর্ঘদিন তার ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন আলজেরিয়ায় স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বেনবেলস্নাকে ১৯৬৫ সালে এক সামরিক অভু্যত্থানে কর্ণেল বুমেদিয়েন উৎখাত করেছিলেনএরপর ১৯৭৮ সালে তার স্বাভাবিক মৃতু্যর আগ পর্যন্ত তিনি এককভাবেই দেশটি শাসন করে গেছেন এবং ক্ষমতাকে নিয়মসিদ্ধ করার জন্য একটি দলও গঠন করেছিলেনবলা ভালো দেশটি একদলীয় শাসনে পরিচালিত হয়েছে দীর্ঘদিন এবং ১৯৮৯ সালে গণভোটে সংবিধানে পরিবর্তন এনে বহুদলীয় রাজনীতির সূচনা হয়প্রেসিডেন্ট বুতেফ্লিকার ক্ষমতার উৎস ওই সেনাবাহিনী১৯৯৯ সাল থেকে তিনি ক্ষমতায় এবং সংবিধান পরিবর্তন করে তিনি তৃতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট হয়েছেনএখন শোনা যাচ্ছে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য তার ভাইকে তিনি প্রস্তুত করছেনআর লিবিয়ায় কর্নেল গাদ্দাফি আছেন ১৯৬৯ সাল থেকেএখানে এক অদ্ভুত শাসন ব্যবস্থা তিনি প্রবর্তন করেছেনযেখানে রাজনৈতিক দলের কোন ভূমিকা নেইসেনাবাহিনী হচ্ছে তার ক্ষমতার মূল উৎস

তাই দেখা যাচ্ছে আরব বিশ্বে সেনাবাহিনীই হচ্ছে মূল শক্তিগত ছয় দশকের রাজনীতি নিয়ে যদি আলোচনা করি, তাহলে আমরা মূলত তিনটি ধারা লক্ষ্য করবো১৯৫২ সালে মিসরে নাসেরের উত্থানের মধ্য দিয়ে আরব জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিকাশ, ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে আরব বিশ্বের দেশগুলোর পরাজয় আর ১৯৭৯ সালে ইরানী ইসলামিক বিপস্নব যার ঢেউ বয়ে যায় পুরো আরব বিশ্বেএখন তিউনিসিয়ায় জেসমিন বিপস্নব-এর মধ্য দিয়ে চতুর্থ একটি ধারা সূচিত হল, যেখানে সাধারণ মানুষ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় এটাই হচ্ছে 'পিপলস পাওয়ার' জনতার শক্তিসাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে তা কোন বাধাই মানে নাইতিহাসে এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আছেপ্রতিটি বিপস্নবের যেমনি একটি প্রেক্ষাপট আছে তেমনি আরব বিশ্বের সাম্প্রতিক গণজাগরণের একটি প্রেক্ষাপট আছেতরুণ সমাজের একটা বড় অংশ আছে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েও বেকারএই তরুণ সমাজ আজ একটি শক্তি পরিসংখ্যান অনুযায়ী আলজেরিয়ায় মোট জনগোষ্ঠীর ৪৭ দশমিক ৫ ভাগ হচ্ছে তরুণ, যাদের বয়স ২৫ বছরের নিচেলিবিয়ায় এই সংখ্যা ৪৭.৪ ভাগ, মিসরে ৫২.৩ ভাগ, সিরিয়ায় ৫৫.৩, জর্দানে ৫৪.৩ ইয়েমেনে ৬৫.৪ তিউনেসিয়ায় ৪২.১ ভাগঅন্যান্য আরব বিশ্বের অবস্থা মোটামুটি এককে এদের জন্য সরকার নূ্যনতম চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেনিকিন্তু সরকারের সাথে সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিরা অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছিলেনএকমাত্র তেলসমৃদ্ধ কয়েকটি দেশ (সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, আরব আমিরাত) বাদে বাকি আরব বিশ্বের ব্যক্তিগত খাতে জিডিপির পরিমাণ কমমানুষের ক্রয় ক্ষমতা, অর্থাৎ পিপিপি (চঁৎপযধংরহম চড়বিৎ চধৎরঃু) হিসাবে এই জিডিপি বের করা হয়েছেযেখানে কাতারে এই জিডিপির পরিমাণ ৬৬.৯ (সৌদি আরবে ২২.৯, কুয়েতে ৪০.৬ আরব আমিরাতে ২৭.২) সেখানে মিসরে এর পরিমাণ মাত্র ৫.৯, তিউনেসিয়ায় ৪.৮, আলজেরিয়ায় ৮.২, সিরিয়ায় ৪.৭, জর্দানে ৫.২ ও ইয়েমেনে মাত্র ২.৯এ থেকে দরিদ্রতার একটি চিত্র পাওয়া যায়আরব বিশ্বে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমকেননা তারা দরিদ্রতেল- সমৃদ্ধ কয়েকটি আরব দেশ বাদে প্রতিটি আরব বিশ্বে মূলত দুটি শ্রেণীর জন্ম হয়েছেএকটি ধনী, অপরটি একেবারেই গরিবএরাই তিউনিসিয়ার বিপস্নবকে সম্পন্ন করেছে, আর কায়রোর তাহরির স্কোয়ারে গণজমায়েতের আয়োজন করে সৃষ্টি করেছে ইতিহাসসম্ভবত একই ধরনের ইতিহাস লিখিত হবে আলজেরিয়া ও ইয়েমেনের

এখন মিসরে কী হতে যাচ্ছে বলা মুসকিলমিসরে সেনাবাহিনীর এই ভূমিকাকে প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশংসা করলেও সেনাবাহিনী যদি দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করে, তাহলে বিতর্ক কম হবেআর সেনাবাহিনী যদি তার পূর্বসূরীদের মত ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়, তাহলে তা বিতর্কের মাত্রা বাড়াবেইসেনাবাহনীকে ক্ষমতায় রাখতেই ইসরাইল চাইবে ক্ষেত্রে ফিল্ড মার্শাল তানতারির একটি বক্তব্য বিবেচনায় নেয়া যায়

তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী নির্বাচনের আয়োজন করে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবেকিন্তু দীর্ঘদিনের গড়া সেনা স্টাবলিসমেন্ট সহজে ভেঙ্গে যাবার নয়মিসরে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ একটা ভূমিকা থাকবেই প্রথমত, আন্তর্জাতিক জনমতের চাপে একটি নির্বাচন দিতে হবে সামরিক কাউন্সিলকেএক্ষেত্রে সামরিক কাউন্সিলের প্রধান ফিল্ড মার্শাল তানতাবি নিজেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনঅথবা বিকল্প হিসেবে হোসনি মোবারক কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমর সুলেইমানও প্রাথর্ী হতে পারেনরাজনৈতিক সংস্কার যদি আনা না যায় তাহলে সেই পুরনো নিয়োমে সরকারি প্রাথর্ীদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশিদ্বিতীয়ত, মিসরের ২১০ মিলিয়ন ডলারের যে অর্থনীতি, সেখানে সেনাবাহিনী ১০ থেকে ১৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করেতেল, দুগ্ধ, বেকারি, পানি, হোটেল ব্যবসা, রিসোর্ট, সিমেন্ট, গাড়ী উৎপাদন শিল্পে সেনাবাহিনীর বিনিয়োগ রয়েছেএর ফলে সমাজে সেনাবাহিনীর একটি শক্ত অবস্থান রয়েছেএই অবস্থান থেকে সেনাবাহিনীকে সারানো যাবে না তৃতীয়ত, হোসনি মোবারক কতর্ৃক গঠিত ন্যাশনাল ডেমোক্রেটি পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়নিদলটির প্রভাব ও প্রতিপত্তি রয়ে গেছেতারাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন নতুন শক্তি হিসাবেচতুর্থত, দীর্ঘদিনের একনায়কতন্ত্রী শাসনের কারণে সেখানে সত্যিকার অর্থে কোন গণতান্ত্রিক শক্তির জন্ম হয়নি গণতান্ত্রিক শক্তির সংঘবদ্ধ নয়হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেছে কিছু তরুণ সংগঠকসেই অর্থে তাদের কোন দল নেইমজার ব্যাপার ইসলাম পন্থি, গণতন্ত্রী ও মার্কাসবাদীরা সবাই এই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেনতাদের মধ্যে কোন বিভেদ ছিল নাকোন একক নেতৃত্বেও এই আন্দোলন পরিচালিত হয়নি এমনকি ইসলামপন্থী ইসলামিক ব্রাদারহুডকে অন্যতম শক্তি হিসাবে গণ্য করা হয় কিন্তু তারাও এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়নিপ্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরা একক প্রাথর্ী দাঁড় করাবেন নাপঞ্চমত, হোসনি মোবারক বিরোধি আন্দোলনের সময় দু'জন ব্যক্তি এল বারাদি ও আমর মুসা বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেনএদের দু'জনকে ভবিষ্যৎ মিসরের নেতা হিসেবেও চিন্তা করা হয়েছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এদের কারোর সাথেই মিসরের সাধারণ মানুষের কোন সম্পর্ক নেইএল বারাদি থাকেন ভিয়েনাতেজাতিসংঘের কর্মকর্তা ছিলেনকিন্তু মিসরের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তার কোন ভূমিকা নেইঅন্যদিকে আমর মুসা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীবিগত দিনগুলোতে ক্ষমতাসীনদের আশেপাশেই তিনি ছিলেন মিসরের সাধারণ মানুষের কাছে এরা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবেন সেটাই একটা বড় প্রশ্নষষ্ঠ, ইসলামিক ব্রাদারহুড একটি পুরনো সংগঠনদলটি নিষিদ্ধকিন্তু তারপরও দলটির একটি বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছেদলটির পক্ষ থেকে জানান হয়েছে তারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে নাফলশ্রুতিতে একটা প্রশ্ন থেকেই গেলএই দলটির অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে মিসরে আদৌ গণতন্ত্র বিকশিত হবে কী না

মিসরে একটি পরিবর্তন সম্পন্ন হয়েছেকিন্তু যেতে হবে অনেকদূরসংবিধান সংশোধনটা জরুরীসংবিধান সংশোধনের জন্য একটি কমিটি গঠিত হলেও, কমিটির কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় নাসংবিধান সংশোধন না করে সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে করে মিসরে সমাজ ব্যবস্থা যা ছিল তাই থেকে যাবে শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন করা হয়েছেঅথচ পুরনো সবকিছুই রয়ে গেছেমোবারকের পতনের পর ১২ ফেব্রুয়ারি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে অনেক ছবিতাহরির স্কোয়ার প্রায় খালি, ঝাড়-দার পরিষ্কার করছে স্কোয়ারটিপস্নাকার্ড হাতে এক ব্যক্তির ছবি ছাপা হয়েছেপস্নাকার্ডে ইংরেজিতে লেখা 'ঞড় ফধু সু ৎবধষ ইরৎঃযফধু- ও ধস ভৎবব'_ আজকে আমার সত্যিকার জন্মদিন, আমি স্বাধীনপস্নাকার্ডের এই বক্তব্য বলে দেয় মিসরবাসীর বিশ্বাসের কথাকিন্তু সত্যিই কী মিসরবাসী মুক্ত হয়েছেন, নাকি শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে? মিসরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে তাই প্রশ্ন থাকবেই

[লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়]

0 comments:

Post a Comment