রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ওবামার চীন সফর নিয়ে কিছু কথা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এশিয়া সফরের অংশ হিসেবেই চীনে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি জাপান সফর করেছেন। তার চীন সফরের প্রাক্কালে দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। একটি পিত সাগরে দুই কোরিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলিবিনিময়। অপরটি তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাইলামার ভারতের অরুনাচল রাজ্যের তাওয়াং সফর। চীন দালাইলামার এ সফরে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক যেভাবে মজবুত হচ্ছে, তাতে শংকিত চীন। ওবামার চীন সফরের সময় দালাইলামার প্রসঙ্গটি আলোচিত না হলেও তিব্বতের ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নটি আলোচিত হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনে মানবাধিকার লংঘন, বাণিজ্য, জিয়াংজিয়ান প্রদেশের উইপার বিদ্রোহসহ নানা প্রশ্ন
আলোচিত হতে পারে।
বিশ্ব রাজনীতিতে চীন এখন একটি ফ্যাক্টর, যা যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকার করতে পারে না। বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের ভূমিকা বাড়ছে। আফ্রিকাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে চীন। চীনের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক চমৎকার। ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে ইরান যখন সম্ভাব্য অর্থনৈতিক অবরোধের সম্মুখীন, তখন চীন ইরানের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। গ্যাসফিল্ড উন্নয়ন (৫ বিলিয়ন) ও তেল শোধনাগার তৈরিতে (৪২·৯ বিলিয়ন ডলার) দু-দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীন। হোয়াইট হাউস প্রশাসনের এটা ভালো না লাগারই কথা। ইরানকে একঘরে করে রাখার ব্যাপারে চীনের সমর্থন পায়নি হোয়াইট হাউস প্রশাসন।

চীন বিশ্বের তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পরই তার অবস্থান। জাতীয় আয়ের দিক থেকে ২০১০ সালে জাপানকে ছাড়িয়ে যাবে চীন, আর ২০২০ সালে ছাড়িয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রকে। চীনের বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২ ট্রিলিয়ন ডলার। বিশ্বের যে ৫০০টি বড় বড় কোম্পানি রয়েছে, যারা বিশ্ব বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তার মাঝে শীর্ষে রয়েছে চীনের ৩৭টি কোম্পানি। বিশ্বের যে জ্বালানি চাহিদা, তার মাঝে ১৬ ভাগের চাহিদা চীনের একার। চীন বিশ্বের তেলের তৃতীয় সর্বোচ্চ আমদানিকারক। চীন সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার অন্যতম সদস্য। জ্বালানিসমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে চীন ও রাশিয়া এই সংস্থাটি গঠন করেছিল কয়েক বছর আগে। বলা হয়ে থাকে, যে নয়া বিশ্ব ব্যবস্থা বিকশিত হচ্ছে, তাতে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। কেউ কেউ এ সংস্থাকে ওয়ারশ জোটের বিকল্প ভাবছে। গর্বাচেভ ১৯৮৮ সালে ওয়ারশ জোট ভেঙে দিয়েছিলেন। চীন নব্য শিল্পোন্নত ভারত, ব্রাজিল ও রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করেছে ব্রিক। সুতরাং চীনের যে এই ভূমিকা ও উত্থান, তা ওবামা প্রশাসনের অজানা নয়। তাই ওবামার চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি থাকবে অনেকের।

সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যে খুব খারাপ, তা বলা যাবে না। গেল মাসে ওবামা প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত চীনা টায়ারের ওপর শুল্ক আরোপ করলেও চীন তাতে খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। বরং শিল্প বাণিজ্যিক সংস্থায় যোগদানের পর থেকে চীন ওই সংস্থার নিয়ম-কানুন মেনে চলছে। চীনা বাণিজ্যিক কর্মকর্তারা এখন এটা তলিয়ে দেখছেন কোন আইনবলে যুক্তরাষ্ট্র এ কাজটি করল। চীন এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত মুরগির মাংসের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের চিন্তা-ভাবনা করছে। টায়ারের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি ছিল, এটা করা না হলে যুক্তরাষ্ট্রের টায়ার উৎপাদন শিল্পে ধস নামবে এবং ১০ ভাগ লোক ওই শিল্পে চাকরি হারাবে। ২০১২ সালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটা চীনের জন্য একটা চিন্তার কারণ। কারণ তাইওয়ানের স্বাধীনতার প্রশ্নটি তখন আবার নতুন করে উঠতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের তাতে ইন্ধন থাকতে পারে। চীন প্রথমবারের মতো একটি বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করছে, এটাও পেন্টাগনের চিন্তার অন্যতম কারণ। চীন তার মুক্তার মালা বা ঝঃৎরহম ড়ভ চবধৎষং-এর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিস্টদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এতে করে আরব সাগর থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর কর্তৃত্ব বাড়ছে। ভুলে গেলে চলবে না, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের গাওদারে নতুন একটি সামুদ্রিক বন্দর তৈরি হচ্ছে, যেখানে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। গাওদারের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক বেশি। চীন ‘ঝঃৎরহম ড়ভ চবধৎষং’-এর যে নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মান্নাকা, বালি হয়ে ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে এরাবিয়ান গালফ পর্যন্ত যে সমুদ্রপথ, এই সমুদ্রপথ থাকবে চীনের নিয়ন্ত্রণে। কেননা এ পথ তার জ্বালানি সরবরাহের পথ। গাওদারে চীনা নৌবাহিনীর একটি ইউনিটও থাকবে, যেখান থেকে চীন ভারত মহাসাগরের সব ধরনের নৌ-মুভমেন্ট লক্ষ্য করবে। আর এখানেই চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। গাওদারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রেরও আগ্রহ রয়েছে। কেননা ইরানের সীমান্ত থেকে মাত্র ৭২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গাওদার। আর হরমুজ প্রণালী থেকে দূরত্ব মাত্র ৪০০ কিলোমিটার। এই হরমুজ প্রণালী দিয়েই পারসীয় গালফের তেল পশ্চিমা ইউরোপ, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করা হয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন, অদূর ভবিষ্যতে ইরানের রেভ্যুলিউশনারি গার্ড বাহিনী এই হরমুজ প্রণালীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তেল সরবরাহে বিস্ময় ঘটাতে পারে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যদি অবনতি হয়, তাহলে এই গাওদার ঘাঁটি ব্যবহার করে ইরানে আক্রমণ করা কিংবা বেলুচিস্তান সীমান্তে ইরানি প্রদেশ সিসতান বেলুচিস্তান দখল করে সেখানে একটি পুতুল সরকার বসানো পেন্টাগনের জন্য সহজ হবে। এজন্য চীনের সহযোগিতা দরকার যুক্তরাষ্ট্রের। যদিও অনেকেই বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্দেশ্যকে সফল করতে দেবে না চীন। চীনের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। একাধিক কারণে ভারতীয় মহাসাগরে তার অবস্থান চীন শক্তিশালী করেছে। যদি মানচিত্রে ভারতীয় মহাসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলগুলোর দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে চীন শ্রীলংকার হামবানতোলায় একটি কনটেইনার পোর্ট তৈরি করছে। তার রাডার ও রিফুয়েলিং সুযোগ রয়েছে মিয়ানমারের সিটওয়ে, কোকো, হিয়ানজাই, কাউখাপুউ, মারজুই ও জাদেত কাইকুম বন্দরে। একই ধরনের সুযোগ তার রয়েছে থাইল্যান্ড ও কাপুচিয়ায়। ভারত মহাসাগরে চীনের এই উপস্থিতি ভারতের জন্যও চিন্তার কারণ। ভারত মনে করে, সে তিনদিক থেকে ‘হুমকির’ সম্মুখীন। একদিকে মিয়ানমার, অন্যদিকে চীন (তিব্বত) ও পাকিস্তান। যে কারণে ভারত কৌশলগত স্বার্থে গাওদারের ঠিক উল্টোদিকে ইরানে চাকহারে (সিসতান বেলুচিস্তান) একটি সামুদ্রিক বন্দর নির্মাণ করছে এবং চাকহার থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত ২০০ কিলোমিটার সড়কও নির্মাণ করছে।

মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের যে স্ট্র্যাটেজিক এলায়েন্স গড়ে উঠছে, তা ভারতের জন্য যেমনি গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও। যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকাকে রবার্ট কাপলান বলেছেন ‘Honest broker in Indian OceanÕ (Foreign Affairs, March-April, 09)|।

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সঙ্গত কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক, ভারতের ভূমিকা ও ইরানের অবস্থান ইত্যাদি বিষয় এসে যায়। এগুলো একটির সঙ্গে অপরটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ওবামা প্রশাসন এটা ভালো করেই জানে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়ন ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। এক সময় ছিল যখন বিশ্বব্যাপী সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে চীন-যুক্তরাষ্ট্র মৈত্রী একটি শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সত্তর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল চীনের সাহায্য ও সহযোগিতার। এই সাহায্য ও সহযোগিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রয়াত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন চীনে গিয়েছিলেন ১৯৭০ সালে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের একটি টেবিল টেনিস দল বেইজিং সফর করে বিখ্যাত পিংপং ডিপ্লোমেসি শুরু করেছিল। নিক্সনের চীন সফরের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কই স্থাপন করেনি বরং এর মাধ্যমে চীন জাতিসংঘের সদস্যপদ পেয়েছিল।

১৯৭১ সালে তাইওয়ানের বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে চীন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের আসনটিও পেয়েছিল। এরপর থেকে দীর্ঘদিন চীন আন্তর্জাতিক আসরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে সমর্থন করেছে। বিশেষ করে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রশ্নে চীনের অবস্থান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে। কিন্তু ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়া ও সেখানে সমাজতন্ত্রের পতনের পর চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ সম্পর্ক আগের মতো আর উষ্ণ নয় এবং যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রকাশ্যেই চীনা নেতাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে। অনেকের মনে থাকার কথা, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন চীন সফর করার সময় (১৯৯৮) বলেছিলেন, তার জীবদ্দশায়ই তিনি দেখে যাবেন চীনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন চীনে আদৌ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হল কিনা কিংবা হলেও তার স্বরূপ কী হবে- এটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। এক্ষেত্রে নিশ্চিত করে একটা কথা বলা যায়- আর তা হচ্ছে গণতান্ত্রিক সমাজ বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি তেমন ধরনের সমাজ চীনে প্রতিষ্ঠিত হবে না। ১৯৮৯ সালে ছাত্ররা বেইজিং-এর তিয়েনানমেন স্কোয়ারে উপস্থিত হয়ে গণতন্ত্রের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল। সেদিন ট্যাংক পাঠিয়ে সেই ছাত্র বিক্ষোভ দমন করা হয়েছিল। এর পরিণতিতে তৎকালীন পার্টি প্রধান ঝাওঝিয়াং অপসারিত হয়েছিলেন। ঝাও ঝিয়াং-এর পর জিয়াং জেমিন হয়ে এখন হু জিনতাও পার্টি প্রধান। কিন্তু কেউই আর সনাতন মার্ক্সীয় দর্শনে ফিরে যাননি। বরং অবিসংবাদিত নেতা দেং জিয়াও পিং-এর অর্থনৈতিক সংস্কারের পথ ধরে গত বিশ বছরে চীনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি এখন আর নেই। ব্যক্তি পুঁজির বিকাশ ঘটেছে ব্যাপক। তবে কমিউনিস্ট পার্টির একক কর্তৃত্ব এখনও বজায় রয়েছে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র এখনও চালু হয়নি সেখানে। চীন বাহ্যত পূর্ব এশিয়ার New Authoritarianism, ল্যাটিন আমেরিকার Corporatismও ইউরোপের Social Democracy"s সমন্বয়ে নতুন এক সমাজ ব্যবস্থার জন্ম দিতে যাচ্ছে, যার সঙ্গে পশ্চিম ইউরোপে বিকশিত গণতন্ত্রকে মেলানো যাবে না। চীনে এখন প্রকাশিত হচ্ছে ২০০০ দৈনিক সংবাদপত্র, ৯০০০ ম্যাগাজিন ও ৩৫০ টিভি স্টেশন, যার কোনটা সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। সরকারকে সমালোচনাও করা হচ্ছে। এটাকেই তারা বলছেন, ‘গণতন্ত্র’, ‘চীনা গণতন্ত্র’।

২০০৬ সালে ওয়াশিংটনের ব্রুকিং ইন্সটিটিউটের একদল চীনা বিশেষজ্ঞ বেইজিং গেলে চীনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াও বাও তাদের বলেছিলেন, When we talk about Democracy, we usually refer to three most important components-election, Judicial independence, supervision based on checks and balancesÕ (Foreign Policy, November 2009)। এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। এক ধরনের ‘নির্বাচন’ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে চীনের একুশ শতকের সমাজ বিকশিত হচ্ছে- যাকে আমরা হয়তো তথাকথিত গণতান্ত্রিক সমাজ হিসেবে চিহ্নিত করতে নাও পারি। তবে এই চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন আছে। যে প্রয়োজনে ১৯৭০ সালে নিক্সন মাও জে ডং-এর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়েছিলেন, সেই প্রয়োজনে ওবামা হু জিনতাও-এর সঙ্গে হাত মেলাবেন না বটে। কিন্তু একটি স্থিতিশীল বিশ্ব, যুদ্ধমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন রয়েছে চীনের। ওবামা নিজেই চীন সম্পর্কে বলেছেন, ‘As important as any in the world। ওবামা প্রশাসন চাইছে, চীন নয়া বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি দায়িত্বশীল আচরণ করুক। চীনকে তারা মনে করছে Responsible Stakeholder । আর জেমস স্ট্রাইনবার্গের ভাষায় এই সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ‘Strategic Reassurance’ হিসেবে। এর অর্থ কি? এটাও ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে Stratagic Reassurance requires that both sides find ways to highlight & reinforce the areas of common interest, while addressing the sources of mistrust directly where they be political, military or economic. (Foreign Policy, H)। ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট জেমস স্ট্রাইনবার্গের কথাতেই ফুটে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে এখন চীনকে দেখতে চাইছে। ওবামা যখন চীনে যান তখন এই ‘Strategic Reassurance-এর কথাটাই প্রধান্য পাবে বেশি।

তারেক শামসুর রেহমানঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক, ইমেইল, tsrahmanbd@yahoo.com (সুত্র, যুগান্তর, ১৬/১১/২০০৯)

0 comments:

Post a Comment