সাম্প্রতিক সময়ে চিরবৈরী দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ফেব্র“য়ারি মাসে ভারত পারমাণবিক বোমা বহনযোগ্য অগ্নি-২ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পর পাকিস্তানে এর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতে গত ১৪ মার্চ দিল্লিতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার সোহেল মাহমুদকে ইসলামাবাদ ফিরিয়ে নিয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা অনেকদিন থেকেই লক্ষ করছেন ভারত ও পাকিস্তান একধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। সামরিক শক্তির নিরিখে বিভিন্ন দেশের ওপর চালানো সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারত এ মুহূর্তে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। অস্ত্র ও বাহিনীর নিরিখে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনের পর ভারতের অবস্থান।পাক কূটনীতিকরা ভারতে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ ইসলামাবাদের। গেল সপ্তাহে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার জেপি সিংকে তলব করেছিল পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রণালয়। এর পরপরই পাকিস্তান দিল্লি থেকে তার হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করে নিল। এ ঘটনা দু’দেশের সম্পর্ককে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেল।
পাকিস্তানের অবস্থান ১৩তম। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’ ২০১৭ সালের বিশ্ব সামরিক সক্ষমতার যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে এই চিত্র পাওয়া গেছে। দেশ দুটো প্রতিরক্ষা বাজেটও বাড়িয়ে চলেছে। যেখানে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ৫১ বিলিয়ন ডলার (যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮৭ বিলিয়ন, চীনের ১৬১ বিলিয়ন), সেখানে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট ৯ বিলিয়নের কাছাকাছি।
কাশ্মীরের উরিতে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মাঝে গুলিবিনিময় হয়েছে। কিছুদিন আগে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত এক সেমিনারে বলেছিলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ থেকে লোক ঢোকানো হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে পাকিস্তান। চীনের মদদে একটি ছায়াযুুদ্ধের অংশ হিসেবে ভারতের ওই এলাকাকে ‘অস্থির’ করে তুলতেই এ কাজ করা হচ্ছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য। পাকিস্তান এই বক্তব্যকে ‘অলীক কল্পনা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
উপরে উল্লিখিত প্রতিটি সংবাদের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের প্রশ্নটি জড়িত। সাম্প্রতিক সময়ে দু’দেশের মাঝে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে চীন-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে ভারত ভালো চোখে দেখছে না। চীন পাকিস্তানে তার প্রভাব বাড়াচ্ছে। এটাকে ভারত একধরনের নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখছে। ভারত মহাসাগরে চীন তার নৌ তৎপরতা বাড়াচ্ছে। সর্বশেষ মালদ্বীপের ঘটনাবলীতে ভারত যাতে নাক না গলায়, সে ব্যাপারে চীন ভারতকে হুশিয়ার করে দিয়েছে। মালদ্বীপে একটি চীনা নৌঘাঁটি নির্মাণের কথাও শোনা যাচ্ছে। এমনকি পাকিস্তানেও চীন একটি ঘাঁটি করতে পারে।
বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে পাকিস্তান চীনের মুদ্রা ব্যবহার করবে- এমন একটি সংবাদও ছাপা হয়েছে অতি সম্প্রতি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ৬১টি দেশ নিয়ে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ (ওবিওআর) নামে যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, তাতে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশীদার। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডে’ ৬টি অর্থনৈতিক করিডোর আছে।
এর একটি হচ্ছে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর। এই করিডোর চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের খাসগর থেকে ভারত মহাসাগর ঘেঁষা পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের গাওদার সমুদ্রবন্দরকে সংযুক্ত করছে। এই করিডোরে রেলপথ, স্থলপথ সংযুক্ত রয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৬২ বিলিয়ন ডলার। করিডোরটি খাসগর, গিলগিট-বেলুচিস্তান, ডেরা ইসমাইল খান ও গাওদারকে সংযুক্ত করছে। ভারতের আপত্তির কারণ, এই করিডোর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের পাশ দিয়ে গেছে।
আজাদ কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণভার যে পাকিস্তানের, এটা ভারত স্বীকার করে না। ভারত ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডে’ যোগও দেয়নি। পাঠক স্মরণ করতে পারেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশ (বাংলাদেশসহ) এই ওবিওআরে যোগ দিয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ভারত। ভারত প্রথম থেকেই চীনের ভূমিকাকে সন্দেহের চোখে দেখছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বৈরিতা প্রায় ৭০ বছরের। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্ররা জানেন, ভারত মহাসাগরের ‘নিয়ন্ত্রণ’কে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের মধ্যে একধরনের ‘সূক্ষ্ম’ প্রতিযোগিতা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। ভারত মহাসাগর চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চীনের জ্বালানি চাহিদা মেটানো হয় ভারত মহাসাগরের অনেক সমুদ্র রুট ব্যবহার করে। চীন এ অঞ্চলে একাধিক নৌঘাঁটি স্থাপন করেছে। ঠিক তেমনি ভারতও নৌঘাঁটি নির্মাণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনকে ‘ঘিরে ফেলার’ একধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীন সফর করে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বটে; কিন্তু যুদ্ধবাজ স্ট্র্যাটেজিস্টদের একটা মহাপরিকল্পনা রয়েছে চীনকে ভেঙে ফেলার।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে ভেঙে যাওয়ার পর চীন এখন তার অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আঘাত করছে। পাঠক লক্ষ করলে দেখবেন যুক্তরাষ্ট্র তার এশিয়া-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি ভারত মহাসাগর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করেছে। তারা পুরো প্যাসিফিক ও ভারত মহাসাগর এলাকার নামকরণ করেছে ইন্দো-প্যাসিফিক। মার্কিন প্রশাসনের স্ট্র্যাটেজিতে ভারত একটি বড় ভূমিকা পালন করছে।
এ ক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তান যে উত্তেজনা, তার পেছনে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক একটি ‘ভূমিকা’ রাখছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা কতটুকু দায়ী, তা বিবেচনায় নিতে হবে। ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করছে। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তিও রয়েছে।
অতীতে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের কারণে দেশ দুটি তিন তিনবার পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এর মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ হয়েছে দু’বার- ১৯৪৭-৪৮ আর ১৯৬৫ সালে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দেশ দুটি তৃতীয়বারের মতো যুদ্ধে জড়িয়ে গিয়েছিল। এর বাইরে কারগিলকে কেন্দ্র করে আরও একবার যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, যা কিনা জেনারেল মোশাররফকে ক্ষমতা দখল করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
পাক-ভারত দ্বন্দ্ব, উত্তেজনা, আর অস্ত্র প্রতিযোগিতা এ অঞ্চলের উন্নয়নের পথে অন্যতম অন্তরায়। ভারত পরপর দু’বার পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্যতম পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এ ঘটনা পাকিস্তানকে পারমাণবিক কর্মসূচি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (সিপরি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে ১৩৫টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে, আর ভারতের রয়েছে ১২৫টি। ২০১৭ সালে উভয় দেশ ১০টি করে ওয়ারহেড তাদের পারমাণবিক শক্তিবহরে সংযুক্ত করে। ভারত ইতিমধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে ৩৯ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে ৫টি আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইল ব্যবস্থা এস-৪০০ কিনতে চূড়ান্ত আলোচনা শুরু করেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই এ চুক্তি চূড়ান্ত করতে চায় তারা। তাহলে পরবর্তী ২৪ থেকে ৫৪ মাসের মধ্যে এসব অস্ত্র ও আনুষঙ্গিক সামগ্রীর সরবরাহ শেষ হবে। ৩০ কিলোমিটার উঁচু দিয়ে এ মিসাইল সর্বোচ্চ ৪০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এর আগে জানুয়ারিতে (২০১৮) ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ভারত সফরের সময় ভারত ৭ কোটি ডলারের অস্ত্র ক্রয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এস-৪০০ ব্যবস্থা মাঝারিপাল্লার ব্যালাস্টিক মিসাইল বহনে সক্ষম। তাদের মতে বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী এস-৪০০ এ অঞ্চলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই পাল্টে দেবে। এই মিসাইল পাকিস্তানের স্বল্পপাল্লার পারমাণবিক মিসাইল নসরকেও নিষ্ক্রিয় করতে পারবে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের অস্ত্র চুক্তি নতুন নয়। তবে নিঃসন্দেহে এই চুক্তি রাশিয়ার সঙ্গে অন্যতম বড় চুক্তি। এর আগে এক হাজার ২০০ কোটি ডলার দিয়ে যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ বিক্রমাদিত্য কিনেছিল ভারত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতের এই অস্ত্র ক্রয় পাকিস্তানকেও উদ্বুদ্ধ করবে আরও অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করতে। ফলে উপমহাদেশে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে। অস্ত্র প্রতিযোগিতা উপমহাদেশের জন্য কোনো ভালো খবর নয়। অস্ত্র খাতে ব্যয় বরাদ্দ বেড়ে যাওয়ার ফলে সামাজিক খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ভারত তার প্রতিরক্ষার জন্য বছরে খরচ করে মাথাপিছু ১০ ডলার, আর পাকিস্তান করে ২৬ ডলার। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ভারত খরচ করে মাথাপিছু ১৪ ডলার, আর পাকিস্তান করে ১০ ডলার। পাকিস্তান ও ভারত যে পরিমাণ অর্থ সামরিক খাতে ব্যয় করে, তা দিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব। কিন্তু দুর্ভাগ্য এখানেই- ভারতে যখন কৃষক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করে, তখন প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়ে চলেছে দেশটি। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে আস্থার সম্পর্কের অভাব। এ আস্থার সম্পর্ক গত ৭০ বছরেও তৈরি হয়নি। দেশ দুটির মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা কোনো ভালো খবর নয়। গত দু’-তিন বছর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতীয় পার্লামেন্টে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক সর্বনিু পর্যায়ে রয়েছে। ওই হামলায় ৫ হামলাকারীসহ ১৩ জন নিহত হয়। ভারত ওই হামলার জন্য কাশ্মীরি জঙ্গিগোষ্ঠী ‘লস্কর ই-তৈয়বা’ এবং ‘জয়শ-ই-মোহম্মদ’কে দায়ী করেছিল এবং এ দুটি জঙ্গি সংগঠনকে মদদ দেয়ার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেছিল। ওই ঘটনার পর দেশ দুটির মধ্যে আস্থার সম্পর্ক আর ফিরে আসেনি। পাঠক স্মরণ করতে পারেন, সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ির লাহোর সফরে (১৯৯৯) এবং সাবেক পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের আগ্রা সফরের (২০০১) পর দেশ দুটির কাছাকাছি আসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। বরং তাদের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়ছে। পাকিস্তান মনে করে, ভারত বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উসকে দিচ্ছে। অন্যদিকে ভারত মনে করে, পাকিস্তান সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করছে এবং তাদের দিয়ে ভারতের ভেতরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। বর্তমানে মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আফগানিস্তানে সন্ত্রাসীদের পাকিস্তান মদদ দিচ্ছে, এ ধরনের অভিযোগ প্রকাশ্যেই উচ্চারিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, পাকিস্তান তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্ককে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানকে শাস্তি দেয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন। মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান এখন ভারতের পক্ষে।
সব মিলিয়ে পাক-ভারত উপমহাদেশে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আর এ উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে দেশ দুটির মাঝে একধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে গেছে। চলতি বছর পাকিস্তানে নির্বাচন। আর ২০১৯ সালে ভারতে সাধারণ নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করে মোদি এটাকে তার নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করবেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো ‘ভারত বিরোধিতা’কে পুঁজি করে নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে চেষ্টা করবে। ভারতে প্রচণ্ড পাকিস্তানবিরোধিতা রয়েছে। কট্টরপন্থীরা এখন ভারতের ক্ষমতায়। মোট ২৯ রাজ্যের মধ্যে ২১টিতে বিজেপি সরকার। সুতরাং বোঝাই যায়, পাকিস্তানবিরোধিতা ভারতের নির্বাচনে প্রভাব ফেলে। এ মুহূর্তে পাকিস্তান তার হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ফলে দু’দেশের সম্পর্কের ওপর তা প্রভাব ফেলবে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিও এতে করে প্রভাবিত হবে। ইসলামাবাদে সার্কের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি শুধু দেশ দুটির সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। আগামীতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে।
বিশ্বে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। একজন কট্টরপন্থী ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তান ও ভারতের সম্পর্কে কী পরিবর্তন আসে, সেটা দেখার বিষয়। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, পাকিস্তান ও ভারতের মাঝে সম্পর্কের অবনতি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কোনো ভালো খবর নয়।