রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

দুটি ছবি, প্রশ্ন অনেক

দুটি ছবি ছাপা হয়েছে কলকাতার জনপ্রিয় সংবাদপত্র আনন্দবাজারে। প্রথমটিতে দেখা যাচ্ছে, ত্রিপুরায় সদ্য ক্ষমতাচ্যুত মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত বাসা ছেড়ে দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের কোনো বাড়ি নেই, ব্যাংকে প্রচুর টাকা নেই, যা দিয়ে তিনি বাসা ভাড়া দেবেন। তাই স্ত্রীকে নিয়ে নিঃসন্তান মানিক সরকার আশ্রয় নিয়েছেন পার্টির গেস্ট হাউসে। চার-চারবার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সাল থেকে তিনি ক্ষমতায়। কিন্তু তাঁর নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই। একটি দৃষ্টান্ত বটে। দ্বিতীয় ছবিটিও ছাপা হয়েছে আনন্দবাজারে। হাজার হাজার কৃষকের মিছিল মহারাষ্ট্রে। ১৮০ কিলোমিটার হেঁটে, লাল ঝাণ্ডা উড়িয়ে কৃষকরা এই লংমার্চ শুরু করেছিল ৬ মার্চ নাসিক থেকে। শেষ করল মুম্বাই এসে দাবি আদায়ের মধ্য দিয়ে ১২ মার্চ। কৃষকদের দাবি তাদের ঋণ মওকুফ, ফসলের ন্যায্য দাম, ‘লাঙল যার জমি তার’ ইত্যাদি। তাদের অভিযোগ, বুলেট ট্রেন ও সুপার হাইওয়ের নামে আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দুটি ছবির সঙ্গে এক জায়গায় মিল আছে—আর তা হচ্ছে সিপিআইএমের নাম। ত্রিপুরায় দীর্ঘদিন সিপিআইএম ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু নির্বাচনে তারা হেরে গেছে। মানিক সরকার সিপিআইএমের পলিটব্যুরোর সদস্য। আর মহারাষ্ট্রে ওই সিপিআইএমই কৃষকদের সংগঠিত করে ‘লংমার্চ’-এর আয়োজন করেছিল। প্রথমে পশ্চিম বাংলা, পরে ত্রিপুরায় বাম রাজনীতি যখন পরিত্যক্ত হলো, যখন সাধারণ মানুষ ভোটে বামফ্রন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করল, ঠিক তখন প্রায় ৫০ হাজার কৃষকের লংমার্চ নিঃসন্দেহে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেবে—বাম রাজনীতি তাহলে আদৌ শেষ হয়ে যায়নি? এটাই এখন মুখ্য আলোচিত বিষয়। অনেকেই প্রশ্ন করেন, ভারতে বাম রাজনীতির ধারা কি শেষ হয়ে গেল? নাকি বাম রাজনীতি আরো উজ্জীবিত হলো? এটা স্বীকার করতেই হবে—‘মোদি ম্যাজিক’ ভারতে কৃষকদের স্পর্শ করতে পারেনি। এখানে মোদি ব্যর্থ। কিন্তু সারা উত্তর ভারতে, বিশেষ করে ত্রিপুরায় তরুণ প্রজন্মকে এটা আকৃষ্ট করতে পেরেছে। এই তরুণ প্রজন্মের কাছে যেতে পারেনি সিপিআইএম। বিশ্বব্যাপীই তো এখন দক্ষিণপন্থী একটা প্রবণতা রয়েছে। ইউরোপের দিকে তাকান—সেখানে একটা দক্ষিণপন্থী উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনা সমাজকে গ্রাস করে নিচ্ছে। আর বাম রাজনীতি? এই বাম রাজনীতিতেও এসেছে বড় পরিবর্তন। চীনকে এখন আর মার্ক্সবাদী রাষ্ট্র বলা যাবে না। ভিয়েতনাম ‘দই মই’ গ্রহণ করে সমাজতান্ত্রিক সমাজে পরিবর্তন এনেছে ব্যাপক। এর প্রভাব ভারতে লাগাটাই স্বাভাবিক। এখানে পরিবর্তন আসবে—এটাই স্বাভাবিক। একসময় কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে সিপিএম তথা বামফ্রন্টকে বিবেচনা করা হতো। সেই বাম রাজনীতির প্রতি মানুষ ধীরে ধীরে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সাত বছর আগে সিপিএম জনগণের ভোট পায়নি পশ্চিমবঙ্গে। ২০১৮ সালে পেল না ত্রিপুরায়। তাহলে কী কেরালায়ও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে? মোদির টার্গেট তো এখন কেরালা। উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এখন ‘শুভবুদ্ধির’ রাজনীতিকে গ্রাস করছে। একসময় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির জন্য ছিল একটি ‘মডেল’। সেই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি এখন ভারতে একরকম পরিত্যক্ত! এর বড় প্রমাণ ত্রিপুরার নির্বাচনে সিপিআইএম এবং একই সঙ্গে কংগ্রেসের ভরাডুবি।
কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন মোদি এখন ভারতকে? অতি সম্প্রতি আরো একটি উদ্বেগজনক সংবাদ ছাপা হয়েছে ভারতীয় পত্রপত্রিকায়। সংবাদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গেল বছর অত্যন্ত গোপনে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছেন। তাদের কাজ হচ্ছে ভারতের ইতিহাসকে নতুন করে লেখা এবং স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে তা সংযোজন করা। কমিটির মূল কাজ হচ্ছে এটা প্রমাণ করা, ভারতের মাটিতে প্রথম যাঁরা বসবাস করতে শুরু করেছিলেন, তাঁরা মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। প্রাচীন যে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পাওয়া যায়, তা আসলেই বাস্তব, কোনো ‘মিথ’ বা পৌরাণিক কোনো কাহিনি নয়। কে এন দিক্ষীত এই কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতায় এই কমিটি কাজ করছে, যার বাজেট ৪০০ মিলিয়ন ডলার। সুতরাং বোঝাই যায় হিন্দুত্ববাদকে পুঁজি করে মোদি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের বৈতরণীও পার হতে চান। তাই নতুন করে ইতিহাস লেখা। উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে মোদি ধারণ করেছেন এবং তা প্রমোট করছেন। কিন্তু সামাজিক খাতে মোদির জমানায় অগ্রগতি কতটুকু? নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন তো প্রায়ই বলেন, সামাজিক ক্ষেত্রে কোনো কোনো খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ভারতের  চেয়েও ওপরে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ভারতের  চেয়েও এগিয়ে আছে। মিথ্যা বলেননি অমর্ত্য সেন। বিশ্বব্যাংকের কতগুলো পরিসংখ্যান আমরা উল্লেখ করতে পারি, যাতে ভারতের সামাজিক চিত্রের একটি দিক ফুটে উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে (২০১৬) দেখা গেছে—ভারতে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন দরিদ্র, সাতটি গরিব রাজ্যে শতকরা ৬২ জন ভারতীয় বসবাস করে, ৪৫ শতাংশ মানুষ বাস করে অতি দরিদ্রতম রাজ্যগুলোতে, ৮০ শতাংশ দরিদ্র মানুষ বাস করে গ্রামে, সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষ বাস করে (৬০ মিলিয়ন) উত্তর প্রদেশে। এরপর বিহারে (৩৬ মিলিয়ন), মধ্য প্রদেশে (২৪ মিলিয়ন), ওড়িশায় (১৪ মিলিয়ন), ঝাড়খণ্ডে (১৩ মিলিয়ন), ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে (১০ মিলিয়ন)। দারিদ্র্যের হার আদিবাসীদের মধ্যে বেশি—৪৩ শতাংশ, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২১ শতাংশের আছে টয়লেট সুবিধা, ৬১ শতাংশ বিদ্যুৎ সুবিধা আর মাত্র ৬ শতাংশ সুযোগ পায় কলের পানির। এই যে পরিসংখ্যান—এই পরিসংখ্যান কী বলে? এর বাইরে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে কৃষকদের আত্মহত্যার খবরও আমরা জানি। কন্যাশিশুর ভ্রূণ হত্যার কাহিনি বিশ্বব্যাপী আলোচিত। এমন জনগোষ্ঠীর কাছে ‘মোদি ম্যাজিক’ পৌঁছেনি। এদের উন্নয়নে মোদির কোনো কর্মসূচি নেই। মোদি বলেছিলেন, ‘মানিক’ ছেড়ে হীরার কথা! স্পষ্টতই তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন মানিক সরকারকে হটানোর। হীরা বলতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন
 Highways (H), I-way (I), Roadway (R) I Airway (A)| অর্থাৎ উন্নয়ন। উন্নয়নের ‘বটিক’ তিনি খাওয়াচ্ছেন অশিক্ষিত কোটি কোটি মানুষকে। এটা সত্য, সাতবোন রাজ্যগুলোতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। ত্রিপুরায় এসে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রতিটি বাঙালি পরিবার থেকে একজনকে চাকরি আর Smart phone দেওয়ার! মোদির উন্নয়ন পরিকল্পনার এই হচ্ছে ছবি! কিন্তু যেটা খারাপ খবর, তা হচ্ছে ত্রিপুরায় নির্বাচনের পর সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। তা পরে ছড়িয়ে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায়ও। এই প্রবণতা আমাদের কোনো ভালো খবর দেয় না।
আসলে যা বাস্তবতা তা হচ্ছে বাম রাজনীতিতে সংস্কারটা প্রয়োজন ছিল। মার্ক্স একুশ শতকের রাজনীতিকে চিন্তা করেননি। তিনি যে সময় তাঁর দর্শন লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তখন তাঁর কল্পনায় একুশ শতকের এই পৃথিবী ছিল না। বাম রাজনীতিকে নতুন আলোতে দেখতে হবে। গরবাচেভ চেষ্টা করেছিলেন, পারেননি। পুরো সোভিয়েত রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে গিয়েছিল। গরবাচেভের ব্যর্থতার কারণেই রাশিয়ায় আজ মাফিয়ানির্ভর এক রাজনীতির জন্ম হয়েছে। পুঁজি সেখানে এখন একটি ফ্যাক্টর। কালো টাকা আর পুঁজি—পুতিনের ক্ষমতার অন্যতম উৎস। চীনের দিকে তাকান? তেং-জিয়াও পিং এটা বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি সমাজতত্ত্ব আর বাজার অর্থনীতির সমন্বয়ে নতুন এক অর্থনৈতিক দর্শনের তত্ত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। এর ফলাফল? চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতি। আগামী কয়েক দশকের মধ্যে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে এক নম্বর অর্থনীতিতে পরিণত হবে। চীনের অর্থনীতি এখন আফ্রিকাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ধীরে ধীরে চীন এক নয়া উপনিবেশ শক্তিতে পরিণত হতে যাচ্ছে। একসময় চীন অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করত না, এখন করে। উদাহরণ মালদ্বীপ। এটাই ঔপনিবেশিক শক্তির চরিত্র। পশ্চিমা বিশ্ব চীনকে নিয়ে একধরনের আতঙ্কের মধ্যে আছে। তাই শি চিনপিংকে তারা ‘নয়া চীনা সম্রাট’ হিসেবে আখ্যায়িত করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। ভিয়েতনামেও পরিবর্তন এসেছে। কিউবায়ও আসবে। এপ্রিলে কিউবায় ন্যাশনাল কংগ্রেসের অধিবেশন। ওই অধিবেশনেই রাউল কাস্ত্রো-পরবর্তী নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। নয়া নেতা দায়িত্ব নেবেন। সেখানেও সীমিত পরিসরে সংস্কার শুরু হয়েছে। এই সংস্কারকে তারা বলছে ‘লিনিইয়েমিয়েনটস’  (Lineamientos)| বাংলা ভাষায় এর অর্থ একধরনের সংস্কার। তাদের ভাষায় এটা ‘আপডেট’। অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারাকে তারা একটু উন্নত করতে চায়। এই ‘আপডেট’ কিংবা সংস্কার কিউবায় কতটুকু পরিবর্তন আনতে পারবে, তা হয়তো আমরা আজ থেকে ২০ বছর পর আলোচনা করতে পারব। ‘বিড়াল সাদা কী কালো তা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় বিড়াল ইঁদুর মারে কি না’—তেং জিয়াও পিংয়ের এই উক্তি নিয়ে প্রথম দিকে বিতর্ক ছিল। আজ সবাই স্বীকার করেন, চীনে অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। কনফুসিয়াস দর্শনের মূল কথা হচ্ছে, ব্যক্তি তথা পারিবারিক সমৃদ্ধি। এই ধারণা তেং গ্রহণ করেছিলেন। ফলে একসময় যে কনফুসিয়াস চীনে নিষিদ্ধ ছিল, এখন সেই কনফুসিয়াস চীনে সমাদৃত। চীনে তাঁর স্ট্যাচুও আছে এখন। তবে এটাও সত্য, এই সংস্কার চীনে বৈষম্য তৈরি করেছে। মানবিক মূল্যবোধগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। গণিকাবৃত্তি চীনে এখন স্বাভাবিক একটি ঘটনা। আগামী ২০ কিংবা ৩০ বছর পর হয়তো মানুষ চীনকে নিয়ে নতুন করে লিখবে। কিন্তু চীন ব্যক্তি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ, ব্যক্তির উন্নতিকে গুরুত্ব দিয়েছে। এই রাজনীতি ত্রিপুরায় বাম রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেনি। মোদি চীন থেকে অর্থ নিয়ে গুজরাটকে একটি ‘মডেল রাজ্য’ বানিয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম বাংলার উন্নয়নের জন্য ছুটে গেছেন চীনে। সুযোগ ছিল ত্রিপুরার আর কেরালার। কিন্তু মানিক সরকাররা এদিকে যাননি। মানিক সরকার সৎ মানুষ। তাঁর মধ্যে কোনো বাহুল্য নেই। তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোনো টাকাও নেই। বাড়ি-গাড়ির তো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু মানুষ সুখী ছিল না। তরুণ প্রজন্ম খুশি ছিল না। তাদের ‘অ্যাড্রেস’ করতে পারেননি মানিক সরকাররা। কিন্তু মোদি-অমিত শাহ্রা পেরেছেন। আশা দিয়েছেন। ‘গল্প’ শুনিয়েছেন। এই গল্প শুনিয়ে মোদি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন। মোদির গায়ে ১০ লাখ টাকা দামের স্যুট উঠেছিল, কিন্তু মহারাষ্ট্র, বিহার, ছত্রিশগড়ের কৃষকরা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। তাই কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। মহারাষ্ট্রে কৃষকদের লংমার্চ এ কথাই প্রমাণ করে।
ভারতে বাম রাজনীতির ইতিহাস অনেক পুরনো। ১৯২১ সালে কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম হয়েছিল। অনেক পুরনো এই দলটি হারিয়ে যাবে নিশ্চয়ই এটা মনে হয় না। তবে যা দরকার, তা হচ্ছে নয়া নেতৃত্ব ও নয়া রাজনীতি। ত্রিপুরায় প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। কিন্তু বাম সরকার এই সম্পদ উত্তোলন (গ্যাস) করতে ও উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছিল। যেখানে সমগ্র ভারতে সপ্তম পে স্কেলে বেতন দেওয়া হতো, সেখানে ত্রিপুরায় বেতন দেওয়া হতো চতুর্থ পে স্কেলে। মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যবোধের দিকে দৃষ্টি দেয়নি বাম সরকার। মানিক সরকারের একটা ব্যক্তি ইমেজ আছে। তাঁর সততা ও ‘ভালোমানুষি’ অ্যাটিচ্যুড একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বটে; কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যবোধের জন্য কোনো ‘মডেল’ হতে পারে না। তাই পশ্চিমবঙ্গ কিংবা ত্রিপুরায় বাম রাজনীতিকে সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে না নিলেও মহারাষ্ট্রে হাজার হাজার মানুষের লংমার্চ প্রমাণ করে বাম রাজনীতির প্রতি মানুষের আস্থা এখনো আছে। সাধারণ মানুষের আস্থা এখন বামফ্রন্ট কতটুকু ব্যবহার করতে পারবে, সেটাই দেখার বিষয়।
দৈনিক কালর কন্ঠ ২১ মার্চ ২০১৮

0 comments:

Post a Comment